বিসমিল্লাহির রহমনুর রহিম
-ঃআল-কুরআনুল করীমঃ-
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
বাংলা তরজমা ও সম্পাদনাঃ-
শামসুল ‘উলামা বেলায়েত হোসেন
মাওলানা আবদুর রহমান কাশগরী
মুহম্মদ মাহমূদ মুস্তফা শা'বান
শামসুল উলামা মুহম্মদ আমীন 'আব্বাসী
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ
ডক্টর সিরাজুল হক
ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ
অধ্যক্ষ এ.এইচ. এম. আবদুল কুদ্দুস
মাওলানা মীর আবদুস সালাম
অধ্যাপক শাহেদ আলী
মাওলানা ফজলুল করীম
এ.এফ.এম. আবদুল হক ফরিদী
আহমদ হুসাইন
মাওলানা আলাউদ্দীন আল-আজহারী
মাওলানা মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ্
হাফেজ মঈনুল ইসলাম
আবুল হাশিম
-ঃ৩য়সংস্করণের সম্পাদকমণ্ডলীঃ-
ডক্টর সিরাজুল হক
ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ
জনাব আ.ফ.ম. আবদুল হক ফরিদী
ডক্টর এ.কে.এম. আইউব আলী
ডক্টর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান
ডক্টর এম. শমশের আলী
জনাব দাউদ-উজ-জামান চৌধুরী
জনাব আহমদ হুসাইন
জনাব মাওলানা আতাউর রহমান খান
জনাব মাওলানা ওবায়দুল হক
জনাব আ.ত.ম. মুছলেহ্ উদ্দীন
জনাব মোহাম্মদ ফেরদাউস খান
জনাব মাওলানা রিজাউল করীম ইসলামাবাদী
জনাব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ
জনাব এ.এফ.এম. আবদুর রহমান
অধ্যাপক শাহেদ আলী
মুফতী মুহাম্মদ নূরুদ্দীন
অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন
প্রকাশকের কথাঃ-
আল-কুরআন আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশেষ কিতাব। ইহা কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য একমাত্র হিদায়াত - পথনির্দেশক গ্রন্থ । ইহা মানব জাতির কল্যাণ ও নাজাতের একমাত্র পাথেয়। বাংলা ভাষা পৃথিবীর এক বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাষা। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী যাহাতে মাতৃভাষায় এই মহাগ্রন্থ অনুধাবন করিতে পারে, সেই লক্ষ্যেই সাবেক ইসলামিক একাডেমী বাংলা ভাষায় আল-কুরআনুল করীমের তরজমা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলা ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত কুরআন শরীফের তরজমাসমূহের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত অনুবাদ ‘আল-কুরআনুল করীম’ নির্ভরযোগ্য অনুবাদ হিসেবে সর্বত্র গৃহীত ও সমাদৃত হইয়া আসিতেছে। এই অনুবাদ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দেশের তৎকালীন স্বনামখ্যাত আলিম, ভাষাতত্ত্ববিদ, সাহিত্যিক ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ এই অনুবাদকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। দেশ ও বিদেশের অগণিত পাঠকের পরামর্শের ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালে সপ্তদশ মুদ্রণের সময় অনুবাদ পরিমার্জন করা হয়। এই পরিমার্জন কার্যটিও দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৯ জন আলিম ও শিক্ষাবিদ সমন্বয়ে গঠিত 'সম্পাদক মণ্ডলী' দ্বারা সম্পন্ন হয়। পরবর্তী সময়ে অষ্টাদশ মুদ্রণের প্রাক্কালে পাঠকমহলের পরামর্শের ভিত্তিতে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট ‘সম্পাদক মণ্ডলী' দ্বারা অনুবাদ আরও স্বচ্ছ, সুন্দর, নির্ভুল ও সাবলীল করার লক্ষ্যে কিছু সংশোধন ও টীকা সংযোজন করা হয়। বৰ্তমান সংস্করণ পর্যায়েও পাঠকমহলের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিমার্জন করা হইয়াছে। ইহার পরও সচেতন পাঠক- পাঠিকাদের নজরে কোন ভুলত্রুটি ধরা পড়িলে আমাদিগকে অবহিত করিবার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাইতেছি। আমরা তাহা যথাসময়ে সংশোধনের ব্যবস্থা করিব ইনশাআল্লাহ্ ।
আল-কুরআনুল করীমের সম্মানিত পাঠকবর্গের বহু দিনের চাহিদা ও প্রত্যাশার প্রেক্ষিতে একটি সহজে বহনযোগ্য সংস্করণ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিয়া আমরা এই সংস্করণটি ষষ্ঠবারের মত প্রকাশ করিলাম ।
বিভিন্ন পর্যায়ে আল-কুরআনুল করীম তরজমা, সম্পাদনা ও প্রকাশের সাথে যাঁহারা সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং অনুবাদকর্মকে সুন্দর ও নির্ভুল করার জন্য যে সকল পাঠক বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়া সহযোগিতা করিয়াছেন, তাঁহাদের সকলের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি। তাঁহাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নিকট মুনাজাত করি। মহান আল্লাহ্ আমাদের সকল নেক প্রচেষ্টা কবূল করুন । আমীন!
মোহাম্মদ আবদুর রব
পরিচালক,
প্রকাশনা বিভাগ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
বিসমিল্লাহির রহমনুর রহিম
সূরা ফাতিহা ০৭ আয়াত, ১ রুক', মক্কী;
।। দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।।
১। সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক* আল্লাহরই,
২। যিনি দয়াময়, পরম দয়ালু,
৩। কর্মফল® দিবসের মালিক।
৪। আমরা শুধু তোমারই ‘ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি,
৫। আমাদিগকে সরল পথ প্রদর্শন কর,
৬। তাহাদের পথ, যাহাদিগকে তুমি অনুগ্রহ দান করিয়াছ,
৭। তাহাদের পথ নহে যাহারা ক্রোধ-নিপতিত ও পথভ্রষ্ট।
(আমীন)
০০২। সুরা "আল-বাকারা"
মোট আয়াত সংখ্য-২৮৬, রুকূ'-৪০, মাদানী
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু"
১। আলি-লাম-মীম,
২। ইহা সেই কিতাব; ইহাতে কোন সন্দেহ নাই, মুত্তাকীদের জন্য ইহা নির্দেশ,
৩। যাহারা অদৃশ্যে" ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাহাদিগকে যে জীবনোপকরণ দান করিয়াছি তাহা হইতে ব্যয় করে,
8। এবং তোমার প্রতি যাহা নাযিল হইয়াছে ও তোমার পূর্বে যাহা নাযিল হইয়াছে তাহাতে যাহারা ঈমান আনে ও আখিরাতে যাহারা নিশ্চিত বিশ্বাসী,
৫। তাহারাই প্রতিপালক নির্দেশিত পথে রহিয়াছে এবং তাহারাই সফলকাম।
৬। যাহারা কুফরী করিয়াছে; তুমি তাহাদিগকে সতর্ক কর বা না কর, তাহাদের পক্ষে উভয়ই সমান; তাহারা ঈমান আনিবে না।
৭। আল্লাহ্ তাহাদের হৃদয় ও কর্ণ মোহর করিয়া দিয়াছেন, তাহাদের চক্ষুর উপর আবরণ রহিয়াছে এবং তাহাদের জন্য রহিয়াছে মহাশাস্তি।
৮। আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রহিয়াছে যাহারা বলে, 'আমরা আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনিয়াছি, তাহারা মু'মিন নহে; কিন্তু আল্লাহ্ এবং মু'মিনগণকে তাহারা প্রতারিত করিতে চাহে । অথচ তাহারা যে নিজদিগকে ভিন্ন কাহাকেও প্রতারিত করে না, ইহা তাহারা বুঝিতে পারে না।
১০। তাহাদের অস্তরে ব্যাধি রহিয়াছে। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করিয়াছেন ও তাহাদের জন্য রহিয়াছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তাহারা মিথ্যাবাদী।
১১। তাহাদিগকে যখন বলা হয়, ‘পৃথিবীতে * অশান্তি সৃষ্টি করিও না', তাহারা বলে, “আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী'।
১২। সাবধান! ইহারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু ইহারা বুঝিতে পারে না।
১৩। যখন তাহাদিগকে বলা হয়, যে সকল লোক ঈমান আনিয়াছে তোমরাও তাহাদের মত ঈমান আনয়ন কর, তাহারা বলে, 'নির্বোধ গণ যেরূপ ঈমান আনিয়াছে আমরাও কি সেইরূপ ঈমান আনিব ?' সাবধান! ইহারাই নির্বোধ, কিন্তু ইহারা জানে না।
১৪। যখন তাহারা মু'মিনগণের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, 'আমরা ঈমান আনিয়াছি', আর যখন তাহারা নিভৃতে তাহাদের শয়তানদের সহিত মিলিত হয় তখন বলে, “আমরা তো তোমাদের সাথেই রহিয়াছি ; আমরা শুধু তাহাদের সহিত ঠাট্টা-তামাশা করিয়া থাকি।'
১৫। আল্লাহ্ তাহাদের সহিত তামাশা করেন, এবং তাহাদিগকে তাহাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইবার অবকাশ দেন।
১৬। ইহারাই হিদায়াতের বিনিময়ে ভ্রান্তি ক্রয় করিয়াছে। সুতরাং তাহাদের ব্যবসা লাভজনক হয় নাই, তাহারা সৎপথেও পরিচালিত নহে।
১৭। তাহাদের উপমা, যেমন এক ব্যক্তি অগ্নি প্রজ্বলিত করিল; উহা যখন তাহার চতুর্দিক আলোকিত করিল আল্লাহ্ তখন তাহাদের জ্যোতি অপসারিত করিলেন এবং তাহাদিগকে ঘোর অন্ধকারে ফেলিয়া দিলেন, তাহারা কিছুই দেখিতে পায় না।
১৮। তাহারা বধির, মূক, অন্ধ, সুতরাং তাহারা ফিরিবে না।
১৯। কিংবা' যেমন আকাশের বর্ষণমুখর ঘন মেঘ, যাহাতে রহিয়াছে ঘোর অন্ধকার, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎ চমক। বজ্রধ্বনিতে মৃত্যুভয়ে তাহারা তাহাদের কর্ণে অঙ্গুলি প্রবেশ করায়। আল্লাহ্ কাফিরদিগকে পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন।
২০। বিদ্যুৎ চমক তাহাদের দৃষ্টিশক্তি প্রায় কাড়িয়া লয়। যখনই বিদ্যুতালোক তাহাদের সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়; তাহারা তখনই পথ চলিতে থাকে এবং যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় তখন তাহারা থম্কিয়া দাঁড়ায়। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাহাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করিতেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২১। হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর যিনি তোমাদিগকে ও তোমাদের পূর্ববর্তী- গণকে সৃষ্টি করিয়াছেন যাহাতে তোমরা মুত্তাকী হইতে পার,
২২। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশ কে ছাদ করিয়াছেন; এবং আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করিয়া তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন। সুতরাং তোমরা জানিয়া শুনিয়া কাহাকেও আল্লাহ্র সমকক্ষ দাঁড় করাইও না।
২৩। আমি আমার বান্দার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি তাহাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকিলে তোমরা ইহার অনুরূপ কোন সূরা আনয়ন কর এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহ্বান কর।
২৪। যদি তোমরা আনয়ন না কর এবং কখনই করিতে পারিবে না, তবে সেই আগুনকে ভয় কর, মানুষ ও পাথর হইবে যাহার ইন্ধন, কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হইয়াছে।
২৫। যাহারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে তাহাদিগকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে জান্নাত, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাহাদিগকে ফলমূল খাইতে দেওয়া হইবে তখনই তাহারা বলিবে, 'আমাদিগকে পূর্বে জীবিকারূপে যাহা দেওয়া হইত ইহা তো তাহাই'; তাহাদিগকে অনুরূপ ফলই দেওয়া। হইবে এবং সেখানে তাহাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী রহিয়াছে, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে।
২৬। আল্লাহ্ মশা কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র কোন বস্তুর উপমা দিতে সংকোচ বোধ করেন না। সুতরাং যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহারা জানে যে, নিশ্চয়ই ইহা সত্য— যাহা তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আসিয়াছে। কিন্তু যাহারা কাফির তাহারা বলে যে, আল্লাহ্ কি অভিপ্রায়ে এই উপমা পেশ করিয়াছেন? ইহা দ্বারা অনেককেই তিনি বিভ্রান্ত করেন, আবার বহু লোককে সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুত তিনি পথ পরিত্যাগিগণ ব্যতীত আর কাহাকেও বিভ্রান্ত করেন না—
২৭। যাহারা আল্লাহ্র সহিত দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হইবার পর উহা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখিতে আল্লাহ্ আদেশ করিয়াছেন তাহা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করিয়া বেড়ায়, তাহারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
২৮। তোমরা কিরূপে আল্লাহকে অস্বীকার কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদিগকে জীবন্ত করিয়াছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাইবেন ও পুনরায় জীবন্ত করিবেন, পরিণামে তাঁহার দিকেই তোমাদিগকে ফিরাইয়া আনা হইবে।
২৯। তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন, তৎপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং উহাকে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন; তিনি সর্ব বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
৩০। স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশতাদের বলিলেন, 'আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করিতেছি, ' তাহারা বলিল, 'আপনি কি সেখানে এমন কাহাকেও সৃষ্টি করিবেন; যে অশান্তি ঘটাইবে ও রক্তপাত করিবে? আমরাই তো আপনার সপ্রশংসা স্তুতিগান ও পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বলিলেন, নিশ্চয়ই ‘আমি যাহা জানি, তাহা তোমরা জান না।'
৩১। আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তৎপর সে সমুদয় ফিরিশতাদের সম্মুখে প্রকাশ করিলেন এবং বলিলেন, ‘এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলিয়া দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
৩২। তাহারা বলিল, 'আপনি মহান, পবিত্র আপনি আমাদিগকে যাহা শিক্ষা দিয়াছেন তাহা ছাড়া আমাদের তো কোন জ্ঞানই নাই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়।'
৩৩। তিনি বলিলেন, ‘হে আদম! তাহাদিগকে এই সকল নাম বলিয়া দাও।' সে তাহাদিগকে এই সকলের নাম বলিয়া দিলে তিনি বলিলেন, “আমি কি তোমাদিগকে বলি নাই যে, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যাহা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ আমি তাহাও জানি ?'
৩৪। যখন আমি ফিরিশতাদের বলিলাম, "আদমকে সিজদা কর", তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করিল; সে অমান্য করিল ও অহংকার করিল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হইল।
৩৫। এবং আমি বলিলাম, 'হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হইও না; হইলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।'
৩৬। কিন্তু শয়তান উহা হইতে তাহাদের পদস্খলন ঘটাইল এবং তাহারা যেখানে ছিল সেখান হইতে তাহাদিগকে বহিষ্কৃত করিল। আমি বলিলাম, 'তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নামিয়া যাও, পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রহিল।`
৩৭। অতঃপর আদম তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হইল। আল্লাহ্ তাহার প্রতি ক্ষমাপরবশ হইলেন। নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷
৩৮। আমি বলিলাম, তোমরা সকলেই এই "স্থান হইতে নামিয়া যাও। পরে যখন আমার পক্ষ হইতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসিবে তখন যাহারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করিবে তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।'
৩৯। যাহারা কুফরী করে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে তাহারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
৪০। হে বনী ইস্রাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর, যদ্দ্বারা আমি তোমাদিগকে অনুগৃহীত করিয়াছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করিব। আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।
৪১। আমি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি তোমরা তাহাতে ঈমান আন। ইহা তোমাদের নিকট যাহা আছে উহার প্রত্যয়নকারী। আর তোমরাই উহার প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হইও না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করিও না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।
৪২। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সহিত মিশ্ৰিত করিও না এবং জানিয়া শুনিয়া সত্য গোপন করিও না ৷
৪৩। তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং যাহারা রুকূ' করে তাহাদের সহিত রুকূ কর।
৪৪। তোমরা কি মানুষকে সৎকার্যের নির্দেশ দাও, আর নিজদিগকে বিস্মৃত হও? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝ না?
৪৫। তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ইহা বিনীতগণ ব্যতীত আর সকলের নিকট নিশ্চিতভাবে কঠিন।
৪৬। তাহারাই বিনীত যাহারা বিশ্বাস করে যে, তাহাদের প্রতিপালকের সহিত নিশ্চিতভাবে তাহাদের সাক্ষাতকার ঘটিবে এবং তাঁহারই দিকে তাহারা ফিরিয়া যাইবে।
৪৭। হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যদ্দ্বারা আমি তোমাদিগকে অনুগৃহীত করিয়াছিলাম এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছিলাম।
৪৮। তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেহ কাহারও কোন কাজে আসিবে না, কাহারও সুপারিশ গ্রহণ করা হইবে না, কাহারও নিকট হইতে বিনিময় গৃহীত হইবে না এবং তাহারা কোন প্রকার সাহায্যপ্রাপ্তও হইবে না৷
৪৯। স্মরণ কর, যখন আমি ফিরআওনী সম্প্রদায় হইতে তোমাদিগকে নিষ্কৃতি দিয়াছিলাম, যাহারা তোমাদের পুত্রগণকে যবেহ করিয়া ও তোমাদের নারীগণকে জীবিত রাখিয়া তোমাদিগকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিত; এবং উহাতে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে এক মহাপরীক্ষা ছিল;
৫০। -যখন তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিধাবিভক্ত করিয়াছিলাম এবং তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিলাম ও ফির‘আওনী সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করিয়াছিলাম আর তোমরা উহা প্রত্যক্ষ করিতেছিলে।
৫১। -যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করিয়াছিলাম, তাহার প্রস্থানের পর তোমরা তখন গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে; আর তোমরা তো যালিম।
৫২। ইহার পরও আমি তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছি যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
৫৩। আর যখন আমি মূসাকে কিতাব ও 'ফুরকান’ দান করিয়াছিলাম যাহাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।
৫৪। —আর যখন মূসা আপন সম্প্রদায়ের লোককে বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়া তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অত্যাচার করিয়াছ, সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরিয়া যাও এবং তোমরা নিজদিগকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার নিকট ইহাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরবশ হইবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
৫৫। —যখন তোমরা বলিয়াছিলে, 'হে মূসা! আমরা আল্লাহ্কে প্রত্যক্ষভাবে না দেখা পর্যন্ত তোমাকে কখনও বিশ্বাস করিব না,' তখন তোমরা বজ্রাহত হইয়াছিলে আর তোমরা নিজেরাই দেখিতেছিলে।
৫৬। অতঃপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদিগকে পুনর্জীবিত করিলামঃ যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
৫৭। আমি মেঘ দ্বারা তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করিলাম এবং তোমাদের নিকট মান্না ও সাওয়া প্রেরণ করিলাম । বলিয়াছিলাম,” ‘তোমাদিগকে যে উত্তম জীবিকা দান করিয়াছি তাহা হইতে আহার কর।' তাহারা আমার প্রতি কোন জুলুম করে নাই, বরং তাহারা তাহাদের প্রতিই জুলুম করিয়াছিল।
৫৮। স্মরণ কর, যখন আমি বলিলাম, ‘এই জনপদে প্রবেশ কর, যথা ও যেথা ইচ্ছা স্বচ্ছন্দে আহার কর, নতশিরে প্রবেশ কর দ্বার দিয়া এবং বল : ‘ক্ষমা চাই'। আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব এবং সৎকর্মপরায়ণ লোকদের প্রতি আমার দান বৃদ্ধি করিব।
৫৯। কিন্তু যাহারা অন্যায় করিয়াছিল তাহারা তাহাদিগকে যাহা বলা হইয়াছিল তাহার পরিবর্তে অন্য কথা বলিল। সুতরাং অনাচারীদের প্রতি আমি আকাশ হইতে শাস্তি প্রেরণ করিলাম; কারণ তাহারা সত্য ত্যাগ করিয়াছিল।
৬০। স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করিল, আমি বলিলাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর।' ফলে উহা হইতে দ্বাদশ প্রস্রবণ প্রবাহিত হইল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান চিনিয়া লইল। বলিলাম, ‘আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবিকা হইতে তোমরা পানাহার কর এবং দুষ্কৃতিকারীরূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করিয়া বেড়াইও না।'
৬১। যখন তোমরা বলিয়াছিলে, 'হে মূসা! আমরা একই রকম খাদ্যে কখনও ধৈর্য ধারণ করিব না। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর—তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাক-সব্জি কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।' মূসা বলিল, 'তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সহিত বদল করিতে চাও? তবে কোন নগরে অবতরণ কর। তোমরা যাহা চাও তাহা সেখানে আছে।' তাহারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হইল এবং তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইল । ইহা এইজন্য যে, তাহারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করিত এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিত। অবাধ্যতা সীমালংঘন করিবার জন্যই তাহাদের এই পরিণতি হইয়াছিল।
৬২। নিশ্চয়ই যাহারা ঈমান আনিয়াছে, যাহারা ইয়াহুদী হইয়াছে এবং খৃস্টান ও সাবিঈন— যাহারাই আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাহাদের জন্য পুরস্কার আছে তাহাদের প্রতিপালকের নিকট। তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
৬৩। স্মরণ কর, যখন তোমাদের অঙ্গীকার লইয়াছিলাম এবং ‘তূর’-কে তোমাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছিলাম; বলিয়াছিলাম, ‘আমি যাহা দিলাম দৃঢ়তার সহিত গ্রহণ কর এবং তাহাতে যাহা আছে তাহা স্মরণ রাখ, যাহাতে তোমরা সাবধান হইয়া চলিতে পার।
৬৪। ইহার পরেও তোমরা মুখ ফিরাইলে ! আল্লাহ্র অনুগ্রহ এবং অনুকম্পা তোমাদের প্রতি না থাকিলে তোমরা অবশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হইতে।
৬৫। তোমাদের মধ্যে যাহারা শনিবার সম্পর্কে সীমালংঘন করিয়াছিল তাহাদিগকে তোমরা নিশ্চিতভাবে . জান। আমি তাহাদিগকে বলিয়াছিলাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানর হও।
৬৬। আমি ইহা তাহাদের সমসাময়িক ও পরবর্তিগণের শিক্ষা গ্রহণের জন্য দৃষ্টান্ত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ করিয়াছি।
৬৭। স্মরণ কর, যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, 'আল্লাহ্ তোমাদিগকে একটি গরু যবেহ-এর আদেশ দিয়াছেন', তাহারা বলিয়াছিল, 'তুমি কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করিতেছ?' মুসা বলিল, ‘আল্লাহ্র শরণ লইতেছি যাহাতে আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হই।'
৬৮। তাহারা বলিল, 'আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহা কিরূপ?' মুসা বলিল, 'আল্লাহ্ বলিতেছেন, উহা এমন গরু যাহা বৃদ্ধও নহে, অল্পবয়স্কও নহে—মধ্যবয়সী। সুতরাং তোমরা যাহা আদিষ্ট হইয়াছ তাহা কর।'
৬৯। তাহারা বলিল, 'আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহার রং কি?' মূসা বলিল, 'আল্লাহ্ বলিতেছেন, উহা হলুদ বর্ণের গরু, উহার রং উজ্জ্বল, গাঢ়, যাহা, দর্শকদিগকে আনন্দ দেয়।'
৭০। তাহারা বলিল, 'আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহা কোনটি? আমরা গরুটি সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হইয়াছি এবং আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে নিশ্চয় আমরা দিশা পাইব।'
৭১। মুসা বলিল, 'তিনি বলিতেছেন, উহা এমন এক গরু যাহা জমি চাষে ও ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয় নাই— সুস্থ নিখুঁত।' তাহারা বলিল, 'এখন তুমি সত্য আনিয়াছ।' যদিও তাহারা যবেহ্ করিতে উদ্যত ছিল না তবুও তাহারা উহাকে যবেহ্ করিল।
৭২। স্মরণ কর, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছিলে এবং একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করিতেছিলে– তোমরা যাহা গোপন রাখিতেছিলে আল্লাহ্ তাহা ব্যক্ত করিতেছেন।
৭৩। আমি বলিলাম, ইহার কোন অংশ দ্বারা উহাকে আঘাত কর।' এইভাবে আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন এবং তাঁহার নিদর্শন তোমাদিগকে দেখাইয়া থাকেন, যাহাতে তোমরা অনুধাবন করিতে পার।
৭৪। ইহার পরও তোমাদের হৃদয় কঠিন হইয়া গেল, উহা পাষাণ কিংবা তদপেক্ষা কঠিন। পাথরও কতক এমন যে, উহা হইতে নদী-নালা প্রবাহিত হয় এবং কতক এইরূপ যে, বিদীর্ণ হওয়ার পর উহা হইতে পানি নির্গত হয়, আবার কতক এমন যাহা আল্লাহর ভয়ে ধ্বসিয়া পড়ে এবং তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নহেন।
৭৫। তোমরা কি এই আশা কর যে, তাহারা তোমাদের কথায় ঈমান আনিবে—যখন তাহাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে অতঃপর তাহারা উহা হৃদয়ঙ্গম করার পরও বিকৃত করে, অথচ তাহারা জানে।
৭৬। তাহারা যখন মু'মিনদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান আনিয়াছি, আবার যখন তাহারা নিভৃতে একে অন্যের সহিত মিলিত হয় তখন বলে, “আল্লাহ্ তোমাদের কাছে যাহা ব্যক্ত করিয়াছেন তোমরা কি তাহা তাহাদিগকে বলিয়া দাও? ইহা দ্বারা তাহারা তোমাদের প্রতি- পালকের সম্মুখে তোমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ করিবে; তোমরা কি অনুধাবন কর না?'
৭৭। তাহারা কি জানে না যে, যাহা তাহারা গোপন রাখে কিংবা ঘোষণা করে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্ তাহা জানেন?
৭৮। তাহাদের মধ্যে এমন কতক নিরক্ষর লোক আছে যাহাদের মিথ্যা আশা ব্যতীত কিতাব সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নাই, তাহারা শুধু অমূলক ধারণা পোষণ করে।
৭৯। সুতরাং দুর্ভোগ তাহাদের জন্য যাহারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে, “ইহা আল্লাহর নিকট হইতে।' তাহাদের হাত যাহা রচনা করিয়াছে তাহার জন্য শাস্তি তাহাদের এবং যাহা তাহারা উপার্জন করে তাহার জন্য শাস্তি তাহাদের।
৮০। তাহারা বলে, 'দিন কতক ব্যতীত অগ্নি আমাদিগকে কখনও স্পর্শ করিবে না। ' বল, ‘তোমরা কি আল্লাহর নিকট হইতে অঙ্গীকার নিয়াছ; অতএব আল্লাহ্ তাঁহার অঙ্গীকার কখনও ভঙ্গ করিবেন না কিংবা আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলিতেছ যাহা তোমরা জান না?'
৮১। হাঁ, যাহারা পাপ কার্য করে এবং যাহাদের পাপরাশি তাহাদিগকে পরিবেষ্টন করে তাহারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
৮২। আর যাহারা ঈমান আনে ও সৎকার্য করে তাহারাই জান্নাতবাসী, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে।
৮৩। স্মরণ কর, যখন ইস্রাঈল-সন্তানদের অঙ্গীকার নিয়াছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহারও 'ইবাদত করিবে না, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্রদের প্রতি সদয় ব্যবহার করিবে এবং মানুষের সহিত সদালাপ করিবে, সালাত কায়েম করিবে ও যাকাত দিবে, কিন্তু স্বল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত তোমরা বিরুদ্ধভাবাপন্ন হইয়া মুখ ফিরাইয়া লইয়াছিলে—
৮৪। - যখন তোমাদের অঙ্গীকার নিয়াছিলাম যে, তোমরা পরস্পরের রক্তপাত করিবে না এবং আপনজনকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কার করিবে না, অতঃপর তোমরা ইহা স্বীকার করিয়াছিলে, আর এই বিষয়ে তোমরাই সাক্ষী।
৮৫। তোমরাই তাহারা যাহারা অতঃপর একে অন্যকে হত্যা করিতেছ এবং তোমাদের এক দলকে স্বদেশ হইতে বহিষ্কৃত করিতেছ, তোমরা নিজেরা তাহাদের বিরুদ্ধে অন্যায় ও সীমালংঘন দ্বারা পরস্পরের পৃষ্ঠপোষকতা করিতেছ এবং তাহারা যখন বন্দীরূপে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয় তখন তোমরা মুক্তিপণ দাও; অথচ তাহাদের বহিষ্করণই তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর! সুতরাং তোমাদের যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা, এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নহেন।
৮৬। তাহারাই আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করে; সুতরাং তাহাদের শাস্তি লাঘব করা হইবে না এবং তাহারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না।
৮৭। এবং নিশ্চয় আমি মূসাকে কিতাব দিয়াছি এবং তাহার পরে পর্যায়ক্রমে রাসূলগণকে প্রেরণ করিয়াছি, মারইয়াম- তনয় 'ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ দিয়াছি এবং 'পবিত্র আত্মা' দ্বারা তাহাকে শক্তিশালী করিয়াছি। তবে কি যখনই কোন রাসূল তোমাদের নিকট এমন কিছু আনিয়াছে যাহা তোমাদের মনঃপূত নহে তখনই তোমরা অহংকার করিয়াছ আর কতককে অস্বীকার করিয়াছ এবং কতককে হত্যা করিয়াছ?
৮৮। তাহারা বলিয়াছিল, 'আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত', বরং কুফরীর জন্য আল্লাহ্ তাহাদিগকে লা'নত করিয়াছেন। সুতরাং তাহাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
৮৯। তাহাদের নিকট যাহা আছে আল্লাহর নিকট হইতে যখন তাহার সমর্থক কিতাব আসিল; যদিও পূর্বে সত্য প্রত্যাখ্যান- কারীদের বিরুদ্ধে তাহারা ইহার সাহায্যে বিজয় প্রার্থনা করিত, তবুও তাহারা যাহা জ্ঞাত ছিল উহা যখন তাহাদের নিকট আসিল তখন তাহারা উহা প্রত্যাখ্যান করিল। সুতরাং কাফিরদের প্রতি আল্লাহর লা'নত।
৯০। উহা কত নিকৃষ্ট যাহার বিনিময়ে তাহারা তাহাদের আত্মাকে বিক্রয় করিয়াছে—উহা এই যে, আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন, জিদের বশবর্তী হইয়া তাহারা তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিত শুধু এই কারণে যে, আল্লাহ্ তাঁহার বান্দাদের মধ্য হইতে যাহাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তাহারা ক্রোধের উপর ক্রোধের পাত্র হইল। কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।
৯১। এবং যখন তাহাদিগকে বলা হয়, “আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহাতে ঈমান আনয়ন কর', তাহারা বলে, 'আমাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে আমরা তাহাতে বিশ্বাস করি।' অথচ তাহা ব্যতীত সব কিছুই তাহারা প্রত্যাখ্যান করে, যদিও উহা সত্য এবং যাহা তাহাদের নিকট আছে তাহার সমর্থক। বল, ‘যদি তোমরা মু'মিন হইতে তবে কেন তোমরা অতীতে আল্লাহর নবীগণকে হত্যা করিয়াছিলে?'
৯২। এবং নিশ্চয় মূসা তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছে, তাহার পরে তোমরা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে। আর তোমরা তো যালিম।
৯৩। স্মরণ কর, যখন তোমাদের অঙ্গীকার লইয়াছিলাম এবং তুরকে তোমাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছিলাম, বলিয়াছিলাম, ‘যাহা দিলাম দৃঢ়রূপে গ্রহণ কর এবং শ্রবণ কর।' তাহারা বলিয়াছিল, 'আমরা শ্রবণ করিলাম ও অমান্য করিলাম; কুফরী হেতু তাহাদের হৃদয়ে গো-বৎস-প্ৰীতি সিঞ্চিত হইয়াছিল। বল, ‘যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তোমাদের ঈমান যাহার নির্দেশ দেয় উহা কত নিকৃষ্ট!
৯৪। বল, 'যদি আল্লাহর নিকট আখিরাতের বাসস্থান অন্য লোক ব্যতীত বিশেষভাবে শুধু তোমাদের জন্যই হয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর- - যদি সত্যবাদী হও।'
৯৫। কিন্তু তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহারা কখনও উহা কামনা করিবে না এবং আল্লাহ্ যালিমদের সম্বন্ধে অবহিত।
৯৬। তুমি নিশ্চয় তাহাদিগকে জীবনের প্রতি সমস্ত মানুষ, এমন কি মুশরিক অপেক্ষা অধিক লোভী দেখিতে পাইবে ! তাহাদের প্রত্যেকে আকাঙ্ক্ষা করে যদি সহস্র বৎসর আয়ু দেওয়া হইত; কিন্তু দীর্ঘায়ু তাহাকে শাস্তি হইতে দূরে রাখিতে পারিবে না। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ উহার দ্রষ্টা।
৯৭। বল, ‘যে কেহ জিব্রীলের শত্রু এইজন্য যে, সে আল্লাহর নির্দেশে তোমার হৃদয়ে কুরআন পৌঁছাইয়া দিয়াছে, যাহা উহার পূর্ববর্তী কিতাবের সমর্থক এবং যাহা মু'মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ 'সংবাদ'-
৯৮। ‘যে কেহ আল্লাহ্র, তাঁহার ফিরিশতাগণের, তাঁহার রাসূলগণের এবং জিব্রীল ও মীকাঈলের শত্রু, সে জানিয়া রাখুক, আল্লাহ্ নিশ্চয় কাফিরদের শত্রু।
৯৯। এবং নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি স্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করিয়াছি। ফাসিকরা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা প্রত্যাখ্যান করে না।
১০০। তবে কি যখনই তাহারা অঙ্গীকারাবদ্ধ হইয়াছে তখনই তাহাদের কোন একদল তাহা ভঙ্গ করিয়াছে? বরং তাহাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না।
১০১। যখন আল্লাহর পক্ষ হইতে তাহাদের নিকট রাসূল আসিল, যে তাহাদের নিকট যাহা রহিয়াছে উহার সমর্থক, তখন যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছিল তাহাদের একদল আল্লাহ্ কিতাবটিকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করিল, যেন তাহারা জানে না।
১০২। এবং সুলায়মানের রাজত্বে শয়তানরা যাহা আবৃত্তি করিত তাহারা তাহা অনুসরণ করিত। সুলায়মান কুফরী করে নাই, কিন্তু শয়তানরাই কুফরী করিয়াছিল। তাহারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত— এবং যাহা বাবিল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর অবতীর্ণ হইয়াছিল। তাহারা কাহাকেও শিক্ষা দিত না এই কথা না বলিয়া যে, ‘আমরা পরীক্ষাস্বরূপ; সুতরাং তুমি কুফরী করিও না।' তাহারা উভয়ের নিকট হইতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যাহা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তাহা শিক্ষা করিত, অথচ আল্লাহ্র নির্দেশ ব্যতীত তাহারা কাহারও কোন ক্ষতি সাধন করিতে পারিত না। তাহারা যাহা শিক্ষা করিত তাহা তাহাদের ক্ষতি সাধন করিত এবং কোন উপকারে আসিত না; আর তাহারা নিশ্চিতভাবে জানিত যে, যে কেহ উহা ক্রয় করে পরকালে তাহার কোন অংশ নাই । উহা কত নিকৃষ্ট যাহার বিনিময়ে তাহারা স্বীয় আত্মাকে বিক্রয় করিয়াছে, যদি তাহারা জানিত!
১০৩। যদি তাহারা ঈমান আনয়ন করিত ও মুত্তাকী হইত, তবে নিশ্চিতভাবে তাহাদের প্রতিফল আল্লাহর নিকট অধিক কল্যাণকর হইত, যদি তাহারা জানিত!
১০৪। হে মু'মিনগণ! 'রাইনা' বলিও না, বরং 'উনজুরনা' বলিও এবং শুনিয়া রাখ, কাফিরদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
১০৫। কিতাবীদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহারা এবং মুশরিকরা ইহা চাহে না যে, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হউক। অথচ আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা নিজ রহমতের জন্য বিশেষরূপে মনোনীত করেন এবং আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল।
১০৬। আমি কোন আয়াত রহিত করিলে কিংবা বিস্তৃত হইতে দিলে তাহা হইতে উত্তম কিংবা তাহার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ্ই সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১০৭। তুমি কি জান না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাই? এবং আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবকও নাই, সাহায্যকারীও নাই।
১০৮। তোমরা কি তোমাদের রাসূলকে সেইরূপ প্রশ্ন করিতে চাও যেইরূপ পূর্বে মূসাকে প্রশ্ন করা হইয়াছিল? এবং যে কেহ ঈমানের পরিবর্তে কুফরী গ্রহণ করে নিশ্চিতভাবে সে সরল পথ হারায়।
১০৯। তাহাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও, কিতাবীদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের ঈমান আনিবার পর ঈর্ষা- মূলক মনোভাব বশত আবার তোমা- দিগকে কাফিররূপে ফিরিয়া পাওয়ার আকাক্ষা করে। অতএব তোমরা ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ্ কোন নির্দেশ দেন—নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১১০। তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও। তোমরা উত্তম কাজের যাহা কিছু নিজেদের জন্য পূর্বে প্রেরণ করিবে, আল্লাহ্র নিকট তাহা পাইবে। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহার দ্রষ্টা।
১১১। এবং তাহারা বলে, “ইয়াহূদী বা খৃস্টান ছাড়া অন্য কেহ কখনই জান্নাতে প্রবেশ করিবে না।' ইহা তাহাদের মিথ্যা আশা । বল, 'যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।'
১১২। হাঁ, যে কেহ আল্লাহ্র নিকট সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ হয় তাহার ফল তাহার প্রতিপালকের নিকট রহিয়াছে এবং তাহাদের কোন ভয় নাই ও তাহারা দুঃখিত হইবে না।
১১৩। ইয়াহুদীরা বলে, ‘খৃস্টানদের কোন ভিত্তি নাই' এবং খৃস্টানরা বলে, “ইয়াহুদীদের কোন ভিত্তি নাই'; অথচ তাহারা কিতাব পাঠ করে। এইভাবে যাহারা কিছুই জানে না তাহারাও অনুরূপ কথা বলে । সুতরাং যে বিষয়ে তাহারা মতভেদ করিত কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ উহার মীমাংসা করিবেন।
১১৪। যে কেহ আল্লাহ্ মসজিদসমূহে তাঁহার নাম স্মরণ করিতে বাধা প্রদান করে এবং উহাদের বিনাশ সাধনে প্রয়াসী হয় তাহার অপেক্ষা বড় যালিম কে হইতে পারে? অথচ ভয়-বিহ্বল না হইয়া তাহাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সংগত ছিল না। পৃথিবীতে তাহাদের জন্য লাঞ্ছনা ভোগ ও পরকালে তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে।
১১৫। পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই; এবং যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকই আল্লাহর দিক। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
১১৬। এবং তাহারা বলে, 'আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন। ' তিনি অতি পবিত্র। বরং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সব আল্লারই। সব কিছু তাঁহারই একান্ত অনুগত।
১১৭। আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা এবং যখন তিনি কোন কিছু করিতে সিদ্ধান্ত করেন তখন উহার জন্য শুধু বলেন, ‘হও’, আর উহা হইয়া যায়।
১১৮। এবং যাহারা কিছু জানে না তাহারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? কিংবা কোন নিদর্শন আমাদের নিকট আসে না কেন? এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তীরাও তাহাদের অনুরূপ কথা বলিত। তাহাদের অন্তর একই রকম। আমি দৃঢ় প্রত্যয়শীলদের জন্য নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বিবৃত করিয়াছি।
১১৯। আমি তোমাকে সত্যসহ শুভ সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করিয়াছি। জাহান্নামীদের সম্বন্ধে তোমাকে কোন প্রশ্ন করা হইবে না।
১২০। ইয়াহুদী ও খৃস্টানগণ তোমার প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হইবে না, যতক্ষণ না তুমি তাহাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর। বল, ‘আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ।' জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাহাদের খেয়াল- খুশীর অনুসরণ কর তবে আল্লাহর বিপক্ষে তোমার কোন অভিভাবক থাকিবে না এবং কোন সাহায্যকারীও থাকিবে না।
১২১। যাহাদিগকে আমি কিতাব দিয়াছি তাহাদের যাহারা যথাযথভাবে ইহা তিলাওয়াত করে, তাহারাই ইহাতে বিশ্বাস করে, আর যাহারা ইহা প্রত্যাখ্যান করে তাহারা ক্ষতিগ্রস্ত।
১২২। হে ইস্রাঈল-সন্তানগণ! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যদ্দ্বারা আমি তোমাদিগকে অনুগৃহীত করিয়াছি এবং বিশ্বে সকলের উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি।
১২৩। এবং তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেহ কাহারও কোন উপকারে আসিবে না, কাহারও নিকট হইতে কোন বিনিময় গৃহীত হইবে না এবং কোন সুপারিশ কাহারও পক্ষে লাভজনক হইবে না এবং তাহারা সাহায্য প্রাপ্তও হইবে না।
১২৪। এবং স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীমকে তাহার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করিয়াছিলেন এবং সেইগুলি সে পূর্ণ করিয়াছিল, আল্লাহ্ বলিলেন, 'আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করিতেছি।' সে বলিল, 'আমার বংশধরগণের মধ্য হইতেও?' আল্লাহ বলিলেন, “আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নহে।'
১২৫। এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন কা'বাগৃহকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল করিয়াছিলাম এবং বলিয়াছিলাম, ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।' এবং ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে তাওয়াফকারী ই'তিকাফকারী. রুকূ সিজদাকারীদের জন্য আমার গৃহকে পবিত্র রাখিতে আদেশ দিয়াছিলাম।
১২৬। স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলিয়াছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! ইহাকে নিরাপদ শহর করিও, আর ইহার অধিবাসীদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনে তাহাদিগকে ফলমূল হইতে জীবিকা প্রদান করিও।' তিনি বলিলেন, 'যে কেহ কুফরী করিবে তাহাকেও কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করিতে দিব, অতঃপর তাহাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করিতে বাধ্য করিব এবং কত নিকৃষ্ট তাহাদের প্রত্যাবর্তনস্থল!
১২৭। স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কা'বাগৃহের প্রাচীর তুলিতেছিল তখন তাহারা বলিয়াছিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই কাজ গ্রহণ কর, নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।'
১২৮। 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে তোমার একান্ত অনুগত কর এবং আমাদের বংশধর হইতে তোমার এক অনুগত উম্মত করিও। আমাদিগকে 'ইবাদতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখাইয়া দাও এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হও। তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১২৯। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাহাদের মধ্য হইতে তাহাদের নিকট এক রাসূল প্রেরণ করিও যে তোমার আয়াতসমূহ তাহাদের নিকট তিলাওয়াত করিবে; তাহাদিগকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে এবং তাহাদিগকে পবিত্র করিবে। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১৩০। যে নিজেকে নির্বোধ করিয়াছে সে ব্যতীত ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ হইতে আর কে বিমুখ হইবে! পৃথিবীতে তাহাকে আমি মনোনীত করিয়াছি; আর আখিরাতেও সে অবশ্যই সৎকর্ম- পরায়ণগণের অন্যতম।
১৩১। তাহার প্রতিপালক যখন তাহাকে বলিয়াছিলেন, ‘আত্মসমর্পণ কর,' সে বলিয়াছিল, 'জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করিলাম।'
১৩২। এবং ইব্রাহীম ও ইয়াকূব এই সম্বন্ধে তাহাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়া বলিয়া- ছিল, 'হে পুত্রগণ! আল্লাহ্ই তোমাদের জন্য এই দীনকে মনোনীত করিয়াছেন । সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হইয়া তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ করিও না।
১৩৩। ইয়াকূবের নিকট যখন মৃত্যু আসিয়াছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে যখন পুত্রগণকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, “আমার পরে তোমরা কিসের ‘ইবাদত করিবে?' তাহারা তখন বলিয়াছিল, 'আমরা আপনার ইলাহ-এর এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমা'ঈল ও ইসহাকের ইলাহ্-এরই ‘ইবাদত করিব। তিনি একমাত্র ইলাহ্ এবং আমরা তাঁহার নিকট আত্মসমর্পণকারী।'
১৩৪। সেই ছিল এক উম্মত তাহা অতীত হইয়াছে । তাহারা যাহা অর্জন করিয়াছে তাহা তাহাদের। তোমরা যাহা অর্জন কর তাহা তোমাদের। তাহারা যাহা করিত সে সম্বন্ধে তোমাদিগকে কোন প্রশ্ন করা হইবে না।
১৩৫। তাহারা বলে, “ইয়াহুদী বা খৃস্টান হও, ঠিক পথ পাইবে।' বল, 'বরং একনিষ্ঠ হইয়া আমরা ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করিব এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।'
১৩৬। তোমরা বল, 'আমরা আল্লাহ্তে ঈমান রাখি, এবং যাহা আমাদের প্রতি এবং ইব্ররাহীম, ইসমা'ঈল, ইসহাক, ইয়া'কুব ও তাহার বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে, এবং যাহা তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে দেওয়া হইয়াছে। আমরা তাহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁহারই নিকট আত্মসমর্পণকারী।'
১৩৭। তোমরা যাহাতে ঈমান আনয়ন করিয়াছ তাহারা যদি সেইরূপ ঈমান আনয়ন করে তবে নিশ্চয় তাহারা হিদায়াত পাইবে। আর যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয়, তবে তাহারা নিশ্চয়ই বিরুদ্ধভাবাপন্ন এবং তাহাদের বিরুদ্ধে তোমার" জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১৩৮। আমরা গ্রহণ করিলাম আল্লাহর রং, রঙে আল্লাহ্ অপেক্ষা কে অধিকতর সুন্দর? এবং আমরা তাঁহারই ইবাদতকারী।
১৩৯ । বল, ‘আল্লাহ্ সম্বন্ধে তোমরা কি আমাদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হইতে চাও? যখন তিনি আমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক! আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; এবং আমরা তাঁহার প্রতি একনিষ্ঠ।'
১৪০। তোমরা কি বল, “ইব্ররাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাহার বংশধরগণ অবশ্যই ইয়াহুদী কিংবা খৃষ্টান ছিল?' বল, 'তোমরা কি বেশী জান, না আল্লাহ্?' আল্লাহর নিকট হইতে তাহার কাছে যে প্রমাণ আছে তাহা যে গোপন করে তাহার অপেক্ষা অধিকতর যালিম আর কে হইতে পারে? তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নহেন।
১৪১। সেই ছিল এক উম্মত, তাহা অতীত হইয়াছে। তাহারা যাহা অর্জন করিয়াছে তাহা তাহাদের। তোমরা যাহা অর্জন কর তাহা তোমাদের। তাহারা যাহা করিত সে সম্বন্ধে তোমাদিগকে কোন প্রশ্ন করা হইবে না।
দ্বিতীয় পারা
১৪২। নির্বোধ লোকেরা অচিরেই বলিবে যে, তাহারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করিয়া আসিতেছিল উহা হইতে কিসে তাহাদিগকে ফিরাইয়া দিল? বল, 'পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। তিনি যাহাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।'
১৪৩। এইভাবে আমি তোমাদিগকে এক মধ্য-পন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি, যাহাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হইবে। তুমি এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করিতেছিলে উহাকে আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া- ছিলাম যাহাতে জানিতে পারি কে অনুসরণ করে এবং কে ফিরিয়া যায়? আল্লাহ্ যাহাদিগকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন তাহারা ব্যতীত। অপরের নিকট ইহা নিশ্চয় কঠিন। আল্লাহ্ এইরূপ নহেন যে, তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
১৪৪। আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকা-নোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করি। সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফিরাইয়া দিতেছি যাহা তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাও এবং যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, উহা তাহাদের প্রতিপালকের প্রেরিত সত্য। তাহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ অনবহিত নহেন।
১৪৫। যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তুমি যদি তাহাদের নিকট সমস্ত দলীল পেশ কর, তবুও তাহারা তোমার কিবলার অনুসরণ করিবে না; এবং তুমিও তাহাদের কিবলার অনুসারী নও, এবং তাহারাও পরস্পরের কিবলার অনুসারী নহে। তোমার নিকট জ্ঞান আসিবার পর তুমি যদি তাহাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর নিশ্চয়ই তখন তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
১৪৬। আমি যাহাদিগকে কিতাব দিয়াছি তাহারা তাহাকে সেইরূপ জানে যেইরূপ তাহারা নিজেদের সন্তানগণকে চিনে এবং তাহাদের একদল জানিয়া শুনিয়া সত্য গোপন করিয়া থাকে।
১৪৭। সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত। সুতরাং তুমি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
১৪৮। প্রত্যেকের একটি দিক রহিয়াছে, যেদিকে সে মুখ করে। অতএব তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ্ তোমাদের সকলকে একত্র করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১৪৯। যেখান হইতেই তুমি বাহির হও না কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। ইহা নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত সত্য। তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ অনবহিত নহেন।
১৫০। তুমি যেখান হইতেই বাহির হও না কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন উহার দিকে মুখ ফিরাইবে, যাহাতে তাহাদের মধ্যে যালিমদের ব্যতীত অপর লোকের তোমাদের বিরুদ্ধে বিতর্কের কিছু না থাকে। সুতরাং তাহাদিগকে ভয় করিও না, শুধু আমাকেই ভয় কর। যাহাতে আমি আমার নি'মাত তোমাদিগকে পূর্ণরূপে দান করিতে পারি এবং যাহাতে তোমরা সৎপথে পরিচালিত হইতে পার।
১৫১। যেমন আমি তোমাদের মধ্য হইতে তোমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি, যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তোমাদিগকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমরা যাহা জানিতে না তাহা শিক্ষা দেয়৷
১৫২। সুতরাং তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদিগকে স্মরণ করিব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং কৃতঘ্ন হইও না।
১৫৩। হে মু'মিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সহিত আছেন।
১৫৪। আল্লাহর পথে যাহারা নিহত হয় তাহাদিগকে মৃত বলিও না, বরং তাহারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করিতে পার না।
১৫৫। আমি তোমাদিগকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করিব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে —
১৫৬। যাহারা তাহাদের উপর বিপদ আপতিত হইলে বলে, 'আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁহার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।'
১৫৭। ইহারাই তাহারা যাহাদের প্রতি তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর ইহারাই সৎপথে পরিচালিত।
১৫৮। নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে কেহ কা'বা গৃহের হজ্জ কিংবা 'উমরা সম্পন্ন করে এই দুইটির মধ্যে সা'ঈ করিলে তাহার কোন পাপ নাই আর কেহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকার্য করিলে আল্লাহ্ তো পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।
১৫৯। নিশ্চয়ই আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করিয়াছি মানুষের জন্য; কিতাবে উহা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যাহারা উহা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহাদিগকে লা'নত দেন এবং অভিশাপকারিগণও তাহাদিগকে অভিশাপ দেয়।
১৬০। কিন্তু যাহারা তওবা করে এবং নিজদিগকে সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, ইহারাই তাহারা যাহাদের তওবা আমি কবুল করি, আমি অতিশয় তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।
১৬১। নিশ্চয়ই যাহারা কুফরী করে এবং কাফিররূপে মারা যায় তাহাদের উপর লা'নত আল্লাহ্ এবং ফিরিশতাগণ ও সকল মানুষের।
১৬২। উহাতে তাহারা স্থায়ী হইবে। তাহাদের শাস্তি লঘু করা হইবে না এবং তাহাদিগকে কোন বিরামও দেওয়া হইবে না।
১৬৩। আর তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। তিনি দয়াময়, অতি দয়ালু।
১৬৪। নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে, যাহা মানুষের হিত সাধন করে তাহা সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ্ আকাশ হইতে যে বারিবর্ষণ দ্বারা ধরিত্রীকে তাহার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাহাতে এবং তাহার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রহিয়াছে।
১৬৫। তথাপি মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্ ছাড়া অপরকে আল্লাহ্র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাহাদিগকে ভালবাসে; কিন্তু যাহারা ঈমান আনিয়াছে আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসায় তাহারা সুদৃঢ়। যালিমেরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিলে যেমন বুঝিবে, হায়! এখন যদি তাহারা তেমন বুঝিত যে, সমস্ত শক্তি আল্লাহ্রই এবং আল্লাহ্ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর!
১৬৬। যখন অনুসৃতগণ অনুসরণকারীদের দায়িত্ব অস্বীকার করিবে এবং তাহারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে ও তাহাদের মধ্যকার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হইয়া যাইবে,
১৬৭। আর যাহারা অনুসরণ করিয়াছিল তাহারা বলিবে, 'হায়! যদি একবার আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটিত তবে আমরাও তাহাদের সম্পর্ক ছিন্ন করিতাম যেমন তাহারা আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করিল।' এইভাবে আল্লাহ্ তাহাদের কার্যাবলী তাহাদের পরিতাপরূপে তাহাদিগকে দেখাইবেন আর তাহারা কখনও অগ্নি হইতে বাহির হইতে পারিবে না।
১৬৮। হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যাহা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রহিয়াছে তাহা হইতে তোমরা আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
১৬৯। সে তো কেবল তোমাদিগকে মন্দ ও অশ্লীল কার্যের এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে তোমরা জান না এমন সব বিষয় বলার নির্দেশ দেয়৷
১৭০। যখন তাহাদিগকে বলা হয়, 'আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা তোমরা অনুসরণ কর', তাহারা বলে, 'না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যাহাতে পাইয়াছি তাহার অনুসরণ করিব।' এমন কি, তাহাদের পিতৃ- পুরুষগণ যদিও কিছুই বুঝিত না এবং তাহারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তথাপিও?
১৭১। যাহারা কুফরী করে তাহাদের উপমা যেমন কোন ব্যক্তি এমন কিছুকে ডাকে যাহা হাঁক-ডাক ছাড়া আর কিছুই শ্রবণ করে না—বধির, মূক, অন্ধ, সুতরাং তাহারা বুঝিবে না।
১৭২। হে মু'মিনগণ! তোমাদিগকে আমি যে সব পবিত্র বস্তু দিয়াছি তাহা হইতে আহার কর এবং আল্লাহ্র নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা শুধু তাঁহারই ইবাদত কর।
১৭৩। নিশ্চয় আল্লাহ্ মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর- মাংস এবং যাহার উপর আল্লাহ্র নাম ব্যতীত অন্যের নাম উচ্চারিত হইয়াছে, তাহা তোমাদের জন্য হারাম করিয়াছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় 'অথচ নাফরমান কিংবা সীমালংঘনকারী নয় তাহার কোন পাপ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।.
১৭৪। আল্লাহ্ যে কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যাহারা তাহা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তাহারা নিজেদের জঠরে অগ্নি ব্যতীত আর কিছু পুরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাহাদের সাথে কথা বলিবেন না এবং তাহাদিগকে পবিত্র করিবেন না। তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
১৭৫। তাহারাই সৎ পথের বিনিময়ে ভ্ৰান্ত পথ এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করিয়াছে; আগুন সহ্য করিতে তাহারা কতই না ধৈর্যশীল!
১৭৬। ইহা এইহেতু যে, আল্লাহ সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন, এবং যাহারা কিতাব সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করিয়াছে নিশ্চয় তাহারা দুস্তর মতভেদে রহিয়াছে।
১৭৭। পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পুণ্য নাই; কিন্তু পুণ্য আছে কেহ আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতা- গণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণে ঈমান আনয়ন করিলে এবং আল্লাহ-প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্য প্রার্থি গণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করিলে, সালাত কায়েম করিলে ও যাকাত প্রদান করিলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়া তাহা পূর্ণ করিলে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম- সংকটে ধৈর্য ধারণ করিলে। ইহারাই তাহারা যাহারা সত্যপরায়ণ এবং ইহারাই মুত্তাকী।
১৭৮। হে মু'মিনগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হইয়াছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী, কিন্তু তাহার ভাইয়ের পক্ষ হইতে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হইলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সহিত তাহার দেয় আদায় বিধেয়। ইহা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ। ইহার পরও যে সীমা লংঘন করে তাহার জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
১৭৯। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রহিয়াছে, যাহাতে তোমরা সাবধান হইতে পার।
১৮০। তোমাদের মধ্যে কাহারও মৃত্যুকাল উপস্থিত হইলে সে যদি ধন-সম্পত্তি রাখিয়া যায় তবে ন্যায়ানুগ প্রথামত তাহার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওসিয়াত করার বিধান তোমাদিগকে দেওয়া হইল। ইহা মুত্তাকীদের জন্য একটি কর্তব্য।
১৮১। উহা শ্রবণ করিবার পর যদি কেহ উহার পরিবর্তন সাধন করে, তবে যাহারা পরিবর্তন করিবে অপরাধ তাহাদেরই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১৮২। তবে যদি কেহ ওসিয়াতকারীর পক্ষপাতিত্ব কিংবা অন্যায়ের আশংকা করে, অতঃপর সে তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দেয়, তবে তাহার কোন অপরাধ নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
১৮৩। হে মু'মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হইল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তিগণকে দেওয়া হইয়াছিল, যাহাতে তোমরা মুত্তাকী হইতে পার—
১৮৪। সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেহ পীড়িত হইলে বা সফরে থাকিলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করিয়া লইতে হইবে। ইহা যাহাদিগকে সাতিশয় কষ্ট দেয় তাহাদের কর্তব্য ইহার পরিবর্তে ফিদ্`য়া – এক জন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে উহা তাহার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানিতে।
১৮৫। রামাযান মাস, ইহাতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হইয়াছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাহারা এই মাস পাইবে তাহারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। এবং কেহ পীড়িত থাকিলে কিংবা সফরে থাকিলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করিবে। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যাহা সহজ তাহা চাহেন এবং যাহা তোমাদের জন্য ক্লেশকর তাহা চাহেন না, এইজন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করিবে এবং তোমাদিগকে সৎপথে পরিচালিত করিবার কারণে তোমরা আল্লাহ্র মহিমা ঘোষণা করিবে এবং যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে পার।
১৮৬। আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তাহার আহ্বানে সাড়া দেই। সুতরাং তাহারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাতে ঈমান আনুক যাহাতে তাহারা ঠিক পথে চলিতে পারে।
১৮৭। সিয়ামের রাত্রে তোমাদের জন্য স্ত্রী- সম্ভোগ বৈধ করা হইয়াছে। তাহারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাহাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করিতেছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাহাদের সহিত সংগত হও এবং আল্লাহ্ যাহা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করিয়াছেন তাহা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণরেখা হইতে ঊষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ই'তিকাফরত অবস্থায় তাহাদের সহিত সংগত হইও না। এইগুলি আল্লাহ্র সীমারেখা। সুতরাং এইগুলির নিকটবর্তী হইও না। এইভাবে আল্লাহ্ তাঁহার নিদর্শনাবলী মানব জাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাহাতে তাহারা মুত্তাকী হইতে পারে।
১৮৮। তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিয়দংশ জানিয়া শুনিয়া অন্যায়রূপে গ্রাস করিবার উদ্দেশ্যে উহা বিচারকগণের নিকট পেশ করিও না।
১৮৯। লোকে তোমাকে নূতন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বল, 'উহা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময়-নির্দেশক।' পশ্চাৎ দিক দিয়া তোমাদের গৃহে প্রবেশ করাতে কোন পুণ্য নাই; কিন্তু পুণ্য আছে কেহ তাকওয়া অবলম্বন করিলে। সুতরাং তোমরা দ্বার দিয়া গৃহে প্রবেশ কর, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
১৯০। যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহ্র পথে তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমা লংঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমলংঘন- কারিগণকে ভালবাসেন না।
১৯১। যেখানে তাহাদিগকে পাইবে হত্যা করিবে এবং যে স্থান হইতে তাহারা তোমাদিগকে বহিষ্কৃত করিয়াছে তোমরাও সেই স্থান হইতে তাহাদিগকে বহিষ্কার করিবে ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর। মসজিদুল হারামের নিকট তোমরা তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিবে না' যে পর্যন্ত তাহারা সেখানে তোমাদের সহিত যুদ্ধ না করে। যদি তাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তবে তোমরা তাহাদিগকে হত্যা করিবে, ইহাই কাফিরদের পরিণাম।
১৯২। যদি তাহারা বিরত হয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৯৩। আর তোমরা তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাকিবে, যাবত ফিতনা দূরীভূত না হয় এবং আল্লাহ্র দীন প্রতিষ্ঠিত না হয়। যদি তাহারা বিরত হয় তবে যালিমদিগকে ব্যতীত আর কাহাকেও আক্রমণ করা চলিবে না।
১৯৪। পবিত্র মাস পবিত্র মাসের বিনিময়ে। যাহার পবিত্রতা অলঙ্ঘনীয় তাহার অবমাননা সকলের জন্য সমান । সুতরাং যে কেহ তোমাদিগকে আক্রমণ করিবে, তোমরাও তাহাকে অনুরূপ আক্রমণ করিবে এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ অবশ্যই মুত্তাকীদের সহিত থাকেন।
১৯৫। তোমরা আল্লাহ্র পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজদিগকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করিও না। তোমরা সৎকাজ কর, আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণ লোককে ভালবাসেন।
১৯৬। তোমরা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হজ্জ ও ‘উমরা পূর্ণ কর, কিন্তু তোমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হও তবে সহজলভ্য কুরবানী করিও। যে পর্যন্ত কুরবানীর পশু উহার স্থানে না পৌঁছে তোমরা মস্তক মুণ্ডন করিও না। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে তবে সিয়াম কিংবা সাদাকা অথবা কুরবানীর দ্বারা উহার ফিদ্য়া দিবে। যখন তোমরা নিরাপদ হইবে তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জের প্রাক্কালে ‘উমরা দ্বারা লাভবান হইতে চায় সে সহজলভ্য কুরবানী করিবে। কিন্তু যদি কেহ উহা না পায় তবে তাহাকে হজ্জের সময় তিন দিন এবং গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর সাত দিন এই পূর্ণ দশ দিন সিয়াম পালন করিতে হইবে। ইহা তাহাদের জন্য, যাহাদের পরিজনবর্গ মসজিদুল হারামের বাসিন্দা নহে। আল্লাহকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ্ শাস্তি দানে কঠোর।
১৯৭। হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট মাসসমূহে। অতঃপর যে কেহ এই মাসগুলিতে হজ্জ করা স্থির করে তাহার জন্য হজ্জের সময়ে স্ত্রী- সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নহে। তোমরা উত্তম কাজের যাহা কিছু কর আল্লাহ্ তাহা জানেন এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করিও, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর।
১৯৮। তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নাই৷ যখন তোমরা ‘আরাফাত হইতে প্রত্যাবর্তন করিবে তখন মাশআরুল হারামের নিকট পৌঁছিয়া আল্লাহকে স্মরণ করিবে এবং তিনি যেভাবে নির্দেশ দিয়াছেন ঠিক সেইভাবে তাঁহাকে স্মরণ করিবে। যদিও ইতিপূর্বে তোমরা বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
১৯৯। অতঃপর অন্যান্য লোক যেখান হইতে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সেই স্থান হইতে প্রত্যাবর্তন করিবে। আর আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, বস্তুত আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২০০। অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করিবে তখন আল্লাহ্ কে এমনভাবে স্মরণ করিবে যেমন তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষগণকে স্মরণ করিতে, অথবা তদপেক্ষা অভিনিবেশ সহকারে। মানুষের মধ্যে যাহারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে ইহকালেই দাও,' বস্তুত পরকালে তাহাদের জন্য কোন অংশ নাই।
২০১। আর তাহাদের মধ্যে যাহারা বলে, আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদিগকে অগ্নির শাস্তি হইতে রক্ষা কর'!
২০২। তাহারা যাহা অর্জন করিয়াছে তাহার প্রাপ্য অংশ তাহাদেরই। বস্তুতঃ আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।
২০৩। তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে, আল্লাহকে স্মরণ করিবে। যদি কেহ তাড়াতাড়ি করিয়া দুই দিনে চলিয়া আসে তবে তাহার কোন পাপ নাই, আর যদি কেহ বিলম্ব করে তবে তাহারও কোন পাপ নাই। ইহা তাহার জন্য, যে তাক্ওয়া অবলম্বন করে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ যে, তোমাদিগকে অবশ্যই তাঁহার নিকট একত্র করা হইবে।
২০৪। আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, পার্থিব জীবন সম্বন্ধে যাহার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করে এবং তাহার অন্তরে যাহা আছে সে সম্বন্ধে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে ভীষণ কলহপ্রিয়।
২০৫ । যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ্ অশান্তি পসন্দ করেন না।
২০৬। যখন তাহাকে বলা হয়, তুমি আল্লাহকে ভয় কর', তখন তাহার আত্মাভিমান তাহাকে পাপানুষ্ঠানে লিপ্ত করে, সুতরাং জাহান্নামই তাহার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় উহা নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল।
২০৭। মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভার্থে আত্ম-বিক্রয় করিয়া থাকে৷ আল্লাহ্ তাঁহার বান্দাগণের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র।
২০৮। হে মু'মিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করিও না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
২০৯। সুস্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের নিকট আসিবার পর যদি তোমাদের পদঙ্ঙ্খলন ঘটে তবে জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
২১০। তাহারা শুধু ইহার প্রতীক্ষায় রহিয়াছে যে, আল্লাহ্ ও ফিরিশতাগণ মেঘের ছায়ায় তাহাদের নিকট উপস্থিত হইবেন, তৎপর সব কিছুর মীমাংসা হইয়া যাইবে। সমস্ত বিষয় আল্লাহ্ই নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে।
২১১। বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞাসা কর, আমি তাহাদিগকে কত স্পষ্ট নিদর্শন প্রদান করিয়াছি! আল্লাহ্র অনুগ্রহ আসিবার পর কেহ উহার পরিবর্তন করিলে আল্লাহ্ তো শাস্তি দানে কঠোর!
২১২। যাহারা কুফরী করে তাহাদের নিকট পার্থিব জীবন সুশোভিত করা হইয়াছে, তাহারা মু'মিনদিগকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিয়া থাকে। আর যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে কিয়ামতের দিন তাহারা তাহাদের ঊর্ধ্বে থাকিবে। আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযিক দান করেন।
২১৩। সমস্ত মানুষ ছিল একই উম্মত। অতঃপর আল্লাহ্ নবীগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেন। মানুষেরা যে বিষয়ে মতভেদ করিত তাহাদের মধ্যে সে বিষয়ে মীমাংসার জন্য তিনি তাহাদের সহিত সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেন এবং যাহাদিগকে তাহা দেওয়া হইয়াছিল, স্পষ্ট নিদর্শন তাহাদের নিকট আসিবার পরে, তাহারা শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত সেই বিষয়ে বিরোধিতা করিত। যাহারা বিশ্বাস করে, তাহারা যে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করিত, আল্লাহ্ তাহাদিগকে সে বিষয়ে নিজ অনুগ্রহে সত্য পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।
২১৪। তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, যদিও এখনও তোমাদের নিকট তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুরূপ অবস্থা আসে নাই? অর্থ-সংকট ও দুঃখ- ক্লেশ তাহাদিগকে স্পর্শ করিয়াছিল এবং তাহারা ভীত ও কম্পিত হইয়াছিল । এমন কি রাসূল এবং তাঁহার সহিত ঈমান আনয়নকারিগণ বলিয়া উঠিয়াছিল, “আল্লাহ্র সাহায্য কখন আসিবে?' জানিয়া রাখ, অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য নিকটে।
২১৫। লোকে কি ব্যয় করিবে সে সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, 'যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করিবে তাহা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন এবং মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যাহা কিছু তোমরা কর না কেন আল্লাহ্ তো সে সম্বন্ধে অবহিত।
২১৬। তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হইল যদিও তোমাদের নিকট ইহা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যাহা অপসন্দ কর সম্ভবত তাহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যাহা ভালবাস সম্ভবত তাহা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।
২১৭। পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে; বল, ‘উহাতে যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায়। কিন্তু আল্লাহ্র পথে বাধা দান করা, আল্লাহুকে অস্বীকার করা, মসজিদুল হারামে বাধা দেওয়া এবং উহার বাসিন্দাকে উহা হইতে বহিষ্কার করা আল্লাহ্র নিকট তদপেক্ষা অধিক অন্যায়; ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর অন্যায়। তাহারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে থাকিবে যে পর্যন্ত তোমাদিগকে তোমাদের দীন হইতে ফিরাইয়া না দেয়, যদি তাহারা সক্ষম হয়। তোমাদের মধ্যে যে কেহ স্বীয় দীন হইতে ফিরিয়া যায় এবং কাফিররূপে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাহাদের কর্ম নিষ্ফল হইয়া যায়। ইহারাই অগ্নিবাসী, সেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে।
২১৮। যাহারা ঈমান আনে এবং যাহারা হিজরত করে এবং জিহাদ করে আল্লাহ্র পথে, তাহারাই আল্লাহ্র অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
২১৯। লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, 'উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু উহাদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।' লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, কী তাহারা ব্যয় করিবে? বল, ‘যাহা উদ্বৃত্ত।' এইভাবে আল্লাহ্ তাঁহার বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেন, যাহাতে তোমরা চিন্তা কর—
২২০। দুনিয়া ও আখিরাত সম্বন্ধে। লোকে তোমাকে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে; বল, ‘তাহাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম।' তোমরা যদি তাহাদের সহিত একত্র থাক তবে তাহারা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ জানেন কে হিতকারী এবং কে অনিষ্টকারী। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে এ বিষয়ে তোমাদিগকে অবশ্যই কষ্টে ফেলিতে পারিতেন। বস্তুতঃ আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
২২১। মুশরিক নারীকে ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা বিবাহ করিও না। মুশরিক নারী তোমাদিগকে মুগ্ধ করিলেও, নিশ্চয় মু'মিন ক্রীতদাসী তাহা অপেক্ষা উত্তম। ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক পুরুষের সহিত তোমরা বিবাহ দিও না, মুশরিক পুরুষ তোমাদিগকে মুগ্ধ করিলেও মু'মিন ক্রীতদাস তাহা অপেক্ষা উত্তম। উহারা অগ্নির দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহ্ তোমাদিগকে নিজ অনুগ্রহে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন। তিনি মানুষের জন্য স্বীয় বিধান সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাহাতে তাহারা উহা হইতে শিক্ষা গ্রহণ করিতে পারে।
২২২। লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বল, 'উহা অশুচি।’ সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী- সংগম বর্জন করিবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী-সংগম করিবে না। অতঃপর তাহারা যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হইবে তখন তাহাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন করিবে যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদিগকে আদেশ দিয়াছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তওবাকারীকে ভালবাসেন এবং যাহারা পবিত্র থাকে তাহাদিগকেও ভালবাসেন।
২২৩। তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্য- ক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার। তোমরা তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করিও এবং আল্লাহকে ভয় করিও। আর জানিয়া রাখিও যে, তোমরা আল্লাহ্র সম্মুখীন হইতে যাইতেছ এবং মু'মিন- গণকে সুসংবাদ দাও।
২২৪ । তোমরা সৎকার্য, আত্মসংযম ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন হইতে বিরত রহিবে—এই শপথের জন্য আল্লাহ্র নামকে তোমরা অজুহাত করিও না। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
২২৫। তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ্ তোমাদিগকে দায়ী করিবেন না; কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য দায়ী করিবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল।
২২৬। যাহারা স্ত্রীর সহিত সংগত না হওয়ার শপথ করে তাহারা চারি মাস অপেক্ষা করিবে। অতঃপর যদি তাহারা প্রত্যাগত হয় তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২২৭। আর যদি তাহারা তালাক দেওয়ার সংকল্প করে তবে আল্লাহ্ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
২২৮। তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকিবে। তাহারা আল্লাহ্ এবং আখিরাতে বিশ্বাসী হইলে তাহাদের গর্ভাশয়ে আল্লাহ্ যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহা গোপন রাখা তাহাদের পক্ষে বৈধ নহে। যদি তাহারা আপোস-নিষ্পত্তি করিতে চায় তবে উহাতে তাহাদের পুনঃ গ্রহণে তাহাদের স্বামিগণ অধিক হকদার। নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাহাদের উপর পুরুষদের ; কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে'। আল্লাহ্ মহা- পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
২২৯ । এই তালাক দুইবার। অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিমত রাখিয়া দিবে অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করিয়া দিবে। তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে যাহা প্রদান করিয়াছ তন্মধ্য হইতে কোন কিছু গ্রহণ করা তোমাদের পক্ষে বৈধ নহে। অবশ্য যদি তাহাদের উভয়ের আশংকা হয় যে, তাহারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করিয়া চলিতে পারিবে না এবং তোমরা যদি আশংকা কর যে, তাহারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করিয়া চলিতে পারিবে না, তবে স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে নিষ্কৃতি পাইতে চাহিলে তাহাতে তাহাদের কাহারও কোন অপরাধ নাই। এই সব আল্লাহ্র সীমারেখা। তোমরা উহা লংঘন করিও না। যাহারা এই সব সীমারেখা লংঘন করে তাহারাই যালিম।
২৩০। অতঃপর যদি সে তাহাকে তালাক দেয় তবে সে তাহার জন্য বৈধ হইবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সহিত সংগত না হইবে। অতঃপর সে যদি তাহাকে তালাক দেয় আর তাহারা উভয়ে মনে করে যে, তাহারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে, তবে তাহাদের পুনর্মিলনে কাহারও কোন অপরাধ হইবে না। এইগুলি আল্লাহ্র বিধান, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ্ ইহা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন ।
২৩১। যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও আর তারা ইদ্দত পূর্তির নিকটবর্তী হয় তখন তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দিবে বা বিধিমত মুক্ত করে দিবে। কিন্তু তাদের ক্ষতি করে সীমালংঘনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে তোমরা আটকিয়ে রেখো না। যে এইরূপ করে, সে নিজের প্রতি জুলুম করে। আর তোমরা আল্লাহ্ র বিধানকে ঠাট্টা-তামাশার বস্তু কর না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহ্ র নিয়ামত ও কিতাব এবং হিক্মত যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন-যা দিয়ে তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, তা স্মরণ কর। তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর আর জেনে রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে জ্ঞানময়।
২৩২। তোমরা যখন স্ত্রীদিগকে তালাক দাও এবং তাহারা তাহাদের 'ইদ্দাতকাল পূর্ণ করে, তাহারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদিগকে বিবাহ করিতে চাহিলে তোমরা তাহাদিগকে বাধা দিও না। ইহা দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেহ আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান রাখে, তাহাকে উপদেশ দেওয়া হয়। ইহা তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আল্লাহ্ জানেন, তোমরা জান না।
২৩৩। যে স্তন্য পানকাল পূর্ণ করিতে চাহে তাহার জন্য জননীগণ তাহাদের সন্তানদিগকে পূর্ণ দুই বৎসর স্তন্য পান করাইবে। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাহাদের ভরণ-পোষণ করা। কাহাকেও তাহার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না। কোন জননীকে তাহার সন্তানের জন্য এবং কোন জনককে তাহার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হইবে না। এবং উত্তরাধিকারীরও অনুরূপ কর্তব্য। কিন্তু যদি তাহারা পরস্পরের সম্মতি ও পরামর্শক্রমে স্তন্য পান বন্ধ রাখিতে চাহে তবে তাহাদের কাহারও কোন অপরাধ নাই। তোমরা যাহা বিধিমত দিতে চাহিয়াছিলে, তাহা যদি অর্পণ কর তবে ধাত্রী দ্বারা তোমাদের সন্তানকে স্তন্য পান করাইতে চাহিলে তোমাদের কোন গুনাহ নাই। আল্লাহকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ যে, তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উহার সম্যক দ্রষ্টা।
২৩৪ । তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মৃত্যু- মুখে পতিত হয় তাহাদের স্ত্রীগণ চারি মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় থাকিবে। যখন তাহারা তাহাদের ‘ইদ্দাতকাল পূর্ণ করিবে তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন গুনাহ নাই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
২৩৫। স্ত্রীলোকদের নিকট তোমরা ইংগিতে বিবাহের প্রস্তাব করিলে অথবা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখিলে তোমাদের কোন পাপ না। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা তাহাদের সম্বন্ধে অবশ্যই আলোচনা করিবে; কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ব্যতীত গোপনে তাহাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করিও না; নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করিও না। এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের মনোভাব জানেন। সুতরাং তাঁহাকে ভয় কর এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহনশীল।
২৩৬। যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে স্পর্শ করিয়াছ এবং তাহাদের জন্য মাহর ধার্য করিয়াছ, তাহাদিগকে তালাক দিলে তোমাদের কোন পাপ নাই। তোমরা তাহাদের সংস্থানের ব্যবস্থা করিও, সচ্ছল তাহার সাধ্যমত এবং অসচ্ছল তাহার সামর্থ্যানুযায়ী বিধিমত খরচপত্রের ব্যবস্থা করিবে, ইহা নেককার লোকদের কর্তব্য।
২৩৭। তোমরা যদি তাহাদিগকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দাও, অথচ মোহর ধার্য করিয়া থাক তবে যাহা তোমরা ধার্য করিয়াছ তাহার অর্ধেক, যদি না স্ত্রী অথবা যাহার হাতে বিবাহ-বন্ধন রহিয়াছে সে মাফ করিয়া দেয়; এবং মাফ করিয়া দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতর। তোমরা নিজেদের মধ্যে সদাশয়তার কথা বিস্মৃত হইও না। তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
২৩৮। তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হইবে বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াইবে;
২৩৯। যদি তোমরা আশংকা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করিবে। আর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করিবে, যেভাবে তিনি তোমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন, যাহা তোমরা জানিতে না।
২৪০। তোমাদের মধ্যে যাহাদের মৃত্যু আসন্ন এবং স্ত্রী রাখিয়া যায় তাহারা যেন তাহাদের স্ত্রীদিগকে গৃহ হইতে বহিষ্কার না করিয়া তাহাদের এক বৎসরের ভরণ- পোষণের ওসিয়াত করে। কিন্তু যদি তাহারা বাহির হইয়া যায় তবে বিধিমত নিজেদের জন্য তাহারা যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন গুনাহ নাই। আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
২৪১। তালাকপ্রাপ্তা নারীদিগকে প্রথামত ভরণ-পোষণ করা মুত্তাকীদের কর্তব্য।
২৪২। এইভাবে আল্লাহ্ তাঁহার বিধান স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যাহাতে তোমরা বুঝিতে পার।
২৪৩। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি পরিত্যাগ করিয়াছিল? অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদিগকে বলিয়াছিলেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হউক'। তারপর আল্লাহ্ তাহাদিগকে জীবিত করিয়াছিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
২৪৪। তোমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ কর এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
২৪৫। কে সে, যে আল্লাহকে করযে হাসানা প্রদান করিবে? তিনি তাহার জন্য ইহা বহু গুণে বৃদ্ধি করিবেন। আর আল্লাহ্ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তাঁহার পানেই তোমরা প্রত্যানীত হইবে।
২৪৬। তুমি কি মূসার পরবর্তী বনী ইসরাঈল প্রধানদিগকে দেখ নাই? তাহারা যখন তাহাদের নবীকে বলিয়াছিল, ‘আমাদের জন্য এক রাজা নিযুক্ত কর যাহাতে আমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করিতে পারি', সে বলিল, 'ইহা তো হইবে না যে, তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হইলে তখন আর তোমরা যুদ্ধ করিবে না'? তাহারা বলিল, 'আমরা যখন স্ব স্ব আবাসভূমি ও স্বীয় সন্তান-সন্ততি হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছি, তখন আল্লাহ্র পথে কেন যুদ্ধ করিব না'? অতঃপর যখন তাহাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হইল তখন তাহাদের স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত সকলেই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিল। এবং আল্লাহ্ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
২৪৭। আর তাহাদের নবী তাহাদিগকে বলিয়াছিল, আল্লাহ্ অবশ্যই তালূতকে তোমাদের রাজা করিয়াছেন। তাহারা বলিল, ‘আমাদের উপর তাহার রাজত্ব কিরূপে হইবে, যখন আমরা তাহা অপেক্ষা রাজত্বের অধিক হকদার এবং তাহাকে প্রচুর ঐশ্বর্য দেওয়া হয় নাই!' নবী বলিল, 'আল্লাহ্ অবশ্যই তাহাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করিয়াছেন এবং তিনি তাহাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করিয়াছেন।' আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা স্বীয় রাজত্ব দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।
২৪৮। আর তাহাদের নবী তাহাদিগকে বলিয়াছিল, তাহার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সেই তাবূত আসিবে যাহাতে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে চিত্ত- প্রশান্তি এবং মূসা ও হারূন বংশীয়গণ যাহা পরিত্যাগ করিয়াছে তাহার অবশিষ্টাংশ থাকিবে; ফিরিশতাগণ ইহা বহন করিয়া আনিবে। তোমরা যদি মু'মিন হও তবে অবশ্যই তোমাদের জন্য ইহাতে নিদর্শন আছে।'
২৪৯। অতঃপর তালূত যখন সৈন্যবাহিনীসহ বাহির হইল সে তখন বলিল, ‘আল্লাহ্ এক নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করিবেন। যে কেহ উহা হইতে পান করিবে সে আমার দলভুক্ত নহে; আর যে কেহ উহার স্বাদ গ্রহণ করিবে না সে আমার দলভুক্ত; ইহা ছাড়া যে কেহ তাহার হস্তে এক কোষ পানি গ্রহণ করিবে সেও'। অতঃপর অল্প সংখ্যক ব্যতীত তাহারা উহা হইতে পান করিল। সে এবং তাহার সংগী ঈমানদারগণ যখন উহা অতিক্রম করিল তখন তাহারা বলিল, 'জালূত ও তাহার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নাই। কিন্তু যাহাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহ্র সহিত তাহাদের সাক্ষাত ঘটিবে তাহারা বলিল, ‘আল্লাহ্র হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করিয়াছে'! আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সহিত রহিয়াছেন।
২৫০। তাহারা যখন যুদ্ধার্থে জালৃত ও তাহার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হইল তখন তাহারা বলিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে ধৈর্য দান কর, আমাদের পা অবিচলিত রাখ এবং কাফির সম্প্রদাযে়র বিরুদ্ধে আমাদিগকে সাহায্য দান কর’।
২৫১। সুতরাং তাহারা আল্লাহ্র হুকুমে উহাদিগকে পরাভূত করিল; দাউদ জালূতকে সংহার করিল, আল্লাহ্ তাহাকে রাজত্ব ও হিকমত দান করিলেন এবং যাহা তিনি ইচ্ছা করিলেন তাহা তাহাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ্ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করিতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হইয়া যাইত। কিন্তু আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রতি অনুগ্রহশীল।
২৫২। এই সকল আল্লাহ্র আয়াত, আমি তোমার নিকট উহা থাযথভাবে তিলাওয়াত করিতেছি, আর নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।
তৃতীয় পারা
২৫৩। এই রাসুলগণ, তাহাদের মধ্যে কাহাকেও কাহারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি। তাহাদের মধ্যে এমন কেহ রহিয়াছে যাহার সহিত আল্লাহ্ কথা বলিয়াছেন, আবার কাহাকেও উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করিয়াছেন। মারইয়াম-তনয় “ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করিয়াছি ও পবিত্র আত্মা দ্বারা তাহাকে শক্তিশালী করিয়াছি। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাহাদের পরবর্তীরা তাহাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ সমাগত হওয়ার পরও পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হইত না; কিন্তু তাহাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিল। ফলে তাহাদের কতক ঈমান আনিল এবং কতক কুফরী করিল। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাহারা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হইত না; কিন্তু আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা তাহা করেন৷
২৫৪। হে মু'মিনগণ! আমি যাহা তোমাদিগকে দিয়াছি তাহা হইতে তোমরা ব্যয় কর সেই দিন আসিবার পূর্বে, যেই দিন ক্রয়- বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকিবে না এবং কাফিররাই যালিম।
২৫৫। আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁহাকে তন্দ্রা অথবা নিদ্ৰা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সমস্ত তাঁহারই। কে সে, যে তাঁহার অনুমতি ব্যতীত তাঁহার নিকট এ সুপারিশ করিবে? তাহাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যাহা কিছু আছে তাহা তিনি অবগত। যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁহার জ্ঞানের কিছুই তাহারা আয়ত্ত করিতে পারে না। তাঁহার “কুরসী’ আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত; ইহাদের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁহাকে ক্লান্ত করে না; আর তিনি মহান, শ্রেষ্ঠ।
২৫৬। দীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নাই; সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হইতে সুস্পষ্ট হইয়াছে। যে তাগূতকে অস্বীকার করিবে ও আল্লাহে ঈমান আনিবে সে এমন এক মযবূত হাতল ধরিবে যাহা কখনও ভাঙ্গিবে না। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।
২৫৭। যাহারা ঈমান আনে আল্লাহ্ তাহাদের অভিভাবক, তিনি তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোকে লইয়া যান। আর যাহারা কুফরী করে তাগূত তাহাদের অভিভাবক, ইহারা তাহা- দিগকে আলোক হইতে অন্ধকারে লইয়া যায়। উহারাই অগ্নি-অধিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
২৫৮। তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখ নাই, যে ইব্রাহীমের সহিত তাহার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হইয়াছিল, যেহেতু আল্লাহ্ তাহাকে কর্তৃত্ব দিয়াছিলেন। যখন ইব্রাহীম বলিল, 'তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান', সে বলিল, 'আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই'। ইব্রাহীম বলিল, “আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্ব দিক হইতে উদয় করান, তুমি উহাকে পশ্চিম দিক হইতে উদয় করাও তো। অতঃপর যে কুফরী করিয়াছিল সে হতবুদ্ধি হইয়া গেল। আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
২৫৯। অথবা তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখ নাই, যে এমন এক নগরে উপনীত হইয়াছিল যাহা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হইয়াছিল। সে বলিল, 'মৃত্যুর পর কিরূপে আল্লাহ্ ইহাকে জীবিত করিবেন?' তৎপর আল্লাহ্ তাহাকে এক শত বৎসর মৃত রাখিলেন। পরে তাহাকে পুনর্জীবিত করিলেন। আল্লাহ্ বলিলেন, 'তুমি কত কাল অবস্থান করিলে?' সে বলিল, 'এক দিন অথবা এক দিনেরও কিছু কম অবস্থান করিয়াছি।' তিনি বলিলেন, “না, বরং তুমি এক শত বৎসর অবস্থান করিয়াছ। তোমার খাদ্যসামগ্রী ও পানীয় বস্তুর প্রতি লক্ষ্য কর, উহা অবিকৃত রহিয়াছে এবং তোমার গর্দভটির প্রতি লক্ষ্য কর, কারণ তোমাকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ করিব। আর অস্থিগুলির প্রতি লক্ষ্য কর; কিভাবে সেইগুলিকে সংযোজিত করি এবং গোশত দ্বারা ঢাকিয়া দেই।' যখন ইহা তাহার নিকট স্পষ্ট হইল তখন সে বলিয়া উঠিল, 'আমি জানি যে, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান'।
২৬০। যখন ইরাহীম বলিল, 'হে আমার প্রতি-পালক! কিভাবে তুমি মৃতকে জীবিত কর আমাকে দেখাও', তিনি বলিলেন, ‘তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না?' সে বলিল, 'কেন করিব না, তবে ইহা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য!' তিনি বলিলেন, “তবে চারিটি পাখী লও এবং উহাদিগকে তোমার বশীভূত করিয়া লও। তৎপর তাহাদের এক এক অংশ এক এক পাহাড়ে স্থাপন কর। অতঃপর উহাদিগকে ডাক দাও, উহারা দ্রুতগতিতে তোমার নিকট আসিবে। জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়'।
২৬১। যাহারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে তাহাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যাহা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে এক শত শস্যদানা। আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করিয়া দেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
২৬২। যাহারা আল্লাহ্র পথে ধনৈশ্বর্য ব্যয় করে অতঃপর যাহা ব্যয় করে তাহার কথা বলিয়া বেড়ায় না এবং ক্লেশও দেয় না, তাহাদের পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না৷
২৬৩। যে দানের পর ক্লেশ দেওয়া হয় তাহা অপেক্ষা ভাল কথা ও ক্ষমা শ্রেয়। আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, পরম সহনশীল।
২৬৪। হে মু'মিনগণ! দানের কথা বলিয়া বেড়াইয়া এবং ক্লেশ দিয়া তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নিষ্ফল করিও না যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করিয়া থাকে এবং আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। তাহার উপমা একটি মসৃণ পাথর যাহার উপর কিছু মাটি থাকে, অতঃপর উহার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত উহাকে পরিষ্কার করিয়া রাখিয়া দেয়। যাহা তাহারা উপার্জন করিয়াছে তাহার কিছুই তাহারা তাহাদের কাজে লাগাইতে পারিবে না। আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
২৬৫। আর যাহারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভার্থে ও নিজেদের আত্মা বলিষ্ঠ করণার্থে ধনৈশ্বর্য ব্যয় করে তাহাদের উপমা কোন উচ্চ ভূমিতে অবস্থিত একটি উদ্যান, যাহাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, ফলে তাহার ফলমূল দ্বিগুণ জন্মে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি নাও হয় তবে লঘু বৃষ্টিই যথেষ্ট। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা। জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়'।
২৬৬। তোমাদের কেহ কি চায় যে, তাহার খেজুর ও আঙুরের একটি বাগান থাকে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং যাহাতে সর্বপ্রকার ফলমূল আছে, যখন সে ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তাহার সন্তান-সন্ততি দুর্বল, অতঃপর উহার উপর এক অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড় আপতিত হয় ও উহা জ্বলিয়া যায় এইভাবে আল্লাহ্ তাঁহার নিদর্শন তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন যাহাতে তোমরা অনুধাবন করিতে পার।
২৬৭। হে মু'মিনগণ! তোমরা যাহা উপার্জন কর এবং আমি যাহা ভূমি হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করিয়া দেই তন্মধ্যে যাহা উৎকৃষ্ট তাহা ব্যয় কর; এবং উহার নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার সংকল্প করিও না; অথচ তোমরা উহা গ্রহণ করিবার নও, যদি না তোমরা চক্ষু বন্ধ করিয়া থাক। এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
২৬৮। শয়তান তোমাদিগকে দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ্ তোমাদিগকে তাঁহার ক্ষমা এবং অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
২৬৯ । তিনি যাহাকে ইচ্ছা হিকমত প্ৰদান করেন এবং যাহাকে হিকমত প্রদান করা হয় তাহাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়; এবং বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শুধু শিক্ষা গ্রহণ করে।
২৭০। যাহা কিছু তোমরা ব্যয় কর অথবা যাহা কিছু তোমরা মানত কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাহা জানেন। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই।
২৭১। তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে উহা ভাল; আর যদি তাহা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তাহা তোমাদের জন্য আরও ভাল; এবং তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপ মোচন করিবেন; তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহা সম্যক অবহিত।
২৭২। তাহাদের সৎপথ গ্রহণের দায়িত্ব তোমার নহে; বরং আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তাহা তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভার্থেই ব্যয় করিয়া থাক। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তাহার পুরস্কার তোমাদিগকে পুরাপুরিভাবে প্রদান করা হইবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হইবে না।
২৭৩। ইহা প্ৰাপ্য অভাবগ্রস্ত লোকদের; যাহারা আল্লাহ্র পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফিরা করিতে পারে না; যাচ্ঞা না করার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাহাদিগকে অভাবমুক্ত বলিয়া মনে করে; তুমি তাহাদের লক্ষণ দেখিয়া চিনিতে পারিবে। তাহারা মানুষের নিকট নাছোড় হইয়া যাচ্ঞা করে না। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর আল্লাহ তো তাহা সবিশেষ অবহিত।
২৭৪। যাহারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য রাত্রে ও দিবসে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাহাদের পুণ্য ফল তাহাদের প্রতিপালকের নিকট রহিয়াছে, তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
২৭৫। যাহারা সুদ খায় তাহারা সেই ব্যক্তিরই ন্যায় দাঁড়াইবে যাহাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। ইহা এইজন্য যে, তাহারা বলে, “ক্রয়-বিক্রয় তো সূদের মত'। অথচ আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সূদকে হারাম করিয়াছেন। যাহার নিকট তাহার প্রতিপালকের উপদেশ আসিয়াছে এবং সে বিরত হইয়াছে, তবে অতীতে যাহা হইয়াছে তাহা তাহারই; এবং তাহার ব্যাপার আল্লাহ্র ইখতিয়ারে। আর যাহারা পুনরায় আরম্ভ করিবে তাহারাই অগ্নি- অধিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
২৭৬। আল্লাহ্ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।
২৭৭। যাহারা ঈমান আনে, সৎকার্য করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়, তাহাদের পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে। তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
২৭৮। হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের যাহা বকেয়া আছে তাহা ছাড়িয়া দাও যদি তোমরা মু'মিন হও।
২৭৯। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের সহিত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। ইহাতে তোমরা অত্যাচার করিবে না এবং অত্যাচারিতও হইবে না।
২৮০। যদি খাতক অভাবগ্রস্ত হয় তবে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাহাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছাড়িয়া দাও তবে উহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানিতে।
২৮১। তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যে দিন তোমরা আল্লাহর দিকে প্রত্যানীত হইবে। অতঃপর প্রত্যেককে তাহার কর্মের ফল পুরাপুরি প্রদান করা হইবে, আর তাহাদের প্রতি কোনরূপ অন্যায় করা হইবে না।
২৮২। হে মু'মিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সহিত নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের কারবার কর তখন উহা লিখিয়া রাখিও; তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায্যভাবে লিখিয়া দেয়; লেখক লিখিতে অস্বীকার করিবে না। যেমন আল্লাহ্ তাহাকে শিক্ষা দিয়াছেন, সুতরাং সে যেন লিখে; এবং ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয় এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে, আর উহার কিছু যেন না কমায়; কিন্তু ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দিতে না পারে তবে যেন তাহার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয়। সাক্ষীদের মধ্যে যাহাদের উপর তোমরা রাযী তাহাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ সাক্ষী রাখিবে, যদি দুইজন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক; স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করিলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করাইয়া দিবে। সাক্ষিগণকে যখন ডাকা হইবে তখন তাহারা যেন অস্বীকার না করে। ইহা ছোট হউক অথবা বড় হউক, মেয়াদসহ লিখিতে তোমরা কোন রূপ বিরক্ত হইও না। আল্লাহ্র নিকট ইহা ন্যায্যতর ও প্রমাণের জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসার নগদ আদান-প্ৰদান কর তাহা তোমরা না লিখিলে কোন দোষ নাই। তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচাকেনা কর তখন সাক্ষী রাখিও, লেখক এবং সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত কর তবে ইহা তোমাদের জন্য পাপ। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। এবং তিনি তোমাদিগকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
২৮৩। যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও তবে হস্তান্তরকৃত বন্ধক রাখিবে। তোমাদের একে অপরকে বিশ্বাস করিলে, যাহাকে বিশ্বাস করা হয়, সে যেন আমানত প্রত্যর্পণ করে এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না, যে কেহ উহা গোপন করে অবশ্যই তাহার অন্তর পাপী। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহা সবিশেষ অবহিত।
২৮৪। আসমান ও যমীনে যাহা কিছু আছে সমস্ত আল্লারই। তোমাদের মনে যাহা আছে তাহা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ্ উহার হিসাব তোমাদের নিকট হইতে গ্রহণ করিবেন। অতঃপর যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করিবেন এবং যাহাকে খুশী শাস্তি দিবেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২৮৫। রাসূল, তাহার প্রতি তাহার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে ঈমান আনিয়াছে এবং মু'মিনগণও। তাহাদের সকলে আল্লাহে, তাঁহার ফিরিশতাগণে, তাঁহার কিতাবসমূহে এবং তাঁহার রাসূলগণে ঈমান আনয়ন করিয়াছে। তাহারা বলে, ‘আমরা তাঁহার রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না', আর তাহারা বলে, “আমরা শুনিয়াছি এবং পালন করিয়াছি! হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই আর প্রত্যাবর্তন তোমারই নিকট'।
২৮৬। আল্লাহ্ কাহারও উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যাহা তাহার সাধ্যাতীত। সে ভাল যাহা উপার্জন করে তাহার প্রতিফল তাহারই এবং সে মন্দ যাহা উপার্জন করে তাহার প্রতিফল তাহারই। 'হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা বিস্তৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদিগকে পাকড়াও করিও না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করিয়াছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করিও না। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করিও না যাহা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদিগকে ক্ষমা কর, আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদিগকে সাহায্য কর'।
সূরা নং-০২; বাকারা; আয়াত নং-; ২৮৬/২৮৬; সমাপ্ত!
০০৩। সুরা আল-ইমরান
মোট আয়াত সংখ্য-২০০, রুকূ'-২০, মাদানী
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু"
১। আলিফ-লাম-মীম,
২। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক।
৩। তিনি সত্যসহ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন, যাহা উহার পূর্বের কিতাবের সমর্থক। আর তিনি অবতীর্ণ করিয়াছিলেন তাওরাত ও ইনজীল—
৪। ইতিপূর্বে মানবজাতির সৎপথ প্রদর্শনের জন্য; আর তিনি ফুরকান অবতীর্ণ করিয়াছেন। যাহারা আল্লাহর নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাহাদের জন্য কঠোর শান্তি আছে। আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, দণ্ডদাতা।
৫। আল্লাহ্, নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনে কিছুই তাঁহার নিকট গোপন থাকে না।
৬ । তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই; তিনি প্রবল পরাক্রম- শালী, প্রজ্ঞাময়।
৭। তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যাহার কতক আয়াত 'মুহকাম', এইগুলি কিতাবের মূল; আর অন্যগুলি 'মুতাশাবিহ্', যাহাদের অন্তরে সত্য-লংঘন প্রবণতা রহিয়াছে শুধু তাহারাই ফিৎনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেহ ইহার ব্যাখ্যা জানে না। আর যাহারা জ্ঞানে সুগভীর তাহারা বলে, 'আমরা ইহা বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আগত’ এবং বোধশক্তিসম্পন্নরা ব্যতীত অপর কেহ শিক্ষা গ্রহণ করে না।
৮। হে আমাদের প্রতিপালক। সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনপ্রবণ করিও না এবং তোমার নিকট হইতে আমাদিগকে করুণা দাও, নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।
৯। 'হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি মানব জাতিকে একদিন একত্রে সমাবেশ করিবে ইহাতে কোন সন্দেহ নাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ওয়াদা খেলাফ করেন না।'
১০। যাহারা কুফরী করে আল্লাহ্র নিকট তাহাদের ধনৈশ্বর্য্য ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে লাগিবে না এবং ইহারাই অগ্নির ইন্ধন৷
১১। তাহাদের অভ্যাস ফিরআওনী সম্প্রদায় ও তাহাদের পূর্ববর্তিগণের অভ্যাসের ন্যায়, উহারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করিয়াছিল, ফলে আল্লাহ তাহাদের পাপের জন্য তাহাদিগকে শাস্তিদান করিয়াছিলেন। আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর।
১২। যাহারা কুফরী করে তাহাদিগকে বল, 'তোমরা শীঘ্রই পরাভূত হইবে এবং তোমাদিগকে একত্রিত করিয়া জাহান্নামের দিকে লইয়া যাওয়া হইবে। আর উহা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল!'
১৩। দুইটি, দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে। একদল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিতেছিল, অন্যদল কাফির ছিল; উহারা তাহাদিগকে চোখের দেখায় দ্বিগুণ দেখিতেছিল। আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী করেন। নিশ্চয় ইহাতে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকের জন্য শিক্ষা রহিয়াছে।
১৪। নারী, সন্তান, রাশিকৃত স্বর্ণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্ব রাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হইয়াছে। এইসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহ্, তাঁহারই নিকট রহিয়াছে উত্তম আশ্রয়স্থল।
১৫। বল, 'আমি কি তোমাদিগকে এই সব বস্তু হইতে উৎকৃষ্টতর কোন কিছুর সংবাদ দিব? যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করিয়া চলে তাহাদের জন্য জান্নাতসমূহ রহিয়াছে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। আর সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, তাহাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিগণ এবং আল্লাহ্র নিকট হইতে সন্তুষ্টি রহিয়াছে। আল্লাহ্ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।
১৬। যাহারা বলে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান আনিয়াছি; সুতরাং তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদিগকে আগুনের ‘আযাব হইতে রক্ষা কর;'
১৭। তাহারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থী।
১৮। আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই, ফিরিশতাগণ এবং জ্ঞানিগণও; আল্লাহ্ ন্যায়নীতিতে প্রতিষ্ঠিত, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১৯। নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন। যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছিল তাহারা পরস্পর বিদ্বেষবশত তাহাদের নিকট জ্ঞান আসিবার পর মতানৈক্য ঘটাইয়াছিল। আর কেহ আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করিলে আল্লাহ্ তো হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।
২০। যদি তারা তোমার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয় তবে তুমি বল, ‘আমি আল্লাহ্ র নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আমার অনুসারিগণও।’ আর যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে ও নিরক্ষরদেরকে বল, ‘তোমরাও কি আত্মসমর্পণ করেছ ?’ যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তবে নিশ্চয়ই তারা হিদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কর্তব্য শুধু প্রচার করা। আল্লাহ্ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা।
২১। যাহারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, অন্যায়রূপে নবীদের হত্যা করে এবং মানুষের মধ্যে যাহারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাহাদিগকে হত্যা করে, তুমি তাহাদিগকে মর্মস্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।
২২। এইসব লোক, ইহাদের কার্যাবলী দুনিয়া ও আখিরাতে নিষ্ফল হইবে এবং তাহাদের কোন সাহায্যকারী নাই।
২৩। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহাদিগকে কিতাবের অংশ প্রদান করা হইয়াছিল? তাহাদিগকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করা হইয়াছিল যাহাতে উহা তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দেয়; অতঃপর তাহাদের একদল ফিরিয়া দাঁড়ায়, আর তাহারাই পরাক্সমুখ;
২৪। এইহেতু যে, তাহারা বলিয়া থাকে, 'দিন কতক ব্যতীত আমাদিগকে অগ্নি কখনই স্পর্শ করিবে না। তাহাদের নিজেদের দীন সম্বন্ধে তাহাদের মিথ্যা উদ্ভাবন তাহাদিগকে প্রবঞ্চিত করিয়াছে।
২৫। কিন্তু সেইদিন, যাহাতে কোন সন্দেহ নাই, তাহাদের কি অবস্থা হইবে? যে দিন আমি তাহাদিগকে একত্র করিব এবং প্রত্যেককে তাহার অর্জিত কর্মের প্রতিদান পূর্ণভাবে দেওয়া হইবে, আর তাহাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হইবে না!
২৬। বল, 'হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ্! তুমি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যাহার নিকট হইতে ইচ্ছা ক্ষমতা কাড়িয়া লও; যাহাকে ইচ্ছা তুমি ইজ্জত দান কর, আর যাহাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২৭। 'তুমিই রাত্রিকে দিবসে পরিণত এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত কর; তুমিই মৃত হইতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত হইতে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাহাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান কর।'
২৮। মু'মিনগণ যেন মু'মিনগণ ব্যতীত কাফিরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেহ এইরূপ করিবে তাহার সহিত আল্লাহ্র কোন সম্পর্ক থাকিবে না; তবে ব্যতিক্রম, যদি তোমরা তাহাদের নিকট হইতে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন কর। আর আল্লাহ্ তাঁহার নিজের সম্বন্ধে তোমাদিগকে সাবধান করিতেছেন এবং আল্লাহ্র দিকেই প্রত্যাবর্তন।
২৯। বল, 'তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহা যদি তোমরা গোপন অথবা ব্যক্ত কর আল্লাহ্ উহা অবগত আছেন এবং আসমান ও যমীনে যাহা কিছু আছে তাহাও অবগত আছেন। আল্লাহ্ সর্ব- বিষয়ে সর্বশক্তিমান'।
৩০। যেদিন প্রত্যেকে সে যে ভাল কাজ করিয়াছে এবং সে যে মন্দ কাজ করিয়াছে তাহা বিদ্যমান পাইবে, সেদিন সে তাহার ও উহার মধ্যে দূর ব্যবধান কামনা করিবে। আল্লাহ্ তাঁহার নিজের সম্বন্ধে তোমাদিগকে সাবধান করিতেছেন। আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র।
৩১। বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদিগকে ভালবাসিবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
৩২। বল, আল্লাহ্ ও রাসুলের অনুগত হও।' যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয় তবে জানিয়া রাখ, আল্লাহ্ তো কাফিরদিগকে পসন্দ করেন না।
৩৩। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আদমকে, নূহকে ও ইব্ররাহীমের বংশধর এবং “ইমরানের বংশধরকে বিশ্বজগতে মনোনীত করিয়াছেন।
৩৪। ইহারা একে অপরের বংশধর। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৩৫। স্মরণ কর, যখন ইমরানের স্ত্রী বলিয়াছিল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যাহা আছে তাহা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করিলাম। সুতরাং তুমি আমার নিকট হইতে উহা কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সৰ্বজ্ঞ।'
৩৬। অতঃপর যখন সে উহাকে প্রসব করিল তখন সে বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমি কন্যা প্রসব করিয়াছি।' সে যাহা প্রসব করিয়াছে আল্লাহ্ তাহা সম্যক অবগত। “আর ছেলে তো এই মেয়ের মত নয়, আমি উহার নাম মারইয়াম রাখিয়াছি এবং অভিশপ্ত শয়তান হইতে তাহার ও তাহার বংশধরদের জন্য তোমার শরণ লইতেছি।'
৩৭। অতঃপর তাহার প্রতিপালক তাহাকে ভালরূপে কবুল করিলেন এবং তাহাকে উত্তমরূপে লালন-পালন করিলেন এবং তিনি তাহাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রাখিয়াছিলেন। যখনই যাকারিয়া কক্ষে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইত তখনই তাহার নিকট খাদ্য-সামগ্রী দেখিতে পাইত। সে বলিত, ‘হে মারইয়াম! এই সব তুমি কোথায় পাইলে?' সে বলিত, ‘উহা আল্লাহ্র নিকট হইতে। 'নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিক দান করেন।
৩৮। সেখানেই যাকারিয়া তাহার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করিয়া বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক। আমাকে তুমি তোমার নিকট হইতে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।
৩৯। যখন যাকারিয়া কক্ষে সালাতে দাঁড়াইয়াছিলেন তখন ফিরিশতাগণ তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিল, “আল্লাহ্ তোমাকে ইয়াহ্ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্র বাণীর সমর্থক, নেতা, স্ত্রী বিরাগী এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী। '
৪০। সে বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র হইবে কিরূপে? আমার তো বার্ধক্য আসিয়াছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা।' তিনি বলিলেন এইভাবেই।' আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা তাহা করেন।
৪১। সে বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে একটি নিদর্শন দাও। `তিনি বলিলেন, 'তোমার নিদর্শন এই যে, তিন দিন তুমি ইংগিত ব্যতীত কথা বলিতে পারিবে না, আর, তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করিবে এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁহার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিবে।'
৪২। স্মরণ কর, যখন ফিরিশতাগণ বলিয়াছিল, ‘হে মারইয়াম! আল্লাহ্ তোমাকে মনোনীত ও পবিত্র করিয়াছেন এবং বিশ্বের নারীগণের মধ্যে তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন।'
৪৩। 'হে মারইয়াম! তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও ও সিজদা কর এবং যাহারা রুকু করে তাহাদের সহিত রুকু' কর।'
৪৪। ইহা অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ — যাহা তোমাকে ওহী দ্বারা অবহিত করিতেছি। মারইয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাহাদের মধ্যে কে গ্রহণ করিবে ইহার জন্য যখন তাহারা তাহাদের কলম নিক্ষেপ করিতেছিল তুমি তখন তাহাদের নিকট ছিলে না এবং তাহারা যখন বাদানুবাদ করিতেছিল তখনও তুমি তাহাদের নিকট ছিলে না।
৪৫। স্মরণ কর, যখন ফিরিশতাগণ বলিল, 'হে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাকে তাঁহার পক্ষ হইতে একটি কালেমার সুসংবাদ দিতেছেন। তাহার নাম মসীহ্ মারইয়াম-তনয় 'ঈসা, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম হইবে।
৪৬। 'সে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সহিত কথা বলিবে এবং সে হইবে পুণ্যবানদের একজন।'
৪৭। সে বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করে নাই, আমার সন্তান হইবে কীভাবে?' তিনি বলিলেন, ‘এইভাবেই', আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, 'হও' এবং উহা হইয়া যায়।
৪৮। 'এবং তিনি তাহাকে শিক্ষা দিবেন কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইন্জীল।
৪৯। ‘এবং তাহাকে বনী ইসরাঈলের জন্য রাসূল করিবেন।' সে বলিবে, 'আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে তোমাদের নিকট নিদর্শন লইয়া আসিয়াছি। আমি তোমাদের জন্য কর্দম দ্বারা একটি পক্ষীসদৃশ আকৃতি গঠন করিব; অতঃপর উহাতে আমি ফুৎকার দিব; ফলে আল্লাহ্র হুকুমে উহা পাখী হইয়া যাইবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে নিরাময় করিব এবং আল্লাহ্র হুকুমে মৃতকে জীবন্ত করিব। তোমরা তোমাদের গৃহে যাহা আহার কর ও মওজুদ কর তাহা তোমাদিগকে বলিয়া দিব। তোমরা যদি মু'মিন হও তবে ইহাতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রহিয়াছে।
৫০। 'আর আমি আসিয়াছি আমার সম্মুখে তাওরাতের যাহা রহিয়াছে উহার সমর্থকরূপে ও তোমাদের জন্য যাহা নিষিদ্ধ ছিল উহার কতকগুলিকে বৈধ করিতে। এবং আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে তোমাদের নিকট নিদর্শন লইয়া আসিয়াছি। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর আর আমাকে অনুসরণ কর।
৫১। 'নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক, সুতরাং তোমরা তাঁহার ‘ইবাদত করিবে। ইহাই সরল পথ।'
৫২। যখন 'ঈসা তাহাদের অবিশ্বাস উপলব্ধি করিল তখন সে বলিল, 'আল্লাহ্র পথে কাহারা আমার সাহায্যকারী?' হাওয়ারীগণ বলিল, 'আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহে ঈমান আনিয়াছি। আমরা আত্মসমর্পণকারী, তুমি ইহার সাক্ষী থাক।
৫৩। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছ তাহাতে আমরা ঈমান আনিয়াছি এবং আমরা এই রাসূলের অনুসরণ করিয়াছি। সুতরাং আমাদিগকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত কর।'
৫৪। আর তাহারা চক্রান্ত করিয়াছিল আল্লাহ্ও কৌশল করিয়াছিলেন; আল্লাহ্ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ।
৫৫। স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ বলিলেন, হে “ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করিতেছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলিয়া • লইতেছি এবং যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের মধ্য হইতে তোমাকে পবিত্র করিতেছি। আর তোমার অনুসারিগণকে কিয়ামত পর্যন্ত কাফিরদের উপর প্রাধান্য দিতেছি, অতঃপর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন।' তারপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটিতেছে আমি উহা মীমাংসা করিয়া দিব।
৫৬। যাহারা কুফরী করিয়াছে আমি তাহাদিগকে দুনিয়ায় ও আখিরাতে কঠোর শাস্তি প্রদান করিব এবং তাহাদের কোন সাহায্যকারী নাই।
৫৭। আর যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং সৎকার্য করিয়াছে তিনি তাহাদের প্রতিফল পুরাপুরিভাবে প্রদান করিবেন। আল্লাহ্ যালিমদিগকে পছন্দ করেন না।
৫৮। ইহা আমি তোমার নিকট তিলাওয়াত করিতেছি আয়াতসমূহ ও সারগর্ভ বাণী হইতে।
৫৯। আল্লাহ্র নিকট নিশ্চয়ই 'ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সদৃশ। তিনি তাহাকে মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছিলেন; অতঃপর তাহাকে বলিয়াছিলেন, 'হও', ফলে সে হইয়া গেল।
৬০। সত্য তো তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে, সুতরাং তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
৬১। তোমার নিকট জ্ঞান আসিবার পর যে কেহ এই বিষয়ে তোমার সহিত তর্ক করে তাহাকে বল ‘আইস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রগণকে ও তোমাদের পুত্রগণকে, আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে আমাদের নিজদিগকে ও তোমাদের নিজদিগকে, অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহ্র লা'নত।
৬২। নিশ্চয়ই ইহা সত্য বৃত্তান্ত। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য ইলাহ্ নাই। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরম প্রতাপশালী, প্রজ্ঞাময়।
৬৩। যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ফাসাদকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
৬৪। তুমি বল, 'হে কিতাবীগণ! আইস সে কথায় যাহা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত কাহারও 'ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁহার শরীক না করি এবং আমাদের কেহ কাহাকেও আল্লাহ্ ব্যতীত রব হিসাবে গ্রহণ না করে।' যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয় তবে বল, 'তোমরা সাক্ষী থাক, অবশ্যই আমরা মুসলিম।'
৬৫। হে কিতাবীগণ! ইব্রাহীম সম্বন্ধে কেন তোমরা তর্ক কর, অথচ তাওরাত ও ইনজীল তো তাহার পরেই অবতীর্ণ হইয়াছিল? তোমরা কি বুঝ না?
৬৬। হাঁ, তোমরা তো সেই সব লোক, যে বিষয়ে তোমাদের সামান্য জ্ঞান আছে সে বিষয়ে তোমরাই তো তর্ক করিয়াছ, তবে যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নাই সে বিষয়ে কেন তর্ক করিতেছ? আল্লাহ্ জ্ঞাত আছেন এবং তোমরা জ্ঞাত নহ।
৬৭। ইব্ররাহীম ইয়াহুদীও ছিল না, খৃস্টানও ছিল না; সে ছিল একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না।
৬৮। নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে তাহারা ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম যাহারা তাহার অনুসরণ করিয়াছে এবং এই নবী ও যাহারা ঈমান আনিয়াছে; আর আল্লাহ্ মু'মিনদের অভিভাবক।
৬৯। কিতাবীদের একদল চাহে যেন তোমাদিগকে বিপথগামী করিতে পারে, অথচ তাহারা নিজদিগকেই বিপথগামী করে, কিন্তু তাহারা উপলব্ধি করে না।
৭০। হে কিতাবীগণ! তোমরা কেন আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার কর, যখন তোমরাই সাক্ষ্য বহন কর।
৭১। হে কিতাবীগণ! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সহিত মিশ্রিত কর এবং সত্য গোপন কর, যখন তোমরা জান?
৭২। কিতাবীদের একদল বলিল, "যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তোমরা দিনের প্রারম্ভে তাহা বিশ্বাস কর এবং দিনের শেষে তাহা প্রত্যাখ্যান কর; হয়ত তাহারা ফিরিবে।
৭৩। “আর যে ব্যক্তি তোমাদের দীনের . অনুসরণ করে তাহাদিগকে ব্যতীত আর কাহাকেও বিশ্বাস করিও না।' বল, আল্লাহ্র নির্দেশিত পথই একমাত্র পথ। ইহা এইজন্য যে, তোমাদিগকে যাহা দেওয়া হইয়াছে অনুরূপ আর কাহাকেও দেওয়া হইবে অথবা তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে তাহারা তোমাদিগেক যুক্তিতে পরাভূত করিবে। বল, 'অনুগ্রহ আল্লাহ্রই হাতে; তিনি যাহাকে ইচ্ছা তাহা প্রদান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
৭৪। তিনি স্বীয় অনুগ্রহের জন্য যাহাকে ইচ্ছা বিশেষ করিয়া বাছিয়া লন। আল্লাহ্ মহাঅনূগ্রহশীল।
৭৫। কিতাবীদের মধ্যে এমন লোক রহিয়াছে, যে বিপুল সম্পদ আমানত রাখিলেও ফেরত দিবে; আবার এমন লোকও আছে। যাহার নিকট একটি দীনারও রাখিলে তাহার পিছনে লাগিয়া না থাকিলে সে ফেরত দিবে না, ইহা এই কারণে যে, তাহারা বলে, নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোন বাধ্যবাধকতা নাই', এবং তাহারা জানিয়া শুনিয়া আল্লাহ্র সম্পর্কে মিথ্যা বলে।
৭৬। হাঁ, কেহ তাহার অংগীকার পূর্ণ করিলে এবং তাকওয়া অবলম্বন করিয়া চলিলে আল্লাহ্ অবশ্যই মুত্তাকীদিগকে ভালবাসেন।
৭৭। যাহারা আল্লাহ্র সহিত কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে পরকালে তাহাদের কোন অংশ নাই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাহাদের সহিত কথা বলিবেন না এবং তাহাদের দিকে চাহিবেন না এবং তাহাদিগকে পরিশুদ্ধ করিবেন না; তাহাদের জন্য মর্মস্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
৭৮। আর নিশ্চয়ই তাহাদের মধ্যে একদল লোক আছেই যাহারা কিতাবকে জিহ্ববা দ্বারা বিকৃত করে যাহাতে তোমরা উহাকে আল্লাহ্র কিতাবের অংশ মনে কর; কিন্তু উহা কিতাবের অংশ নহে এবং তাহারা বলে, “উহা আল্লাহ্র পক্ষ হইতে'; কিন্তু উহা আল্লাহ্র পক্ষ হইতে প্রেরিত নহে। তাহারা জানিয়া শুনিয়া আল্লাহ্র সম্পর্কে মিথ্যা বলে।
৭৯। কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ কিতাব, হিকমত ও নুবুওয়াত দান করিবার পর সে মানুষকে বলিবে, 'আল্লাহ্র পরিবর্তে তোমরা আমার দাস হইয়া যাও', ইহা তাহার জন্য সঙ্গত নহে; বরং সে বলিবে, 'তোমরা রব্বানী হইয়া যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দান কর এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর।'
৮০। ফিরিশতাগণকে ও নবীগণকে প্রতি- পালকরূপে গ্রহণ করিতে সে তোমা- দিগকে নির্দেশ দিতে পারে না। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পর সে কি তোমাদিগকে কুফরীর নির্দেশ দিবে?
৮১। স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ নবীদের অংগীকার লইয়াছিলেন যে, তোমাদিগকে কিতাব ও হিকমত যাহা কিছু দিয়াছি অতঃপর তোমাদের কাছে যাহা আছে তাহার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসিবে তখন তোমরা অবশ্যই তাহার প্রতি ঈমান আনিবে এবং তাহাকে সাহায্য করিবে।' তিনি বলিলেন, “তোমরা কি স্বীকার করিলে? এবং এই সম্পর্কে আমার অংগীকার কি তোমরা গ্রহণ করিলে? তাহারা বলিল, 'আমরা স্বীকার করিলাম।' তিনি বলিলেন, 'তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সহিত সাক্ষী রহিলাম।'
৮২। ইহার পর যাহারা মুখ ফিরাইবে তাহারাই সত্যপথত্যাগী।
৮৩। তাহারা কি চাহে আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য দীন? —যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যাহা কিছু রহিয়াছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাঁহার নিকট আত্মসমর্পণ করিয়াছে! আর তাঁহার দিকেই তাহারা প্রত্যানীত হইবে।
৮৪। বল, 'আমরা আল্লাহ্তে এবং আমাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে এবং ইব্ররাহীম, ইসমা'ঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁহার বংশধরগণের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছিল এবং যাহা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রদান করা হইয়াছে তাহাতে ঈমান আনিয়াছি, আমরা তাহাদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না এবং আমরা তাঁহারই নিকট আত্মসমর্পণকারী।'
৮৫। কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন গ্রহণ করিতে চাহিলে তাহা কখনও কবূল করা হইবে না এবং সে হইবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
৮৬। আল্লাহ্ কিরূপে সৎপথে পরিচালিত করিবেন সেই সম্প্রদায়কে যাহারা ঈমান আনয়নের পর ও রাসূলকে সত্য বলিয়া সাক্ষ্যদান করিবার পর এবং তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর কুফরী করে? আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
৮৭। ইহারাই তাহারা যাহাদের কর্মফল এই যে, তাহাদের উপর আল্লাহ্র, , ফিরিশতা- গণের এবং মানুষ সকলেরই লা'নত।
৮৮। তাহারা ইহাতে স্থায়ী হইবে, তাহাদের শান্তি লঘু করা হইবে না এবং তাহাদিগকে বিরামও দেওয়া হইবে না;
৮৯। তবে ইহার পর যাহারা তওবা করে ও নিজদিগকে সংশোধন করিয়া লয় তাহারা ব্যতিরেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৯০। ঈমান আনার পর যাহারা কুফরী করে এবং যাহাদের সত্য প্রত্যাখ্যান -প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাইতে থাকে তাহাদের তওবা কখনও কবুল হইবে না। ইহারাই পথভ্রষ্ট।
৯১। যাহারা কুফরী করে এবং কাফিররূপে যাহাদের মৃত্যু ঘটে তাহাদের কাহারও নিকট হইতে পৃথিবীপূর্ণ স্বর্ণ বিনিময়- স্বরূপ প্রদান করিলেও তাহা কখনও ককূল করা হইবে না। ইহারাই তাহারা যাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে; ইহাদের কোন সাহায্যকারী নাই।
চতুর্থ পারা
৯২। তোমরা যাহা ভালবাস তাহা হইতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করিবে না। তোমরা যাহা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ্ অবশ্যই সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
৯৩। তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ইসরাঈল নিজের জন্য যাহা হারাম করিয়াছিল তাহা ব্যতীত বনী ইস্রাঈলের জন্য যাবতীয় খাদ্যই হালাল ছিল। বল, 'যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তাওরাত আন এবং পাঠ কর।'
৯৪। ইহার পরও যাহারা আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা সৃষ্টি করে তাহারাই যালিম।
৯৫। বল, ‘আল্লাহ্ সত্য বলিয়াছেন। সুতরাং তোমরা একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর, সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নহে।
৯৬। নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল তাহা তো বাক্কায়;, উহা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী।
৯৭। উহাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইব্ররাহীম। আর যে কেহ সেথায় প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যাহার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা তাহার অবশ্য কর্তব্য। এবং কেহ প্রত্যাখ্যান করিলে সে জানিয়া রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নহেন।
৯৮। বল, 'হে কিতাবীগণ! তোমরা আল্লাহ্র নিদর্শনকে কেন প্রত্যাখ্যান কর। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ উহার সাক্ষী।
৯৯। বল, 'হে কিতাবীগণ। যে ব্যক্তি ঈমান আনিয়াছে তাহাকে কেন আল্লাহর পথে বাধা দিতেছ, উহাতে বক্তৃতা অন্বেষণ করিয়া? অথচ তোমরা সাক্ষী। তোমরা যাহা কর, আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নহেন।'
১০০। হে মু'মিনগণ! যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে, তোমরা যদি তাহাদের দল বিশেষের আনুগত্য কর, তবে তাহারা তোমাদিগকে ঈমান আনার পর আবার কাফির বানাইয়া ছাড়িবে।
১০১। কিরূপে তোমরা সত্য প্রত্যাখ্যান করিবে যখন আল্লাহ্র আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট পঠিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে তাঁহার রাসূল রহিয়াছে? কেহ আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করিলে সে অবশ্যই সরল পথে পরিচালিত হইবে।
১০২। হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হইয়া কোন অবস্থায় মরিও না।
১০৩। তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র স্মরণ করঃ তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু। এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁহার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হইয়া গেলে। তোমরা তো অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ্ উহা হইতে তোমাদিগকে রক্ষা করিয়াছেন। এইরূপে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁহার নিদর্শনসমূহ স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাহাতে তোমরা সৎ পথ পাইতে পার।
১০৪। তোমাদের মধ্যে এমন একদল হউক যাহারা কল্যাণের দিকে আহ্ববান করিবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কার্যে নিষেধ করিবে; ইহারাই সফলকাম।
১০৫। তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর বিচ্ছিন্ন হইয়াছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করিয়াছে। তাহাদের জন্য মহাশান্তি রহিয়াছে,
১০৬। সেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হইবে এবং কতক মুখ কাল হইবে; যাহাদের মুখ কাল হইবে তাহাদিগকে বলা হইবে, ‘ঈমান আনয়নের পর কি তোমরা কুফরী করিয়াছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করিতে।
১০৭। আর যাহাদের মুখ উজ্জ্বল হইবে তাহারা আল্লাহর অনুগ্রহে থাকিবে, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
১০৮। এইগুলি আল্লাহ্র আয়াত, তোমার নিকট যথাযথভাবে তিলাওয়াত করিতেছি। আল্লাহ্ বিশ্বজগতের প্রতি জুলুম করিতে চাহেন না।
১০৯। আসমানে যাহা কিছু আছে ও যমীনে যাহা কিছু আছে সব আল্লাহরই; আল্লাহ্রর নিকটই সব কিছু প্রত্যানীত হইবে।
১১০। তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হইয়াছে; তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, অসৎকার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহে বিশ্বাস কর। কিতাবীগণ যদি ঈমান আনিত তবে তাহাদের জন্য ভাল হইত তাহাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মু'মিন আছে; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ সত্যত্যাগী।
১১১। সামান্য ক্লেশ দেওয়া ছাড়া তাহারা তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। যদি তাহারা তোমাদের সহিত যুদ্ধ • করে তবে তাহারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে; অতঃপর তাহারা সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে না।
১১২। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও মানুষের প্রতিশ্রুতির বাহিরে যেখানেই তাহাদিগকে পাওয়া গিয়াছে সেখানেই তাহারা লাঞ্ছিত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইয়াছে এবং হীনতাগ্রস্ত হইয়াছে। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহর আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করিত এবং অন্যায়রূপে নবীগণকে হত্যা করিত; ইহা এইজন্য যে, তাহারা অবাধ্য হইয়াছিল এবং সীমালংঘন করিত।
১১৩। তাহারা সকলে এক রকম নহে। কিতাবীদের মধ্যে অবিচলিত একদল আছে; তাহারা রাত্রিকালে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং সিজদা করে।
১১৪। তাহারা আল্লাহ্ এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সৎকার্যের নির্দেশ দেয়, অসৎকার্যে নিষেধ করে এবং তাহারা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করে। তাহারাই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত।
১১৫। উত্তম কাজের যাহা কিছু তাহারা করে তাহা হইতে তাহাদিগকে কখনও বঞ্চিত করা হইবে না। আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
১১৬। যাহারা কুফরী করে তাহাদের ধনৈশ্বর্য্য ও এই সন্তান-সন্ততি আল্লাহ্র নিকট কখনও কোন কাজে আসিবে না। তাহারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
১১৭। এই পার্থিব জীবনে যাহা তাহারা ব্যয় করে তাহার দৃষ্টান্ত হিমশীতল বায়ু, উহা যে জাতি নিজেদের প্রতি যুলুম করিয়াছে তাহাদের শস্যক্ষেত্রকে আঘাত করে ও বিনষ্ট করে। আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি কোন যুলুম করেন নাই, তাহারাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে।
১১৮। হে মু'মিনগণ! তোমাদের আপনজন ব্যতীত অপর কাহাকেও অন্তরংগ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না। তাহারা তোমাদের অনিষ্ট করিতে ত্রুটি করিবে না; যাহা তোমাদিগকে বিপন্ন করে তাহাই তাহারা কামনা করে। তাহাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাহাদের হৃদয় যাহা গোপন রাখে তাহা আরও গুরুতর। তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি, যদি তোমরা অনুধাবন কর।
১১৯। দেখ, তোমরাই তাহাদিগকে ভালবাস কিন্তু তাহারা তোমাদিগকে ভালবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত কিতাবে ঈমান রাখ আর তাহারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, 'আমরা বিশ্বাস করি; কিন্তু তাহারা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে তাহারা নিজেদের অঙ্গুলির অগ্রভাগ দাঁতে কাটিয়া থাকে। বল, 'তোমাদের আক্রোশেই তোমরা মর। অন্তরে যাহা রহিয়াছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।
১২০। তোমাদের মঙ্গল হইলে উহা তাহাদিগকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের অমঙ্গল হইলে তাহারা উহাতে আনন্দিত হয়। তোমরা যদি ধৈর্যশীল হও এবং মুত্তাকী হও তবে তাহাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই ক্ষতি করিতে পারিবে না। তাহারা যাহা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাহা পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন।
১২১। স্মরণ কর, যখন তুমি তোমার পরিজন- বর্গের নিকট হইতে প্রত্যূষে বাহির হইয়া যুদ্ধের জন্য মু'মিনগণকে ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করিতেছিলে; এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ;
১২২। যখন তোমাদের মধ্যে দুই দলের সাহস হারাইবার উপক্রম হইয়াছিল অথচ আল্লাহ্ উভয়ের বন্ধু ছিলেন, আল্লাহর প্রতিই যেন মু'মিনগণ নির্ভর করে।
১২৩। আর বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে আল্লাহ্ তো তোমাদিগকে সাহায্য করিয়াছিলেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
১২৪। স্মরণ কর, যখন তুমি মু'মিনগণকে বলিতেছিলে, “ইহা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত তিন সহস্র ফিরিশতা দ্বারা তোমাদিগকে সহায়তা করিবেন?”
১২৫। হাঁ, নিশ্চয়, যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং সাবধান হইয়া চল তবে তাহারা দ্রুতগতিতে তোমাদের উপর আক্রমণ করিলে আল্লাহ্ পাঁচ সহস্ৰ চিহ্নিত ফিরিশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করিবেন।
১২৬। ইহা তো আল্লাহ্ তোমাদের জন্য শুধু সুসংবাদ ও তোমাদের চিত্ত প্রশান্তির জন্য করিয়াছেন এবং সাহায্য তো শুধু পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্র নিকট হইতেই হয়,
১২৭। কাফিরদের এক অংশকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অথবা লাঞ্ছিত করার জন্য; ফলে তাহারা নিরাশ হইয়া ফিরিয়া যায়।
১২৮। তিনি তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাহাদিগকে শাস্তি দিবেন—এই বিষয়ে তোমার করণীয় কিছুই নাই; কারণ তাহারা তো যালিম।
১২৯। আসমানে যাহা কিছু আছে ও যমীনে যাহা কিছু আছে সমস্ত আল্লাহরই। তিনি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা শাস্তি দান করেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৩০। হে মু'মিনগণ! তোমরা ক্রমবর্ধমান সুদ খাইও না এবং আল্লাহুকে ভয় কর যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
১৩১। এবং তোমরা সেই অগ্নিকে ভয় কর যাহা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখা হইয়াছে।
১৩২। তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য কর যাহাতে তোমরা কৃপা লাভ করিতে পার।
১৩৩। তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যাহার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়, যাহা প্রস্তুত রাখা হইয়াছে মুত্তাকীদের জন্য,
১৩৪। যাহারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যাহারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদিগকে ভালবাসেন;
১৩৫। এবং যাহারা কোন অশ্লীল কার্য করিয়া ফেলিলে অথবা নিজেদের প্রতি যুলুম করিলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ্ ব্যতীত কে পাপ ক্ষমা করিবে? এবং তাহারা যাহা করিয়া ফেলে, জানিয়া শুনিয়া তাহারই পুনরাবৃত্তি করে না।
১৩৬। উহারাই তাহারা, যাহাদের পুরস্কার তাহাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম!
১৩৭। তোমাদের পূর্বে বহু বিধান ব্যবস্থা গত হইয়াছে, সুতরাং তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যাশ্রয়ীদের কি পরিণাম!
১৩৮ । ইহা মানবজাতির জন্য স্পষ্ট বর্ণনা এবং মুত্তাকীদের জন্য, হিদায়াত ও উপদেশ।
১৩৯। তোমরা হীনবল হইও না এবং দুঃখিতও হইও না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মু'মিন হও।
১৪০। যদি তোমাদের আঘাত লাগিয়া থাকে, অনুরূপ আঘাত তো উহাদেরও লাগিয়াছিল। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলির পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাহাতে আল্লাহ্ মু'মিনগণকে জানিতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হইতে কতককে শহীদরূপে গ্রহণ করিতে পারেন এবং আল্লাহ্ যালিমদিগকে পসন্দ করেন না;
১৪১।' এবং যাহাতে আল্লাহ্ মু'মিনদিগকে পরিশোধন করিতে পারেন এবং কাফিরদিগকে নিশ্চিহ্ন করিতে পারেন।
১৪২। তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, অথচ আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করিয়াছে আর কে ধৈর্যশীল তাহা এখনও প্রকাশ করেন নাই?
১৪৩। মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে তোমরা তো উহা কামনা করিতে, এখন তো তোমরা তাহা স্বচক্ষে দেখিলে।
১৪৪। মুহাম্মাদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তবে তোমরা কি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে? এবং কেহ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিলে সে কখনও আল্লাহর ক্ষতি করিবে না; বরং আল্লাহ্ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদিগকে পুরষ্কৃত করিবেন।
১৪৫। আল্লাহ্রর অনুমতি ব্যতীত কাহারও মৃত্যু হইতে পারে না, যেহেতু উহার মেয়াদ অবধারিত। কেহ পার্থিব পুরস্কার চাহিলে আমি তাহাকে তাহার কিছু দেই এবং কেহ পারলৌকিক পুরস্কার চাহিলে আমি তাহাকে তাহার কিছু দেই এবং শীঘ্রই কৃতজ্ঞদিগকে পুরষ্কৃত করিব।
১৪৬। এবং কত নবী যুদ্ধ করিয়াছে, তাহাদের সাথে বহু আল্লাহওয়ালা ছিল। আল্লাহ্র পথে তাহাদের যে বিপর্যয় ঘটিয়াছিল তাহাতে তাহারা হীনবল হয় নাই, দুর্বল হয় নাই এবং নত হয় নাই। আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদিগকে ভালবাসেন।
১৪৭। এই কথা ব্যতীত তাহাদের আর কোন কথা ছিল না, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপ এবং আমাদের কার্যে সীমালংঘন তুমি ক্ষমা কর, আমাদের পা সুদৃঢ় রাখ এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদিগকে সাহায্য কর।'
১৪৮। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদিগকে পার্থিব পুরস্কার এবং উত্তম পারলৌকিক পুরস্কার দান করেন। আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদিগকে ভালবাসেন।
১৪৯। হে মু'মিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তবে তাহারা তোমাদিগকে বিপরীত দিকে ফিরাইয়া দিবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া পড়িবে।
১৫০। আল্লাহ্ই তো তোমাদের অভিভাবক এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।
১৫১। আমি কাফিরদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করিব, যেহেতু তাহারা আল্লাহ্র শরীক করিয়াছে, যাহার স্বপক্ষে আল্লাহ্ কোন সনদ পাঠান নাই। জাহান্নাম তাহাদের আবাস; কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল যালিমদের!
১৫২। আল্লাহ্ তোমাদের সহিত তাঁহার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করিয়াছিলেন যখন তোমরা আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে তাহাদিগকে বিনাশ করিতেছিলে, যে পর্যন্ত না তোমরা সাহস হারাইলে এবং নির্দেশ সম্বন্ধে মতভেদ সৃষ্টি করিলে এবং যাহা তোমরা ভালবাস তাহা তোমাদিগকে দেখাইবার পর তোমরা অবাধ্য হইলে। তোমাদের কতক ইহকাল চাহিতেছিল এবং কতক পরকাল চাহিতেছিল। অতঃপর তিনি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদিগকে তাহাদের হইতে ফিরাইয়া দিলেন। অবশ্য তিনি তোমাদিগকে ক্ষমা করিলেন এবং আল্লাহ্ মু'মিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল।
১৫৩। স্মরণ কর, তোমরা যখন উপরের দিকে ছুটিতেছিলে এবং পিছন ফিরিয়া কাহারও প্রতি লক্ষ্য করিতেছিলে না, আর রাসূল তোমাদিগকে পিছন দিক হইতে আহ্বান করিতেছিল। ফলে তিনি তোমাদিগকে বিপদের উপর বিপদ দিলেন যাহাতে তোমরা যাহা হারাইয়াছ অথবা যে বিপদ তোমাদের উপর আসিয়াছে তাহার জন্য তোমরা দুঃখিত না হও। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।
১৫৪ । অতঃপর দুঃখের পর তিনি তোমাদিগকে প্রদান করিলেন প্রশান্তি তন্দ্রারূপে, যাহা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করিয়াছিল। এবং একদল জাহিলী যুগের অজ্ঞের ন্যায় আল্লাহ্ সম্বন্ধে অবাস্তব ধারণা করিয়া নিজেরাই নিজদিগকে উদ্বিগ্ন করিয়াছিল এই বলিয়া যে, 'আমাদের কি কোন অধিকার আছে?' বল, ‘সমস্ত বিষয় আল্লাহ্রই ইখতিয়ারে। যাহা তাহারা তোমার নিকট প্রকাশ করে না, তাহারা তাহাদের অন্তরে উহা গোপন রাখে, আর বলে, 'এই ব্যাপারে আমাদের কোন অধিকার থাকিলে আমরা এই স্থানে নিহত হইতাম না।' বল, 'যদি তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করিতে তবুও নিহত হওয়া যাহাদের জন্য অবধারিত ছিল তাহারা নিজেদের মৃত্যুস্থানে বাহির হইত। ইহা এইজন্য যে, আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহা পরিশোধন করেন। অন্তরে যাহা আছে আল্লাহ্ সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।
১৫৫। যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল সেই দিন তোমাদের মধ্য হইতে যাহারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়াছিল, তাহাদের কোন কৃতকর্মের জন্য শয়তানই তাহাদের পদস্খলন ঘটাইয়া- ছিল। অবশ্য আল্লাহ্ তাহাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন। আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ ও পরম সহনশীল।
১৫৬। হে মু'মিনগণ! তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা কুফরী করে এবং তাহাদের ভ্রাতাগণ যখন দেশে দেশে সফর করে অথবা যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহাদের সম্পর্কে বলে, “তাহারা যদি আমাদের নিকট থাকিত তবে তাহারা মরিত না এবং নিহত হইত না।' ফলে আল্লাহ্ ইহাই তাহাদের মনস্তাপে পরিণত করেন; আল্লাহ্ই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ উহার সম্যক দ্রষ্টা।
১৫৭। তোমরা আল্লাহ্র পথে নিহত হইলে অথবা মৃত্যু বরণ করিলে, যাহা তাহারা জমা করে, আল্লাহর ক্ষমা এবং দয়া অবশ্য তাহা অপেক্ষা শ্রেয়।
১৫৮। এবং তোমাদের মৃত্যু হইলে অথবা তোমরা নিহত হইলে আল্লাহ্রই নিকট তোমাদিগকে একত্র করা হইবে।
১৫৯। আল্লাহ্র দয়ায় তুমি তাহাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হইয়াছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হইতে তবে তাহারা তোমার আশপাশ হইতে সরিয়া পড়িত। সুতরাং তুমি তাহাদিগকে ক্ষমা কর এবং তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কাজে-কর্মে তাহাদের সহিত পরামর্শ কর, অতঃপর তুমি কোন সংকল্প করিলে আল্লাহ্র উপর নির্ভর করিবে; যাহারা নির্ভর করে আল্লাহ্ তাহাদিগকে ভালবাসেন।
১৬০। আল্লাহ্ তোমাদিগকে সাহায্য করিলে তোমাদের উপর জয়ী হইবার কেহই থাকিবে না। আর তিনি তোমাদিগকে সাহায্য না করিলে, তিনি ছাড়া কে এমন আছে, যে তোমাদিগকে সাহায্য করিবে? মু'মিনগণ আল্লাহ্র উপরই নির্ভর করুক।
১৬১। অন্যায়ভাবে কোন বস্তু গোপন করিবে, ইহা নবীর পক্ষে অসম্ভব। এবং কেহ অন্যায়ভাবে কিছু গোপন করিলে, যাহা সে অন্যায়ভাবে গোপন করিবে কিয়ামতের দিন সে তাহা লইয়া আসিবে। অতঃপর প্রত্যেককে, যাহা সে অর্জন করিয়াছে তাহা পূর্ণ মাত্রায় দেওয়া হইবে। তাহাদের প্রতি কোন যুলুম করা হইবে না।
১৬২। আল্লাহ্ যাহাতে রাযী, যে তাহারই অনুসরণ করে, সে কি উহার মত যে আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হইয়াছে এবং জাহান্নামই যাহার আবাস? এবং উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
১৬৩। আল্লাহ্র নিকট তাহারা বিভিন্ন স্তরের; তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
১৬৪। আল্লাহ্ মু'মিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করিয়াছেন যে, তিনি তাহাদের নিজেদের মধ্য হইতে তাহাদের নিকট রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন, যে তাঁহার আয়াতসমূহ তাহাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তাহাদিগকে পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তাহারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।
১৬৫। কি ব্যাপার! যখন তোমাদের উপর মুসীবত আসিল তখন তোমরা বলিলে, “ইহা কোথা হইতে আসিল?' অথচ তোমরা তো দ্বিগুণ বিপদ ঘটাইয়া- ছিলে। বল, 'ইহা তোমাদের নিজেদেরই নিকট হইতে'; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১৬৬। যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল, সেদিন তোমাদের উপর যে বিপর্যয় ঘটিয়াছিল তাহা আল্লাহ্রই হুকুমে; ইহা মু'মিনগণকে জানিবার জন্য;
১৬৭। এবং মুনাফিকদিগকে জানিবার জন্য এবং তাহাদিগকে বলা হইয়াছিল, ‘আইস, তোমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ কর অথবা প্রতিরোধ কর।' তাহারা বলিয়াছিল, 'যদি যুদ্ধ জানিতাম তবে নিশ্চিতভাবে তোমাদের অনুসরণ করিতাম।' সেদিন তাহারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীর নিকটতর ছিল। যাহা তাহাদের অন্তরে নাই তাহারা তাহা মুখে বলে; তাহারা যাহা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।
১৬৮। যাহারা ঘরে বসিয়া রহিল এবং তাহাদের ভাইদের সম্বন্ধে বলিল যে, তাহারা তাহাদের কথামত চলিলে নিহত হইত না, তাহাদিগকে বল, “যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে নিজদিগকে মৃত্যু হইতে রক্ষা কর।'
১৬৯। যাহারা আল্লাহ্র পথে নিহত হইয়াছে তাহাদিগকে কখনই মৃত মনে করিও না, বরং তাহারা জীবিত এবং তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহারা জীবিকা প্রাপ্ত।
১৭০। আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাহাদিগকে যাহা দিয়াছেন তাহাতে তাহারা আনন্দিত এবং তাহাদের পিছনে যাহারা এখনও তাহাদের সহিত মিলিত হয় নাই তাহাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে, এইজন্য যে, তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
১৭১। আল্লাহ্র নিয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য তাহারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং ইহা এই কারণে যে, আল্লাহ্ মু'মিনদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
১৭২। যখম হওয়ার পর যাহারা আল্লাহ্ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিয়াছে তাহাদের মধ্যে যাহারা সৎকার্য করে এবং তাওয়া অবলম্বন করিয়া চলে তাহাদের জন্য মহাপুরস্কার রহিয়াছে।
১৭৩। ইহাদিগকে লোকে বলিয়াছিল, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হইয়াছে, সুতরাং তোমরা তাহাদিগকে ভয় কর; কিন্তু ইহা তাহাদের ঈমান দৃঢ়তর করিয়াছিল এবং তাহারা বলিয়াছিল, ‘আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্মবিধায়ক!'
১৭৪। তারপর তাহারা আল্লাহ্র নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরিয়া আসিয়াছিল, কোন অনিষ্ট তাহাদিগকে স্পর্শ করে নাই এবং আল্লাহ্ যাহাতে রাযী তাহারা তাহারই অনুসরণ করিয়াছিল এবং আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল।
১৭৫। ইহারাই শয়তান, তোমাদিগকে তাহার বন্ধুদের ভয় দেখায়; সুতরাং যদি তোমরা মু'মিন হও তবে তোমরা তাহাদিগকে ভয় করিও না, আমাকেই ভয় কর।
১৭৬। যাহারা কুফরীতে ত্বরিতগতি, তাহাদের আচরণ যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়। তাহারা কখনও আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। আল্লাহ্ আখিরাতে তাহাদিগকে কোন অংশ দিবার ইচ্ছা করেন না, তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে।
১৭৭। যাহারা ঈমানের বিনিময়ে কুফরী ক্রয় করিয়াছে তাহারা কখনও আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। তাহাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।
১৭৮। কাফিরগণ যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাহাদের মঙ্গলের জন্য; আমি অবকাশ দিয়া থাকি যাহাতে তাহাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাহাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।
১৭৯। অসৎকে সৎ হইতে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় রহিয়াছ আল্লাহ্ মু'মিনগণকে সেই অবস্থায় ছাড়িয়া দিতে পারেন না। অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদিগকে আল্লাহ্ অবহিত করিবার নহেন; তবে আল্লাহ্ তাঁহার রাসূলগণের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলগণের উপর ঈমান আন। তোমরা ঈমান আনিলে ও তাকওয়া অবলম্বন করিয়া চলিলে তোমাদের জন্য মহাপুরস্কার রহিয়াছে।
১৮০। আর আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে যাহা তোমাদিগকে দিয়াছেন তাহাতে যাহারা কৃপণতা করে তাহাদের জন্য উহা মঙ্গল, ইহা যেন তাহারা কিছুতেই মনে না করে। না, ইহা তাহাদের জন্য অমঙ্গল। যাহাতে তাহারা কৃপণতা করিবে কিয়ামতের দিন উহাই তাহাদের গলায় বেড়ি হইবে। আসমান ও যমীনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহ্ই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।
১৮১। যাহারা বলে, 'আল্লাহ্ অবশ্যই অভাবগ্রস্ত আর আমরা অভাবমুক্ত', তাহাদের কথা আল্লাহ্ শুনিয়াছেন। তাহারা যাহা বলিয়াছে তাহা এবং নবীদিগকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিষয় আমি লিখিয়া রাখিব এবং বলিব, ‘তোমরা দহন যন্ত্রণা ভোগ কর।'
১৮২। ইহা তোমাদের কৃতকর্মের ফল এবং উহা এই কারণে যে, আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি যালিম নহেন।
১৮৩। যাহারা বলে, 'আল্লাহ্ আমাদিগকে আদেশ দিয়াছেন যে, আমরা যেন কোন রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করি যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাদের নিকট এমন কুরবানী উপস্থিত না করিবে যাহা অগ্নি গ্রাস করিবে; তাহাদিগকে বল, 'আমার পূর্বে অনেক রাসূল স্পষ্ট নিদর্শনসহ এবং তোমরা যাহা বলিতেছ; তাহাসহ তোমাদের নিকট আসিয়াছিল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে কেন তাহাদিগকে হত্যা করিয়াছিলে?'
১৮৪। তাহারা যদি তোমাকে অস্বীকার করে, তোমার পূর্বে যে সকল রাসূল স্পষ্ট নিদর্শন, আসমানী সহীফা এবং দীপ্তিমান কিতাবসহ আসিয়াছিল তাহাদিগকেও তো অস্বীকার করা হইয়াছিল।
১৮৫। জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিবে। কিয়ামতের দিন তোমাদিগকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেওয়া হইবে। যাহাকে অগ্নি হইতে দূরে রাখা হইবে এবং জান্নাতে দাখিল করা হইবে সে-ই সফলকাম এবং পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।
১৮৬। তোমাদিগকে নিশ্চয় তোমাদের ধনৈশ্বর্য ও জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হইবে। তোমাদের পূর্বে যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছিল তাহাদের এবং মুশরিকদের নিকট হইতে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনিবে। যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয়ই উহা হইবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
১৮৭। স্মরণ কর, যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছিল আল্লাহ্ তাহাদের প্রতিশ্রুতি লইয়াছিলেনঃ “তোমরা উহা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশ করিবে এবং উহা গোপন করিবে না।' ইহার পরও তাহারা উহা অগ্রাহ্য করে ও তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে; সুতরাং তাহারা যাহা ক্রয় করে তাহা কত নিকৃষ্ট!
১৮৮। যাহারা নিজেরা যাহা করিয়াছে তাহাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং যাহা নিজেরা করে নাই এমন কার্যের জন্য প্রশংসিত হইতে ভালবাসে, তাহারা শাস্তি হইতে মুক্তি পাইবে—— এইরূপ তুমি কখনও মনে করিও না। তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে৷
১৮৯। আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্রই; আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১৯০। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রহিয়াছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য,
১৯১। যাহারা দাঁড়াইয়া বসিয়া ও শুইয়া আল্লাহ্র স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে ও বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি ইহা নিরর্থক সৃষ্টি কর নাই, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদিগকে অগ্নিশাস্তি হইতে রক্ষা কর।
১৯২। 'হে আমাদের প্রতিপালক! কাহাকেও তুমি অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলে তাহাকে তো তুমি নিশ্চয় হেয় করিলে এবং যালিমদের কোন সাহায্যকারী নাই;
১৯৩। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এক আহ্বায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করিতে শুনিয়াছি, 'তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন।' সুতরাং আমরা ঈমান আনিয়াছি। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের পাপ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কার্যগুলি দূরীভূত কর এবং আমাদিগকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করিয়া মৃত্যু দিও।
১৯৪। ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার রাসূলগণের মাধ্যমে আমাদিগকে যাহা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়াছ তাহা আমাদিগকে দাও এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে হেয় করিও না। নিশ্চয়ই ‘তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম কর না।'
১৯৫। অতঃপর তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের ডাকে সাড়া দিয়া বলেন, 'আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যাহারা হিজরত করিয়াছে, নিজ গৃহ হইতে উৎখাত হইয়াছে, আমার পথে নির্যাতিত হইয়াছে এবং যুদ্ধ করিয়াছে ও নিহত হইয়াছে আমি তাহাদের পাপ কার্যগুলি অবশ্যই দূরীভূত করিব এবং অবশ্যই তাহাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহা আল্লাহ্র নিকট হইতে পুরস্কার; উত্তম পুরস্কার আল্লাহ্ই নিকট।
১৯৬। যাহারা কুফরী করিয়াছে, দেশে দেশে তাহাদের অবাধ বিচরণ যেন কিছুতেই তোমাকে বিভ্রান্ত না করে।
১৯৭। ইহা স্বল্পকালীন ভোগ মাত্র; অতঃপর জাহান্নাম তাহাদের আবাস; আর উহা কত নিকৃষ্ট ঠিকানা।
১৯৮। কিন্তু যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাহাদের জন্য রহিয়াছে জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে। ইহা আল্লাহ্র পক্ষ হইতে আতিথ্য; আল্লাহ্র নিকট যাহা আছে তাহা সৎকর্মপরায়ণদের জন্য শ্রেয়।
১৯৯। কিতাবীদের মধ্যে এমন লোক আছে যাহারা আল্লাহ্র প্রতি বিনয়াবনত হইয়া তাঁহার প্রতি এবং তিনি যাহা তোমাদের ও তাহাদের প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহাতে অবশ্যই ঈমান আনে এবং আল্লাহ্র আয়াত তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে না। ইহারাই তাহারা যাহাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট পুরস্কার রহিয়াছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
২০০। হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক, আল্লাহকে ভয় কর যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
সূরা "আল-ইমরান" মোট আয়াত সংখ্যা ২০০/২০০ সমাপ্ত;
০৪- সূরা "আন-নিসা"
মোটঃ ১৭৬ আয়াত ২৪ রুকূ মাদানী
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে"
১। হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতি- পালককে ভয় কর যিনি তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হইতেই সৃষ্টি করিয়াছেন ও যিনি তাহা হইতে তাহার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাহাদের দুইজন হইতে বহু নর-নারী ছড়াইয়া দেন; এবং আল্লাহকে ভয় কর যাঁহার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাজ্ঞা কর, এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি- বন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।
২। ইয়াতীমদিগকে তাহাদের ধন-সম্পদ সমর্পণ করিবে এবং ভালর সহিত মন্দ বদল করিবে না। তোমাদের সম্পদের সহিত তাহাদের সম্পদ মিশাইয়া গ্রাস করিও না; নিশ্চয়ই ইহা মহাপাপ।
৩। তোমরা যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করিতে পারিবে না, তবে বিবাহ করিবে নারীদের মধ্যে যাহাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন অথবা চার; আর যদি আশংকা কর যে, সুবিচার করিতে পারিবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। ইহাতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা।
৪। আর তোমরা নারীদিগকে তাহাদের মাহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া প্রদান করিবে; সন্তুষ্ট চিত্তে তাহারা মাহরের কিয়দংশ ছাড়িয়া দিলে তোমরা তাহা স্বচ্ছন্দে ভোগ করিবে।
৫। তোমাদের সম্পদ, যাহা আল্লাহ্ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করিয়াছেন, তাহা নির্বোধ মালিকগণের হাতে অর্পণ করিও না; উহা হইতে তাহাদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করিবে এবং তাহাদের সহিত সদালাপ করিবে।
৬। ইয়াতীমদিগকে যাচাই করিবে যে পর্যন্ত না তাহারা বিবাহযোগ্য হয়; এবং তাহাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখিলে তাহাদের সম্পদ তাহাদিগকে ফিরাইয়া দিবে। তাহারা বড় হইয়া যাইবে বলিয়া অপচয় করিয়া তাড়াতাড়ি খাইয়া ফেলিও না। যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন সে যেন সংগত পরিমাণে ভোগ করে। তোমরা যখন তাহাদিগকে তাহাদের সম্পদ সমর্পণ করিবে তখন সাক্ষী রাখিও। হিসাব গ্রহণে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৭। পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, উহা অল্পই হউক অথবা বেশীই হউক, এক নির্ধারিত অংশ।
৮। সম্পত্তি বণ্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকিলে তাহাদিগকে উহা হইতে কিছু দিবে এবং তাহাদের সহিত সদালাপ করিবে।
৯। তাহারা যেন ভয় করে যে, অসহায় সন্তান পিছনে ছাড়িয়া গেলে তাহারাও তাহাদের সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন হইত। সুতরাং তাহারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সংগত কথা বলে।
১০। যাহারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তাহারা তো তাহাদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে; তাহারা অচিরেই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলিবে।
১১। আল্লাহ্ তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিতেছেনঃ এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান; কিন্তু কেবল কন্যা দুই-এর অধিক থাকিলে তাহাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ, আর মাত্র এক কন্যা থাকিলে তাহার জন্য অর্ধাংশ। তাহার সন্তান থাকিলে তাহার পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ; সে নিঃসন্তান হইলে এবং পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী হইলে তাহার মাতার জন্য এক- তৃতীয়াংশ; তাহার ভাই-বোন থাকিলে মাতার জন্য এক-ষষ্ঠাংশ; এ সবই সে যাহা ওসিয়াত করে তাহা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে উপকারে কে তোমাদের নিকটতর তাহা তোমরা অবগত নহ। নিশ্চয়ই ইহা আল্লাহ্র বিধান; আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১২। তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য, যদি তাহাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাহাদের সন্তান থাকিলে তোমাদের জন্য তাহাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ; ওসিয়াত পালন এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকিলে তাহাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকিলে তাহাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ; তোমরা যাহা ওসিয়াত করিবে তাহা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারীর উত্তরাধিকারী থাকে তাহার এক বৈপিত্রেয় ভাই অথবা ভগ্নী, তবে প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ। তাহারা ইহার অধিক হইলে সকলে সম অংশীদার হইবে এক-তৃতীয়াংশে; ইহা যাহা ওসিয়াত করা হয় তাহা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর, যদি কাহারও জন্য ক্ষতিকর না হয়। ইহা আল্লাহ্র নির্দেশ, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
১৩। এইসব আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমা। কেহ আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করিলে আল্লাহ্ তাহাকে দাখিল করিবেন জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে এবং ইহা মহাসাফল্য।
১৪। আর কেহ আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের অবাধ্য হইলে এবং তাঁহার নির্ধারিত সীমা লংঘন করিলে তিনি তাহাকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করিবেন; সেখানে সে স্থায়ী হইবে এবং তাহার জন্য লাঞ্ছনা- দায়ক শাস্তি রহিয়াছে।
১৫। তোমাদের নারীদের মধ্যে যাহারা ব্যভিচার করে তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য হইতে চারজন সাক্ষী তলব করিবে। যদি তাহারা সাক্ষ্য দেয় তবে তাহাদিগকে গৃহে অবরুদ্ধ করিবে, যে পর্যন্ত না তাহাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ্ তাহাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন।
১৬। তোমাদের মধ্যে যে দুইজন ইহাতে লিপ্ত হইবে তাহাদিগকে শাস্তি দিবে। যদি তাহারা তওবা করে এবং নিজদিগকে সংশোধন করিয়া লয় তবে তাহা হইতে নিবৃত্ত থাকিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহু পরম তওবা কবূলকারী ও পরম দয়ালু।
১৭। আল্লাহ্ অবশ্যই সেইসব লোকের তওবা কবুল করিবেন যাহারা ভুলবশত মন্দ কার্য করে এবং সত্ত্বর তওবা করে, ইহারাই তাহারা, যাহাদের তওবা আল্লাহ্ কবূল করেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১৮। তওবা তাহাদের জন্য নহে যাহারা আজীবন মন্দ কার্য করে, অবশেষে তাহাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হইলে সে বলে, 'আমি এখন তওবা করিতেছি' এবং তাহাদের জন্যও নহে, যাহাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। ইহারাই তাহারা যাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা করিয়াছি।
১৯। হে ঈমানদারগণ! নারীদিগকে যবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা তোমাদের জন্য বৈধ নহে। তোমরা তাহাদিগকে যাহা দিয়াছ তাহা হইতে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাহাদিগকে অবরুদ্ধ করিয়া রাখিও না, যদি না তাহারা স্পষ্ট ব্যভিচার করে। তাহাদের সহিত সৎভাবে জীবন যাপন করিবে; তোমরা যদি তাহাদিগকে অপছন্দ কর তবে এমন হইতে পারে যে, আল্লাহ্ যাহাতে প্রভূত কল্যাণ রাখিয়াছেন তোমরা তাহাকেই অপছন্দ করিতেছ।
২০। তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং তাহাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়া থাক, তবুও উহা হইতে কিছুই প্রতিগ্রহণ করিও না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচরণ দ্বারা উহা গ্রহণ করিবে?
২১। আর কিরূপে তোমরা উহা গ্রহণ করিবে, যখন তোমরা একে অপরের সহিত সংগত হইয়াছ এবং তাহারা তোমাদের নিকট হইতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি লইয়াছে?
২২। নারীদের মধ্যে তোমাদের পিতৃপুরুষ যাহাদিগকে বিবাহ করিয়াছে, তোমরা তাহাদিগকে বিবাহ করিও না; পূর্বে যাহা হইয়াছে নিশ্চয়ই ইহা অশ্লীল, অতিশয় ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ।
২৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হইয়াছে তোমাদের মাতা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, ভাগিনেয়ী, দুগ্ধ-মাতা, দুগ্ধ-ভগিনী, শাশুড়ী ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাহার সহিত সংগত হইয়াছ তাহার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তাহার গর্ভজাত কন্যা, যাহারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে , তবে যদি তাহাদের সহিত সংগত না হইয়া থাক, তাহাতে তোমাদের কোন অপরাধ নাই। এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী ও দুই ভগ্নীকে একত্র করা, পূর্বে যাহা হইয়াছে, হইয়াছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷
পঞ্চম পারা
২৪। এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের জন্য ইহা আল্লাহ্র বিধান। উল্লিখিত নারীগণ ব্যতীত অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নহে। তাহাদের মধ্যে যাহাদিগকে তোমরা সম্ভোগ করিয়াছ তাহাদের নির্ধারিত মাহর অর্পণ করিবে। মাহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর রাযী হইলে তাহাতে তোমাদের কোন দোষ নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
২৫। তোমাদের মধ্যে কাহারও স্বাধীনা ঈমানদার নারী বিবাহের সামর্থ্য না থাকিলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার দাসী বিবাহ করিবে; আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; সুতরাং তাহাদিগকে বিবাহ করিবে তাহাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাহাদিগকে তাহাদের মাহর ন্যায়সংগতভাবে দিবে। তাহারা হইবে সচ্চরিত্রা, ব্যভি- চারিণী নহে ও উপপতি গ্রহণকারিণী ও নহে। বিবাহিতা হইবার পর যদি তাহারা ব্যভিচার করে তবে তাহাদের শাস্তি স্বাধীনা নারীর অর্ধেক; তোমাদের মধ্যে যাহারা ব্যভিচারকে ভয় করে ইহা তাহাদের জন্য; ধৈর্য ধারণ করা তোমাদের জন্য মঙ্গল। আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
২৬। আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদভাবে বিবৃত করিতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদিগকে অবহিত করিতে এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করিতে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
২৭। আল্লাহ্ তোমাদিগকে ক্ষমা করিতে চাহেন, আর যাহারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাহারা চাহে যে, তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও।
২৮। আল্লাহ্ তোমাদের ভার লঘু করিতে চাহেন; মানুষ সৃষ্টি করা হইয়াছে দুর্বলরূপে।
২৯। হে মু'মিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না; কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযী হইয়া যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ; এবং একে অপরকে হত্যা করিও না; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
৩০। আর যে কেহ সীমালংঘন করিয়া অন্যায়ভাবে উহা করিবে তাহাকে অগ্নিতে দগ্ধ করিব; ইহা আল্লাহ্র পক্ষে সহজ।
৩১। তোমাদিগকে যাহা নিষেধ করা হইয়াছে তাহার মধ্যে যাহা গুরুতর তাহা হইতে বিরত থাকিলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলি মোচন করিব এবং তোমাদিগকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করিব।
৩২। যদ্দ্বারা আল্লাহ্ তোমাদের কাহাকেও কাহারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন তোমরা তাহার লালসা করিও না। পুরুষ যাহা অর্জন করে তাহা তাহার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যাহা অর্জন করে তাহা তাহার প্রাপ্য অংশ। আল্লাহ্র নিকট তাঁহার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।
৩৩। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রত্যেকটির জন্য আমি উত্তরাধিকারী করিয়াছি এবং যাহাদের সহিত তোমরা' অংগীকারাবদ্ধ তাহাদিগকে তাহাদের অংশ দিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ের দ্রষ্টা।
৩৪ । পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ্ তাহাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন এবং এইজন্য যে, পুরুষ তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে আল্লাহ্ যাহা সংরক্ষিত করিয়াছেন তাহা হিফাজত করে।" স্ত্রীদের মধ্যে, যাহাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাহাদিগকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাহাদিগকে প্রহার কর। যদি তাহারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাহাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহান, শ্রেষ্ঠ।
৩৫। তাহাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশংকা করিলে তোমরা তাহার পরিবার হইতে একজন ও উহার পরিবার হইতে একজন সালিস নিযুক্ত করিবে; তাহারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাহিলে আল্লাহ্ তাহাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।
৩৬। তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করিবে ও কোন কিছুকে তাঁহার শরীক করিবে না; এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সংগী-সাথী, মুসাফির তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে।
৩৭। যাহারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাহাদিগকে যাহা দিয়াছেন তাহা গোপন করে, আর আমি আখিরাতে কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি।
৩৮। "এবং যাহারা মানুষকে দেখাইবার জন্য তাহাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না আল্লাহ্ তাহাদিগকে ভালবাসেন না। আর শয়তান কাহারও সংগী হইলে সে সংগী কতইনা মন্দ!"
৩৯। তাহারা আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস করিলে এবং আল্লাহ্ তাহাদিগকে যাহা প্রদান করিয়াছেন তাহা হইতে ব্যয় করিলে তাহাদের কী ক্ষতি হইত? আল্লাহ্ তাহাদিগকে ভালভাবে জানেন।
৪০। আল্লাহ্ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না। আর কোন পুণ্য কার্য হইলে আল্লাহ্ উহাকে দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ্ তাঁহার নিকট হইতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।
৪১। যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হইতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করিব এবং তোমাকে উহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করিব তখন কী অবস্থা হইবে?
৪২। যাহারা কুফরী করিয়াছে এবং রাসূলের অবাধ্য হইয়াছে তাহারা সেদিন কামনা করিবে, যদি তাহারা মাটির সহিত মিশিয়া যাইত! আর তাহারা আল্লাহ্ হইতে কোন কথাই গোপন করিতে পারিবে না।
৪৩। হে মু'মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হইও না, যতক্ষণ না তোমরা যাহা বল তাহা বুঝিতে পার, এবং যদি তোমরা মুসাফির না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নহে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর। আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ শৌচস্থান হইতে আসে অথবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করিবে এবং মসেহ করিবে মুখমণ্ডল ও হাত, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
৪৪। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহাদিগকে কিতাবের এক অংশ দেওয়া হইয়াছিল? তাহারা ভ্রান্ত পথ ক্রয় করে এবং তোমরাও পথভ্রষ্ট হও—ইহাই তাহারা চাহে।
৪৫। আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদিগকে ভালভাবে জানেন। অভিভাবকত্বে আল্লাহ্ই যথেষ্ট এবং সাহায্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৪৬। ইয়াহুদীদের মধ্যে কতক লোক কথাগুলি স্থানচ্যুত করিয়া বিকৃত করে এবং বলে, 'শ্রবণ করিলাম ও অমান্য করিলাম' এবং শোনে না শোনার মত; আর নিজেদের জিহ্বা কুঞ্চিত করিয়া এবং দীনের প্রতি তাচ্ছিল্য করিয়া বলে, ‘রাইনা’। কিন্তু তাহারা যদি বলিত, শ্রবণ করিলাম ও মান্য করিলাম এবং শ্রবণ কর ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য কর', তবে উহা তাহাদের জন্য ভাল ও সংগত হইত। কিন্তু তাহাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ্ তাহাদিগকে লা'নত করিয়াছেন। তাহাদের অল্প সংখ্যকই বিশ্বাস করে।
৪৭। ওহে! যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে, তোমাদের নিকট যাহা আছে তাহার সমর্থকরূপে আমি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি তাহাতে তোমরা ঈমান আন, আমি মুখমণ্ডলসমূহ বিকৃত করিয়া অতঃপর সেইগুলিকে পিছনের দিকে ফিরাইয়া দেওয়ার পূর্বে অথবা আসহাবুস্ সাবতকে যেরূপ লা'নত করিয়াছিলাম সেইরূপ তাহাদিগকে লা'নত করিবার পূর্বে। আল্লাহ্র আদেশ কার্যকরী হইয়াই থাকে৷
৪৮। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁহার সহিত শরীক করা ক্ষমা করেন না। ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন; এবং যে কেহ আল্লাহ্র শরীক করে সে এক মহাপাপ করে।
৪৯। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই, যাহারা নিজদিগকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। এবং তাহাদের উপর সামান্য পরিমাণ ও যুলুম করা হইবে না।
৫০। দেখ! তাহারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে কিরূপ মিথ্যা উদ্ভাবন করে; এবং প্রকাশ্য পাপ হিসাবে ইহাই যথেষ্ট।
৫১। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহাদিগকে কিতাবের এক অংশ দেওয়া হইয়াছিল, তাহারা জিপত ও তাগূতে বিশ্বাস করে? তাহারা কাফিরদের সম্বন্ধে বলে, “ইহাদেরই পথ মু'মিনদের অপেক্ষা প্রকৃষ্টতর।'
৫২। ইহারাই তাহারা, যাহাদিগকে আল্লাহ্ লা'নত করিয়াছেন এবং আল্লাহ্ যাহাকে লা'নত করেন তুমি কখনও তাহার কোন সাহায্যকারী পাইবে না।
৫৩। তবে কি রাজশক্তিতে তাহাদের কোন অংশ আছে? সে ক্ষেত্রেও তো তাহারা কাহাকেও এক কপর্দকও দিবে না।
৫৪। অথবা আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে যাহা দিয়াছেন সেজন্য কি তাহারা তাহাদিগকে ঈর্ষা করে? আমি ইব্রাহীমের বংশধরকেও তো
কিতাব ও হিকমত প্রদান করিয়াছিলাম এবং তাহাদিগকে বিশাল রাজ্য দান করিয়াছিলাম।
৫৫। অতঃপর তাহাদের কতক উহাতে বিশ্বাস করিয়াছিল এবং কতক উহা হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়াছিল; দগ্ধ করার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট।
৫৬। যাহারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে তাহাদিগকে অগ্নিতে দগ্ধ করিবই; যখনই তাহাদের চর্ম দগ্ধ হইবে তখনই উহার স্থলে নূতন চর্ম সৃষ্টি করিব, যাহাতে তাহারা শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৫৭। যাহারা ঈমান আনে ও ভাল কাজ করে তাহাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে, সেখানে তাহাদের জন্য পবিত্র স্ত্রী থাকিবে এবং তাহাদিগকে চির স্নিগ্ধ ছায়ায় দাখিল করিব।
৫৮। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদিগকে নির্দেশ দিতেছেন আমানত উহার হকদারকে প্রত্যর্পণ করিতে। তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করিবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সহিত বিচার করিবে। আল্লাহ্ তোমাদিগকে যে উপদেশ দেন তাহা কত উৎকৃষ্ট! আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
৫৯। হে মু'মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ্র, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাহাদের, যাহারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিলে উহা উপস্থাপিত কর আল্লাহ্ ও রাসূলের নিকট। ইহাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।
৬০। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে এবং তোমার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে তাহারা বিশ্বাস করে, অথচ তাহারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হইতে চায়, যদিও উহা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাহাদিগকে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এবং শয়তান তাহাদিগকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করিতে চায়?
৬১। তাহাদিগকে যখন বলা হয় আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে এবং রাসূলের দিকে আইস, তখন মুনাফিকদিগকে তুমি তোমার নিকট হইতে মুখ একেবারে ফিরাইয়া লইতে দেখিবে।
৬২। তাহাদের কৃতকর্মের জন্য যখন তাহাদের কোন মুসীবত হইবে তখন তাহাদের কী অবস্থা হইবে? অতঃপর তাহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া তোমার নিকট আসিয়া বলিবে, 'আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাহি নাই৷
৬৩। ইহারাই তাহারা, যাহাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ্ তাহা জানেন। সুতরাং তুমি তাহাদিগকে উপেক্ষা কর, তাহাদিগকে সদুপদেশ দাও এবং তাহাদিগকে তাহাদের মর্ম স্পর্শ করে—এমন কথা বল।
৬৪। রাসূল এই উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করিয়াছি যে, আল্লাহ্র নির্দেশ অনুসারে তাহার আনুগত্য করা হইবে। যখন তাহারা নিজেদের প্রতি যুলুম করে তখন তাহারা তোমার নিকট আসিলে ও আল্লাহ্ ক্ষমা প্রার্থনা করিলে এবং রাসূলও তাহাদের জন্য ক্ষমা চাহিলে তাহারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাইবে।
৬৫। কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তাহারা মু'মিন হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাহারা তাহাদের নিজেদের বিবাদ- বিসম্বাদের বিচার ভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাহাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে উহা মানিয়া লয়।
৬৬। যদি তাহাদিগকে আদেশ দিতাম যে, তোমরা নিজদিগকে হত্যা কর অথবা আপন গৃহ ত্যাগ কর তবে তাহাদের অল্প সংখ্যকই ইহা করিত। যাহা করিতে তাহাদিগকে উপদেশ দেওয়া হইয়াছিল তাহারা তাহা করিলে তাহাদের ভাল হইত এবং চিত্তস্থিরতায় তাহারা দৃঢ়তর হইত।
৬৭। এবং তখন আমি আমার নিকট হইতে তাহাদিগকে নিশ্চয় মহাপুরস্কার প্রদান করিতাম;
৬৮। এবং তাহাদিগকে নিশ্চয় সরল পথে পরিচালিত করিতাম।
৬৯। আর কেহ আল্লাহ্ এবং রাসূলের আনুগত্য করিলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ—যাহাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিয়াছেন—তাহাদের সংগী হইবে এবং তাহারা কত উত্তম সঙ্গী!
৭০। ইহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ। সর্বজ্ঞ হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৭১। হে মু'মিনগণ! সতর্কতা অবলম্বন কর; অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হইয়া অগ্রসর হও অথবা একসংগে অগ্রসর হও।
৭২। তোমাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যে গড়িমসি করিবেই। তোমাদের কোন মুসীবত হইলে সে বলিবে, “তাহাদের সংগে 'না থাকায় আল্লাহ্ আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন।’
৭৩। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ হইলে, যেন তোমাদের ও তাহার মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই এমনভাবে বলিবেই, ‘হায়! যদি তাহাদের সহিত থাকিতাম তবে আমিও বিরাট সাফল্য লাভ করিতাম।'
৭৪। সুতরাং যাহারা আখিরাতের বিনিময়ে পার্থিব জীবন বিক্রয় করে তাহারা আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম করুক এবং কেহ আল্লাহ্র পথে সংগ্রাম করিলে সে নিহত হউক অথবা বিজয়ী হউক আমি তাহাকে মহাপুরস্কার দান করিবই।
৭৫। তোমাদের কী হইল যে, তোমরা যুদ্ধ করিবে না আল্লাহ্র পথে এবং 'অসহায় নরনারী' এবং শিশুগণের জন্য, যাহারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এই জনপদ—যাহার অধিবাসী যালিম, উহা হইতে আমাদিগকে অন্যত্র লইয়া যাও; তোমার নিকট হইতে কাহাকেও আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট হইতে কাহাকেও আমাদের সহায় কর।'
৭৬। যাহারা মু'মিন তাহারা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে এবং যাহারা কাফির তাহারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।
৭৭। তুমি কি তাহাদিগকে দেখ নাই যাহাদিগকে বলা হইয়াছিল, ‘তোমরা তোমাদের হস্ত সংবরণ কর, সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও?' অতঃপর যখন তাহাদিগকে যুদ্ধের বিধান দেওয়া হইল তখন তাহাদের একদল মানুষকে ভয় করিতেছিল আল্লাহকে ভয় করার মত অথবা তদপেক্ষা অধিক, এবং বলিতে লাগিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান কেন দিলে? আমাদিগকে কিছু দিনের অবকাশ দাও না?' বল, ‘পার্থিব ভোগ সামান্য এবং যে মুত্তাকী তাহার জন্য পরকালই উত্তম। তোমাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হইবে না।'
৭৮। তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাইবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করিলেও। যদি তাহাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে, ‘ইহা আল্লাহ্র নিকট হইতে। আর যদি তাহাদের কোন অকল্যাণ হয় তবে তাহারা বলে, “ইহা তোমার নিকট হইতে।' বল, 'সব কিছুই আল্লাহ্র নিকট হইতে।' এই সম্প্রদায়ের হইল কী যে, ইহারা একেবারেই কোন কথা বোঝে না!
৭৯। কল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে এবং অকল্যাণ যাহা তোমার হয় তাহা তোমার নিজের কারণে এবং তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছি; সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৮০। কেহ রাসূলের আনুগত্য করিলে সে তো আল্লাহ্রই আনুগত্য করিল এবং মুখ ফিরাইয়া লইলে তোমাকে তাহাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক প্রেরণ করি নাই।
৮১। তাহারা বলে, 'আনুগত্য করি’; অতঃপর যখন তাহারা তোমার নিকট হইতে চলিয়া যায় তখন রাত্রে তাহাদের একদল যাহা বলে তাহার বিপরীত পরামর্শ করে। তাহারা যাহা রাত্রে পরামর্শ করে আল্লাহ্ তাহা লিপিবদ্ধ করিয়া রাখেন। সুতরাং তুমি তাহাদিগকে উপেক্ষা কর এবং আল্লাহ্র প্রতি ভরসা কর; কর্মবিধায়ক হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৮২। তবে কি তাহারা কুরআন সম্বন্ধেঅনুধাবন করে না? ইহা যদি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহারও নিকট হইতে আসিত তবে তাহারা উহাতে অনেক অসংগতি পাইত।
৮৩। যখন শান্তি অথবা শংকার কোন সংবাদ তাহাদের নিকট আসে তখন তাহারা উহা প্রচার করিয়া থাকে। যদি তাহারা উহা রাসূল কিংবা তাহাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতার অধিকারী তাহাদের গোচরে আনিত, তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা তথ্য অনুসন্ধান করে তাহারা উহার যথার্থতা নির্ণয় করিতে পারিত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকিত তবে তোমাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সকলে শয়তানের অনুসরণ করিত।
৮৪। সুতরাং আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ কর; তোমাকে শুধু তোমার নিজের জন্য দায়ী করা হইবে এবং মু'মিনগণকে উদ্বুদ্ধ কর, হয়তো আল্লাহ্ কাফিরদের শক্তি সংযত করিবেন। আল্লাহ্ শক্তিতে প্রবলতর ও শাস্তিদানে কঠোরতর।
৮৫। কেহ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করিলে উহাতে তাহার অংশ থাকিবে এবং কেহ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করিলে উহাতে তাহার অংশ থাকিবে। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে নজর রাখেন।
৮৬। তোমাদিগকে যখন অভিবাদন করা হয় তখন তোমরাও উহা অপেক্ষা উত্তম প্রত্যাভিবাদন করিবে অথবা উহারই অনুরূপ করিবে; নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।
৮৭। আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই; তিনি তোমাদিগকে কিয়ামতের দিন একত্র করিবেনই, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। কে আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী?
৮৮। তোমাদের কী হইল যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দুই দল হইয়া গেলে, যখন আল্লাহ্ তাহাদিগকে তাহাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্থায় ফিরাইয়া দিয়াছেন। আল্লাহ্ যাহাকে পথভ্রষ্ট করেন তোমরা কি তাহাকে সৎপথে পরিচালিত করিতে চাও? এবং আল্লাহ্ কাহাকেও পথভ্রষ্ট করিলে তুমি তাহার জন্য কখনও কোন পথ পাইবে না।
৮৯। তাহারা ইহাই কামনা করে যে, তাহারা যেরূপ কুফরী করিয়াছে তোমরাও সেইরূপ কুফরী কর, যাহাতে তোমরা তাহাদের সমান হইয়া যাও। সুতরাং আল্লাহ্র পথে হিজরত না করা পর্যন্ত তাহাদের মধ্য হইতে কাহাকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করিবে না। যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয় তবে তাহাদিগকে যেখানে পাইবে গ্রেফতার করিবে এবং হত্যা করিবে এবং তাহাদের মধ্য হইতে কাহাকেও বন্ধু ও সহায়রূপে গ্রহণ করিবে না।
৯০। কিন্তু তাহাদিগকে নহে যাহারা এমন এক সম্প্রদায়ের সহিত মিলিত হয় যাহাদের সহিত তোমরা অংগীকারাবদ্ধ, অথবা যাহারা তোমাদের নিকট এমন অবস্থায় আগমন করে যখন তাহাদের মন তোমাদের সহিত অথবা তাহাদের সম্প্রদায়ের সহিত যুদ্ধ করিতে সংকুচিত হয়। আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে তাহাদিগকে তোমাদের উপর ক্ষমতা দিতেন এবং তাহারা নিশ্চয় তোমাদের সহিত যুদ্ধ করিত। সুতরাং তাহারা যদি তোমাদের নিকট হইতে সরিয়া দাঁড়ায়, তোমাদের সহিত যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব করে তবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা অবলম্বনের পথ রাখেন না।
৯১। তোমরা অপর কতক লোক পাইবে যাহারা তোমাদের সহিত ও তাহাদের সম্প্রদায়ের সহিত শান্তি চাহিবে। যখনই তাহাদিগকে ফিতনার দিকে আহ্বান করা হয় তখনই এই ব্যাপারে তাহারা তাহাদের পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবৃত্ত হয়। যদি তাহারা তোমাদের নিকট হইতে চলিয়া না যায়, তোমাদের নিকট শান্তি প্রস্তাব না করে এবং তাহাদের হস্ত সংবরণ না করে তবে তাহাদিগকে যেখানেই পাইবে গ্রেফতার করিবে ও হত্যা করিবে এবং তোমাদিগকে ইহাদের বিরুদ্ধাচরণের স্পষ্ট অধিকার দিয়াছি।
৯২। কোন মু'মিনকে হত্যা করা কোন মু'মিনের কাজ নহে, তবে ভুলবশত করিলে উহা স্বতন্ত্র; এবং কেহ কোন মু'মিনকে ভুল-বশত হত্যা করিলে এক মু'মিন দাস মুক্ত করা এবং তাহার পরিজনবর্গকে রক্তপণ অর্পণ করা বিধেয়, যদি না তাহারা ক্ষমা করে। যদি সে তোমাদের শত্রুপক্ষের লোক হয় এবং মু'মিন হয় তবে এক মু'মিন দাস মুক্ত করা বিধেয়। আর যদি সে এমন এক সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যাহার সহিত তোমরা অংগীকারাবদ্ধ তবে তাহার পরিজনবর্গকে রক্তপণ অর্পণ এবং মু'মিন দাস মুক্ত করা বিধেয়, এবং যে সংগতিহীন সে একাদিক্রমে দুই মাস সিয়াম পালন করিবে। তওবার জন্য ইহা আল্লাহ্র ব্যবস্থা এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৯৩। কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু'মিনকে হত্যা করিলে তাহার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হইবে এবং আল্লাহ্ তাহার প্রতি রুষ্ট হইবেন, তাহাকে লা'নত করিবেন এবং তাহার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখিবেন।
৯৪। হে মু'মিনগণ! তোমরা যখন আল্লাহ্র পথে যাত্রা করিবে তখন পরীক্ষা করিয়া লইবে এবং কেহ তোমাদিগকে সালাম করিলে ইহ জীবনের সম্পদের আকাঙ্ক্ষায় তাহাকে বলিও না, ‘তুমি মু'মিন নহ', কারণ আল্লাহ্র নিকট অনায়াসলভ্য সম্পদ প্রচুর রহিয়াছে। তোমরা তো পূর্বে এইরূপই ছিলে, অতঃপর আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন; সুতরাং তোমরা পরীক্ষা করিয়া লইবে। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তো সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
৯৫। মু'মিনদের মধ্যে যাহারা অক্ষম নহে অথচ ঘরে বসিয়া থাকে ও যাহারা আল্লাহ্ পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তাহারা সমান নহে। যাহারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ্ তাহাদিগকে, যাহারা ঘরে বসিয়া থাকে তাহাদের উপর মর্যাদা দিয়াছেন; আল্লাহ্ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। যাহারা ঘরে বসিয়া থাকে তাহাদের উপর যাহারা জিহাদ করে তাহাদিগকে আল্লাহ্ মহাপুরস্কারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছেন।
৯৬। ইহা তাঁহার নিকট হইতে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া; আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৯৭। যাহারা নিজেদের উপর যুলুম করে তাহাদের প্ৰাণ গ্রহণের সময় ফিরিশতাগণ বলে, 'তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?' তাহারা বলে, ‘দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম;' তাহারা বলে, 'আল্লাহ্র যমীন কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেথায় তোমরা হিজরত করিতে?' ইহাদেরই আবাসস্থল জাহান্নাম, আর উহা কত মন্দ আবাস!
৯৮। তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোন উপায় অবলম্বন করিতে পারে না এবং কোন পথও পায় না,
৯৯। আল্লাহ্ অচিরেই তাহাদের পাপ মোচন করিবেন, কারণ আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
১০০। কেহ আল্লাহ্র পথে হিজরত করিলে সে দুনিয়ায় বহু আশ্রয়স্থল এবং প্রাচুর্য লাভ করিবে এবং কেহ আল্লাহ্ ও রাসূলের উদ্দেশ্যে নিজ গৃহ হইতে মুহাজির হইয়া বাহির হইলে এবং তাহার মৃত্যু ঘটিলে তাহার পুরস্কারের ভার আল্লাহ্র উপর; আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১০১। তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করিবে তখন যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিরগণ তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করিবে, তবে সালাত সংক্ষিপ্ত করিলে তোমাদের কোন দোষ নাই। নিশ্চয়ই কাফিরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
১০২। আর তুমি যখন তাহাদের মধ্যে অবস্থান করিবে ও তাহাদের সংগে সালাত কায়েম করিবে তখন তাহাদের একদল তোমার সহিত যেন দাঁড়ায় এবং তাহারা যেন সশস্ত্র থাকে। তাহাদের সিজদা করা হইলে তাহারা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যাহারা সালাতে শরীক হয় নাই তাহারা তোমার সহিত যেন সালাতে শরীক হয় এবং তাহারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে। কাফিরগণ কামনা করে যেন তোমরা তোমাদের অস্ত্রশস্ত্র আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও যাহাতে তাহারা তোমাদের উপর একেবারে ঝাঁপাইয়া পড়িতে পারে। যদি তোমরা বৃষ্টির জন্য কষ্ট পাও অথবা পীড়িত থাক তবে তোমরা অস্ত্র রাখিয়া দিলে তোমাদের কোন দোষ নাই; কিন্তু তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করিবে। আল্লাহ্ কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রাখিয়াছেন।
১০৩। যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করিবে তখন দাঁড়াইয়া, বসিয়া এবং শুইয়া আল্লাহকে স্মরণ করিবে, যখন তোমরা নিরাপদ হইবে তখন যথাযথ সালাত কায়েম করিবে; নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মু'মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
১০৪। শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা হতোদ্যম হইও না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও তবে তাহারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহ্র নিকট তোমরা যাহা আশা কর উহারা তাহা আশা করে না। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১০৫। আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যাহাতে তুমি আল্লাহ্ তোমাকে যাহা জানাইয়াছেন সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর এবং বিশ্বাস ভংগকারীদের সমর্থনে তর্ক করিও না।
১০৬। আর আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১০৭। যাহারা নিজদিগকে প্রতারিত করে তাহাদের পক্ষে বাদ-বিসম্বাদ করিও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বিশ্বাস ভংগকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।
১০৮। তাহারা মানুষ হইতে গোপন করিতে চাহে কিন্তু আল্লাহ্ হইতে গোপন করে না, অথচ তিনি তাহাদের সংগেই আছেন। রাত্রে যখন তাহারা, তিনি যাহা পছন্দ করেন না—এমন বিষয়ে পরামর্শ করে এবং তাহারা যাহা করে তাহা সর্বতোভাবে আল্লাহ্র জ্ঞানায়ত্ত।
১০৯। দেখ, তোমরাই ইহজীবনে তাহাদের পক্ষে বিতর্ক করিতেছ; কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহ্র সম্মুখে কে তাহাদের পক্ষে বিতর্ক করিবে অথবা কে তাহাদের উকীল হইবে?
১১০। কেহ কোন মন্দ কার্য করিয়া অথবা নিজের প্রতি যুলুম করিয়া পরে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলে আল্লাহ্কে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাইবে।
১১১। কেহ পাপকার্য করিলে সে উহা নিজের ক্ষতির জন্যই করে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১১২। কেহ কোন দোষ বা পাপ করিয়া পরে উহা কোন নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করিলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।
১১৩। তোমার প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকিলে তাহাদের একদল তোমাকে পথভ্রষ্ট করিতে চাহিতই। কিন্তু তাহারা নিজদিগকে ব্যতীত আর কাহাকেও পথভ্রষ্ট করে না এবং তোমার কোনই ক্ষতি করিতে পারে না। আল্লাহ্ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করিয়াছেন এবং তুমি যাহা জানিতে না তাহা তোমাকে শিক্ষা দিয়াছেন, তোমার প্রতি আল্লাহ্র মহা অনুগ্রহ রহিয়াছে।
১১৪। তাহাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নাই, তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকার্য ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় কেহ উহা করিলে তাহাকে অবশ্যই আমি মহাপুরস্কার দিব।
১১৫। কাহারও নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু'মিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরিয়া যায় সেদিকেই তাহাকে ফিরাইয়া দিব এবং জাহান্নামে তাহাকে দগ্ধ করিব, আর উহা কত মন্দ আবাস!
১১৬। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁহার সহিত শরীক করাকে ক্ষমা করেন না; ইহা ব্যতীত সব কিছু যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, এবং কেহ আল্লাহ্র শরীক করিলে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়।
১১৭। তাঁহার পরিবর্তে তাহারা দেবীরই পূজা করে এবং বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে-
১১৮। আল্লাহ্ তাহাকে লা'নত করেন এবং সে বলে, 'আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করিয়া লইব।
১১৯। আমি তাহাদিগকে পথভ্রষ্ট করিবই; তাহাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করিবই, আমি তাহাদিগকে নিশ্চয় নির্দেশ দিব আর তাহারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করিবেই, এবং তাহাদিগকে নিশ্চয় নির্দেশ দিব আর তাহারা আল্লাহ্র সৃষ্টি বিকৃত করিবেই।' আল্লাহ্র পরিবর্তে কেহ শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করিলে সে স্পষ্টতঃই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১২০। সে তাহাদিগকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাহাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে, আর শয়তান তাহাদিগকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তাহা ছলনামাত্র। ইহাদেরই আশ্রয়স্থল জাহান্নাম, উহা হইতে তাহারা নিষ্কৃতির উপায় পাইবে না।
১২২। আর যাহারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাহাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে; আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য, কে আল্লাহ্ অপেক্ষা কথায় অধিক সত্যবাদী?
১২৩। তোমাদের খেয়াল-খুশী ও কিতাবীদের খেয়াল-খুশী অনুসারে কাজ হইবে না; কেহ মন্দ কাজ করিলে তাহার প্রতিফল সে পাইবে এবং আল্লাহ ব্যতীত তাহার জন্য সে কোন অভিভাবক ও সহায় পাইবে না।
১২৪। পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে কেহ সৎ কাজ করিলে ও মু'মিন হইলে তাহারা জান্নাতে দাখিল হইবে এবং তাহাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হইবে না।
১২৫। তাহার অপেক্ষা দীনে কে উত্তম যে সৎকর্মপরায়ণ হইয়া আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে? এবং আল্লাহ্ ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিয়াছেন।
১২৬। আসমান ও যমীনে যাহা কিছু আছে সব আল্লাহ্রই এবং সব কিছুকে আল্লাহ্ পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন।
১২৭। আর লোকে তোমার নিকট নারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা জানিতে চায়। বল, “আল্লাহ্ তোমাদিগকে তাহাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা জানাইতেছেন এবং ইয়াতীম নারী সম্পর্কে যাহাদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান কর না, অথচ তোমরা তাহাদিগকে বিবাহ করিতে চাহ এবং অসহায় শিশুদের সম্বন্ধে ও ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ন্যায়বিচার সম্পর্কে যাহা কিতাবে তোমাদিগকে শুনান হয়, তাহাও পরিষ্কারভাবে জানাইয়া দেন'। আর যেকোন সৎকাজ তোমরা কর আল্লাহ্ তো তাহা সবিশেষ অবহিত।
১২৮। কোন স্ত্রী যদি তাহার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে তবে তাহারা আপোস-নিষ্পত্তি করিতে চাহিলে তাহাদের কোন গুনাহ নাই এবং আপোস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়। মানুষ লোভহেতু স্বভাবত কৃপণ; এবং যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও ও মুত্তাকী হও, তবে তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তো তাহার খবর রাখেন।
১২৯। আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করিতে কখনই পারিবে না, তবে তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকিয়া পড়িও না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রাখিও না; যদি তোমরা নিজদিগকে সংশোধন কর ও সাবধান হও তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৩০। যদি তাহারা পরস্পর পৃথক হইয়া যায় তবে আল্লাহ্ তাঁহার প্রাচুর্য দ্বারা তাহাদের প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করিবেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।
১৩১। আস্মানে যাহা আছে ও যমীনে যাহা আছে সব আল্লাহ্ই; তোমাদের পূর্বে যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদিগকে এবং তোমাদিগকেও নির্দেশ দিয়াছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করিবে এবং তোমরা কুফরী করিলেও আস্মানে যাহা আছে ও যমীনে যাহা আছে তাহা আল্লাহ্রই এবং আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, প্রশংসাভাজন।
১৩২। আমানে যাহা আছে ও যমীনে যাহা আছে সব আল্লাহ্ই এবং কর্মবিধানে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
১৩৩। হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদিগকে অপসারিত করিতে ও অপরকে আনিতে পারেন; আল্লাহ্ ইহা করিতে সম্পূর্ণ সক্ষম।
১৩৪। কেহ দুনিয়ার পুরস্কার চাহিলে তবে আল্লাহ্র নিকট দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কার রহিয়াছে। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
১৩৫। হে মু'মিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকিবে আল্লাহ্র সাক্ষীস্বরূপ; যদিও ইহা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হউক অথবা বিত্তহীন হউক আল্লাহ্ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করিতে প্রবৃত্তির অনুগামী হইও না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটাইয়া যাও তবে তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তো তাহার সম্যক খবর রাখেন।
১৩৬। হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহে, তাঁহার রাসূলে, তিনি যে কিতাব তাঁহার রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহাতে ঈমান আন। এবং কেহ আল্লাহ্, তাঁহার ফিরিশ্তা, তাঁহার কিতাব, তাঁহার রাসূল এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করিলে সে তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হইয়া পড়িবে।
১৩৭। যাহারা ঈমান আনে ও পরে কুফরী করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, অতঃপর তাহাদের কুফরী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ্ তাহাদিগকে কিছুতেই ক্ষমা করিবেন না এবং তাহাদিগকে কোন পথে পরিচালিত করিবেন না।
১৩৮। মুনাফিকদিগকে শুভ সংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
১৩৯। মু'মিনগণের পরিবর্তে যাহারা কাফির- দিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তাহারা কি উহাদের' 'নিকট' ইয্যত চায়? সমস্ত ইয্যত তো আল্লাই।
১৪০। কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করিয়াছেন যে, যখন তোমরা শুনিবে, আল্লাহ্র আয়াত প্রত্যাখ্যাত হইতেছে এবং উহাকে বিদ্রূপ করা হইতেছে, তখন যে পর্যন্ত তাহারা অন্য প্রসংগে লিপ্ত না হইবে তোমরা তাহাদের সহিত বসিও না, অন্যথায় তোমরাও উহাদের মত হইবে। মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই আল্লাহ্ তো জাহান্নামে একত্র করিবেন।
১৪১। যাহারা তোমাদের অমঙ্গলের প্রতীক্ষায় থাকে তাহারা আল্লাহ্র পক্ষ হইতে তোমাদের জয় হইলে বলে, 'আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না।' আর যদি কাফিরদের কিছু বিজয় হয়, তবে তাহারা বলে, 'আমরা কি তোমাদের পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছিলাম না? এবং আমরা কি তোমাদিগকে মু'মিনদের হাত হইতে রক্ষা করি নাই?' আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা করিবেন এবং আল্লাহ্ কখনই মু'মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখিবেন না।
১৪২। নিশ্চয়ই মুনাফিকগণ আল্লাহ্র সহিত ধোঁকাবাজি করে; বস্তুতঃ তিনি তাহাদিগকে উহার শাস্তি দেন আর যখন তাহারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সহিত দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ্কে তাহারা অল্পই স্মরণ করে;
১৪৩। দোটানায় দোদুল্যমান, না ইহাদের দিকে, না উহাদের দিকে! এবং আল্লাহ্ যাহাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তাহার জন্য কখনও কোন পথ পাইবে না।
১৪৪। হে মুমিনগণ! মু'মিনগণের পরিবর্তে কাফিরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও?
১৪৫। মুনাফিকগণ তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকিবে এবং তাহাদের জন্য তুমি কখনও কোন সহায় পাইবে না।
১৪৬। কিন্তু যাহারা তওবা করে, নিজদিগকে সংশোধন করে, আল্লাহ্কে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে এবং আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে তাহাদের দীনে একনিষ্ঠ থাকে, তাহারা মু'মিনদের সংগে থাকিবে এবং মু'মিনগণকে আল্লাহ্ অবশ্যই মহাপুরস্কার দিবেন।
১৪৭। তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আন তবে তোমাদের শাস্তিতে আল্লাহ্র কি কাজ? আল্লাহ্ পুরস্কার- দাতা, সর্বজ্ঞ।
ষষ্টম পারা
১৪৮। মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ্ পছন্দ করেন না; তবে যাহার উপর যুলুম করা হইয়াছে সে ব্যতীত। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১৪৯। তোমরা সৎকর্ম প্রকাশ্যে করিলে অথবা তাহা গোপনে করিলে কিংবা দোষ ক্ষমা করিলে তবে আল্লাহ্ও দোষ মোচনকারী, শক্তিমান।
১৫০। যাহারা আল্লাহকে অস্বীকার করে ও তাঁহার রাসূলদিগকেও এবং আল্লাহে ও তাঁহার রাসূলের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে তারতম্য করিতে চাহে এবং বলে, “আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি' আর তাহারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করিতে চাহে,
১৫১। ইহারাই প্রকৃত কাফির, এবং কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রাখিয়াছি।
১৫২। যাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলগণে ঈমান আনে এবং তাহাদের একের সহিত অপরের পার্থক্য করে না উহাদিগকে তিনি অবশ্যই পুরস্কার দিবেন এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১৫৩। কিতাবীগণ তোমাকে তাহাদের জন্য আসমান হইতে কিতাব অবতীর্ণ করিতে বলে; কিন্তু তাহারা মূসার নিকট ইহা অপেক্ষাও বড় দাবি করিয়াছিল। তাহারা বলিয়াছিল, 'আমাদিগকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।' তাহাদের সীমালংঘনের জন্য তাহারা বজ্রাহত হইয়াছিল; অতঃপর স্পষ্ট প্রমাণ তাহাদের নিকট প্রকাশ হওয়ার পরও তাহারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিল; ইহাও ক্ষমা করিয়াছিলাম এবং মূসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করিয়াছিলাম।
১৫৪। তাহাদের অঙ্গীকারের জন্য ‘তূর’ পর্বতকে আমি তাহাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করিয়াছিলাম এবং তাহাদিগকে বলিয়াছিলাম, 'নত শিরে দ্বারে প্রবেশ কর।' তাহাদিগকে আরও বলিয়াছিলাম, "শনিবারে সীমালংঘন করিও না'; এবং তাহাদের নিকট হইতে দৃঢ় অঙ্গীকার লইয়াছিলাম।
১৫৫। এবং তাহারা লা'নতগ্রস্ত হইয়াছিল তাহাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহ্র আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত ' তাহাদের এই উক্তির জন্য; বরং তাহাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ্ উহা মোহর করিয়াছেন। সুতরাং তাহাদের অল্প সংখ্যক লোকই বিশ্বাস করে।
১৫৬। এবং তাহারা লা'নতগ্রস্ত হইয়াছিল তাহাদের কুফরীর জন্য ওমারইয়ামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপবাদের জন্য,
১৫৭। আর ‘আমরা আল্লাহ্র রাসূল মারইয়াম- তনয় ‘ঈসা মসীকে হত্যা করিয়াছি' তাহাদের এই উক্তির জন্য। অথচ তাহারা তাহাকে হত্যা করে নাই, ক্রুশবিদ্ধও করে নাই; কিন্তু তাহাদের এইরূপ বিভ্রম হইয়াছিল। যাহারা তাহার সম্বন্ধে মতভেদ করিয়াছিল, তাহারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এই সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাহাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। ইহা নিশ্চিত যে, তাহারা তাহাকে হত্যা করে নাই,
১৫৮। বরং আল্লাহ্ তাহাকে তাঁহার নিকট তুলিয়া লইয়াছেন এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১৫৯। কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে নিজেদের মৃত্যুর পূর্বে তাহাকে বিশ্বাস করিবেই এবং কিয়ামতের দিন সে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।
১৬০। ভাল ভাল যাহা ইয়াহূদীদের জন্য বৈধ ছিল আমি তাহা উহাদের জন্য অবৈধ করিয়াছি তাহাদের সীমালংঘনের জন্য এবং আল্লাহ্র পথে অনেককে বাধা দেওয়ার জন্য,
১৬১। এবং তাহাদের সূদ গ্রহণের জন্য, যদিও উহা তাহাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হইয়াছিল; এবং অন্যায়ভাবে লোকের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাহাদের মধ্যে যাহারা কাফির তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রাখিয়ািছি।
১৬২। কিন্তু তাহাদের মধ্যে যাহারা জ্ঞানে সুগভীর তাহারা ও মু'মিনগণ তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে এবং তোমার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে তাহাতেও ঈমান আনে এবং যাহারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও পরকালে ঈমান রাখে, আমি উহাদিগকেই মহা পুরস্কার দিব।
১৬৩। আমি তো তোমার নিকট 'ওহী’ প্রেরণ করিয়াছি যেমন নূহ্ ও তাহার পরবর্তী নবীগণের নিকট ওহী প্রেরণ করিয়াছিলাম, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাহার বংশধরগণ, 'ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকটও 'ওহী' প্রেরণ করিয়াছিলাম এবং দাউদকে যাবুর দিয়াছিলাম।
১৬৪। অনেক রাসূল প্রেরণ করিয়াছি যাহাদের কথা পূর্বে আমি তোমাকে বলিয়াছি এবং অনেক রাসূল, যাহাদের কথা তোমাকে বলি নাই। এবং মূসার সহিত আল্লাহ্ সাক্ষাত বাক্যালাপ করিয়াছিলেন।
১৬৫। সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করিয়াছি, যাহাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১৬৬। পরন্তু আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার মাধ্যমে। তিনি তাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন নিজ জ্ঞানে এবং ফিরিশতাগণও সাক্ষী দেয়। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
১৬৭। যাহারা কুফরী করে ও আল্লাহ্র পথে বাধা দেয় তাহারা তো ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হইয়াছে।
১৬৮। যাহারা কুফরী করিয়াছে ও সীমালংঘন করিয়াছে আল্লাহ্ তাহাদিগকে কখনও ক্ষমা করিবেন না এবং তাহাদিগকে কোন পথও দেখাইবেন না,
১৬৯। জাহান্নামের পথ ব্যতীত; সেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে এবং ইহা আল্লাহ্ পক্ষে সহজ।
১৭০। হে মানব! রাসূল তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে সত্য আনিয়াছে; সুতরাং তোমরা ঈমান আন, ইহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হইবে। এবং তোমরা অস্বীকার করিলেও আসমান ও যমীনে যাহা আছে সব আল্লাই এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১৭১। হে কিতাবীগণ! তোমাদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করিও না ও আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলিও না। মারইয়াম-তনয় “ঈসা মসীহ তো আল্লাহ্র রাসূল এবং তাঁহার বাণী, যাহা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন ও তাঁহার আদেশ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলে ঈমান আন এবং বলিও না, ‘তিন!' নিবৃত্ত হও, ইহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হইবে। আল্লাহ্ তো একমাত্র ইলাহ্; তাঁহার সন্তান হইবে তিনি, ইহা হইতে পবিত্র। আস্মানে যাহা কিছু আছে ও যমীনে যাহা কিছু আছে সব আল্লাহ্রই; কর্ম-বিধানে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
১৭২। মসীহ্ আল্লাহ্র বান্দা হওয়াকে কখনও হেয় জ্ঞান করে না, এবং ঘনিষ্ঠ ফিরিশ্তাগণও করে না। আর কেহ তাঁহার ‘ইবাদতকে হেয় জ্ঞান করিলে এবং অহংকার করিলে তিনি অবশ্যই তাহাদের সকলকে তাঁহার নিকট একত্র করিবেন।
১৭৩। যাহারা ঈমান আনে ও সৎকার্য করে তিনি তাহাদিগকে পূর্ণ পুরস্কার দান করিবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশী দিবেন। কিন্তু যাহারা হেয় জ্ঞান করে ও অহংকার করে তাহাদিগকে তিনি মর্মন্তুদ শাস্তি দান করিবেন এবং আল্লাহ্ ব্যতীত তাহাদের জন্য তাহারা কোন অভিভাবক ও সহায় পাইবে না।
১৭৪। হে মানব! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট প্রমাণ আসিয়াছে এবং আমি তোমাদের প্রতি স্পষ্ট জ্যোতি অবতীর্ণ করিয়াছি।
১৭৫। যাহারা আল্লাহে ঈমান আনে ও তাঁহাকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে তাহাদিগকে তিনি অবশ্যই তাঁহার দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করিবেন এবং তাহাদিগকে সরল পথে তাঁহার দিকে পরিচালিত করিবেন।
১৭৬। লোকে তোমার নিকট ব্যবস্থা জানিতে চায়। বল, 'পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান। ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদিগকে আল্লাহ্ ব্যবস্থা জানাইতেছেন, কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তাহার এক ভগ্নি থাকে তবে তাহার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ এবং সে যদি সন্তানহীনা হয় তবে তাহার ভাই তাহার উত্তরাধিকারী হইবে, আর দুই ভগ্নি থাকিলে তাহাদের জন্য তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ, আর যদি ভাই- বোন উভয়ে থাকে তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর 'অংশের সমান।' তোমরা পথভ্রষ্ট হইবে—এই আশংকায় আল্লাহ্ তোমাদিগকে পরিষ্কারভাবে জানাইতেছেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
০৪ নং-সূরা নিসা; আয়াত; ১৭৬/ ১৭৬; সমাপ্ত;
০৫- সূরা "আল-মায়িদা"
আয়াত সংখ্যা-১২০ রুকূ'১৬, মাদানী
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে"
১। হে মু'মিনগণ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করিবে। যাহা তোমাদের নিকট বর্ণিত হইতেছে তাহা ব্যতীত চতুষ্পদ আন্‘আম তোমাদের জন্য হালাল করা হইল, তবে ইহরাম অবস্থায় শিকার করাকে বৈধ মনে করিবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা আদেশ করেন।
২। হে মু'মিনগণ! আল্লাহর নিদর্শনের, পবিত্র মাসের, কুরবানীর জন্য কা‘বায় প্রেরিত পশুর, গলায় পরান চিহ্নবিশিষ্ট পশুর এবং নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও সন্তোষলাভের আশায় পবিত্র গৃহ অভিমুখে যাত্রীদের পবিত্রতার অবমাননা করিবে না। যখন তোমরা ইহ্রামমুক্ত হইবে তখন শিকার করিতে পার। তোমাদিগকে মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনই সীমালংঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও তাওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করিবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করিবে না। আল্লাহকে ভয় করিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর।
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হইয়াছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের নামে যবেহ্কৃত পশু আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে যাহা তোমরা যবেহ্ করিতে পারিয়াছ তাহা ব্যতীত, আর যাহা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেওয়া হয় তাহা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এই সব পাপকার্য; আজ কাফিরগণ তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হইয়াছে; সুতরাং তাহাদিগকে ভয় করিও না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাংগ করিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করিলাম। তবে কেহ পাপের দিকে না ঝুঁকিয়া ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হইলে তখন আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪। লোকে তোমাকে প্রশ্ন করে, তাহাদের জন্য কী কী হালাল করা হইয়াছে? বল, 'সমস্ত ভাল জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হইয়াছে এবং শিকারী পশু-পক্ষী যাহাদিগকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়াছ যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছেন। উহারা যাহা তোমাদের জন্য ধরিয়া আনে তাহা ভক্ষণ করিবে এবং ইহাতে আল্লাহ্র নাম লইবে আর আল্লাহকে ভয় করিবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।'
৫। আজ তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল জিনিস হালাল করা হইল, যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল ও তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাহাদের জন্য বৈধ; এবং মু'মিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল যদি তোমরা তাহাদের মাহর প্রদান কর বিবাহের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার অথবা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণের জন্য নহে। কেহ ঈমান প্রত্যাখ্যান করিলে তাহার কর্ম নিষ্ফল হইবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
৬। হে মু'মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং তোমাদের মাথায় মসেহ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হইবে। তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ শৌচস্থান হইতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রীর সহিত সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করিবে এবং উহা তোমাদের মুখমণ্ডলে ও হাতে মাসেহ করিবে। আল্লাহ্ তোমাদিগকে কষ্ট দিতে চাহেন না; বরং তিনি তোমাদিগকে পবিত্র করিতে চাহেন ও তোমাদের প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিতে চাহেন, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
৭। স্মরণ কর, তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ এবং যে অংগীকারে তিনি তোমাদিগকে আবদ্ধ করিয়াছিলেন তাহা। যখন তোমরা বলিয়াছিলে, শ্রবণ করিলাম ও মান্য করিলাম' এবং আল্লাহকে ভয় কর; অন্তরে যাহা আছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ তো সবিশেষ অবহিত।
৮। হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকিবে; কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করিবে, ইহা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করিবে, তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাহার সম্যক খবর রাখেন।
৯। যাহারা ঈমান আনে ও সৎকার্য করে আল্লাহ্ তাহাদিগকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন, তাহাদের জন্য ক্ষমা এবং মহাপুরস্কার আছে।
১০। যাহারা কুফরী করে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা জ্ঞান করে তাহারা- প্রজ্বলিত অগ্নির অধিবাসী।
১১। হে মু'মিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করিতে চাহিয়াছিল, তখন আল্লাহ্ তাহাদের হাত তোমাদিগ হইতে নিবৃত্ত করিয়াছিলেন; এবং আল্লাহকে ভয় কর আর আল্লাহ্রই প্রতি মু'মিনগণ নির্ভর করুক।
১২। আর আল্লাহ্ তো বনী ইসরাঈলের অংগীকার গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তাহাদের মধ্য হইতে দ্বাদশ নেতা নিযুক্ত করিয়াছিলাম আর আল্লাহ্ বলিয়াছিলেন, 'আমি তোমাদের সংগে আছি; তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণে ঈমান আন ও উহাদিগকে সম্মান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করিব এবং নিশ্চয় তোমাদিগকে দাখিল করিব জান্নাতে যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহার পরও কেহ কুফরী করিলে সে তো সরল পথ হারাইবে।
১৩। তাহাদের অঙ্গীকার ভংগের জন্য আমি তাহাদিগকে লা'নত করিয়াছি ও তাহাদের হৃদয় কঠিন করিয়াছি; তাহারা শব্দগুলির আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল উহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। তুমি সর্বদা উহাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করিতে দেখিতে পাইবে, সুতরাং উহাদিগকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণ-দিগকে ভালবাসেন।
১৪। যাহারা বলে, ‘আমরা খৃস্টান', তাহাদেরও অংগীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম; কিন্তু তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল তাহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। সুতরাং আমি তাহাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরূক রাখিয়াছি; তাহারা যাহা করিত আল্লাহ্ তাহাদিগকে অচিরেই তাহা জানাইয়া দিবেন।
১৫। হে কিতাবীগণ! আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে, তোমরা কিতাবের যাহা গোপন করিতে সে উহার অনেক তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক উপেক্ষা করিয়া থাকে। আল্লাহ্র নিকট হইতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট আসিয়াছে।
১৬। যাহারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ করিতে চাহে, ইহা দ্বারা তিনি তাহাদিগকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোর দিকে লইয়া যান এবং উহাদিগকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
১৭। যাহারা বলে, মারইয়াম-তনয় মসীহই আল্লাহ্', তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই। বল, ‘আল্লাহ্ মারইয়াম- তনয় মসীহ, তাঁহার মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে যদি ধ্বংস করিতে ইচ্ছা করেন তবে তাঁহাকে বাধা দিবার শক্তি কাহার আছে?' আসমান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই। তিনি যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
১৮। ইয়াহুদী ও খৃস্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।' বল, 'তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদিগকে শাস্তি দেন? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদিগকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।' যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন; আসমান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে।
১৯। হে কিতাবীগণ! রাসূল প্রেরণে বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করিতেছে যাহাতে তোমরা বলিতে না পার, ‘কোন সুসংবাদবাহী ও সাবধানকারী আমাদের নিকট আসে নাই। এখন তো তোমাদের নিকট একজন সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী। আসিয়াছে। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২০। স্মরণ কর, মূসা তাহার সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদের মধ্য হইতে নবী করিয়াছিলেন ও তোমাদিগকে রাজ্যাধিপতি করিয়াছিলেন এবং বিশ্বজগতে কাহাকেও যাহা তিনি দেন নাই তাহা তোমাদিগকে দিয়াছিলেন।
২১। 'হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করিও না, করিলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া পড়িবে।'
২২। তাহারা বলিল, “হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রহিয়াছে এবং তাহারা সেই স্থান হইতে বাহির না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনই সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করিব না; তাহারা সেই স্থান হইতে বাহির হইয়া গেলেই আমরা প্রবেশ করিব।'
২৩। যাহারা ভয় করিতেছিল তাহাদের মধ্যে দুইজন, যাহাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহারা বলিল, “তোমরা তাহাদের মুকাবিলা করিয়া দ্বারে প্রবেশ কর, প্রবেশ করিলেই তোমরা জয়ী হইবে এবং তোমরা মু'মিন হইলে আল্লাহ্র উপরই নির্ভর কর।'
২৪। তাহারা বলিল, 'হে মূসা! তাহারা যত দিন সেখানে থাকিবে তত দিন আমরা সেখানে প্রবেশ করিবই না; সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর, আমরা এইখানেই বসিয়া থাকিব।'
২৫। সে বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক ! আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কাহারও উপর আমার আধিপত্য নাই, সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দাও।'
২৬। আল্লাহ্ বলিলেন, 'তবে ইহা চল্লিশ বৎসর তাহাদের জন্য নিষিদ্ধ রহিল, তাহারা পৃথিবীতে উদ্ভ্রান্ত হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবে, সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করিও না।'
২৭। আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাহাদিগকে যথাযথভাবে শোনাও। যখন তাহারা উভয়ে কুরবানী করিয়াছিল তখন একজনের কুরবানী কবূল হইল এবং অন্যজনের কবূল হইল না। সে বলিল, “আমি তোমাকে হত্যা করিবই।' অপরজন বলিল, 'অবশ্যই আল্লাহ্ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন।
২৮। ‘আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি হাত তুলিলেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি হাত তুলিব না; আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।'
২৯। 'তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বহন কর এবং অগ্নিবাসী হও ইহাই আমি চাহি এবং ইহা যালিমদের কৰ্মফল।'
৩০। অতঃপর তাহার চিত্ত ভ্রাতৃহত্যায় তাহাকে উত্তেজিত করিল। ফলে সে তাহাকে হত্যা করিল; তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইল।
৩১। অতঃপর আল্লাহ্ এক কাক পাঠাইলেন, যে তাহার ভ্রাতার শবদেহ কিভাবে গোপন করা যায় তাহা দেখাইবার জন্য মাটি খনন করিতে লাগিল। সে বলিল, 'হায়! আমি কি এই কাকের মতও হইতে পারিলাম না, যাহাতে আমার ভ্রাতার শবদেহ গোপন করিতে পারি?' অতঃপর সে অনুতপ্ত হইল।
৩২। এই কারণেই বনী ইসরাঈলের প্রতি এই বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করা হেতু ব্যতীত কেহ কাহাকেও হত্যা করিলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করিল, আর কেহ কাহারও প্রাণ রক্ষা করিলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করিল। তাহাদের নিকট তো আমার রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণ আনিয়াছিল, কিন্তু ইহার পরও তাহাদের অনেকে দুনিয়ায় সীমালংঘনকারীই রহিয়া গেল।
৩৩। যাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করিয়া বেড়ায় ইহাই তাহাদের শাস্তি যে, তাহাদিগকে হত্যা করা হইবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হইবে অথবা বিপরীত দিক হইতে তাহাদের হাত ও পা কাটিয়া ফেলা হইবে অথবা তাহাদিগকে দেশ হইতে নির্বাসিত করা হইবে। দুনিয়ায় ইহাই তাহাদের লাঞ্ছনা ও পরকালে তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে,
৩৪। তবে, তোমাদের আয়ত্তাধীনে আসিবার পূর্বে যাহারা তওবা করিবে তাহাদের জন্য নহে। সুতরাং জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৩৫। হে মু'মিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁহার নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর ও তাঁহার পথে সংগ্রাম কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
৩৬। যাহারা কুফরী করিয়াছে, কিয়ামতের দিন শাস্তি হইর্তে মুক্তির জন্য পণস্বরূপ দুনিয়ায় যাহা কিছু আছে যদি তাহাদের তাহার সমস্তই থাকে এবং তাহার সহিত সমপরিমাণ আরও থাকে, তবুও তাহাদের নিকট হইতে তাহা গৃহীত হইবে না এবং তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
৩৭। তাহারা অগ্নি হইতে বাহির হইতে চাহিবে; কিন্তু তাহারা উহা হইতে বাহির হইবার নহে এবং তাহাদের জন্য স্থায়ী শাস্তি রহিয়াছে।
৩৮। পুরুষ চোর এবং নারী চোর, তাহাদের হস্তচ্ছেদন কর; ইহা তাহাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ্র পক্ষ হইতে আদর্শ দণ্ড; আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৩৯। কিন্তু সীমালংঘন করার পর কেহ তওবা করিলে ও নিজেকে সংশোধন করিলে অবশ্যই আল্লাহ্ তাহার তওবা কবূল করিবেন; আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৪০। তুমি কি জান না যে, আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্রই? যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন আর যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
৪১। হে রাসূল! তোমাকে যেন দুঃখ না দেয় যাহারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবিত হয়—যাহারা মুখে বলে, “ঈমান আনয়ন করিয়াছি' অথচ তাহাদের অন্তর ঈমান আনে না এবং ইয়াহুদীদের মধ্যে যাহারা অসত্য শ্রবণে তৎপর, তোমার নিকট আসে না এমন এক ভিন্ন দলের পক্ষে যাহারা কান পাতিয়া থাকে। শব্দগুলি যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও তাহারা সেগুলির অর্থ বিকৃত করে। তাহারা বলে, ‘এই প্রকার বিধান দিলে গ্রহণ করিও এবং উহা না দিলে বর্জন করিও।' এবং আল্লাহ্ যাহার পথচ্যুতি চাহেন তাহার জন্য আল্লাহ্র নিকট তোমার কিছুই করিবার নাই। তাহাদের হৃদয়কে আল্লাহ্ বিশুদ্ধ করিতে চাহেন না; তাহাদের জন্য আছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখিরাতে রহিয়াছে তাহাদের জন্য মহাশাস্তি।
৪২। তাহারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত; তাহারা যদি তোমার নিকট আসে তবে তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও অথবা তাহাদিগকে উপেক্ষা করিও। তুমি যদি তাহাদিগকে উপেক্ষা কর তবে তাহারা তোমার কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। আর যদি বিচার নিষ্পত্তি কর তবে তাহাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করিও; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদিগকে ভালবাসেন।
৪৩। তাহারা তোমার উপর কিরূপে বিচারভার ন্যস্ত করিবে অথচ তাহাদের নিকট রহিয়াছে তাওরাত যাহাতে আল্লাহ্ আদেশ আছে! ইহার পরও তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয় এবং উহারা মু'মিন নহে।
৪৪। নিশ্চয়ই আমি তাওরাত অবতীর্ণ করিয়াছিলাম; উহাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো; নবীগণ, যাহারা আল্লাহ্র অনুগত ছিল তাহারা ইয়াহূদীদিগকে তদনুসারে বিধান দিত, আরও বিধান দিত রাব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ, কারণ তাহাদিগকে আল্লাহ্র কিতাবের রক্ষক করা হইয়াছিল এবং তাহারা ছিল উহার সাক্ষী। সুতরাং মানুষকে ভয় করিও না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করিও না। আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই কাফির।
৪৫। আমি তাহাদের জন্য উহাতে বিধান দিয়াছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। অতঃপর কেহ উহা ক্ষমা করিলে উহাতে তাহারই পাপ মোচন হইবে। আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই যালিম।
৪৬। মারিইয়াম-তনয় 'ঈসাকে তাহার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে উহাদের পশ্চাতে প্রেরণ করিয়াছিলাম এবং তাহারা পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে এবং মুত্তাকীদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাহাকে ইনজীল দিয়াছিলাম; উহাতে ছিল পথের নির্দেশ ও আলো।
৪৭। ইনজীল অনুসারিগণ যেন আল্লাহ উহাতে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই ফাসিক।
৪৮। আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে। সুতরাং আল্লাহ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে তুমি তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও এবং যে সত্য তোমার নিকট আসিয়াছে তাহা ত্যাগ করিয়া তাহাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করিও না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরী'আত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করিয়াছি। ইচ্ছা করিলে আল্লাহ তোমাদিগকে এক জাতি করিতে পারিতেন, কিন্তু তিনি তোমাদিগকে যাহা দিয়াছেন তদ্দ্বারা তোমাদিগকে পরীক্ষা করিতে চাহেন। সুতরাং সৎকর্মে তোমরা প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহ্র দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করিতেছিলে, সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদিগকে অবহিত করিবেন।
৪৯। কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যাহাতে তুমি আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুযায়ী তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি কর, তাহাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ না কর এবং তাহাদের সম্বন্ধে সতর্ক হও যাহাতে আল্লাহ্ যাহা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছেন উহারা তাহার কিছু হইতে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয় তবে জানিয়া রাখ যে, তাহাদের কোন কোন পাপের জন্য আল্লাহ্ তাহাদিগকে শাস্তি দিতে চাহেন এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী।
৫০। তবে কি তাহারা জাহিলী যুগের বিধি- বিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ্ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতরঃ
৫১। হে মু'মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তাহারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেহ তাহাদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিলে সে তাহাদেরই একজন হইবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
৫২। এবং যাহাদের অন্তঃকরণে ব্যাধি রহিয়াছে তুমি তাহাদিগকে সত্বর তাহাদের সহিত মিলিত হইতে দেখিবে এই বলিয়া, ‘আমাদের আশংকা হয় আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটিবে।' হয়তো আল্লাহ্ বিজয় অথবা তাঁহার নিকট হইতে এমন কিছু দিবেন যাহাতে তাহারা তাহাদের অন্তরে যাহা গোপন রাখিয়াছিল তজ্জন্য অনুতপ্ত হইবে।
৫৩। এবং মু'মিনগণ বলিবে, "ইহারাই কি তাহারা যাহারা আল্লাহ্র নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করিয়াছিল যে, তাহারা তোমাদের সংগেই আছে?' তাহাদের কার্য নিষ্ফল হইয়াছে; ফলে তাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে।
৫৪। হে মু'মিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেহ দীন হইতে ফিরিয়া গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এমন এক সম্প্রদায় আনিবেন যাহাদিগকে তিনি ভালবাসিবেন এবং যাহারা তাঁহাকে ভালবাসিবে; তাহারা মু'মিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হইবে; তাহারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করিবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করিবে না; ইহা আল্লাহ্র অনুগ্রহ, যাহাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
৫৫। তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ্, তাঁহার রাসূল ও মু'মিনগণ—যাহারা বিনত হইয়া সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়।
৫৬। কেহ আল্লাহ্, তাঁহার রাসূল এবং মু'মিনদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিলে; আল্লাহ্র দলই তো বিজয়ী হইবে।
৫৭। হে মু'মিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে। তাহাদের মধ্যে যাহারা তোমাদের দীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে তাহাদিগকে ও কাফিরদিগকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না এবং যদি তোমরা মু'মিন হও তবে আল্লাহকে ভয় কর।
৫৮। তোমরা যখন সালাতের জন্য আহ্বান কর তখন তাহারা উহাকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে—ইহা এইহেতু যে, তাহারা এমন এক সম্প্রদায় যাহাদের বোধশক্তি নাই।
৫৯। বল, 'হে কিতাবীগণ! একমাত্র এই কারণেই না তোমরা আমাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে, আমরা আল্লাহ্ ও আমাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে এবং যাহা পূর্বে অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে আমরা ঈমান আনিয়াছি এবং তোমাদের অধিকাংশই তো ফাসিক।'
৬০। বল, 'আমি কি তোমাদিগকে ইহা অপেক্ষা নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দিব যাহা আল্লাহ্র নিকট আছে? যাহাকে আল্লাহ্ লা'নত করিয়াছেন, যাহার উপর তিনি' ক্রোধান্বিত, যাহাদের কতককে তিনি বানর ও কতককে শূকর করিয়াছেন এবং যাহারা তাগূতের “ইবাদত করে, মর্যাদায় তাহারাই নিকৃষ্ট এবং সরল পথ হইতে সর্বাধিক বিচ্যুত।'
৬১। তাহারা যখন তোমাদের নিকট আসে তখন বলে, 'আমরা ঈমান আনিয়াছি', কিন্তু তাহারা কুফর লইয়াই প্রবেশ করে এবং উহা লইয়াই বাহির হইয়া যায়। তাহারা যাহা গোপন করে, আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।
৬২। তাহাদের অনেককেই তুমি দেখিবে পাপে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর; তাহারা যাহা করে নিশ্চয় তাহা নিকৃষ্ট।
৬৩। রাব্বানীগণ ও পণ্ডিতগণ কেন তাহাদিগকে পাপ কথা বলিতে ও অবৈধ ভক্ষণে নিষেধ করে না? ইহারা যাহা করে নিশ্চয় তাহাও নিকৃষ্ট।
৬৪। ইয়াহুদীগণ বলে, “আল্লাহ্ হাত রুদ্ধ' উহারাই রুদ্ধহস্ত এবং উহারা যাহা বলে তজ্জন্য উহারা অভিশপ্ত, বরং আল্লাহ্র উভয় হস্তই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে যাহা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা তাহাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও কুফরী বৃদ্ধি করিবেই। তাহাদের মধ্যে আমি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করিয়াছি। যতবার তাহারা যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে ততবার আল্লাহ্ উহা নির্বাপিত করেন এবং তাহারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করিয়া বেড়ায়; আল্লাহ্ ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্তদিগকে ভালবাসেন না।
৬৫। কিতাবীগণ যদি ঈমান আনিত ও ভয় করিত তাহা হইলে আমি তাহাদের দোষ অবশ্যই অপনোদন করিতাম এবং তাহাদিগকে সুখময় জান্নাতে দাখিল করিতাম৷
৬৬। তাহারা যদি তাওরাত, ইন্জীল ও তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রতিষ্ঠিত করিত, তাহা হইলে তাহারা তাহাদের উপর ও পদতল হইতে আহার্য লাভ করিত। তাহাদের মধ্যে একদল রহিয়াছে যাহারা মধ্যপন্থী; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ যাহা করে তাহা নিকৃষ্ট।
৬৭। হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রচার কর; যদি না কর তবে তো তুমি তাঁহার বার্তা প্রচার করিলে না। আল্লাহ্ তোমাকে মানুষ হইতে রক্ষা করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
৬৮। বল, 'হে কিতাবীগণ! তাওরাত, ইন্জীল ও যাহা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তোমরা তাহা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নাই।' তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা তাহাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বর্ধিত করিবে। সুতরাং তুমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করিও না।
৬৯। মু'মিনগণ, ইয়াহুদীগণ, সাবীঈগণ ও খৃস্টানগণের মধ্যে কেহ আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনিলে এবং সৎকার্য করিলে তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
৭০। আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অংগীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ও তাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাহাদের নিকট এমন কিছু আনে যাহা তাহাদের মনঃপূত নয়, তখনই তাহারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে।
৭১। তাহারা মনে করিয়াছিল যে, তাহাদের কোন শাস্তি হইবে না; ফলে তাহারা অন্ধ ও বধির হইয়া গিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছিলেন। পুনরায় তাহাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হইয়াছিল। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা৷
৭২। যাহারা বলে, 'আল্লাহ্ই মারইয়াম-তনয় মসীহ্', তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই। অথচ মসীহ্ বলিয়াছিল, 'হে বনী ইস্রাঈল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র ইবাদত কর।' কেহ আল্লাহ্র শরীক করিলে আল্লাহ্ তাহার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করিবেন এবং তাহার আবাস জাহান্নাম। যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই।
৭৩। যাহারা বলে, “আল্লাহ্ তো তিনের মধ্যে একজন, তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই—যদিও এক ইলাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। তাহারা যাহা বলে তাহা হইতে নিবৃত্ত না হইলে তাহাদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছে, তাহাদের উপর অবশ্যই মর্মন্তুদ শাস্তি আপতিত হইবেই।
৭৪। তবে কি তাহারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করিবে না ও তাঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিবে না? আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৭৫।মারইয়াম তনয় মসীহ তো কেবল একজন রাসূল। তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে এবং তাহার মাতা সত্যনিষ্ঠ ছিল। তাহারা উভয়ে খাদ্যাহার করিত। দেখ, আমি উহাদের জন্য আয়াতসমূহ কিরূপ বিশদভাবে বর্ণনা করি; আরও দেখ, উহারা কিভাবে সত্যবিমুখ হয়!
৭৬। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কিছুর ‘ইবাদত কর যাহার তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার কোন ক্ষমতা নাই? আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।'
৭৭। বল, ‘হে কিতাবীগণ! তোমরা তোমাদের দীন সম্বন্ধে অন্যায় বাড়াবাড়ি করিও না; এবং যে সম্প্রদায় ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হইয়াছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করিয়াছে ও সরল পথ হইতে বিচ্যুত হইয়াছে, তাহাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করিও না।'
৭৮। বনী ইস্রাঈলের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছিল তাহারা দাউদ ও মারর্ইয়াম তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হইয়াছিল—ইহা এইহেতু যে, তাহারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী।
৭৯। তাহারা যেসব গর্হিত কার্য করিত উহা হইতে তাহারা একে অন্যকে বারণ করিত না। তাহারা যাহা করিত তাহা কতই না নিকৃষ্ট!
৮০। তাহাদের অনেককে 'তুমি কাফিরদের সহিত বন্ধুত্ব করিতে দেখিবে। কত নিকৃষ্ট তাহাদের কৃতকর্ম—যে কারণে আল্লাহ্ তাহাদের উপর ক্রোধান্বিত হইয়াছেন। তাহাদের শাস্তিভোগ স্থায়ী হইবে।
৮১। তাহারা আল্লাহে, নবীতে ও তাহার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে ঈমান আনিলে উহাদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিত না, কিন্তু তাহাদের অনেকে ফাসিক৷
৮২। অবশ্য মু'মিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদিগকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখিবে এবং যাহারা বলে ‘আমরা খৃস্টান' মানুষের মধ্যে তাহাদিগকেই তুমি মু'মিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখিবে, কারণ তাহাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগী আছে, আর তাহারা অহংকারও করে না।
সপ্তম পারা
৮৩। রাসূলের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা যখন তাহারা শ্রবণ করে তখন তাহারা যে সত্য উপলব্ধি করে তাহার জন্য তুমি তাহাদের চক্ষু অশ্রু বিগলিত দেখিবে। তাহারা বলে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান আনিয়াছি; সুতরাং তুমি আমাদিগকে সাক্ষ্যবহদের তালিকাভুক্ত কর।'
৮৪। ‘আল্লাহে ও আমাদের নিকট আগত সত্যে আমাদের ঈমান না আনার কী কারণ থাকিতে পারে যখন আমরা প্রত্যাশা করি, 'আল্লাহ্ আমাদিগকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন?'
৮৫। এবং তাহাদের এই কথার জন্য আল্লাহ্ তাহাদের পুরস্কার নির্দিষ্ট করিয়াছেন জান্নাত, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে। ইহা সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কার।
৮৬। যাহারা কুফরী করিয়াছে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করিয়াছে তাহারাই জাহান্নামবাসী।
৮৭। হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করিয়াছেন সেই সমুদয়কে তোমরা হারাম করিও না। এবং সীমালংঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালংঘনকারীকে পছন্দ করেন না।
৮৮। আল্লাহ্ তোমাদিগকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়াছেন তাহা হইতে ভক্ষণ কর এবং ভয় কর আল্লাহুকে, যাঁহার প্রতি তোমরা মু'মিন।
৮৯। তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ্ তোমাদিগকে দায়ী করিবেন না, কিন্তু যে সব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সেই সকলের জন্য তিনি তোমাদিগকে দায়ী করিবেন। অতঃপর ইহার কাফ্ফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের আহার্যদান, যাহা তোমরা তোমাদের পরিজনদিগকে খাইতে দাও, অথবা তাহাদিগকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি এবং যাহার সামর্থ্য নাই তাহার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করিলে ইহাই তোমাদের শপথের কাফ্ফারা, তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করিও। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁহার নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
৯০। হে মু'মিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা উহা বর্জন কর—যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
৯১। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাইতে চাহে এবং তোমাদিগকে আল্লাহ্র স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চাহে। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হইবে না?
৯২। তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং সতর্ক হও; যদি তোমরা মুখ ফিরাইয়া লও তবে জানিয়া রাখ যে, স্পষ্ট প্রচারই আমার রাসূলের কর্তব্য।
৯৩। যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহারা পূর্বে যাহা ভক্ষণ করিয়াছে তজ্জন্য তাহাদের কোন গুনাহ্ নাই, যদি তাহারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, সাবধান হয় ও বিশ্বাস করে, পুনরায় সাবধান হয় ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদিগকে ভালবাসেন।
৯৪। হে মু'মিনগণ! তোমাদের হাত ও বর্শা যাহা শিকার করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদিগকে পরীক্ষা করিবেন, যাহাতে আল্লাহ্ অবহিত হন কে তাঁহাকে না দেখিয়াও ভয় করে । সুতরাং ইহার পর কেহ সীমালংঘন করিলে তাহার জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।
৯৫। হে মু'মিনগণ! ইরামে থাকাকালে তোমরা শিকার-জন্তু হত্যা করিও না; তোমাদের মধ্যে কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে উহা হত্যা করিলে যাহা সে হত্যা করিল তাহার বিনিময় হইতেছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু, যাহার ফয়সালা করিবে তোমাদের মধ্যে দুইজন ন্যায়বান লোক—কা'বাতে প্রেরিতব্য কুরবানীরূপে। অথবা উহার কাফ্ফারা হইবে দরিদ্রকে খাদ্য দান করা কিংবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করা, যাহাতে সে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করে । যাহা গত হইয়াছে আল্লাহ্ তাহা ক্ষমা করিয়াছেন। কেহ উহা পুনরায় করিলে আল্লাহ্ তাহার শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, শাস্তিদাতা।
৯৬। তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও উহা ভক্ষণ হালাল করা হইয়াছে, তোমাদের পর্যটকদের ভোগের জন্য। তোমরা যতক্ষণ' 'ইহরামে থাকিবে ততক্ষণ স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হারাম। তোমরা ভয় কর আল্লাহ্কে, যাঁহার নিকট তোমাদিগকে একত্র করা হইবে।
৯৭। পবিত্র কা'বাগৃহ, পবিত্র মাস, কুরবানীর জন্য কা'বায় প্রেরিত পশু ও গলায় মালা পরিহিত পশুকে আল্লাহ্ মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত করিয়াছেন। ইহা এই হেতু যে, তোমরা যেন জানিতে পার যাহা কিছু আসমান ও যমীনে আছে আল্লাহ্ তাহা জানেন এবং আল্লাহ্ তো সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
৯৮। জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর এবং আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷
৯৯। প্রচার করাই কেবল রাসূলের কর্তব্য। আর তোমরা যাহা প্রকাশ কর ও গোপন রাখ আল্লাহ্ তাহা জানেন।
১০০। বল, 'মন্দ ও ভাল এক নহে যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে বোধশক্তিসম্পন্নেরা! আল্লাহকে ভয় কর—যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
১০১। হে মু'মিনগণ! তোমরা সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন করিও না যাহা তোমাদের নিকট প্রকাশ হইলে তাহা তোমাদিগকে কষ্ট দিবে। কুরআন অবতরণের কালে তোমরা যদি সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে উহা তোমাদের নিকট প্রকাশ করা হইবে। আল্লাহ্ সেই সব ক্ষমা করিয়াছেন এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, সহনশীল।
১০২। তোমাদের পূর্বেও তো এক সম্প্রদায় এই প্রকার প্রশ্ন করিয়াছিল; অতঃপর তাহারা উহা প্রত্যাখ্যান করে।
১০৩। বাহীরাঃ সাইবাঃ, ওয়াসীলাঃ ও হাম আল্লাহ্ স্থির করেন নাই; কিন্তু কাফিরগণ আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাহাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করে না।
১০৪। যখন তাহাদিগকে বলা হয়, 'আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে ও রাসূলের দিকে আইস', তাহারা বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদিগকে যাহাতে পাইয়াছি তাহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।' যদিও তাহাদের পূর্বপুরুষগণ কিছুই জানিত না এবং সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি?
১০৫। হে মু'মিনগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হইয়াছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। আল্লাহ্র দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; অতঃপর তোমরা যাহা করিতে তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদিগকে অবহিত করিবেন।
১০৬। হে মু'মিনগণ! তোমাদের কাহারও যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন ওসিয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখিবে; তোমরা সফরে থাকিলে এবং তোমাদের মৃত্যুর বিপদ উপস্থিত হইলে তোমাদের ছাড়া অন্য লোকদের মধ্য হইতে দুইজন সাক্ষী মনোনীত করিবে। তোমাদের সন্দেহ হইলে সালাতের পর তাহাদিগকে অপেক্ষমাণ রাখিবে। অতঃপর তাহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া বলিবে, ‘আমরা উহার বিনিময়ে কোন মূল্য গ্রহণ করিব না যদি সে আত্মীয়ও হয় এবং আমরা আল্লাহ্ সাক্ষ্য গোপন করিব না, করিলে অবশ্যই পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হইব।'
১০৭। যদি ইহা প্রকাশ পায় যে, তাহারা দুইজন অপরাধে লিপ্ত হইয়াছে তবে যাহাদের স্বার্থহানি ঘটিয়াছে তাহাদের মধ্য হইতে নিকটতম দুইজন তাহাদের স্থলবর্তী হইবে এবং আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া বলিবে, 'আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাহাদের সাক্ষ্য হইতে অধিকতর সত্য এবং আমরা সীমালংঘন করি নাই, করিলে অবশ্যই আমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইব।'
১০৮। এই পদ্ধতিতেই অধিকতর এই ভয়ের সম্ভাবনা আছে যে, লোকের যথাযথ সাক্ষ্যদানের অথবা শপথের পর আবার তাহাদিগকে শপথ করান হইবে। আল্লাহকে ভয় কর এবং শ্রবণ কর; আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
১০৯। স্মরণ কর, যে দিন আল্লাহ্ রাসূলগণকে একত্র করিবেন এবং জিজ্ঞাসা করিবেন, ‘তোমরা কী উত্তর পাইয়াছিলে?' তাহারা বলিবে, 'এই বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞানই নাই; তুমিই তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।'
১১০। স্মরণ কর, আল্লাহ্ বলিবেন, 'হে মারইয়াম-তনয় ‘ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার জননীর প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর : পবিত্র আত্মা দ্বারা আমি তোমাকে শক্তিশালী করিয়াছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সহিত কথা বলিতে; তোমাকে কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইন্জীল শিক্ষা দিয়াছিলাম; তুমি কর্দম দ্বারা আমার অনুমতিক্রমে পাখীসদৃশ আকৃতি গঠন করিতে এবং উহাতে ফুৎকার দিতে, ফলে আমার অনুমতিক্রমে উহা পাখী হইয়া যাইত; জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে তুমি আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় করিতে এবং আমার অনুমতিক্রমে তুমি মৃতকে জীবিত করিতে; আমি তোমা হইতে বনী ইস্রাঈলকে নিবৃত্ত রাখিয়াছিলাম; তুমি যখন তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আনিয়াছিলে তখন তাহাদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছিল তাহারা বলিতেছিল, ‘ইহা তো স্পষ্ট জাদু।'
১১১। আরও স্মরণ কর, আমি যখন 'হাওয়ারী- দিগকে এই আদেশ দিয়াছিলাম যে, ‘তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আন', তাহারা বলিয়াছিল, 'আমরা ঈমান আনিলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা তো মুসলিম।'
১১২। স্মরণ কর, হাওয়ারীগণ বলিয়াছিল, 'হে মার্ইয়াম-তনয় ‘ঈসা ! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হইতে খাদ্য পরিপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করিতে সক্ষম?' সে বলিয়াছিল, ‘আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মু'মিন হও।'
১১৩। তাহারা বলিয়াছিল, 'আমরা চাহি যে, উহা হইতে কিছু খাইব ও আমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করিবে। আর আমরা জানিতে চাহি' যে, তুমি আমাদিগকে সত্য বলিয়াছ এবং আমরা উহার সাক্ষী থাকিতে চাহি।'
১১৪। মার্ইয়াম-তনয় 'ঈসা বলিল, 'হে আল্লাহ্ আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হইতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ কর; ইহা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হইবে আনন্দোৎসব স্বরূপ এবং তোমার নিকট হইতে নিদর্শন। আর আমাদিগকে জীবিকা দান কর; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।'
১১৫। আল্লাহ্ বলিলেন, 'আমিই তোমাদের নিকট উহা প্রেরণ করিব; কিন্তু ইহার পর তোমাদের মধ্যে কেহ কুফরী করিলে তাহাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি বিশ্বজগতের অপর কাহাকেও দিব না।'
১১৬। আল্লাহ্ যখন বলিবেন, 'হে মারইয়াম-তনয় 'ঈসা! তুমি কি লোকদিগকে বলিয়াছিলে যে, তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে দুই ইলারূপে গ্রহণ কর?' সে বলিবে, 'তুমিই মহিমান্বিত! যাহা বলার অধিকার আমার নাই তাহা বলা আমার পক্ষে শোভন নহে। যদি আমি তা বলিতাম তবে তুমি তো তাহা জানিতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার
অন্তরের কথা আমি অবগত নহি; তুমি তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।'
১১৭। তুমি আমাকে যে আদেশ করিয়াছ তাহা ব্যতীত তাহাদিগকে আমি কিছুই বলি নাই, তাহা এইঃ ‘তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং যত দিন আমি তাহাদের মধ্যে ছিলাম তত দিন আমি ছিলাম তাহাদের কার্যকলাপের সাক্ষী, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলিয়া লইলে তখন তুমিই তো ছিলে তাহাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবদায়ক এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী।'
১১৮। 'তুমি যদি তাহাদিগকে শাস্তি দাও তবে তাহারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাহাদিগকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।'
১১৯। আল্লাহ্ বলিবেন, 'এই সেই দিন যেদিন সত্যবাদিগণ তাহাদের সত্যতার জন্য উপকৃত হইবে, তাহাদের জন্য আছে জান্নাত যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। তাহারা সেখানে চিরস্থায়ী হইবে; আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারা ও তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট; ইহা মহাসফলতা।'
১২০। আসমান ও যমীন এবং উহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্ই এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
০৫-নং; সূরাঃ- আল- মায়িদা: মোট আয়াত; ১২০/১২০;সমাপ্ত
০০৬- সূরা "আন্‘আম"
মোট আয়াত-১৬৫; রুকূ'-২০; মক্কী;
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে"
১। সকল প্রশংসা আল্লাহ্ই যিনি আমান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন, আর সৃষ্টি করিয়াছেন অন্ধকার ও আলো। এতদ্সত্ত্বেও কাফিরগণ তাহাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়।
২। তিনিই তোমাদিগকে মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর এক কাল নির্দিষ্ট করিয়াছেন এবং আর একটি নির্ধারিত কাল আছে যাহা তিনিই জ্ঞাত, এতদ্সত্ত্বেও তোমরা সন্দেহ কর।
৩। আসমান ও যমীনে তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু তিনি জানেন এবং তোমরা যাহা অর্জন কর তাহাও তিনি অবগত আছেন।
৪। তাহাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীর এমন কোন নিদর্শন তাহাদের নিকট উপস্থিত হয় না যাহা হইতে তাহারা মুখ না ফিরায়।
৫। সত্য যখন তাহাদের নিকট আসিয়াছে তাহারা উহা প্রত্যাখ্যান করিয়াছে। যাহা লইয়া তাহারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিত উহার যথার্থ সংবাদ অচিরেই তাহাদের নিকট পৌছিবে।
৬ । তাহারা কি দেখে না যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করিয়াছি; তাহাদিগকে দুনিয়ায় এমন-ভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলাম যেমনটি তোমাদিগকেও করি নাই এবং তাহাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম আর তাহাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করিয়াছিলাম; অতঃপর তাহাদের পাপের দরুন তাহাদিগকে বিনাশ করিয়াছি এবং তাহাদের পরে অপর মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করিয়াছি।
৭। আমি যদি তোমার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করিতাম আর তাহারা যদি উহা হস্ত দ্বারা স্পর্শও করিত তবুও কাফিরগণ বলিত, ‘ইহা স্পষ্ট যাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।
৮। তাহারা বলে, “তাহার নিকট কোন ফিরিশ্তা কেন প্রেরিত হয় না?' যদি আমি ফিরিশ্তা প্রেরণ করিতাম তাহা হইলে চূড়ান্ত ফয়সালাই তো হইয়া যাইত আর তাহাদিগকে কোন অবকাশ দেওয়া হইত না।
৯। যদি তাহাকে ফিরিশ্তা করিতাম তবে তাহাকে মানুষের আকৃতিতেই প্রেরণ করিতাম আর তাহাদিগকে সেরূপ বিভ্রমে ফেলিতাম যেরূপ বিভ্রমে তাহারা এখন রহিয়াছে।
১০। তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হইয়াছে। তাহারা যাহা লইয়া ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিতেছিল পরিণামে তাহাই বিদ্রূপকারীদিগকে পরিবেষ্টন করিয়াছে।
১১। বল, 'তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, যাহারা সত্যকে অস্বীকার করিয়াছে তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল!'
১২। বল, 'আসমান ও যমীনে যাহা আছে তাহা কাহার?' বল, 'আল্লাহ্রই', দয়া করা তিনি তাঁহার কর্তব্য বলিয়া স্থির করিয়াছেন। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদিগকে অবশ্যই একত্র করিবেন, ইহাতে কোনই সন্দেহ নাই। যাহারা নিজেরাই নিজদের ক্ষতি করিয়াছে তাহারা ঈমান আনিবে না।
১৩। রাত্রি ও দিবসে যাহা কিছু থাকে তাহা তাঁহারই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১৪। বল, “আমি কি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করিব? তিনিই আহার্য দান করেন কিন্তু তাঁহাকে কেহ আহার্য দান করে না,’ এবং বল, ‘আমি আদিষ্ট হইয়াছি যেন আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমি প্রথম ব্যক্তি হই,' আমাকে আরও আদেশ করা হইয়াছে, ‘তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।'
১৫। বল, 'আমি যদি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি তবে আমি ভয় করি মহাদিনের শাস্তির।
১৬। 'সেই দিন যাহাকে উহা হইতে রক্ষা করা হইবে তাহার প্রতি তিনি তো দয়া করিবেন এবং ইহাই স্পষ্ট সফলতা।'
১৭। আল্লাহ্ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত উহা মোচনকারী আর কেহ নাই। আর তিনি তোমার কল্যাণ করিলে তবে তিনিই তো সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
১৮। তিনি আপন বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী, তিনি প্রজ্ঞাময়, জ্ঞাতা।
১৯। বল, ‘সাক্ষ্যতে সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় কী?' বল, 'আল্লাহ্ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী এবং এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হইয়াছে যেন তোমাদিগকে এবং যাহার নিকট ইহা পৌঁছিবে তাহাদিগকে এতদ্বারা আমি সতর্ক করি। তোমরা কি এই সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্র সহিত অন্য ইলাহ্ও আছে? বল, 'আমি সে সাক্ষ্য দেই না'। বল, “তিনি তো এক ইলাহ্ এবং তোমরা যে শরীক কর তাহা হইতে আমি অবশ্যই নির্লিপ্ত।'
২০। আমি যাহাদিগকে কিতাব দিয়াছি তাহারা তাহাকে সেইরূপ চিনে যেইরূপ চিনে তাহাদের সন্তানগণকে। যাহারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করিয়াছে, তাহারা বিশ্বাস করিবে না।
২১। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁহার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাহার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? যালিমগণ আদৌ সফলকাম হয় না।
২২। স্মরণ কর, যেদিন তাহাদের সকলকে একত্র করিব, অতঃপর মুশরিকদিগকে বলিব, ‘যাহাদিগকে তোমরা আমার শরীক মনে করিতে, তাহারা কোথায়?’
২৩। অতঃপর তাহাদের ইহা ভিন্ন বলিবার অন্য কোন অজুহাত থাকিবে না: ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র শপথ! আমরা তো মুশরিকই ছিলাম না।'
২৪। দেখ, তাহারা নিজেদের প্রতি কিরূপ মিথ্যা আরোপ করে এবং যে মিথ্যা তাহারা রচনা করিত উহা কিভাবে তাহাদিগ হইতে উধাও হইয়া গেল।
২৫। তাহাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পাতিয়া রাখে, কিন্তু আমি তাহাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়াছি যেন তাহারা তাহা উপলব্ধি করিতে না পারে; তাহাদিগকে বধির করিয়াছি এবং সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করিলেও তাহারা উহাতে ঈমান আনিবে না; এমনকি তাহারা যখন তোমার নিকট উপস্থিত হইয়া বিতর্কে লিপ্ত হয় তখন কাফিরগণ বলে, “ইহা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নহে।
২৬। তাহারা অন্যকে উহা শ্রবণে বিরত রাখে এবং নিজেরাও উহা হইতে দূরে থাকে, আর তাহারা নিজেরাই শুধু নিজদিগকে ধ্বংস করে, অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।
২৭। তুমি যদি দেখিতে পাইতে যখন তাহাদিগকে অগ্নির পার্শ্বে দাঁড় করান হইবে এবং তাহারা বলিবে, 'হায়! যদি আমাদের প্রত্যাবর্তন ঘটিত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করিতাম না এবং আমরা মু'মিনদের অন্তর্ভুক্ত হইতাম।'
২৮। না! পূর্বে তাহারা যাহা গোপন করিত তাহা এখন তাহাদের নিকট প্রকাশ পাইয়াছে এবং তাহারা প্রত্যাবর্তিত হইলেও যাহা করিতে তাহাদিগকে নিষেধ করা হইয়াছিল পুনরায় তাহারা তাহাই করিত এবং নিশ্চয় তাহারা মিথ্যাবাদী।
২৯। তাহারা বলে, 'আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হইব না।'
৩০। তুমি যদি দেখিতে পাইতে তাহাদিগকে যখন তাহাদের প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড় করান হইবে এবং তিনি বলিবেন, “ইহা কি প্রকৃত সত্য নহে?' তাহারা বলিবে, 'আমাদের প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই সত্য'। তিনি বলিবেন, ‘তবে তোমরা যে কুফরী করিতে তজ্জন্য তোমরা এখন শাস্তি ভোগ কর।'
৩১। যাহারা আল্লাহ্র সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলিয়াছে তাহারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে, এমনকি অকস্মাৎ তাহাদের নিকট যখন কিয়ামত উপস্থিত হইবে তখন তাহারা বলিবে, 'হায়! ইহাকে আমরা যে অবহেলা করিয়াছি তজ্জন্য আক্ষেপ।' তাহারা তাহাদের পৃষ্ঠে নিজেদের পাপ বহন করিবে; দেখ, তাহারা যাহা বহন করিবে তাহা অতি নিকৃষ্ট।
৩২। পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয় এবং যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাহাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি অনুধাবন কর না?
৩৩। আমি অবশ্য জানি যে, তাহারা যাহা বলে তাহা তোমাকে নিশ্চিতই কষ্ট দেয়; কিন্তু তাহারা তোমাকে তো মিথ্যবাদী বলে না, বরং যালিমেরা আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার করে।
৩৪। তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে অবশ্যই মিথ্যাবাদী বলা হইয়াছিল; কিন্তু তাহাদিগকে মিথ্যাবাদী বলা ও ক্লেশ দেওয়া সত্ত্বেও তাহারা ধৈর্য ধারণ করিয়াছিল যে পর্যন্ত না আমার সাহায্য তাহাদের নিকট আসিয়াছে। আল্লাহ্র আদেশ কেহ পরিবর্তন করিতে পারে না, রাসূলগণের সম্বন্ধে কিছু সংবাদ তো তোমার নিকট আসিয়াছে।
৩৫। যদি তাহাদের উপেক্ষা তোমার নিকট কষ্টকর হয় তবে পারিলে ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে সোপান অন্বেষণ কর এবং তাহাদের নিকট কোন নিদর্শন আন। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাহাদের সকলকে অবশ্য সৎপথে একত্র করিতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
৩৬। যাহারা শ্রবণ করে শুধু তাহারাই ডাকে সাড়া দেয়। আর মৃতকে আল্লাহ্ পুনর্জীবিত করিবেন; অতঃপর তাঁহার দিকেই তাহারা প্রত্যানীত হইবে।
৩৭। তাহারা বলে, 'তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?' বল, 'নিদর্শন নাযিল করিতে আল্লাহ্ অবশ্যই সক্ষম,' কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই জানে না।
৩৮। ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল এমন জীব নাই অথবা নিজ ডানার সাহায্যে এমন কোন পাখী উড়ে না কিন্তু উহারা তো তোমাদের মত এক একটি উম্মত। কিতাবে কোন কিছুই আমি বাদ দেই নাই; অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাহাদেরকে একত্র করা হইবে।
৩৯। যাহারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাহারা বধির ও মূক, অন্ধকারে রহিয়াছে। যাহাকে ইচ্ছা আল্লাহ্ বিপথগামী করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি সরল পথে স্থাপন করেন।
৪০। বল, 'তোমরা ভাবিয়া দেখ যে, আল্লাহ্ শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হইলে তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও!
৪১। 'না, তোমরা শুধু তাঁহাকেই ডাকিবে, তোমরা যে দুঃখের জন্য তাঁহাকে ডাকিতেছ তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদের সেই দুঃখ দূর করিবেন এবং যাহাকে তোমরা তাঁহার শরীক করিতে তাহা তোমরা বিস্মৃত হইবে।'
৪২। তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছি; অতঃপর তাহাদিগকে অর্থসংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা পীড়িত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা বিনীত হয়।
৪৩। আমার শাস্তি যখন তাহাদের উপর আপতিত হইল তখন তাহারা কেন বিনীত হইল না? অধিকন্তু তাহাদের হৃদয় কঠিন হইয়াছিল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল শয়তান তাহা তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল।
৪৪। তাহাদিগকে যে উপদেশ দেওয়া হইয়া-ছিল তাহারা যখন তাহা বিস্মৃত হইল তখন আমি তাহাদের জন্য সমস্ত কিছুর দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিলাম; অবেশেষে তাহাদিগকে যাহা দেওয়া হইল যখন তাহারা তাহাতে উল্লাসিত হইল তখন অকস্মাৎ তাহাদিগকে ধরিলাম; ফলে তখনি তাহারা নিরাশ হইল।
৪৫। অতঃপর জালিম সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হইল এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই; যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
৪৬। বল, ‘তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আল্লাহ্ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কাড়িয়া লন এবং তোমাদের হৃদয় মোহর করিয়া দেন তবে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন্ ইলাহ্ আছে যে তোমাদিগকে এইগুলি ফিরাইয়া দিবে?' দেখ, আমি কিরূপে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; এতদ্সত্ত্বেও তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয়।
৪৭। বল, 'তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, আল্লাহ্র শাস্তি অকস্মাৎ অথবা প্রকাশ্যে তোমাদের উপর আপতিত হইলে যালিম সম্প্রদায় ব্যতীত আর কেহ ধ্বংস হইবে কি?'
৪৮। আমি রাসূলগণকে তো শুধু সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করি। কেহ ঈমান আনিলে ও নিজকে সংশোধন করিলে তাহার কোন ভয় নাই এবং সে দুঃখিতও হইবে না।
৪৯। যাহারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলিয়াছে সত্য ত্যাগের জন্য তাহাদের উপর শাস্তি আপতিত হইবে।
৫০। বল, আমি তোমাদিগকে ইহা বলি না 'যে, আমার নিকট আল্লাহ্র ধনভাণ্ডার আছে, অদৃশ্য সম্বন্ধেও আমি অবগত নহি; এবং তোমাদিগকে ইহাও বলি না যে, আমি ফিরিশ্তা, আমার প্রতি যাহা ওহী হয় আমি শুধু তাহারই অনুসরণ করি। ”বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান?' তোমরা কি অনুধাবন কর না?
৫১। তুমি ইহা দ্বারা তাহাদিগকে সতর্ক করিয়া দাও যাহারা ভয় করে যে, তাহাদিগকে তাহাদের প্রতিপালকের নিকট সমবেত করা হইবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ব্যতীত তাহাদের কোন অভিভাবক বা সুপারিশকারী থাকিবে না; হয়ত তাহারা সাবধান হইবে।
৫২। যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁহার সন্তুষ্টি লাভার্থে ডাকে তাহাদিগকে তুমি 'বিতাড়িত করিও না। তাহাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয় এবং তোমার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাহাদের নয় যে, তুমি তাহাদিগকে বিতাড়িত করিবে; করিলে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
৫৩। আমি এইভাবে তাহাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করিয়াছি যেন তাহারা বলে, ‘আমাদের মধ্যে কি ইহাদের প্রতিই আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিলেন?' আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞ লোকদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নহেন?
৫৪। যাহারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে তাহারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাহাদিগকে তুমি বলিও: 'তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক', তোমাদের প্রতিপালক দয়া করা তাঁহার কর্তব্য বলিয়া স্থির করিয়াছেন। তোমাদের মধ্যে কেহ অজ্ঞতাবশত যদি মন্দ কার্য করে, অতঃপর তওবা করে এবং সংশোধন করে তবে তো আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৫৫। এইভাবে আমি আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি; আর ইহাতে অপরাধীদের পথ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
৫৬। বল, “তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাহাদিগকে আহ্বান কর তাহাদের ‘ইবাদত করিতে আমাকে নিষেধ করা হইয়াছে। বল, “আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করি না; করিলে আমি বিপথগামী হইব এবং সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকিব না।'
৫৭। বল, ‘অবশ্যই আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা উহাকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছ। তোমরা যাহা সত্বর চাহিতেছ তাহা আমার নিকট নাই৷ কৰ্তৃত্ব তো আল্লাহ্ই, তিনি সত্য বিবৃত করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।'
৫৮। বল, 'তোমরা যাহা সত্বর চাহিতেছ তাহা যদি আমার নিকট থাকিত তবে আমার ও তোমাদের মধ্যকার ব্যাপারে তো ফয়সালাই হইয়া যাইত এবং আল্লাহ্ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।'
৫৯। অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁহারই নিকট রহিয়াছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেহ তাহা জানে না। জলে ও স্থলে যাহা কিছু আছে তাহা তিনিই অবগত, তাঁহার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নাই যাহা সুস্পষ্ট কিতাবে নাই।
৬০। তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যাহা কর তাহা তিনি জানেন। অতঃপর দিবসে তোমাদিগকে তিনি পুনর্জাগরিত করেন যাহাতে নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁহার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অনন্তর তোমরা যাহা কর সে সম্বন্ধে তোমাদিগকে তিনি অবহিত করিবেন।
৬১৷ স্বীয় বান্দাদের উপর তিনিই পরাক্রমশালী এবং তিনিই তোমাদের রক্ষক প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার প্রেরিতরা তাহার মৃত্যু ঘটায় এবং তাহারা কোন ত্রুটি করে না।
৬২। অতঃপর তাহাদের প্রকৃত প্রতিপালক আল্লাহ্র দিকে তাহারা প্রত্যানীত হয়। দেখ, কর্তৃত্ব তো তাঁহারই এবং হিসাব গ্রহণে তিনিই সর্বাপেক্ষা তৎপর।
৬৩। বল, ‘কে তোমাদিগকে ত্রাণ করে স্থলভাগের ও সমুদ্রের অন্ধকার হইতে যখন তোমরা কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁহার নিকট অনুনয় কর?' আমাদিগকে ইহা হইতে ত্রাণ করিলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হইব।'
৬৪। বল, 'আল্লাহ্ই তোমাদিগকে উহা হইতে এবং সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হইতে ত্রাণ করেন। এতদ্সত্ত্বেও তোমরা তাঁহার শরীক কর।'
৬৫। বল, “তোমাদের উর্ধ্বদেশ অথবা পাদদেশ হইতে শাস্তি প্রেরণ করিতে, অথবা তোমাদিগকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করিতে অথবা এক দলকে অপর দলের সংঘর্ষের আস্বাদ গ্রহণ করাইতে তিনিই সক্ষম।' দেখ, আমি কিরূপে বিভিন্ন প্রকারে আয়াতসমূহ বিবৃত করি যাহাতে তাহারা অনুধাবন করে।
৬৬। তোমার সম্প্রদায় তো উহাকে মিথ্যা বলিয়াছে অথচ উহা সত্য। বল, 'আমি তোমাদের কার্যনির্বাহক নহি।
৬৭। প্রত্যেক বার্তার জন্য নির্ধারিত কাল রহিয়াছে এবং শীঘ্রই তোমরা অবহিত হইবে !
৬৮। তুমি যখন দেখ, তাহারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি তাহাদের হইতে সরিয়া পড়িবে, যে পর্যন্ত না তাহারা অন্য প্রসংগে প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে তবে স্মরণ হওয়ার পরে যালিম সম্প্রদায়ের সহিত বসিবে না।
৬৯। উহাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তাহাদের নয় যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে। তবে উপদেশ দেওয়া তাহাদের কর্তব্য যাহাতে উহারাও তাকওয়া অবলম্বন করে।
৭০। যাহারা তাহাদের দীনকে ক্রীড়া- কৌতুকরূপে গ্রহণ করে এবং পার্থিব জীবন যাহাদিগকে প্রতারিত করে তুমি তাহাদের সংগ বর্জন কর এবং ইহা দ্বারা তাহাদিগকে উপদেশ দাও, যাহাতে কেহ নিজ কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, যখন আল্লাহ্ ব্যতীত তাহার কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী থাকিবে না এবং বিনিময়ে সব কিছু দিলেও তাহা গৃহীত হইবে না। ইহারাই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হইবে; কুফরীহেতু ইহাদের জন্য রহিয়াছে অত্যুষ্ণ পানীয় ও মর্মন্তুদ শাস্তি।
৭১। বল, “আল্লাহ্ ব্যতীত আমরা কি এমন কিছুকে ডাকিব যাহা আমাদের কোন উপকার কিংবা অপকার করিতে পারে না? আল্লাহ্ আমাদিগকে সৎপথ প্রদর্শনের পর আমরা কি সেই ব্যক্তির ন্যায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যাইব যাহাকে শয়তান দুনিয়ায় পথ ভুলাইয়া হয়রান করিয়াছে, যদিও তাহার সহচরগণ তাহাকে ঠিক পথে আহ্বান করিয়া বলে, 'আমাদিগের নিকট আইস?' বল, “আল্লাহ্র পথই সঠিক পথ এবং আমরা আদিষ্ট হইয়াছি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করিতে।
৭২। 'এবং সালাত কায়েম করিতে ও তাঁহাকে ভয় করিতে; এবং তাঁহারই নিকট তোমাদিগকে সমবেত করা হইবে।'
৭৩। তিনিই যথাবিধি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন। যখন তিনি বলেন, 'হও', তখনই হইয়া যায়। তাঁহার কথাই সত্য। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হইবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁহারই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত; আর তিনিই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।
৭৪। স্মরণ কর, ইব্ররাহীম তাহার পিতা আযর কে বলিয়াছিল, 'আপনি কি মূর্তিকে ইলারূপে গ্রহণ করেন? আমি তো আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখিতেছি।'
৭৫। এইভাবে আমি ইব্রাহীমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনা ব্যবস্থা দেখাই, যাহাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
৭৬। অতঃপর রাত্রির অন্ধকার যখন তাহাকে আচ্ছন্ন করিল তখন সে নক্ষত্র দেখিয়া বলিল, “ইহাই আমার প্রতিপালক।" অতঃপর যখন উহা অস্তমিত হইল তখন সে বলিল, 'যাহা অন্তমিত হয় তাহা আমি পছন্দ করি না।'
৭৭। অতঃপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হইতে দেখিল তখন বলিল, ইহা আমার প্রতিপালক। যখন ইহাও অস্তমিত হইল তখন বলিল, 'আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করিলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হইব।
৭৮। অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হইতে দেখিল তখন বলিল, ইহা আমার প্রতিপালক, ইহা সর্ববৃহৎ। যখন ইহাও অন্তমিত হইল, তখন সে বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাহাকে আল্লাহ্র শরীক কর তাহার সহিত আমার কোন সংশ্রব নাই।
৭৯। ‘আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইতেছি যিনি আকাশমণ্ডলী পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নহি৷
৮০। তাহার সম্প্রদায় তাহার সহিত বিতর্কে লিপ্ত হইল। সে বলিল, 'তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে আমার সহিত বিতর্কে লিপ্ত হইবে? তিনি তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন। আমার প্রতিপালক অন্যবিধ ইচ্ছা না করিলে তোমরা যাহাকে তাঁহার শরীক কর তাহাকে আমি ভয় করি না, সব কিছুই আমার প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত, তবে কি তোমরা অনুধাবন করিবে না?
৮১। 'তোমরা যাহাকে আল্লাহ্র শরীক কর আমি তাহাকে কিরূপে ভয় করিব? অথচ তোমরা আল্লাহ্ শরীক করিতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদিগকে কোন সনদ দেন নাই। সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বল, দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নিরাপত্তা লাভের বেশী হকদার।
৮২। যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং তাহাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করে নাই, নিরাপত্তা তাহাদেরই জন্য এবং তাহারাই সৎপথপ্রাপ্ত।
৮৩। আর ইহা আমার যুক্তি-প্রমাণ যাহা ইব্রাহীমকে দিয়াছিলাম তাহার সম্প্রদায়ের মুকাবিলায়; যাহাকে ইচ্ছা মর্যাদায় আমি উন্নীত করি। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
৮৪। আর আমি তাহাকে দান করিয়াছিলাম ইসহাক ও ইয়াকূব, ইহাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম; পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম এবং তাহার বংশধর দাউদ, সুলায়মান ও আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকেও; আর এইভাবেই সৎকর্মপরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করি;
৮৫। এবং যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, “ঈসা এবং ইলিয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম। ইহারা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত;
৮৬। আরও সৎপথে পরিচালিত করিয়াছিলাম ইসমাঈল, আল্-য়াসা'আ, ইউনুছ ও লূতকে; এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেককে;
৮৭। এবং ইহাদের, পিতৃ-পুরুষ, বংশধর ও ভ্রাতৃবৃন্দের কতককে । আমি তাহাদিগকে মনোনীত করিয়াছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করিয়াছিলাম।
৮৮। ইহা আল্লাহ্র হিদায়াত, স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি ইহা দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। তাহারা যদি শির্ক করিত তবে তাহাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হইত।
৮৯। আমি উহাদিগকেই কিতাব, কর্তৃত্ব ও নুবুওয়াত দান করিয়াছি, অতঃপর যদি ইহারা এইগুলিকে প্রত্যাখ্যানও করে তবে আমি তো এমন এক সম্প্রদায়ের প্রতি এইগুলির ভার অর্পণ করি-য়াছি যাহারা এইগুলি প্রত্যাখ্যান করিবে না।
৯০। উহাদিগকেই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন, সুতরাং তুমি তাহাদের পথের অনুসরণ কর। বল, 'ইহার জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাহি না, ইহা তো শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ।
৯১। তাহারা আল্লাহ্ যথার্থ মর্যাদা উপলব্ধি করে নাই যখন তাহারা বলে, "আল্লাহ্ মানুষের নিকট কিছুই নাযিল করেন নাই।" বল, 'কে নাযিল করিয়াছেন মূসার আনীত কিতাব যাহা মানুষের জন্য আলো ও পথনির্দেশ ছিল, তাহা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করিয়া কিছু প্রকাশ কর ও যাহার অনেকাংশ গোপন রাখ এবং যাহা তোমাদের পিতৃপুরুষগণ ও তোমরা জানিতে না তাহাও শিক্ষা দেওয়া হইয়াছিল? বল, 'আল্লাহ্ই'; অতঃপর তাহাদিগকে তাহাদের নিরর্থক আলোচনারূপ খেলায় মগ্ন হইতে দাও।
৯২। আমি এই কল্যাণময় কিতাব নাযিল করিয়াছি যাহা উহার পূর্বেকার কিতাবের সমর্থক এবং যাহা দ্বারা তুমি মক্কা ও উহার চতুষ্পার্শ্বের লোকদিগকে সতর্ক কর। যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে তাহারা উহাতে বিশ্বাস করে এবং তাহারা তাহাদের সালাতের হিফাজত করে।
৯৩। তাহার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা বলে, 'আমার নিকট ওহী হয়, যদিও তাহার প্রতি নাযিল হয় না এবং যে বলে, “আল্লাহ্ যাহা নাযিল করিয়াছেন আমিও উহার অনুরূপ নাযিল করিব? যদি তুমি দেখিতে পাইতে যখন যালিমগণ মৃত্যু যন্ত্রণায় রহিবে এবং ফিরিশতাগণ হাত বাড়াইয়া বলিবে, 'তোমাদের প্রাণ বাহির কর। তোমরা আল্লাহ্ সম্বন্ধে অন্যায় বলিতে ও তাঁহার নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করিতে, সেজন্য আজ তোমাদিগকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হইবে।'
৯৪। তোমরা তো আমার নিকট নিঃসংগ অবস্থায় আসিয়াছ যেমন আমি প্রথমে তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছিলাম; তোমাদিগকে যাহা দিয়াছিলাম তাহা তোমরা পশ্চাতে ফেলিয়া আসিয়াছ, তোমরা যাহাদিগকে তোমাদের ব্যাপারে শরীক মনে করিতে তোমাদের সেই সুপারিশকারিগণকেও তোমাদের সহিত দেখিতেছি না; তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই ছিন্ন হইয়াছে এবং তোমরা যাহা ধারণা করিয়াছিলে তাহাও নিষ্ফল হইয়াছে।
৯৫। আল্লাহ্ই শস্য-বীজ ও আঁটি অংকুরিত করেন, তিনিই প্রাণহীন হইতে জীবন্তকে বাহির করেন এবং জীবন্ত হইতে প্রাণহীনকে বাহির করেন। তিনিই তো আল্লাহ্, সুতরাং তোমরা কোথায় ফিরিয়া যাইবে?
৯৬। তিনিই ঊষার উন্মেষ ঘটান, তিনিই বিশ্রামের জন্য রাত্রি এবং গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করিয়াছেন; এই সবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিরূপণ।
৯৭। তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করিয়াছেন যেন তদ্দ্বারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথ পাও। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি।
৯৮। তিনিই তোমাদিগকে একই ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তোমাদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পকালীন বাসস্থান রহিয়াছে। অনুধাবনকারী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করিয়াছি।
৯৯। তিনিই আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর উহা দ্বারা আমি সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদ্গম করি; অনস্তর উহা হইতে সবুজ পাতা উদ্গত করি, পরে উহা হইতে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি, এবং খেজুর বৃক্ষের মাথি হইতে ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি আর আংগুরের উদ্যান সৃষ্টি করি এবং যায়তুন ও আনার। ইহারা একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও। লক্ষ্য কর, উহার ফলের প্রতি; যখন উহা ফলবান হয় এবং উহার পরিপক্বতা প্রাপ্তির প্রতি। মু'মিন সম্প্রদায়ের জন্য উহাতে অবশ্যই নিদর্শন রহিয়াছে।
১০০। তাহারা জ্বীন্নকে আল্লাহ্র শরীক করে, অথচ তিনিই ইহাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং উহারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র—মহিমান্বিত! এবং উহারা যাহা বলে তিনি তাহার ঊর্ধ্বে।
১০১। তিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, তাঁহার সন্তান হইবে কিরূপে? তাঁহার তো কোন ভার্যা নাই। তিনিই তো সমস্ত কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন এবং প্রত্যেক বস্তু সম্বন্ধে তিনিই সবিশেষ অবহিত।
১০২। তিনিই তো আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা; সুতরাং তোমরা তাঁহার ইবাদত কর; তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।
১০৩। দৃষ্টি তাঁহাকে অবধারণ করিতে পারে না কিন্তু তিনি অবধারণ করেন সকল দৃষ্টি এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক পরিজ্ঞাত।
১০৪। তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ অবশ্যই আসিয়াছে। সুতরাং কেহ উহা দেখিলে উহা দ্বারা সে নিজেই লাভবান হইবে, আর কেহ না দেখিলে তাহাতে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। আমি তোমাদের সংরক্ষক নহি।
১০৫। আমি এইভাবে নিদর্শনাবলী বিভিন্ন প্রকারে বিবৃত করি। ফলে, উহারা বলে, 'তুমি পড়িয়া লইয়াছ?' কিন্তু আমি তো সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।
১০৬। তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা ওহী হয় তুমি তাহারই অনুসরণ কর, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই এবং মুশরিকদের হইতে মুখ ফিরাইয়া লও।
১০৭। আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে তাহারা শির্ক করিত না এবং তোমাকে তাহাদের জন্য রক্ষক নিযুক্ত করি নাই; আর তুমি তাহাদের অভিভাবকও নহ।
১০৮। আল্লাহকে ছাড়িয়া যাহাদিগকে তাহারা ডাকে তাহাদিগকে তোমরা গালি দিও না। কেননা তাহারা সীমালংঘন করিয়া অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গালি দিবে; এইভাবে আমি প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাহাদের কার্যকলাপ সুশোভন করিয়াছি; অতঃপর তাহাদের প্রতিপালকের নিকট তাহাদের প্রত্যাবর্তন। অনস্তর তিনি তাহাদিগকে তাহাদের কৃতকার্য সম্বন্ধে অবহিত করিবেন।
১০৯। তাহারা আল্লাহর নামে কঠিন শপথ করিয়া বলে, তাহাদের নিকট যদি কোন নিদর্শন আসিত তবে অবশ্যই তাহারা ইহাতে ঈমান আনিত। বল, 'নিদর্শন তো আল্লাহ্র ইখতিয়ারভুক্ত। তাহাদের নিকট নিদর্শন আসিলেও তাহারা যে ঈমান আনিবে না ইহা কিভাবে তোমাদের বোধগম্য করান যাইবে?
১১০। তাহারা যেমন প্রথমবারে উহাতে ঈমান আনে নাই তেমনি আমিও তাহাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করিয়া দিব এবং তাহাদিগকে তাহাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দিব।
অষ্টম পারা
১১১। আমি তাহাদের নিকট ফিরিশতা প্রেরণ করিলেও এবং মৃতেরা তাহাদের সহিত কথা বলিলেও এবং সকল বস্তুকে তাহাদের সম্মুখে হাযির করিলেও যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে তাহারা ঈমান আনিবে না; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।
১১২। এইরূপে আমি মানব ও জিনের মধ্যে শয়তানদিগকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করিয়াছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাহাদের একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্য দ্বারা প্ররোচিত করে। যদি তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিতেন তবে তাহারা ইহা করিত না; সুতরাং তুমি তাহাদিগকে ও তাহাদের মিথ্যা রচনাকে বর্জন কর।
১১৩। আর তাহারা এই উদ্দেশ্যে প্ররোচিত করে যে, যাহারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাহাদের মন যেন উহার প্রতি অনুরাগী হয় এবং উহাতে যেন তাহারা পরিতুষ্ট হয় আর তাহারা যে অপকর্ম করে তাহাই যেন তাহারা করিতে থাকে।
১১৪। বল, 'তবে কি আমি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে সালিস মানিব—যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন!' আমি যাহাদিগকে কিতাব দিয়াছি তাহারা জানে যে, উহা তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে সত্যসহ অবতীর্ণ হইয়াছে। সুতরাং তুমি সন্দিহানদের অন্তর্ভুক্ত হইও না।
১১৫। সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়া তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তাঁহার বাক্য পরিবর্তন করিবার কেহ নাই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১১৬। যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তাহারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।
১১৭। তাঁহার পথ ছাড়িয়া কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক তো সবিশেষ অবহিত এবং সৎপথে যাহারা আছে তাহাও তিনি সবিশেষ অবহিত।
১১৮। তোমরা তাঁহার নিদর্শনে বিশ্বাসী হইলে যাহাতে আল্লাহুর নাম লওয়া হইয়াছে তাহা হইতে আহার কর;
১১৯। তোমাদের কী হইয়াছে যে, যাহাতে আল্লাহর নাম লওয়া হইয়াছে তোমরা তাহা হইতে আহার করিবে না? যাহা তোমাদের জন্য তিনি হারাম করিয়াছেন তাহা তিনি বিশদভাবেই তোমাদের নিকট বিবৃত করিয়াছেন, তবে তোমরা নিরুপায় হইলে তাহা স্বতন্ত্র। অনেকে অজ্ঞানতাবশত নিজেদের খেয়াল-খুশী দ্বারা অবশ্যই অন্যকে বিপথগামী করে; নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সীমালংঘনকারীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
১২০। তোমরা প্রকাশ্য এবং প্রচ্ছন্ন পাপ বৰ্জন কর; যাহারা পাপ করে তাহাদিগকে অচিরেই তাহাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হইবে।
১২১। যাহাতে আল্লাহ্র নাম লওয়া হয় নাই তাহার কিছুই তোমরা আহার করিও না; উহা অবশ্যই পাপ। নিশ্চয়ই শয়তানেরা তাহাদের বন্ধুদিগকে তোমাদের সহিত বিবাদ করিতে প্ররোচনা দেয়; যদি তোমরা তাহাদের কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হইবে।
১২২। যে ব্যক্তি মৃত ছিল, যাহাকে আমি পরে জীবিত করিয়াছি এবং যাহাকে মানুষের মধ্যে চলিবার জন্য আলোক দিয়াছি সেই ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্ধকারে রহিয়াছে এবং সেই স্থান হইতে বাহির হইবার নহে? এইরূপে কাফিরদের দৃষ্টিতে তাহাদের কৃতকর্ম শোভন করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
১২৩। এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে তথাকার অপরাধীদের প্রধানকে সেখানে চক্রান্ত করার অবকাশ দিয়াছি; কিন্তু তাহারা শুধু তাহাদের নিজেদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে, অথচ তাহারা উপলব্ধি করে না।
১২৪। যখন তাহাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে তাহারা তখন বলে, 'আল্লাহ্র রাসূলগণকে যাহা দেওয়া হইয়াছিল আমাদিগকেও তাহা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কখনও বিশ্বাস করিব না। আল্লাহ্ তাঁহার রিসালাতের ভার কাহার উপর অর্পণ করিবেন তাহা তিনিই ভাল জানেন। যাহারা অপরাধ করিয়াছে, চক্রান্তের জন্য আল্লাহ্র নিকট হইতে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইবেই।
১২৫। আল্লাহ্ কাহাকেও সৎপথে পরিচালিত করিতে চাহিলে তিনি তাহার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করিয়া দেন এবং কাহাকেও বিপথগামী করিতে চাহিলে তিনি তাহার বক্ষ অতিশয় সংকীর্ণ করিয়া দেন; তাহার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতই দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। যাহারা বিশ্বাস করে না আল্লাহ্ তাহাদিগকে এইরূপে লাঞ্ছিত করেন।
১২৬। ইহাই তোমার প্রতিপালক নির্দেশিত সরল পথ। যাহারা উপদেশ গ্রহণ করে আমি তাহাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিকৃত করিয়াছি।
১২৭। তাহাদের প্রতিপালকের নিকট তাহাদের জন্য রহিয়াছে শান্তির আলয় এবং তাহারা যাহা করিত তজ্জন্য তিনিই তাহাদের অভিভাবক।
১২৮। যেদিন তিনি তাহাদের সকলকে একত্র করিবেন এবং বলিবেন, 'হে জিন্ন সম্প্রদায়। তোমরা তো অনেক লোককে তোমাদের অনুগামী করিয়াছিলে' এবং মানব সমাজের মধ্যে তাহাদের বন্ধুগণ বলিবে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের মধ্যে কতক অপরের দ্বারা লাভবান হইয়াছে এবং তুমি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারিত করিয়াছিলে এখন আমরা উহাতে উপনীত হইয়াছি’। সেদিন আল্লাহ্ বলিবেন, জাহান্নামই তোমাদের বাসস্থান, তোমরা সেথা স্থায়ী হইবে,' যদি না আল্লাহ্ অন্য রকম ইচ্ছা করেন। তোমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।
১২৯। এইরূপে উহাদের কৃতকর্মের জন্য আমি যালিমদের একদলকে অন্যদলের বন্ধু করিয়া থাকি।
১৩০। আমি উহাদিগকে বলিব, 'হে জিন্ন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হইতে কি রাসূলগণ তোমাদের নিকট আসে নাই যাহারা আমার নিদর্শন তোমাদের নিকট বিবৃত করিত এবং তোমাদিগকে এই দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্বন্ধে সতর্ক করিত?' উহারা বলিবে, 'আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।' বস্তুত পার্থিব জীবন উহাদিগকে প্রতারিত করিয়াছিল, আর উহারা নিজেদের বিরুদ্ধে এ সাক্ষ্যও দিবে, তাহারা কাফির ছিল।
১৩১। ইহা এইহেতু যে, অধিবাসীবৃন্দ যখন অনবহিত, তখন কোন জনপদকে উহার অন্যায় আচরণের জন্য ধ্বংস করা তোমার প্রতিপালকের কাজ নয়।
১৩২। প্রত্যেকে যাহা করে তদনুসারে তাহার স্থান রহিয়াছে এবং উহারা যাহা করে সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নহেন।
১৩৩। তোমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, দয়াশীল। তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদিগকে অপসারিত করিতে এবং তোমাদের পরে যাহাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করিতে পারেন, যেমন তোমাদিগকে তিনি অন্য এক সম্প্রদায়ের বংশ হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন।
১৩৪। তোমাদের সহিত যাহা ওয়াদা করা হইতেছে উহা বাস্তবায়িত হইবেই, তোমরা তাহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না।
১৩৫। বল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেখানে যাহা করিতেছ, করিতে থাক; আমিও আমার কাজ করিতেছি। তোমরা শীঘ্রই জানিতে পারিবে, কাহার পরিণাম মঙ্গলময়। যালিমগণ কখনও সফলকাম হইবে না।'
১৩৬। আল্লাহ্ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করিয়াছেন তন্মধ্য হইতে তাহারা আল্লাহ্র জন্য এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, “ইহা আল্লাহ্র জন্য এবং ইহা আমাদের দেবতাদের জন্য'। যাহা তাহাদের দেবতাদের অংশ তাহা আল্লাহ্র কাছে পৌঁছায় না এবং যাহা আল্লাহ্র অংশ তাহা তাহাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়, তাহারা যাহা মীমাংসা করে তাহা নিকৃষ্ট!
১৩৭। এইরূপে তাহাদের দেবতাগণ বহু মুশরিকের দৃষ্টিতে তাহাদের সন্তানদের হত্যাকে শোভন করিয়াছে তাহাদের ধ্বংস সাধনের জন্য এবং তাহাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাহাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য; আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাহারা ইহা করিত না। সুতরাং তাহাদিগকে তাহাদের মিথ্যা লইয়া থাকিতে দাও।
১৩৮। তাহারা তাহাদের ধারণা অনুসারে বলে, 'এইসব গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত্র নিষিদ্ধ; আমরা যাহাকে ইচ্ছা করি সে ব্যতীত কেহ এইসব আহার করিতে পারিবে না,' এবং কতক গবাদি পশুর পৃষ্ঠে আরোহণ নিষিদ্ধ করা হইয়াছে এবং কতক পশু যবেহ্ করিবার সময় তাহারা আল্লাহ্র নাম লয় না। এই সমস্তই তাহারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনার উদ্দেশ্যে বলে; তাহাদের এই মিথ্যা রচনার প্রতিফল তিনি অবশ্যই তাহাদিগকে দিবেন।
১৩৯। তাহারা আরও বলে, 'এইসব গবাদি পশুর গর্ভে যাহা আছে তাহা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং ইহা আমাদের স্ত্রীদের জন্য অবৈধ, আর উহা যদি মৃত হয় তবে সকলেই ইহাতে অংশীদার।' তিনি তাহাদের এইরূপ বলিবার প্রতিফল অচিরেই তাহাদিগকে দিবেন; নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
১৪০। যাহারা নির্বুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞানতাবশত নিজেদের সন্তানদিগকে হত্যা করে এবং আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবিকাকে, আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করিবার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ গণ্য করে, তাহারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। তাহারা অবশ্যই বিপথগামী হইয়াছে এবং তাহারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না।
১৪১ । তিনিই লতা ও বৃক্ষ-উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং খেজুর বৃক্ষ, বিভিন্ন স্বাদ। বিশিষ্ট খাদ্যশস্য, যায়তুন ও আনার সৃষ্টি করিয়াছেন—এইগুলি একে অন্যের সদৃশ এবং বিসদৃশও। যখন উহা ফলবান হয় তখন উহার ফল আহার করিবে আর ফসল তুলিবার দিনে উহার হক প্রদান করিবে এবং অপচয় করিবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদিগকে পছন্দ-করেন না।
১৪২। গবাদি পশুর মধ্যে কতক ভারবাহী ও কতক ক্ষুদ্রাকার পশু সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহ্ যাহা রিযিক রূপে তোমাদিগকে দিয়াছেন তাহা হইতে আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না; সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু;
১৪৩। নর ও মাদী আটটিঃ মেষের দুইটি ও ছাগলের দুইটি; বল, “নর দুইটিই কি তিনি নিষিদ্ধ করিয়াছেন কিংবা মাদী দুইটিই অথবা মাদী দুইটির গর্ভে যাহা আছে তাহা? তোমরা সত্যবাদী হইলে প্রমাণসহ আমাকে অবহিত করা;
১৪৪। এবং উটের দুইটি ও গরুর দুইটি। বল, 'নর দুইটিই কি তিনি নিষিদ্ধ করিয়াছেন কিংবা মাদী দুইটিই অথবা মাদী দুইটির গর্ভে যাহা আছে তাহা? এবং আল্লাহ্ যখন তোমাদিগকে এইসব নির্দেশ দান করেন তখন কি তোমরা উপস্থিত ছিলে?' সুতরাং যে ব্যক্তি অজ্ঞানতাবশত মানুষকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে তাহার চেয়ে অধিক যালিম আর কে? আল্লাহ্ তো যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
১৪৫। বল, “আমার প্রতি যে ওহী হইয়াছে তাহাতে, লোকে যাহা আহার করে তাহার মধ্যে আমি কিছুই হারাম পাই না, মৃত, বহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ব্যতীত। কেননা এইগুলি অবশ্যই অপবিত্র অথবা যাহা অবৈধ, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গের কারণে' । তবে কেহ অবাধ্য না হইয়া এবং সীমালংঘন না করিয়া নিরুপায় হইয়া উহা আহার করিলে তোমার প্রতিপালক তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু,
১৪৬। আমি ইয়াহুদীদের জন্য নখরযুক্ত সমস্ত পশু হারাম করিয়াছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও তাহাদের জন্য হারাম করিয়াছিলাম, তবে এইগুলির পৃষ্ঠের অথবা অস্ত্রের কিংবা অস্থিসংলগ্ন চর্বি ব্যতীত, তাহাদের অবাধ্যতার দরুন তাহাদিগকে এই প্রতিফল দিয়াছিলাম। নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী।
১৪৭। অতঃপর যদি তাহারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে তবে বল, ‘তোমাদের প্রতিপালক সর্বব্যাপী দয়ার মালিক এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর হইতে তাঁহার শান্তি রদ করা হয় না।'
১৪৮। যাহারা শির্ক্ করিয়াছে তাহারা বলিবে, 'আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করিতেন তবে আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষগণ শির্ক করিতাম না এবং কোন কিছুই হারাম করিতাম না।' এইভাবে তাহাদের পূর্ববর্তিগণও প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল, অবশেষে তাহারা আমার শাস্তি ভোগ করিয়াছিল। বল, ‘তোমাদের নিকট কোন যুক্তি আছে কি? থাকিলে আমার নিকট তাহা পেশ কর; তোমরা শুধু কল্পনারই অনুসরণ কর এবং শুধু মনগড়া কথা বল।'
১৪৯। বল, ‘চূড়ান্ত প্রমাণ তো আল্লাহ্ই; তিনি যদি ইচ্ছা করিতেন তবে তোমাদের সকলকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করিতেন।'
১৫০ । বল, ‘আল্লাহ্ যে ইহা নিষিদ্ধ করিয়াছেন এ সম্বন্ধে যাহারা সাক্ষ্য দিবে তাহাদিগকে হাযির কর।' তাহারা সাক্ষ্য দিলেও তুমি তাহাদের সাথে ইহা স্বীকার করিও না । যাহারা আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছে, যাহারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়, তুমি তাহাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করিও না।
১৫১। বল, ‘আইস, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যাহা হারাম করিয়াছেন তোমাদিগকে তাহা পড়িয়া শুনাই। উহা এইঃ'তোমরা তাঁহার কোন শরীক করিবে না, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদিগকে হত্যা করিবে না, আমিই তোমাদিগকে ও তাহাদিগকে রিযক দিয়া থাকি। প্রকাশ্যে হউক কিংবা গোপনে হউক, অশ্লীল কাজের নিকটেও যাইবে না। আল্লাহ্ যাহার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাহাকে হত্যা করিবে না।' তোমাদিগকে তিনি এই নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা অনুধাবন কর।
১৫২। ইয়াতীম বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম ব্যবস্থা ব্যতীত তোমরা তাহার সম্পত্তির নিকটবর্তী হইবে না এবং পরিমাণ ও ওজন ন্যায্যভাবে পুরাপুরি দিবে। আমি কাহাকেও তাহার সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করি না। যখন তোমরা কথা বলিবে তখন ন্যায্য বলিবে স্বজনের সম্পর্কে হইলেও এবং আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করিবে। এইভাবে আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
১৫৩। এবং এই পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা ইহারই অনুসরণ করিবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করিবে না, করিলে উহা তোমাদিগকে তাঁহার পথ হইতে বিচ্ছিন্ন করিবে। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদিগকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা সাবধান হও।
১৫৪। অতঃপর আমি মূসাকে দিয়াছিলাম কিতার যাহা সৎকর্মপরায়ণের জন্য সম্পূর্ণ, যাহা সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, পথনির্দেশ এবং দয়াস্বরূপ— যাহাতে তাহারা তাহাদের প্রতিপালকের সাক্ষাত সম্বন্ধে বিশ্বাস করে।
১৫৫। এই কিতাব আমি নাযিল করিয়াছি যাহা কল্যাণময়। সুতরাং উহার অনুসরণ কর এবং সাবধান হও, তাহা হইলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হইবে;
১৫৬। পাছে তোমরা বল, 'কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বে দুই সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হইয়াছিল; আমরা তাহাদের পঠন-পাঠন সম্বন্ধে তো গাফিল ছিলাম,
১৫৭। কিংবা তোমরা বল, 'যদি কিতাব আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হইত তবে আমরা তো তাহাদের অপেক্ষা অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত হইতাম।' এখন তো তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে স্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত ও রহমত আসিয়াছে। অতঃপর যে কেহ আল্লাহ্ নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করিবে এবং উহা হইতে মুখ ফিরাইয়া লইবে তাহার চেয়ে বড় যালিম আর কে? যাহারা আমার নিদর্শনসমূহ হইতে মুখ ফিরাইয়া লয় সত্যবিমুখিতার জন্য আমি তাহাদিগকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিব।
১৫৮। তাহারা শুধু ইহারই না প্রতীক্ষা করে যে, তাহাদের নিকট ফিরিশতা আসিবে, কিংবা তোমার প্রতিপালক আসিবেন, কিংবা তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসিবে। যেদিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসিবে সেদিন তাহার ঈমান কাজে আসিবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনে নাই, কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করে নাই । বল, ‘তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও প্রতীক্ষায় রহিলাম।
১৫৯। যাহারা দীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করিয়াছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে তাহাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাহাদের বিষয় আল্লাহর ইকতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ্ তাহাদিগকে তাহাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করিবেন।
১৬০। কেহ কোন সৎকার্য করিলে সে তাহার দশ গুণ পাইবে এবং কেহ কোন অসৎ কার্য করিলে তাহাকে শুধু উহারই প্রতিফল দেওয়া হইবে, আর তাহাদের প্রতি যুলুম করা হইবে না।
১৬১। বল, 'আমার প্রতিপালক তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন। উহাই সুপ্রতিষ্ঠিত দীন, ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।'
১৬২। বল, ‘আমার সালাত, আমার 'ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্ররই উদ্দেশ্যে।'
১৬৩। তাঁহার কোন শরীক নাই এবং আমি ইহারই জন্য আদিষ্ট হইয়াছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।
১৬৪। বল, 'আমি কি আল্লাহকে ছাড়িয়া অন্য প্রতিপালককে খুঁজিব? অথচ তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক।' প্রত্যেকে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং কেহ অন্য কাহারও ভার গ্রহণ করিবে না। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন তোমাদের প্রতিপালকের নিকটেই, তৎপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করিতে তাহা তিনি তোমাদিগকে অবহিত করিবেন।
১৬৫। তিনিই তোমাদিগকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করিয়াছেন এবং যাহা তিনি তোমাদিগকে দিয়াছেন সে সম্বন্ধে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নীত করিয়াছেন। তোমার প্রতিপালক তো শাস্তি প্রদানে দ্রুত আর তিনি অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়াময়।
সূরা : ০৬ আন্ আমঃ- আয়াত: ১৬৫/১৬৫; সমাপ্ত;
০৭-সূরা আল-আ‘রাফ
মোট ২০৬ আয়াত, ২৪ রুকূ', মক্কী
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে"
১। আলিফ, লাম, মীম, সাদ।
২। তোমার নিকট কিতাব অবতীর্ণ করা হইয়াছে, তোমার মনে যেন ইহার সম্পর্কে কোন সঙ্কোচ না থাকে ইহার দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে এবং মু'মিনদের জন্য ইহা উপদেশ।
৩। তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট যাহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে তোমরা তাহার অনুসরণ কর এবং তাঁহাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করিও না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।:
৪। কত জনপদকে আমি ধ্বংস করিয়াছি! আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল রাত্রিতে অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তাহারা বিশ্রামরত ছিল।
৫। যখন আমার শাস্তি তাহাদের উপর আপতিত হইয়াছিল তখন তাহাদের কথা শুধু ইহাই ছিল যে, 'নিশ্চয় আমরা যালিম ছিলাম।'
৬। অতঃপর যাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হইয়াছিল তাহাদিগকে আমি জিজ্ঞাসা করিবই এবং রাসূলগণকেও জিজ্ঞাসা করিব।
৭। তৎপর তাহাদের নিকট পূর্ণ জ্ঞানের সহিত তাহাদের কার্যাবলী বিবৃত করিবই, আর আমি তো অনুপস্থিত ছিলাম না।
৮। সেদিনের ওজন করা সত্য। যাহাদের পাল্লা ভারী হইবে তাহারাই সফলকাম হইবে।
৯। আর যাহাদের পাল্লা হাল্কা হইবে তাহারাই নিজেদের ক্ষতি করিয়াছে, যেহেতু তাহারা আমার নিদর্শনমূহকে প্রত্যাখ্যান করিত।
১০। আমি তো তোমাদিগকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি এবং উহাতে তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থাও করিয়াছি; তোমরা খুব অল্পই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
১১। আমিই তোমাদিগকে সৃষ্টি করি, অতঃপর তোমাদের আকৃতি দান করি এবং তৎপর ফিরিশতাদিগকে আদমকে সিজদা করিতে বলি; ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করিল। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইল না।
১২। তিনি বলিলেন, 'আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কী তোমাকে নিবৃত্ত করিল যে, তুমি সিজদা করিলে না?' সে বলিল, 'আমি তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছ এবং তাহাকে কর্দম দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছ।
১৩। তিনি বলিলেন, 'এই স্থান হইতে নামিয়া যাও, এখানে থাকিয়া অহংকার করিবে, ইহা হইতে পারে না। সুতরাং বাহির হইয়া যাও, তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।'
১৪। সে বলিল, 'পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও।'
১৫। তিনি বলিলেন, 'যাহাদিগকে অবকাশ দেওয়া হইয়াছে তুমি অবশ্যই তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইলে।'
১৬। সে বলিল, 'তুমি আমাকে শাস্তিদান করিলে, এইজন্য আমিও তোমার সরল পথে মানুষের জন্য নিশ্চয় ওঁত পাতিয়া থাকিব।
১৭। 'অতঃপর আমি তাহাদের নিকট আসিবই তাহাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, দক্ষিণ ও বাম দিক হইতে এবং তুমি তাহাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাইবে না।'
১৮। তিনি বলিলেন, 'এই স্থান হইতে ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় বাহির হইয়া যাও। মানুষের মধ্যে যাহারা তোমার অনুসরণ করিবে নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করিবই।
১৯। 'হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেথা ইচ্ছা আহার কর, কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হইও না, হইলে তোমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
২০। অতঃপর তাহাদের লজ্জাস্থান, যাহা তাহাদের নিকটে গোপন রাখা হইয়াছিল তাহা তাহাদের কাছে প্রকাশ করিবার জন্য শয়তান তাহাদিগকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলিল, 'পাছে তোমরা উভয়ে ফিরিশতা হইরা যাও কিংবা তোমরা স্থায়ী হও এইজন্যই তোমাদের প্রতিপালক এই বৃক্ষ সম্বন্ধে তোমাদিগকে নিষেধ করিয়াছেন।'
২১। সে তাহাদের উভয়ের নিকট শপথ করিয়া বলিল, 'আমি তো তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষীদের একজন।
২২। এইভাবে সে তাহাদিগকে প্রবঞ্চনার দ্বারা অধঃপতিত করিল। তৎপর যখন তাহারা সেই বৃক্ষ-ফলের আস্বাদ গ্রহণ করিল, তখন তাহাদের লজ্জাস্থান তাহাদের নিকট প্রকাশ হইয়া পড়িল এবং তাহারা জান্নাতের পাতা দ্বারা নিজদিগকে আবৃত করিতে লাগিল। তখন তাহাদের প্রতিপালক তাহাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, 'আমি কি তোমাদিগকে এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হইতে বারণ করি নাই এবং আমি কি তোমাদিগকে বলি নাই যে, শয়তান তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু!
২৩। তাহারা বলিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করিয়াছি, যদি তুমি আমাদিগকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইব।'
২৪। তিনি বলিলেন, 'তোমরা নামিয়া যাও, তোমরা একে অন্যের শত্রু এবং পৃথিবীতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রহিল।'
২৫। তিনি বলিলেন, 'সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করিবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হইবে এবং তথা হইতেই তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনা হইবে।'
২৬। হে বনী আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকিবার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদিগকে পরিচ্ছদ দিয়াছি এবং তাকওয়ার পরিচ্ছদ, ইহাই সর্বোৎকৃষ্ট। ইহা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাহাতে তাহারা উপদেশ গ্রহণ করে।
২৭। হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদিগকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে—যেভাবে তোমাদের পিতামাতাকে সে জান্নাত হইতে বহিষ্কৃত করিয়াছিল, তাহাদিগকে তাহাদের লজ্জাস্থান দেখাইবার জন্য বিবস্ত্র করিয়াছিল। সে নিজে এবং তাহার দল তোমাদিগকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাহাদিগকে দেখিতে পাও না। যাহারা ঈমান আনে না, শয়তানকে আমি তাহাদের অভিভাবক করিয়াছি।
২৮। যখন তাহারা কোন অশ্লীল আচরণ করে তখন বলে, 'আমরা আমাদের পূর্বপুরুষকে ইহা করিতে দেখিয়াছি এবং আল্লাহ্ও আমাদিগকে ইহার নির্দেশ দিয়াছেন।' বল, 'আল্লাহ্ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলিতেছ যাহা তোমরা জান না?'
২৯। বল, ‘আমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়াছেন ন্যায়বিচারের। 'প্রত্যেক সালাতে তোমাদের লক্ষ্য স্থির রাখিবে এবং তাঁহারই আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হইয়া একনিষ্ঠভাবে তাঁহাকে ডাকিবে। তিনি যেভাবে প্রথমে তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন তোমরা সেইভাবে ফিরিয়া আসিবে।
৩০। একদলকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করিয়াছেন এবং অপর দলের পথভ্রান্তি নির্ধারিত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহকে ছাড়িয়া শয়তানকে তাহাদের অভিভাবক করিয়াছিল এবং মনে করিত তাহারাই সৎপথপ্রাপ্ত।
৩১। হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করিবে, আহার করিবে ও পান করিবে কিন্তু অপচয় করিবে না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদিগকে পছন্দ করেন না।
৩২। বল, 'আল্লাহ্ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহা কে হারাম করিয়াছে?' বল, ‘পার্থিব জীবনে বিশেষ করিয়া কিয়ামতের দিনে এই সমস্ত তাহাদের জন্য, যাহারা ঈমান আনে। এইরূপে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করি।
৩৩। বল, 'নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করিয়াছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসংগত বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক কর— যাহার কোন সনদ তিনি প্রেরণ করেন নাই, এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যাহা তোমরা জান না।'
৩৪। প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাহাদের সময় আসিবে তখন তাহারা মুহূর্তকাল বিলম্ব করিতে পারিবে না এবং ত্বরাও করিতে পারিবে না।
৩৫। হে বনী আদম! যদি তোমাদের মধ্য হইতে কোন রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়া আমার নিদর্শন বিবৃত করে তখন যাহারা সাবধান হইবে এবং নিজেদের সংশোধন করিবে, তাহা হইলে তাহাদের কোন ভয় থাকিবে না এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
৩৬। যাহারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করিয়াছে এবং সে সম্বন্ধে অহংকার করিয়াছে তাহারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
৩৭। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা তাঁহার নিদর্শনকে অস্বীকার করে তাহার অপেক্ষা বড় যালিম আর কে? তাহাদের জন্য যে হিস্সা লিপিবদ্ধ রহিয়াছে উহা তাহাদের নিকট পৌছিবে। যতক্ষণ না আমার ফিরিশতাগণ জান কবজের জন্য তাহাদের নিকট আসিবে ও জিজ্ঞাসা করিবে, 'আল্লাহ্ ছাড়া যাহাদিগকে তোমরা ডাকিতে তাহারা কোথায়?' তাহারা বলিবে, 'তাহারা আমাদের নিকট হইতে অন্তর্হিত হইয়াছে' এবং তাহারা স্বীকার করিবে যে, তাহারা কাফির ছিল।
৩৮। আল্লাহ্ বলিবেন, ‘তোমাদের পূর্বে যে জিন্ন ও মানবদল গত হইয়াছে তাহাদের সহিত তোমরা অগ্নিতে প্রবেশ কর'। যখনই কোন দল উহাতে প্রবেশ করিবে তখনই অপর দলকে তাহারা অভিসম্পাত করিবে, এমনকি যখন সকলে উহাতে একত্র হইবে তখন তাহাদের পরবর্তিগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলিবে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! ইহারাই আমাদিগকে বিভ্রান্ত করিয়াছিল; সুতরাং ইহাদিগকে দ্বিগুণ অগ্নি-শাস্তি দাও।' আল্লাহ্ বলিবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রহিয়াছে, কিন্তু তোমরা জান না।'
৩৯। তাহাদের পূর্ববর্তিগণ পরবর্তীদিগকে বলিবে, 'আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন কর।
৪০। যাহারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার এবং সে সম্বন্ধে অহংকার করে, তাহাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হইবে না এবং তাহারা জান্নাতেও প্রবেশ করিতে পারিবে না—যতক্ষণ না সূঁচের ছিদ্রপথে উট্র প্রবেশ করে। এইরূপে আমি অপরাধীদিগকে প্রতিফল দিব।
৪১। তাহাদের শয্যা হইবে জাহান্নামের এবং তাহাদের উপরের আচ্ছাদনও; এইভাবে আমি যালিমদিগকে প্রতিফল দিব।
৪২। আমি কাহাকেও তাহার সাধ্যাতীত ভার অর্পণ করি না। যাহারা ঈমান আনে ও সৎকার্য করে উহারাই জান্নাতবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।
৪৩। আমি তাহাদের অস্তর হইতে ঈর্ষা দূর করিব, তাহাদের পাদদেশে প্রবাহিত হইবে নদী এবং তাহারা বলিবে, ‘প্রশংসা আল্লাহ্রই যিনি আমাদিগকে ইহার পথ দেখাইয়াছেন। আল্লাহ্ আমাদিগকে পথ না দেখাইলে আমরা কখনও পথ পাইতাম না। আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ তো সত্যবাণী আনিয়াছিল, "এবং তাহাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলা হইবে, ‘তোমরা যাহা করিতে তাহারই জন্য তোমাদিগকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হইয়াছে।"
৪৪। জান্নাতবাসিগণ অগ্নিবাসীদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিবে, 'আমাদের প্রতিপালক আমাদিগকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন আমরা তো তাহা সত্য পাইয়াছি। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদিগকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তোমরা তাহা সত্য পাইয়াছ কি?” উহারা বলিবে, 'হাঁ! অতঃপর জনৈক ঘোষণাকারী তাহাদের মধ্যে ঘোষণা করিবে, 'আল্লাহ্র লা'নত যালিমদের উপর—
৪৫। ‘যাহারা আল্লাহ্র পথে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করিত এবং উহাতে বক্রতা অনুসন্ধান করিত; উহারাই আখিরাত সম্বন্ধে অবিশ্বাসী।'
৪৬। উভয়ের মধ্যে পর্দা আছে এবং আ'রাফে কিছু লোক থাকিবে যাহারা প্রত্যেককে তাহার লক্ষণ দ্বারা চিনিবে এবং জান্নাতবাসীদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিবে, 'তোমাদের শাস্তি হউক। তাহারা তখনও জান্নাতে প্রবেশ করে নাই, কিন্তু আকাঙ্ক্ষা করে।
৪৭। যখন তাহাদের দৃষ্টি অগ্নিবাসীদের প্রতি ফিরাইয়া দেওয়া হইবে তখন তাহারা বলিবে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে যালিমদের সংগী করিও না।
৪৮। আ'রাফবাসিগণ যে লোকদিগকে লক্ষণ দ্বারা চিনিবে তাহাদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিবে, 'তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসিল না।'
৪৯। ইহারাই কি তাহারা, যাহাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করিয়া বলিতে যে, আল্লাহ্ ইহাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করিবেন না। ইহাদিগকেই বলা হইবে, 'তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নাই এবং তোমরা দুঃখিতও হুইবে না।'
৫০। জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিবে, 'আমাদের উপর কিছু পানি ঢালিয়া দাও, অথবা আল্লাহ জীবিকারূপে তোমাদিগকে যাহা দিয়াছেন তাহা হইতে কিছু দাও।' তাহারা বলিবে, 'আল্লাহ্ তো এই দুইটি হারাম করিয়াছেন কাফিরদের জন্য—
৫১। ‘যাহারা তাহাদের দীনকে ক্রীড়া- কৌতুকরূপে গ্রহণ করিয়াছিল এবং পার্থিব জীবন যাহাদিগকে প্রতারিত করিয়াছিল।' সুতরাং আজ আমি তাহাদিগকে বিস্মৃত হইব, যেভাবে তাহারা তাহাদের এই দিনের সাক্ষাতকে ভুলিয়াছিল এবং যেভাবে তাহারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করিয়াছিল।
৫২। অবশ্য আমি তাহাদিগকে পৌছাইয়াছিলাম এমন এক কিতাব যাহা পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করিয়াছিলাম এবং যাহা ছিল মু'মিন সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও দয়া।
৫৩। তাহারা কি শুধু উহার পরিণামের প্রতীক্ষা করে যেদিন উহার পরিণাম প্রকাশ পাইবে সেদিন যাহারা পূর্বে উহার কথা ভূলিয়া গিয়াছিল তাহারা বলিবে, 'আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ তো সত্যবাণী আনিয়াছিল, আমাদের কি এমন কোন সুপারিশকারী আছে যে আমাদের জন্য সুপারিশ করিবে অথবা আমাদিগকে কি পুনরায় ফিরিয়া যাইতে দেওয়া হইবে, যেন আমরা পূর্বে যাহা করিতাম তাহা হইতে ভিন্নতর কিছু করিতে পারি?' তাহারা নিজেদেরই ক্ষতি করিয়াছে এবং তাহারা যে মিথ্যা রচনা করিত তাহাও অন্তর্হিত হইয়াছে।
৫৪। তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাহাতে উহাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে, আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি, যাহা তাঁহারই আজ্ঞাধীন, তাহা তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন। জানিয়া রাখ, সৃজন ও আদেশ তাঁহারই। মহিমময় বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ্।
৫৫। তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক; তিনি যালিমদিগকে পছন্দ করেন না।
৫৬। দুনিয়ায় শাস্তি স্থাপনের পর তোমরা উহাতে বিপর্যয় ঘটাইও না, তাঁহাকে ভয় ও আশার সহিত ডাকিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।
৫৭। তিনিই স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। যখন উহা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি উহা নির্জীব ভূখণ্ডের দিকে চালনা করি, পরে উহা হইতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তৎপর উহার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। এইভাবে আমি মৃতকে জীবিত করি, যাহাতে তোমরা শিক্ষা লাভ কর।
৫৮। এবং উৎকৃষ্ট ভূমি—ইহার ফসল ইহার প্রতিপালকের আদেশে উৎপন্ন হয় এবং যাহা নিকৃষ্ট তাহাতে কঠোর পরিশ্রম না করিলে কিছুই জন্মায় না। এইভাবে আমি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন বিভিন্নভাবে বিবৃত করি।
৫৯। আমি তো নূহকে পাঠাইয়াছিলাম তাহার সম্প্রদায়ের নিকট এবং সে বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নাই। আমি তোমাদের জন্য মহাদিনের শাস্তির আশংকা করিতেছি।'
৬০। তাহার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলিয়াছিল, ‘আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখিতেছি।'
৬১। সে বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায় ! আমাতে কোন ভ্রান্তি নাই, বরং আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল।
৬২। 'আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের নিকট পৌঁছাইতেছি ও তোমাদিগকে হিতোপদেশ দিতেছি এবং তোমরা যাহা জান না আমি তাহা আল্লাহ্র নিকট হইতে জানি।
৬৩। ‘তোমরা কি বিস্মিত হইতেছ যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট উপদেশ আসিয়াছে যাহাতে সে তোমাদিগকে সতর্ক করে, তোমরা সাবধান হও এবং তোমরা অনুকম্পা লাভ কর ।
৬৪। অতঃপর তাহারা তাহাকে মিথ্যাবাদী বলে। তাহাকে ও তাহার সংগে যাহারা তরণীতে ছিল আমি তাহাদিগকে উদ্ধার করি এবং যাহারা আমার নিদর্শন অস্বীকার করিয়াছিল তাহাদিগকে নিমজ্জিত করি। তাহারা তো ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়।
৬৫। 'আদ জাতির নিকট আমি উহাদের ভ্রাতা হূদকে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র “ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। তোমরা কি সাবধান হইবে না!
৬৬। তাহার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যাহারা কুফরী করিয়াছিল, তাহারা বলিয়াছিল, “আমরা তো দেখিতেছি তুমি নির্বোধ এবং তোমাকে আমরা তো মিথ্যাবাদী মনে করি।'
৬৭। সে বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! আমি নির্বোধ নহি, বরং আমি জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল।
৬৮। 'আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌঁছাইতেছি এবং আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাঙ্ক্ষী।
৬৯। 'তোমরা কি বিস্মিত হইতেছ যে, তোমাদের নিকট তোমাদের একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদিগকে সতর্ক করিবার জন্য উপদেশ আসিয়াছে? এবং স্মরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদিগকে নূহের সম্প্রদায়ের পরে তাহাদের স্থলাভিষিক্ত করিয়াছেন এবং তোমাদের দৈহিক গঠনে অধিকতর হৃষ্টপুষ্ট বলিষ্ঠ করিয়াছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর, হয়ত তোমরা সফলকাম হইবে।'
৭০। তাহারা বলিল, 'তুমি কি আমাদের নিকট এই উদ্দেশ্যে আসিয়াছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহ্র ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যাহার ইবাদত করিত তাহা বর্জন করি? সুতরাং তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদিগকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর।'
৭১। সে বলিল, 'তোমাদের প্রতিপালকের শান্তি ও ক্রোধ তো তোমাদের জন্য নির্ধারিত হইয়াই আছে; তবে কি তোমরা আমার সহিত বিতর্কে লিপ্ত হইতে চাহ এমন কতকগুলি নাম সম্বন্ধে যাহা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষগণ সৃষ্টি করিয়াছ এবং যে সম্বন্ধে আল্লাহ্ কোন সনদ পাঠান নাই? সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সহিত প্রতীক্ষা করিতেছি।'
৭২। অতঃপর আমি তাহাকে ও তাহার-সংগী- দিগকে আমার অনুগ্রহে উদ্ধার করিয়াছিলাম; আর আমার নিদর্শনকে যাহারা অস্বীকার করিয়াছিল এবং যাহারা মু'মিন ছিল না তাহাদিগকে নির্মূল করিয়াছিলাম।
৭৩। ছামুদ জাতির নিকট তাহাদের ভ্রাতা সালিহ`কে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নাই। তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালক হইতে স্পষ্ট নিদর্শন আসিয়াছে। আল্লাহ্র এই উন্নী তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। ইহাকে আল্লাহ্ জমিতে চরিয়া খাইতে দাও এবং ইহাকে কোন ক্লেশ দিও না, দিলে মর্মস্তুদ শাস্তি তোমাদের উপর আপতিত হইবে।
৭৪। 'স্মরণ কর, 'আদ জাতির পর তিনি তোমাদিগকে তাহাদের স্থলাভিষিক্ত করিয়াছেন, তিনি তোমাদিগকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ ও পাহাড় কাটিয়া বাসগৃহ নির্মাণ করিতেছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করিয়া বেড়াইও না।
৭৫। তাহার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানেরা সেই সম্প্রদায়ের ঈমানদার —যাহাদিগকে দুর্বল মনে করা হইত তাহাদিগকে বলিল, 'তোমরা কি জান যে, সালিহ্ আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত?' তাহারা বলিল, 'তাহার প্রতি যে বাণী প্রেরিত হইয়াছে আমরা তাহাতে বিশ্বাসী।'
৭৬। দাস্তিকেরা বলিল, 'তোমরা যাহা বিশ্বাস কর আমরা তো তাহা প্রত্যাখ্যান করি।'
৭৭। অতঃপর তাহারা সেই উষ্ট্রী বধ করে এবং আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে এবং বলে, 'হে সালিহ্! তুমি রাসূল হইলে আমাদিগকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর।`
৭৮। অতঃপর তাহারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হয়, ফলে তাহাদের প্রভাত হইল নিজগৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়৷
৭৯। তৎপর সে তাহাদের নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া লইয়া বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদের নিকট পৌছাইয়া ছিলাম এবং তোমাদিগকে হিতোপদেশ দিয়াছিলাম, কিন্তু তোমরা তো হিতোপদেশ দানকারীদিগকে পছন্দ কর না!'
৮০। আর আমি লূতকেও পাঠাইয়াছিলাম। সে তাহার সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, 'তোমরা এমন কুকর্ম করিতেছ যাহা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেহ করে নাই।
৮১। ‘তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী ছাড়িয়া পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
৮২। উত্তরে তাহার সম্প্রদায় শুধু বলিল, “ইহাদিগকে তোমাদের জনপদ হইতে বহিষ্কৃত কর, ইহারা তো এমন লোক যাহারা অতি পবিত্র হইতে চাহে।
৮৩। অতঃপর আমি তাহাকে ও তাহার স্ত্রী ব্যতীত তাহার পরিজনবর্গকে উদ্ধার করিয়াছিলাম, তাহার স্ত্রী ছিল পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৮৪। আমি তাহাদের উপর ভীষণভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছিলাম। সুতরাং অপরাধীদের পরিণাম কী হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।
৮৫। আমি মাদ্য়ান বাসীদের নিকট তাহাদের ভ্রাতা শু'আয়ব কে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়। তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ নাই; তোমাদের প্রতিপালক হইতে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ আসিয়াছে। সুতরাং তোমরা মাপ ও ওজন ঠিকভাবে দিবে, লোকদিগকে তাহাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিবে না এবং দুনিয়ায় শাস্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাইবে না; তোমরা মুমিন হইলে তোমাদের জন্য ইহা কল্যাণকর।
৮৬। 'তাঁহার প্রতি যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদিগকে ভয় প্রদর্শনের জন্য তোমরা কোন পথে বসিয়া থাকিবে না, আল্লাহ্র পথে তাহাদিগকে বাধা দিবে না, এবং উহাতে বক্রতা অনুসন্ধান করিবে না।” স্বরণ কর, 'তোমরা যখন সংখ্যায় কম ছিলে, আল্লাহ্ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়াছেন এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কিরূপ ছিল, তাহা লক্ষ্য কর।
৮৭। 'আমি যাহা লইয়া প্রেরিত হইয়াছি তাহাতে যদি তোমাদের কোন দল ঈমান আনে এবং কোন দল ঈমান না আনে তবে ধৈর্য ধারণ কর, যতক্ষণ না আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দেন, আর তিনিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী।
নবম পারা
৮৮। তাহার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানগণ বলিল, 'হে শু'আয়ব! আমরা তোমাকে ও তোমার সহিত যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহাদিগকে আমাদের জনপদ হইতে বহিষ্কৃত করিবই অথবা তোমাদিগকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরিয়া আসিতে হইবে।' সে বলিল, 'যদিও আমরা উহা ঘৃণা করি তবুও?”
৮৯। ‘তোমাদের ধর্মাদর্শ হইতে আল্লাহ্ আমাদিগকে উদ্ধার করিবার পর যদি আমরা উহাতে ফিরিয়া যাই তবে তো আমরা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করিব। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্ ইচ্ছা না করিলে আর উহাতে ফিরিয়া যাওয়া আমাদের জন্য সমীচীন নয়। সব কিছুই আমাদের প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত, আমরা আল্লাহ্র প্রতি নির্ভর করি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে মীমাংসা করিয়া দাও এবং তুমিই শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী।'
৯০। তাহার সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসী প্রধানগণ বলিল, 'তোমরা যদি শু`আয়বকে অনুসরণ কর তবে তোমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।'
৯১। অতঃপর তাহারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হইল, ফলে তাহাদের প্রভাত হইল নিজগৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়৷
৯২। মনে হইল, শু'আয়বকে যাহারা মিথ্যাবাদী বলিয়াছিল তাহারা যেন কখনও সেখানে বসবাস করেই নাই। শু`আয়বকে যাহারা মিথ্যাবাদী বলিয়াছিল তাহারাই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছিল।
৯৩। সে তাহাদিগ হইতে মুখ ফিরাইল এবং বলিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তো তোমাদিগকে পৌছাইয়া দিয়াছি এবং তোমাদিগকে উপদেশ দিয়াছি, সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য কি করিয়া আক্ষেপ করি!'
৯৪। আমি কোন জনপদে নবী পাঠাইলে উহার অধিবাসীবৃন্দকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা আক্রান্ত করি, যাহাতে তাহারা কাকুতি-মিনতি করে।
৯৫। অতঃপর আমি অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তাহারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, 'আমাদের পূর্বপুরুষগণও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করিয়াছে।' অতঃপর অকস্মাৎ তাহাদিগকে আমি পাকড়াও করি, কিন্তু তাহারা উপলব্ধি করিতে পারে না।
৯৬। যদি সেই সকল জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনিত ও তাকওয়া অবলম্বন করিত তবে আমি তাহাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করিতাম, কিন্তু তাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল; সুতরাং তাহাদের কৃতকর্মের জন্য তাহাদিগকে শাস্তি দিয়াছি।
৯৭। তবে কি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে রাত্রিতে যখন তাহারা থাকিবে নিদ্রামগ্ন?
৯৮। অথবা জনপদের অধিবাসীবৃদ্ধ কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাহাদের উপর আসিবে পূর্বাহ্নে যখন তাহারা থাকিবে ক্রীড়ারত?
৯৯। তাহারা কি আল্লাহ্ কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্ৰস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেহই আল্লাহ্র কৌশল হইতে নিরাপদ মনে করে না।
১০০। কোন দেশের জনগণের পর যাহারা ঐ দেশের উত্তরাধিকারী হয় তাহাদের নিকট ইহা কি প্রতীয়মান হয় নাই যে, আমি ইচ্ছা করিলে তাহাদের পাপের দরুন তাহাদিগকে শাস্তি দিতে পারি? আর আমি তাহাদের হৃদয় মোহর করিয়া দিব, ফলে তাহারা শুনিবে না।
১০১। এই সকল জনপদের কিছু বৃত্তাত্ত আমি তোমার নিকট বিবৃত করিতেছি, তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূলগণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ আসিয়াছিল; কিন্তু যাহা তাহারা পূর্বে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাতে ঈমান আনিবার পাত্র তাহারা ছিল না, এইভাবে আল্লাহ্ কাফিরদিগের হৃদয় মোহর করিয়া দেন।
১০২। আমি তাহাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাই নাই; বরং তাহাদের অধিকাংশকে তো সত্যত্যাগীই পাইয়াছি।
১০৩। তাহাদের পর মূসাকে আমার নিদর্শনসহ ফিরআওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট পাঠাই; কিন্তু তাহারা উহা অস্বীকার করে। বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হইয়াছিল তাহা লক্ষ্য কর।
১০৪। মূসা বলিল, 'হে ফিরআওন! আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হইতে প্রেরিত।
১০৫। 'ইহা স্থির নিশ্চিত যে, আমি আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলিব না। তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে স্পষ্ট প্রমাণ আমি তোমাদের নিকট আনিয়াছি, সুতরাং বনী ইস্রাঈলকে তুমি আমার সহিত যাইতে দাও।'
১০৬। ফিরআওন বলিল, 'যদি তুমি কোন নিদর্শন আনিয়া থাক তবে তুমি সত্যবাদী হইলে তাহা পেশ কর।
১০৭। অতঃপর মূসা তাহার লাঠি নিক্ষেপ করিল এবং তৎক্ষণাৎ উহা এক সাক্ষাৎ অজগর হইল।
১০৮। এবং সে তাহার হাত বাহির করিল আর তৎক্ষণাৎ উহা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র উজ্জ্বল প্রতিভাত হইল।
১০৯। ফিরআওন সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলিল, ‘এ তো একজন সুদক্ষ জাদুকর,
১১০। ‘এ তোমাদিগকে তোমাদের দেশ হইতে বহিষ্কৃত করিতে চায়, এখন তোমরা কি পরামর্শ দাও?'
১১১। তাহারা বলিল, “তাহাকে ও তাহার ভ্রাতাকে কিঞ্চিত অবকাশ দাও এবং নগরে নগরে সংগ্রাহকদিগকে পাঠাও,
১১২। ‘যেন তাহারা তোমার নিকট প্রতিটি সুদক্ষ জাদুকর উপস্থিত করে।'
১১৩। জাদুকরেরা ফিরআওনের নিকট আসিয়া বলিল, 'আমরা যদি বিজয়ী হই তবে আমাদের জন্য পুরস্কার থাকিবে তো?'
১১৪। সে বলিল, 'হাঁ এবং তোমরা অবশ্যই আমার সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।'
১১৫। তাহারা বলিল, 'হে মূসা! তুমিই কি নিক্ষেপ করিবে, না আমরাই নিক্ষেপ করিব?'
১১৬। সে বলিল, 'তোমরাই নিক্ষেপ কর'। যখন তাহারা নিক্ষেপ করিল তখন তাহারা লোকের চোখে জাদু করিল, তাহাদিগকে আতংকিত করিল এবং তাহারা এক বড় রকমের জাদু দেখাইল।
১১৭। আমি মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করিলাম, 'তুমিও তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর'। সহসা উহা তাহাদের অলীক সৃষ্টিগুলিকে গ্রাস করিতে লাগিল;
১১৮। ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হইল এবং তাহারা যাহা করিতেছিল তাহা মিথ্যা প্রতিপন্ন হইল।
১১৯। সেখানে তাহারা পরাভূত হইল ও লাঞ্ছিত হইল,
১২০। এবং জাদুকরেরা সিজদাবনত হইল।
১২১। তাহারা বলিল, 'আমরা ঈমান আনিলাম জগতসমূহের প্রতিপালকের প্রতি!
১২২। 'যিনি মূসা ও হারুনেরও প্রতিপালক।’
১২৩। ফির‘আগুন বলিল, 'কী! আমি তোমাদিগকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বে তোমরা উহাতে বিশ্বাস করিলে? ইহা তো এক চক্রান্ত; তোমরা সজ্ঞানে এই চক্রান্ত করিয়াছ নগরবাসীদিগকে উহা হইতে বহিষ্কারের জন্য। আচ্ছা, তোমরা শীঘ্রই ইহার পরিণাম জানিবে।
১২৪। ‘আমি তো তোমাদের হস্তপদ বিপরীত দিক হইতে কর্তন করিবই; অতঃপর তোমাদের সকলকে শূলবিদ্ধ করিবই।'
১২৫। তাহারা বলিল, 'আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করিব;
১২৬। 'তুমি তো আমাদিগকে শাস্তি দিতেছ শুধু এইজন্য যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনে ঈমান আনিয়াছি যখন উহা আমাদের নিকট আসিয়াছে। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে ধৈর্য দান কর এবং মুসলমানরূপে আমাদিগকে মৃত্যু দাও।'
১২৭। ফিরআওন সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলিল, 'আপনি কি মূসাকে ও তাহার সম্প্রদায়কে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করিতে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাগণকে বর্জন করিতে দিবেন?' সে বলিল, ‘আমরা তাহাদের পুত্রদিগকে হত্যা করিব এবং তাহাদের নারীদিগকে জীবিত রাখিব আর আমরা তো তাহাদের উপর প্রবল।'
১২৮। মূসা তাহার সম্প্রদায়কে বলিল, 'আল্লাহ্র নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ কর; যমীন তো আল্লাহ্রই। তিনি তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা উহার উত্তরাধিকারী করেন এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।
১২৯। তারা বলল, আমাদেরকে তো আপনার আগমনের আগেও উৎপীড়ন করা হয়েছে এবং আপনার আগমনের পরেও (উৎপীড়ন করা হচ্ছে)। মূসা বলল, আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের দুশমনকে ধ্বংস করবেন এবং যমীনে তোমাদেরকে (তাদের) স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কীরূপ কাজ কর।
১৩০। আমি তো ফিরআওনের অনুসারিগণকে দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসলের ক্ষতির দ্বারা আক্রান্ত করিয়াছি, যাহাতে তাহারা অনুধাবন করে।
১৩১। যখন তাহাদের কোন কল্যাণ হইত, তাহারা বলিত, “ইহা আমাদের প্রাপ্য'। আর যখন কোন অকল্যাণ হইত তখন তাহারা মুসা ও তাহার সংগীদিগকে অলক্ষুণে গণ্য করিত, তাহাদের অকল্যাণ আল্লাহ্র নিয়ন্ত্রণাধীন; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা জানে না।
১৩২। তাহারা বলিল, 'আমাদিগকে জাদু করিবার জন্য তুমি যে কোন নিদর্শন আমাদের নিকট পেশ কর না কেন আমরা তোমাতে বিশ্বাস করিব না।'
১৩৩। অতঃপর আমি তাহাদিগকে প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ভেক ও রক্ত দ্বারা ক্লিষ্ট করি। এইগুলি স্পষ্ট নিদর্শন; কিন্তু তাহারা দাম্ভিকই রহিয়া গেল, আর তাহারা ছিল এক অপরাধী সম্প্রদায়।
১৩৪। এবং যখন তাহাদের উপর শান্তি আসিত তাহারা বলিত, “ হে মূসা! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর তোমার সহিত তিনি যে অংগীকার করিয়াছেন তদনুযায়ী; যদি তুমি আমাদিগ হইতে শাস্তি অপসারিত কর তবে আমরা তো তোমাতে ঈমান আনিবই এবং বনী ইস্রাঈলকেও তোমার সহিত অবশ্যই যাইতে দিব।'
১৩৫। আমি যখনই তাহাদের উপর হইতে শাস্তি অপসারিত করিতাম এক নির্দিষ্ট কালের জন্য যাহা তাহাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তাহারা তখনই তাহাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করিত।
১৩৬। সুতরাং আমি তাহাদিগকে শান্তি দিয়াছি এবং তাহাদিগকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করিয়াছি। কারণ তাহারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করিত এবং এই সম্বন্ধে তাহারা ছিল গাফিল।
১৩৭। যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হইত তাহাদিগকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বনী ইস্রাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হইল, যেহেতু তাহারা ধৈর্য ধারণ করিয়াছিল, আর ফিরআওন ও তাহার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ তাহারা নির্মাণ করিয়াছিল তাহা ধ্বংস করিয়াছি।
১৩৮। আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করাইয়া দেই; অতঃপর তাহারা প্রতিমা পূজায় রত এক জাতির নিকট উপস্থিত হয়। তাহারা বলিল, 'হে মূসা! তাহাদের দেবতার ন্যায় আমাদের জন্যও এক দেবতা গড়িয়া দাও। সে বলিল, “তোমরা তো এক মূর্খ সম্প্রদায়।
১৩৯। 'এইসব লোক যাহাতে লিপ্ত রহিয়াছে তাহা তো বিধ্বস্ত হইবে এবং তাহারা যাহা করিতেছে তাহাও অমূলক।'
১৪০। সে আরও বলিল, 'আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ্ খুঁজিব! অথচ তিনি তোমাদিগকে বিশ্বজগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছেন?”
১৪১। স্মরণ কর, আমি তোমাদিগকে ফিরআওনের অনুসারীদের হাত হইতে উদ্ধার করিয়াছি যাহারা তোমাদিগকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত। তাহারা তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করিত এবং তোমাদের নারীদিগকে জীবিত রাখিত; ইহাতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের এক মহাপরীক্ষা।
১৪২। স্মরণ কর, মূসার জন্য আমি ত্রিশ রাত্রি নির্ধারিত করি এবং আরও দশ দ্বারা উহা পূর্ণ করি। এইভাবে তাহার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময় চল্লিশ রাত্রিতে পূর্ণ হয়। এবং মুসা তাহার ভ্রাতা হারূনকে বলিল, 'আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করিবে, সংশোধন করিবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করিবে না।'
১৪৩ মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হইল এবং তাহার প্রতিপালক তাহার সহিত কথা বলিলেন তখন সে বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখিব’। তিনি বলিলেন, 'তুমি আমাকে কখনই দেখিতে পাইবে না। তুমি বরং পাহাড়ের প্রতি লক্ষ্য কর, উহা স্বস্থানে স্থির থাকিলে তবে তুমি আমাকে দেখিবে।' যখন তাহার প্রতিপালক পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করিলেন তখন উহা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়িল। যখন সে জ্ঞান ফিরিয়া পাইল তখন বলিল, 'মহিমময় তুমি, আমি অনুতপ্ত হইয়া তোমাতেই প্রত্যাবর্তন করিলাম এবং মু'মিনদের মধ্যে আমিই প্রথম।'
১৪৪। তিনি বলিলেন, 'হে মূসা! আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি; সুতরাং আমি যাহা দিলাম তাহা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ হও।'
১৪৫। আমি তাহার জন্য ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখিয়া দিয়াছি; সুতরাং এইগুলি শক্তভাবে ধর এবং তোমার সম্প্রদায়কে উহাদের যাহা উত্তম তাহা গ্রহণ করিতে নির্দেশ দাও। আমি শীঘ্র সত্য ত্যাগীদের বাসস্থান তোমাদিগকে দেখাইব।
১৪৬। পৃথিবীতে যাহারা অন্যায়ভাবে দম্ভ করিয়া বেড়ায় তাহাদের দৃষ্টি আমার নিদর্শন হইতে ফিরাইয়া দিব, তাহারা আমার প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখিলেও উহাতে বিশ্বাস করিবে না, তাহারা সৎপথ দেখিলেও উহাকে পথ বলিয়া গ্রহণ করিবে না, কিন্তু তাহারা ভ্রান্ত পথ দেখিলে উহাকে তাহারা পথ হিসাবে গ্রহণ করিবে। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করিয়াছে এবং সে সম্বন্ধে তাহারা ছিল গাফিল।
১৪৭। যাহারা আমার নিদর্শন ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করে তাহাদের কার্য নিষ্ফল হয়। তাহারা যাহা করে তদনুযায়ীই তাহাদিগকে প্রতিফল দেওয়া হইবে ৷
১৪৮। মুসার সম্প্রদায় তাহার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দ্বারা গড়িল এক গো-বৎস, এক অবয়ব, যাহা 'হাম্বা' রব করিত। তাহারা কি দেখিল না যে, উহা তাহাদের সহিত কথা বলে না ও তাহাদিগকে পথও দেখায় না? তাহারা উহাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিল এবং তাহারা ছিল যালিম।
১৪৯। তাহারা যখন অনুতপ্ত হইল ও দেখিল যে, তাহারা বিপথগামী হইয়া গিয়াছে, তখন তাহারা বলিল, 'আমাদের প্রতিপালক যদি আমাদের প্রতি দয়া না করেন ও আমাদিগকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হইবই।'
১৫০। মূসা যখন ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হইয়া স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করিল তখন বলিল, 'আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কত নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করিয়াছ! তোমাদের প্রতিপালকের আদেশের পূর্বে তোমরা ত্বরান্বিত করিলে এবং সে ফলকগুলি ফেলিয়া দিল আর স্বীয় ভ্রাতাকে চুলে ধরিয়া নিজের দিকে টানিয়া আনিল। হারূন বলিল, 'হে আমার সহোদর! লোকেরা তো আমাকে দুর্বল মনে করিয়াছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যা করিয়াই ফেলিয়াছিল। তুমি আমার সহিত এমন করিও না যাহাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত করিও না।'
১৫১। মূসা বলিল, "হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার ভ্রাতাকে ক্ষমা কর এবং আমাদিগকে তোমার রহমতের মধ্যে দাখিল কর। তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
১৫২। যাহারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছে পার্থিব জীবনে তাহাদের উপর তাহাদের প্রতিপালকের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হইবেই। আর এইভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদিগকে প্রতিফল দিয়া থাকি।
১৫৩। যাহারা অসৎকার্য করে তাহারা পরে তওবা করিলে ও ঈমান আনিলে তোমার প্রতিপালক তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু৷
১৫৪। মূসার ক্রোধ যখন প্রশমিত হইল তখন সে ফলকগুলি তুলিয়া লইল। যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাহাদের জন্য উহাতে যাহা লিখিত ছিল তাহাতে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত।
১৫৫। মুসা স্বীয় সম্প্রদায় হইতে সত্তরজন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানে সমবেত হওয়ার জন্য মনোনীত করিল। তাহারা যখন 'ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হইল, তখন মুসা বলিল, 'হে আমার প্রতিপালক! তুমি ইচ্ছা করিলে পূর্বেই তো ইহাদিগকে এবং আমাকেও ধ্বংস করিতে পারিতে! আমাদের মধ্যে যাহারা নির্বোধ, তাহারা যাহা করিয়াছে সেইজন্য কি তুমি আমাদিগকে ধ্বংস করিবে? ইহা তো শুধু তোমার পরীক্ষা, যদ্বারা তুমি যাহাকে ইচ্ছা বিপথগামী কর এবং যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত কর। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক; সুতরাং আমাদিগকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি দয়া কর এবং ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই তো শ্রেষ্ঠ।
১৫৬। ‘আমাদের জন্য নির্ধারিত কর দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ, আমরা তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করিয়াছি।' আল্লাহ্ বলিলেন, 'আমার শাস্তি যাহাকে ইচ্ছা দিয়া থাকি আর আমার দয়া— তাহা তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি উহা তাহাদের জন্য নির্ধারিত করিব যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করে।
১৫৭। 'যাহারা অনুসরণ করে বার্তবাহক উম্মী নবীর, যাহার উল্লেখ তাওরাত ও ইন্জীল এ, লিপিবদ্ধ পায়, যে তাহাদিগকে সৎকার্যের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে বাধা দেয়, যে তাহাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে ও অপবিত্র বস্তু হারাম করে এবং যে মুক্ত করে তাহাদিগকে তাহাদের গুরুভার হইতে ও শৃংখল হইতে যাহা তাহাদের উপর ছিল। সুতরাং যাহারা তাহার প্রতি ঈমান আনে তাহাকে সম্মান করে, তাহাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তাহার সাথে অবতীর্ণ হইয়াছে উহার অনুসরণ করে তাহারাই সফলকাম।
১৫৮। বল ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহ্র রাসূল, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই; তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁহার বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি যে, আল্লাহ্ ও তাঁহার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাহার অনুসরণ কর, যাহাতে তোমরা সঠিক পথ পাও।'
১৫৯। মুসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন দল রহিয়াছে যাহারা অন্যকে ন্যায়ভাবে পথ দেখায় ও সেই মতেই বিচার করে।
১৬০ । তাহাদিগকে আমি দ্বাদশ গোত্রে বিভক্ত করিয়াছি। মূসার সম্প্রদায় যখন তাহার 'নিকট পানি প্রার্থনা করিল, তখন তাহার প্রতি প্রত্যাদেশ করিলাম, 'তোমার লাঠির দ্বারা পাথরে আঘাত কর'; ফলে উহা হইতে দ্বাদশ প্রস্রবণ উৎসারিত হইল। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানস্থান চিনিয়া লইল, এবং মেঘ দ্বারা তাহাদের উপর ছায়া বিস্তার করিয়াছিলাম, তাহাদের নিকট মান্না ও সালওয়া পাঠাইয়াছিলাম এবং বলিয়াছিলাম, 'ভাল যাহা তোমাদিগকে দিয়াছি তাহা হইতে আহার কর।' তাহারা আমার প্রতি কোন যুলুম করে নাই কিন্তু তাহারা নিজেদের প্রতিই যুলুম করিতেছিল।
১৬১। স্মরণ কর, তাহাদিগকে বলা হইয়াছিল, 'তোমরা এই জনপদে বাস কর ও যেথা ইচ্ছা আহার কর এবং বল, 'ক্ষমা চাই” এবং নতশিরে দ্বারে প্রবেশ কর; আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিব। আমি সৎকর্মপরায়ণদিগকে আরও অধিক দান করিব।'
১৬২। কিন্তু তাহাদের মধ্যে যাহারা যালিম ছিল তাহাদিগকে যাহা বলা হইয়াছিল, তাহার পরিবর্তে তাহারা অন্য কথা বলিল। সুতরাং আমি আকাশ হইতে তাহাদের প্রতি শাস্তি প্রেরণ করিলাম যেহেতু তাহারা সীমালংঘন করিতেছিল।
১৬৩। তাহাদিগকে সমুদ্র তীরবর্তী জনপদবাসীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা শনিবারে সীমালংঘন করিত; শনিবার উদ্যাপনের দিন মাছ পানিতে ভাসিয়া তাহাদের নিকট আসিত। কিন্তু যেদিন তাহারা শনিবার উদ্যাপন করিত না সেদিন উহারা তাহাদের নিকট আসিত না। এইভাবে আমি তাহাদিগকে পরীক্ষা করিয়াছিলাম, যেহেতু তাহারা সত্যত্যাগ করিত।
১৬৪। স্মরণ কর, তাহাদের এক দল বলিয়াছিল, 'আল্লাহ্ যাহাদিগকে ধ্বংস করিবেন কিংবা কঠোর শাস্তি দিবেন, তোমরা তাহাদিগকে সদুপদেশ দাও কেন?' তাহারা বলিয়াছিল, ‘তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দায়িত্ব মুক্তির জন্য এবং যাহাতে তাহারা সাবধান হয় এইজন্য।'
১৬৫। যে উপদেশ তাহাদিগকে দেওয়া হইয়াছিল তাহারা যখন উহা বিস্তৃত হয় তখন যাহারা অসৎকার্য হইতে নিবৃত্ত করিত তাহাদিগকে আমি উদ্ধার করি এবং যাহারা যুলুম করে তাহারা কুফরী করিত বলিয়া আমি তাহাদিগকে কঠোর শাস্তি দিই।
১৬৬। তাহারা যখন নিষিদ্ধ কার্য ঔদ্ধত্য সহকারে করিতে লাগিল তখন তাহাদিগকে বলিলাম, “ঘৃণিত বানর হও"
১৬৭। স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করেন যে, তিনি তো কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের উপর এমন লোকদিগকে প্রেরণ করিবেন যাহারা তাহাদিগকে কঠিন শান্তি দিতে থাকিবে, আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে তৎপর এবং তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
১৬৮। দুনিয়ায় আমি তাহাদিগকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করি; তাহাদের কতক সৎকর্মপরায়ণ ও কতক অন্যরূপ এবং মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা আমি তাহাদিগকে পরীক্ষা করি, যাহাতে তাহারা প্রত্যাবর্তন করে।
১৬৯। অতঃপর অযোগ্য উত্তরপুরুষগণ একের পর এক তাহাদের স্থলাভিষিক্তরূপে কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়; তাহারা এই তুচ্ছ দুনিয়ার সামগ্রী গ্রহণ করে এবং বলে, 'আমাদিগকে ক্ষমা করা হইবে।' কিন্তু উহার অনুরূপ সামগ্রী তাহাদের নিকট আসিলে উহাও তাহারা গ্রহণ করে; কিতাবের অঙ্গীকার কি তাহাদের নিকট হইতে লওয়া হয় নাই যে, তাহারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে সত্য ব্যতীত বলিবে না? এবং তাহারা তো উহাতে যাহা আছে তাহা অধ্যয়নও করে। যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাহাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি ইহা অনুধাবন কর না?
১৭০। যাহারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ও সালাত কায়েম করে, আমি তো এইরূপ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করি না।
১৭১। স্মরণ কর, আমি পর্বতকে তাহাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করি, আর উহা ছিল যেন এক চন্দ্রাতপ। তাহারা মনে করিল যে, উহা তাহাদের উপর পড়িয়া যাইবে। বলিলাম, 'আমি যাহা দিলাম তাহা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং উহাতে যাহা আছে তাহা স্মরণ কর, যাহাতে তোমরা তাওয়ার অধিকারী হও।'
১৭২। স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক আদম সস্তানের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহার বংশধরকে বাহির করেন এবং তাহাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, 'আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নহি?” তাহারা বলে, 'হাঁ অবশ্যই আমরা সাক্ষী রহিলাম।' ইহা এইজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, 'আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম।'
১৭৩। কিংবা তোমরা যেন না বল, ‘আমাদের পূর্বপুরুষগণই তো আমাদের পূর্বে শিরক করিয়াছে, আর আমরা তো তাহাদের পরবর্তী বংশধর; তবে কি পথভ্রষ্টদের কৃতকর্মের জন্য তুমি আমাদিগকে ধ্বংস করিবে?”
১৭৪। এইভাবে নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করি যাহাতে তাহারা প্রত্যাবর্তন করে।
১৭৫। তাহাদিগকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়িয়া শুনাও যাহাকে আমি দিয়াছিলাম নিদর্শন, অতঃপর সে উহাকে বর্জন করে, পরে শয়তান তাহার পিছনে লাগে, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৭৬। আমি ইচ্ছা করিলে ইহা দ্বারা তাহাকে উচ্চ মর্যাদা দান করিতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকিয়া পড়ে ও তাহার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তাহার অবস্থা কুকুরের ন্যায়; উহার উপর তুমি বোঝা চাপাইলে সে হাঁপাইতে থাকে এবং তুমি বোঝা না চাপাইলেও হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাহাদের অবস্থাও এইরূপ, তুমি বৃত্তান্ত বিবৃত কর যাহাতে তাহারা চিন্তা করে।
১৭৭। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে ও নিজেদের প্রতি যুলুম করে তাহাদের অবস্থা কত মন্দ!
১৭৮। আল্লাহ্ যাহাকে পথ দেখান সে-ই পথ পায় এবং যাহাদিগকে তিনি বিপথগামী করেন তাহারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
১৭৯। আমি তো বহু জিন্ন ও মানবকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি; তাহাদের হৃদয় আছে কিন্তু তদ্দ্বারা তাহারা উপলব্ধি করে না, তাহাদের চক্ষু আছে তদ্দ্বারা দেখে না এবং তাহাদের কর্ণ আছে তদ্দ্বারা শ্রবণ করে না; ইহারা পশুর ন্যায়, বরং উহারা অধিক বিভ্রান্ত। উহারাই গাফিল।
১৮০। আল্লাহ্র জন্য রহিয়াছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁহাকে সেই সকল নামেই ডাকিবে; যাহারা তাঁহার নাম বিকৃত করে তাহাদিগকে বর্জন করিবে; তাহাদের কৃতকর্মের ফল তাহাদিগকে দেওয়া হইবে।
১৮১। যাহাদিগকে আমি সৃষ্টি করিয়াছি তাহাদের মধ্যে একদল লোক আছে যাহারা ন্যায়ভাবে পথ দেখায় এবং ন্যায়ভাবে বিচার করে।
১৮২। যাহারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমি তাহাদিগকে এমনভাবে ক্রমে ক্রমে ধ্বংসের দিকে লইয়া যাই যে, তাহারা জানিতেও পারিবে না।
১৮৩। আমি তাহাদিগকে সময় দিয়া থাকি; আমার কৌশল অত্যস্ত বলিষ্ঠ।
১৮৪। তাহারা কি চিন্তা করে না যে, তাহাদের সহচর আদৌ উন্মাদ নহে; সে তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
১৮৫। তাহারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ্ যাহা কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার 'সম্পর্কে এবং ইহার সম্পর্কেও যে, সম্ভবত তাহাদের নির্ধারিত কাল নিকটবর্তী, সুতরাং ইহার পর তাহারা আর কোন্ কথায় ঈমান আনিবে!
১৮৬। আল্লাহ্ যাহাদিগকে বিপথগামী করেন তাহাদের কোন পথপ্রদর্শক নাই, আর তাহাদিগকে তিনি তাহাদের অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দেন।
১৮৭। তাহারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটিবে। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাকালে উহা প্রকাশ করিবেন; উহা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হইবে। আকস্মিকভাবেই উহা তোমাদের উপর আসিবে।' তুমি এই বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করিয়া তাহারা তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, "এই বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহ্ই আছে, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না"
১৮৮। বল, 'আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নাই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানিতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করিতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করিত না। আমি তো শুধু মু'মিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা বৈ আর কিছুই নই।'
১৮৯। তিনিই তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন ও উহা হইতে তাহার স্ত্রী সৃষ্টি করেন যাহাতে সে তাহার নিকট শাস্তি পায়। অতঃপর যখন সে তাহার সহিত 'সংগত হয় তখন সে এক লঘু গর্ভধারণ করে এবং ইহা লইয়া সে অনায়াসে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন গুরুভার হয় তখন তাহারা উভয়ে তাহাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করে, 'যদি তুমি আমাদিগকে এক পূর্ণাংগ সন্তান দাও তবে তো আমরা কৃতজ্ঞ থাকিবই।'
১৯০। তিনি যখন তাহাদিগকে এক পূর্ণাংগ সস্তান দান করেন, তাহারা তাহাদিগকে যাহা দেওয়া হয় সে সম্বন্ধে আল্লাহ্র শরীক করে; কিন্তু তাহারা যাহাকে শরীক করে আল্লাহ্ তাহা অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বে ।
১৯১। উহারা কি এমন বন্ধুকে শরীক করে যাহারা কিছুই সৃষ্টি করে না; বরং উহারা নিজেরাই সৃষ্ট!
১৯২। উহারা না তাহাদিগকে সাহায্য করিতে পারে আর না করিতে পারে নিজদিগকে সাহায্য।
১৯৩। তোমরা উহাদিগকে সৎপথে আহ্বান করিলেও উহারা তোমাদিগকে অনুসরণ করিবে না; তোমরা উহাদিগকে আহ্বান কর বা চুপ করিয়া থাক, তোমাদের পক্ষে উভয়ই সমান।
১৯৪। আল্লাহ্ ব্যতীত তোমরা যাহাদিগকে আহ্ববান কর তাহারা তো তোমাদেরই ন্যায় বান্দা; তোমরা তাহাদিগকে আহ্বান কর, তাহারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
১৯৫। তাহাদের কি পা আছে যাহা দ্বারা উহারা চলে? তাহাদের কি হাত আছে যদ্দ্বারা উহারা ধরে? তাহাদের কি চক্ষু আছে যদ্দ্বারা উহারা দেখে? কিংবা তাহাদের কি কর্ণ আছে যদ্বারা উহারা শ্রবণ করে? বল, তোমরা যাহাদিগকে আল্লাহ্ শরীক করিয়াছ তাহাদিগকে ডাক অতঃপর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না;
১৯৬। ‘আমার অভিভাবক তো আল্লাহ্ যিনি কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন এবং তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করিয়া থাকেন।
১৯৭। আল্লাহ্ ব্যতীত তোমরা যাহাকে আহ্বান কর তাহারা তো তোমাদিগকে সাহায্য করিতে পারে না এবং তাহাদের নিজদিগকেও নহে।
১৯৮। যদি তাহাদিগকে সৎপথে আহ্বান কর তবে তাহারা শ্রবণ করিবে না এবং তুমি দেখিতে পাইবে যে, তাহারা তোমার দিকে তাকাইয়া আছে; কিন্তু তাহারা দেখে না।
১৯৯। তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকার্যের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদিগকে এড়িয়ে চল।
২০০। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহ্র শরণ লইবে, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
২০১। যাহারা তাওয়ার অধিকারী হয় তাহাদিগকে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তাহারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাহাদের চক্ষু খুলিয়া যায়।
২০২। তাহাদের সংগী-সাথিগণ তাহাদিগকে ভ্রান্তির দিকে টানিয়া লয় এবং এ বিষয়ে তাহারা কোন ত্রুটি করে না।
২০৩। তুমি যখন তাহাদের নিকট যে কোন নিদর্শন উপস্থিত কর না, তখন তাহারা বলে, 'তুমি নিজেই একটি নিদর্শন বাছিয়া লও না কেন?' বল, 'আমার প্রতিপালক দ্বারা আমি যে বিষয়ে প্রত্যাদিষ্ট হই, আমি তো শুধু তাহারই অনুসরণ করি, এই কুরআন তোমাদের প্রতিপালকের নিদর্শন, বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য ইহা হিদায়াত ও রহমত।
২০৪ ৷ যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সহিত উহা শ্রবণ করিবে এবং নিশ্চুপ হইয়া থাকিবে যাহাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।
২০৫। তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যূষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করিবে এবং তুমি উদাসীন হইবে না।
২০৬। যাহারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রহিয়াছে তাহারা অহংকারে তাঁহার ইবাদতে বিমুখ হয় না ও তাঁহারই মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁহারই নিকট সিজ্দাবনত হয়।
সিজদা
সূরা : ৭; আল-আ'রাফ; আয়াত নং- ২০৬/২০৬; সমাপ্ত
০৮-সুরা আল-আনফাল
মোটঃ ৭৫ আয়াত; ১০ রুকু', মাদানী
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে"
১। লোকে তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে; বল, 'যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ্ এবং রাসূলের; সুতরাং আল্লাহুকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর, এবং আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য কর, ' যদি তোমরা মু'মিন হও।
২। মু'মিন তো তাহারাই যাহাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁহার আয়াত তাহাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন উহা তাহাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তাহারা তাহাদের প্রতিপালকের উপরই নির্ভর করে,
৩। যাহারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যাহা দিয়াছি তাহা হইতে ব্যয় করে;
৪। তাহারাই প্রকৃত মু'মিন। তাহাদের প্রতিপালকের নিকট তাহাদেরই জন্য রহিয়াছে মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা।
৫। ইহা এইরূপ, যেমন তোমার প্রতিপালক তোমাকে ন্যায়ভাবে তোমার গৃহ হইতে বাহির করিয়াছিলেন অথচ মু'মিনদের এক দল ইহা পছন্দ করে নাই।
৬। সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তাহারা তোমার সহিত বিতর্কে লিপ্ত হয়। মনে হইতেছিল তাহারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হইতেছে আর তাহারা যেন উহা প্রত্যক্ষ করিতেছে।
৭। স্মরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদিগকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দুই দলের একদল তোমাদের আয়ত্তাধীন হইবে; অথচ তোমরা চাহিতেছিলে যে, নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হউক। আর আল্লাহ্ চাহিতেছিলেন যে, তিনি সত্যকে তাঁহার বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং কাফিরদিগকে নির্মূল করেন;
৮। ইহা এইজন্য যে, তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করেন, যদিও অপরাধিগণ ইহা পসন্দ করে না।
৯। স্মরণ কর, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলে; তখন তিনি তোমাদিগকে জবাব দিয়াছিলেন, 'আমি তোমাদিগকে সাহায্য করিব এক সহস্র ফিরিশতা দ্বারা, যাহারা একের পর এক আসিবে।'
১০। আল্লাহ্ ইহা করেন কেবল শুভ সংবাদ দেওয়ার জন্য এবং এই উদ্দেশ্যে যাহাতে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে; এবং সাহায্য তো শুধু আল্লাহ্র নিকট হইতেই আসে; আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
১১। স্মরণ কর, তিনি তাঁহার পক্ষ হইতে স্বস্তির জন্য তোমাদিগকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ হইতে তোমাদের উপর বারি বর্ষণ করেন উহা দ্বারা তোমাদিগকে পবিত্র করিবার জন্য, তোমাদিগ হইতে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য, তোমাদের হৃদয় দৃঢ় করিবার জন্য এবং তোমাদের পা স্থির রাখিবার জন্য।
১২। স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ফিরিশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, ‘আমি তোমাদের সহিত আছি, সুতরাং মু'মিনগণকে অবিচলিত রাখ'। যাহারা কুফরী করে আমি তাহাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করিব; সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাহাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাহাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে।
১৩। ইহা এইহেতু যে, তাহারা আল্লাহ্ তাঁহার রাসূলের বিরোধিতা করে এবং কেহ আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের বিরোধিতা করিলে আল্লাহ্ তো শাস্তিদানে কঠোর।
১৪। সুতরাং ইহার আস্বাদ গ্রহণ কর এবং কাফিরদের জন্য অগ্নি-শাস্তি রহিয়াছে।
১৫। হে মু'মিনগণ! তোমরা যখন কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হইবে তখন তোমরা তাহাদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে না;
১৬। সেদিন যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন কিংবা দলে স্থান লওয়া ব্যতীত কেহ তাহাদিগকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিলে সে তো আল্লাহ্র বিরাগভাজন হইবে এবং তাহার আশ্রয় জাহান্নাম, আর উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
১৭। তোমরা তাহাদিগকে হত্যা কর নাই, আল্লাহ্ই তাহাদিগকে হত্যা করিয়াছেন, এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করিয়াছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ কর নাই, আল্লাহ্ই নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, এবং ইহা মু'মিনগণকে আল্লাহ্র পক্ষ হইতে উত্তমরূপে পরীক্ষা করিবার জন্য; আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১৮। ইহাই তোমাদের জন্য, আল্লাহ্ কাফিরদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করেন।
১৯। তোমরা মীমাংসা চাহিয়াছিলে, তাহা তো তোমাদের নিকট আসিয়াছে; যদি তোমরা বিরত হও তবে উহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা পুনরায় কর তবে আমিও পুনরায় শাস্তি দিব এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হইলেও তোমাদের কোন কাজে আসিবে না, এবং নিশ্চয় আল্লাহ মু'মিনদের সহিত রহিয়াছেন।
২০। হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তাহার কথা শ্রবণ করিতেছ তখন উহা হইতে মুখ ফিরাইও না;
২১। এবং তোমরা তাহাদের ন্যায় হইও না, যাহারা বলে, 'শ্রবণ করিলাম'; বস্তুত তাহারা শ্রবণ করে না।
২২। আল্লাহ্র নিকট নিকৃষ্টতম জীব সেই বধির ও মূক যাহারা কিছুই বুঝে না।
২৩। আল্লাহ্ যদি তাহাদের মধ্যে ভাল কিছু দেখিতেন তবে তিনি তাহাদিগকেও শুনাইতেন, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে শুনাইলেও তাহারা উপেক্ষা করিয়া মুখ ফিরাইত।
২৪। হে মু'মিনগণ! রাসূল যখন তোমাদিগকে এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে যাহা তোমাদিগকে প্রাণবস্তু করে, তখন ‘আল্লাহ্ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিবে এবং জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ মানুষ ও তাহার অন্তরের মধ্যবর্তী হইয়া থাকেন, এবং তাঁহারই নিকট তোমাদিগকে একত্র করা হইবে।
২৫। তোমরা এমন ফিত্নাকে ভয় কর যাহা বিশেষ করিয়া তোমাদের মধ্যে যাহারা জালিম কেবল তাহাদিগকেই ক্লিষ্ট করিবে না এবং জানিয়া রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর।
২৬। স্মরণ কর, তোমরা ছিলে স্বল্প সংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হইতে। তোমরা আশংকা করিতে যে, লোকেরা তোমাদিগকে অকস্মাৎ ধরিয়া লইয়া যাইবে। অতঃপর তিনি তোমাদিগকে আশ্রয় দেন, স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদিগকে শক্তিশালী করেন এবং তোমাদিগকে উত্তম বস্তুসমূহ জীবিকারূপে দান করেন যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
২৭। হে মু'মিনগণ! জানিয়া শুনিয়া আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের সহিত বিশ্বাস ভংগ করিবে না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভংগ করিও না;
২৮। এবং জানিয়া রাখ যে, তোমাদের ধন- সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তো এক পরীক্ষা এবং আল্লাহ্ই নিকট মহাপুরস্কার রহিয়াছে।
২৯। হে মু'মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে আল্লাহ্ তোমাদিগকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করিবার শক্তি দিবেন, তোমাদের পাপ মোচন করিবেন এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করিবেন এবং আল্লাহ্ অতিশয় মঙ্গলময়।
৩০। স্মরণ কর, কাফিরগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করিবার জন্য, হত্যা করিবার অথবা নির্বাসিত করিবার জন্য এবং তাহারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহ্ও কৌশল করেন; আর আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।
৩১। যখন তাহাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তাহারা তখন বলে, 'আমরা তো শ্রবণ করিলাম, ইচ্ছা করিলে আমরাও ইহার অনুরূপ বলিতে পারি, ইহা তো শুধু সেকালের লোকদের উপকথা।'
৩২। স্মরণ কর, তাহারা বলিয়াছিল, 'হে আল্লাহ্! ইহা যদি তোমার পক্ষ হইতে সত্য হয়, তবে আমাদের উপর আকাশ হইতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তি দাও।'
৩৩। আল্লাহ্ এমন নহেন যে, তুমি তাহাদের মধ্যে থাকিবে অথচ তিনি তাহাদিগকে শাস্তি দিবেন, এবং আল্লাহ্ এমনও নহেন যে, তাহারা ক্ষমা প্রার্থনা করিবে অথচ তিনি তাহাদিগকে শাস্তি দিবেন।
৩৪। এবং তাহাদের কী বা বলিবার আছে যে, আল্লাহ্ তাহাদিগকে শাস্তি দিবেন না, যখন তাহারা লোকদিগকে মসজিদুল হারাম হইতে নিবৃত্ত করে? তাহারা উহার তত্ত্বাবধায়ক নহে, শুধু মুত্তাকীগণই উহার তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ ইহা অবগত নহে।
৩৫। কা'বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর।
৩৬। আল্লাহ্র পথ হইতে লোককে নিবৃত্ত করার জন্য কাফিরগণ তাহাদের ধন- সম্পদ ব্যয় করে, তাহারা ধন-সম্পদ ব্যয় করিতেই থাকিবে; অতঃপর উহা তাহাদের মনস্তাপের কারণ হইবে, ইহার পর তাহারা পরাভূত হইবে এবং যাহারা কুফরী করে তাহাদিগকে জাহান্নামে একত্র করা হইবে।
৩৭। ইহা এইজন্য যে, আল্লাহ্ কুজনকে সুজন হইতে পৃথক করিবেন এবং কুজনদের এককে অপরের উপর রাখিবেন, অতঃপর সকলকে স্তূপীকৃত করিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবেন, ইহারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
৩৮। যাহারা কুফরী করে তাহাদিগকে বল, “যদি তাহারা বিরত হয় তবে যাহা অতীতে হইয়াছে আল্লাহ্ তাহা ক্ষমা করিবেন; কিন্তু তাহারা যদি অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি করে তবে পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্ত তো রহিয়াছে।
৩৯। এবং তোমরা তাহাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে থাকিবে যতক্ষণ না ফিৎনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তাহারা বিরত হয় তবে তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তো তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
৪০। যদি তাহারা মুখ ফিরায় তবে জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।
দশম পারা
৪১। আরও জানিয়া রাখ যে, যুদ্ধে যাহা তোমরা লাভ কর তাহার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্র রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের মিসকীনদের এবং পথচারীদের যদি তোমরা ঈমান রাখ আল্লাহে এবং তাহাতে যাহা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছিলাম, যেই দিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিল এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
৪২। স্মরণ কর, তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তাহারা ছিল দূর প্রান্তে আর উষ্ট্রারোহী দল ছিল তোমাদের অপেক্ষা নিম্নভূমিতে। যদি তোমরা পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত করিতে চাহিতে তবে এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটিত। কিন্তু যাহা ঘটিবার ছিল, আল্লাহ্ তাহা সম্পন্ন করিলেন, যাহাতে যে কেহ ধ্বংস হইবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকিবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর জীবিত থাকে; আল্লাহ্ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৪৩। স্মরণ কর, আল্লাহ্ তোমাকে স্বপ্নে দেখাইয়াছিলেন যে, তাহারা সংখ্যায় অল্প; যদি তোমাকে দেখাইতেন যে, তাহারা সংখ্যায় অধিক তবে তোমরা সাহস হারাইতে এবং যুদ্ধ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করিতে। কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদিগকে রক্ষা করিয়াছিলেন এবং অন্তরে যাহা আছে সে সম্বন্ধে তিনি বিশেষভাবে অবহিত।
৪৪। স্মরণ কর, তোমরা যখন পরস্পরের সম্মুখীন হইয়াছিলে তখন তিনি তাহাদিগকে তোমাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখাইয়াছিলেন এবং তোমাদিগকে তাহাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখাইয়াছিলেন, যাহা ঘটিবার ছিল তাহা সম্পন্ন করিবার জন্য। সমস্ত বিষয় আল্লাহ্ দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়।
৪৫। হে মু'মিনগণ! তোমরা যখন কোন দলের সম্মুখীন হইবে তখন অবিচলিত থাকিবে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করিবে, যাহাতে তোমরা সফলকাম হও।
৪৬। তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করিবে ও নিজেদের মধ্যে বিবাদ করিবে না, করিলে তোমরা সাহস হারাইবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হইবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সহিত রহিয়াছেন।
৪৭। তোমরা তাহাদের ন্যায় হইবে না যাহারা দম্ভভরে ও লোক দেখাইবার জন্য স্বীয় গৃহ হইতে বাহির হইয়াছিল এবং লোককে আল্লাহ্র পথ হইতে নিবৃত্ত করে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহা পরিবেষ্টন করিয়া রহিয়াছেন।
৪৮। স্মরণ কর, শয়তান তাহাদের কার্যাবলী তাহাদের দৃষ্টিতে শোভন করিয়াছিল এবং বলিয়াছিল, 'আজ মানুষের মধ্যে কেহই তোমাদের উপর বিজয়ী হইবে না, আমি তোমাদের পার্শ্বেই থাকিব।' অতঃপর দুই দল যখন পরস্পরের সম্মুখীন হইল তখন সে পিছনে সরিয়া পড়িল ও বলিল, ‘তোমাদের সহিত আমার কোন সম্পর্ক রহিল না, তোমরা যাহা দেখিতে পাও না আমি তো তাহা দেখি, নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি, আর আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর।
৪৯। স্মরণ কর, মুনাফিক ও যাহাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তাহারা বলে, “ইহাদের দীন ইহাদিগকে বিভ্রান্ত করিয়াছে।' কেহ আল্লাহ্র উপর নির্ভর করিলে আল্লাহ্ তো পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়।
৫০। তুমি যদি দেখিতে পাইতে ফিরিশতাগণ কাফিরদের মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করিয়া তাহাদের প্রাণ হরণ করিতেছে এবং বলিতেছে, “তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর।'
৫১। ইহা তাহা তোমাদের হস্ত যাহা পূর্বে প্রেরণ করিয়াছিল, আল্লাহ্ তো তাহার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নহেন।
৫২। ফিরআওনের স্বজন ও উহাদের পূর্ববর্তিগণের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা আল্লাহ্র নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে; সুতরাং আল্লাহ্ ইহাদের পাপের জন্য ইহাদিগকে শান্তি দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিমান, শাস্তিদানে কঠোর;
৫৩। ইহা এইজন্য যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নহেন যে, তিনি উহাদিগকে যে সম্পদ দান করিয়াছেন, উহা পরিবর্তন করিবেন; এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৫৪। ফিরআওনের স্বজন ও তাহাদের পূর্ববর্তিগণের অভ্যাসের ন্যায় ইহারা ইহাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করে। তাহাদের পাপের জন্য আমি তাহাদিগকে ধ্বংস করিয়াছি এবং ফিরআওনের স্বজনকে নিমজ্জিত করিয়াছি এবং তাহারা সকলেই ছিল যালিম।
৫৫। আল্লাহ্র নিকট নিকৃষ্ট জীব তাহারাই যাহারা কুফরী করে এবং ঈমান আনে না।
৫৬। উহাদের মধ্যে তুমি যাহাদের সহিত চুক্তিতে আবদ্ধ, তাহারা প্রত্যেকবার তাহাদের চুক্তি ভংগ করে এবং তাহারা সাবধান হয় না;
৫৭। যুদ্ধে উহাদিগকে তোমরা যদি তোমাদের আয়ত্ত্বে পাও তবে উহাদিগকে উহাদের পশ্চাতে যাহারা আছে, তাহাদের হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া এমনভাবে বিধ্বস্ত করিবে যাহাতে উহারা শিক্ষা লাভ করে।
৫৮। যদি তুমি কোন সম্প্রদায়ের চুক্তি ভংগের আশংকা কর তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথ বাতিল করিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চুক্তি ভংগকারীদিগকে পসন্দ করেন না।
৫৯। কাফিরগণ যেন কখনও মনে না করে যে, তাহারা পরিত্রাণ পাইয়াছে; নিশ্চয়ই তাহারা মু'মিনগণকে হতবল করিতে পারিবে না।
৬০। তোমরা তাহাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী প্রস্তুত রাখিবে এতদ্দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করিবে আল্লাহ্র শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এতদ্ব্যতীত অন্যদিগকে যাহাদিগকে তোমরা জান না, আল্লাহ্ তাহাদিগকে জানেন। আল্লাহ্র পথে তোমরা যাহা কিছু ব্যয় করিবে উহার পূর্ণ প্রতিদান 'তোমাদিগকে দেওয়া হইবে এবং তোমাদের প্রতি যুলুম করা হইবে না।
৬১। তাহারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকিয়া পড়ে তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকিবে এবং আল্লাহ্র প্রতি নির্ভর করিবে; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৬২। যদি তাহারা তোমাকে প্রতারিত করিতে চাহে তবে তোমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও মু'মিনদের দ্বারা শক্তিশালী করিয়াছেন,
৬৩। এবং তিনি উহাদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করিয়াছেন। পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করিলেও তুমি তাহাদের হৃদয়ে প্রীতি স্থাপন করিতে পারিতে না; কিন্তু আল্লাহ্ তাহাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করিয়াছেন; নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৬৪। হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী মু'মিনদের জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
৬৫। হে নবী! মু'মিনদিগকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ কর; তোমাদের মধ্যে কুড়িজন ধৈর্যশীল থাকিলে তাহারা দুইশত জনের উপর বিজয়ী হইবে এবং তোমাদের মধ্যে একশত জন থাকিলে এক সহস্র কাফিরের উপর বিজয়ী হইবে। কারণ তাহারা এমন এক সম্প্রদায় যাহার বোধশক্তি নাই।
৬৬। আল্লাহ্ এখন তোমাদের ভার লাঘব করিলেন। তিনি তো অবগত আছেন যে, তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে, সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশত জন ধৈর্যশীল থাকিলে তাহারা দুইশত জনের উপর বিজয়ী হইবে। আর তোমাদের মধ্যে এক সহস্ৰ থাকিলে আল্লাহ্র অনুজ্ঞাক্রমে তাহারা দুই সহস্রের উপর বিজয়ী হইবে। আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সহিত রহিয়াছেন।
৬৭। দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবীর জন্য সংগত নহে। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ এবং আল্লাহ্ চাহেন পরলোকের কল্যাণ; আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৬৮। আল্লাহ্র পূর্ব বিধান না থাকিলে তোমরা যাহা গ্রহণ করিয়াছ তজ্জন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হইত।
৬৯। যুদ্ধে যাহা তোমরা লাভ করিয়াছ তাহা বৈধ ও উত্তম বলিয়া ভোগ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর,
আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৭০। নবী! তোমাদের করায়ত্ত যুদ্ধবন্দীদিগকে বল, “আল্লাহ্ যদি তোমাদের হৃদয়ে ভাল কিছু দেখেন তবে তোমাদের নিকট হইতে যাহা লওয়া হইয়াছে তাহা অপেক্ষা উত্তম কিছু তিনি তোমাদিগকে দান করিবেন এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
৭১। তাহারা তোমার সহিত বিশ্বাস ভংগ করিতে চাহিলে, তাহারা তো পূর্বে আল্লাহ্র সহিতও বিশ্বাস ভংগ করিয়াছে; অতঃপর তিনি তোমাদিগকে তাহাদের উপর শক্তিশালী করিয়াছেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৭২। যাহারা ঈমান আনিয়াছে, হিজরত করিয়াছে, জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করিয়াছে, আর যাহারা আশ্রয় দান করিয়াছে ও সাহায্য করিয়াছে তাহারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর যাহারা ঈমান আনিয়াছে কিন্তু হিজরত করে নাই, হিজরত না করা পর্যন্ত তাহাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তোমাদের নাই; আর দীন সম্বন্ধে যদি তাহারা তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করে তবে তাহাদিগকে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য, যে সম্প্রদায় ও তোমাদের মধ্যে চুক্তি রহিয়াছে তাহাদের বিরুদ্ধে নহে। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ উহার সম্যক দ্রষ্টা।
৭৩। যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু, যদি তোমরা উহা না কর তবে দেশে ফিৎনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দিবে।
৭৪। যাহারা ঈমান আনিয়াছে, হিজরত করিয়াছে ও আল্লাহ্র পথে জিহাদ করিয়াছে আর যাহারা আশ্রয় দান করিয়াছে ও সাহায্য করিয়াছে, তাহারাই প্রকৃত মু'মিন; তাহাদের জন্য ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা রহিয়াছে।
৭৫। যাহারা পরে ঈমান আনিয়াছে, হিজরত করিয়াছে ও তোমাদের সঙ্গে থাকিয়া জিহাদ করিয়াছে তাহারাও তোমাদের অন্তর্ভুক্ত এবং আত্মীয়গণ আল্লাহ্র বিধানে একে অন্য অপেক্ষা অধিক হকদার। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।
সূরা : ৮ আল-আনফাল; আয়াত; ৭৫/৭৫; সমাপ্ত;
০৯- সূরা "আত-তাওবা"
মোটঃ ১২৯ আয়াত ১৬ রুকূ' মাদানী;
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে"
১। ইহা সম্পর্কচ্ছেদ আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসুলের পক্ষ হইতে সেই সমস্ত মুশরিকদের সহিত যাহাদের সহিত তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়াছিলে।
২। অতঃপর তোমরা দেশে চারি মাসকাল পরিভ্রমণ কর ও জানিয়া রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করিতে পারিবে না এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কাফিরদিগকে লাঞ্ছিত করিয়া থাকেন।
৩। মহান হজ্জের দিবসে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের পক্ষ হইতে মানুষের প্রতি ইহা এক ঘোষণা যে, নিশ্চয়ই মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ দায়মুক্ত এবং তাঁহার রাসূলও। তোমরা যদি তওবা কর তবে তাহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর তোমরা যদি মুখ ফিরাও তবে জানিয়া রাখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীনবল করিতে পারিবে না এবং কাফিরদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও,
৪। তবে মুশরিকদের মধ্যে যাহাদের সহিত তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে যাহারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করে নাই এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাহাকেও সাহায্য করে নাই, তাহাদের সহিত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ করিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুত্তাকীদিগকে পছন্দ করেন।
৫। অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হইলে মুশরিকদিগকে যেখানে পাইবে হত্যা করিবে, তাহাদিগকে বন্দী করিবে, অবরোধ করিবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাহাদের জন্য ওঁৎ পাতিয়া থাকিবে। কিন্তু যদি তাহারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৬। মুশরিকদের মধ্যে কেহ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করিলে তুমি তাহাকে আশ্রয় দিবে যাহাতে সে আল্লাহ্র বাণী শুনিতে পায়, অতঃপর তাহাকে তাহার নিরাপদ স্থানে পৌঁছাইয়া দিবে; কারণ তাহারা অজ্ঞ লোক।
৭। আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের নিকট মুশরিকদের চুক্তি কি করিয়া বলবৎ থাকিবে। তবে যাহাদের সহিত মসজিদুল হারামের সন্নিকটে তোমরা পারস্পরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়াছিলে, যবৎ তাহারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে তোমরাও তাহাদের চুক্তিতে স্থির থাকিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুত্তাকীদিগকে পছন্দ করেন।
৮। কেমন করিয়া থাকিবে? তাহারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তবে তাহারা তোমাদের আত্মীয়তার ও অংগীকারের কোন মর্যাদা দিবে না; তাহারা মুখে তোমাদিগকে সন্তুষ্ট রাখে; কিন্তু তাহাদের হৃদয় উহা অস্বীকার করে; তাহাদের অধিকাংশ সত্যত্যাগী।
৯। তাহারা আল্লাহর আয়াতকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে এবং তাহারা লোকদিগকে তাঁহার পথ হইতে নিবৃত্ত করে; নিশ্চয়ই তাহারা যাহা করিয়া থাকে তাহা অতি নিকৃষ্ট।
১০। তাহারা কোন মু'মিনের সহিত আত্মীয়তার ও অংগীকারের মর্যাদা রক্ষা করে না, তাহারাই সীমালংঘনকারী।
১১। অতঃপর তাহারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তাহারা তোমাদের দীন সম্পর্কে ভাই; জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শন স্পষ্টরূপে বিবৃত করি।
১২। তাহাদের চুক্তির পর তাহারা যদি তাহাদের প্রতিশ্রুতি ভংগ করে ও তোমাদের দীন সম্বন্ধে বিদ্রূপ করে তবে কাফিরদের প্রধানদের সহিত যুদ্ধ কর; ইহারা এমন লোক যাহাদের কোন প্রতিশ্রুতি রহিল না; যেন তাহারা নিবৃত্ত হয়।
১৩। তোমরা কি সেই সম্প্রদায়ের সহিত যুদ্ধ করিবে না, যাহারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভংগ করিয়াছে ও রাসূলের বহিস্করণের জন্য সংকল্প করিয়াছে। উহারাই প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছে। তোমরা কি তাহাদিগকে ভয় কর! আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের পক্ষে অধিক সমীচীন যদি তোমরা মু'মিন হও।
১৪। তোমরা তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিবে। তোমাদের হস্তে আল্লাহ্ উহাদিগকে শাস্তি দিবেন, উহাদিগকে লাঞ্ছিত করিবেন, উহাদের উপর তোমাদিগকে বিজয়ী করিবেন ও মু'মিনদের চিত্ত প্রান্ত করিবেন,
১৫। এবং তিনি উহাদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করিবেন। আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা তাহার প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হন, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১৬। তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদিগকে এমনি ছাড়িয়া দেওয়া হইবে, যখন পর্যন্ত আল্লাহ্ না প্রকাশ করেন তোমাদের মধ্যে কাহারা মুজাহিদ এবং কাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল ও মু'মিনগণ ব্যতীত অন্য কাহাকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নাই? তোমরা যাহা কর, সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।
১৭। মুশরিকরা যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরী স্বীকার করে তখন তাহারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করিবে—এমন হইতে পারে না! উহারা এমন যাহাদের সমস্ত কর্ম ব্যর্থ হইয়াছে এবং উহারা অগ্নিতেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করিবে।
১৮। তাহারাই তো আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করিবে, যাহারা ঈমান আনে আল্লাহ্ ও আখিরাতে এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ভয় করে না। অতএব আশা করা যায়, তাহারা হইৰে সৎপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।
১৯। হাজীদের জন্য পানি সরবরাহ এবং মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে তোমরা কি তাহাদের পুণ্যের সমজ্ঞান কর, যাহারা আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনে এবং আল্লাহ্র পথে জিহাদ করে। আল্লাহ্র নিকট উহারা সমতুল্য নহে। আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
২০। যাহারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তাহারা আল্লাহ্র নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, আর তাহারাই সফলকাম।
২১। উহাদের প্রতিপালক উহাদিগকে সুসংবাদ দিতেছেন, স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, যেখানে আছে তাহাদের জন্য স্থায়ী সুখ-শান্তি।
২২। সেথায় তাহারা চিরস্থায়ী হইবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র নিকট আছে মহাপুরস্কার।
২৩। হে মু'মিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যদি ঈমানের মুকাবিলায় কুফরীকে শ্রেয় জ্ঞান করে, তবে উহাদিগকে অন্তঃরঙ্গরূপে গ্রহণ করিও না। তোমাদের মধ্যে যাহারা উহাদিগকে অন্তঃরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তাহারাই যালিম।
২৪। বল, ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ্, তাঁহার রাসূল এবং আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা-মাতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পত্নী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যাহার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের ৰাসস্থান যাহা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত।' আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
২৫। আল্লাহ্ তোমাদিগকে তো সাহায্য করিয়াছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদিগকে উৎফুল করিয়াছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য; কিন্তু উহা তোমাদের কোন কাজে আসে নাই এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হইয়াছিল ও পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়া পলায়ন করিয়াছিলে।
২৬। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁহার নিকট হইতে তাঁহার রাসূল ও মু'মিনদের উপর প্রশাস্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করেন যাহা তোমরা দেখিতে পাও নাই এবং তিনি কাফিরদিগকে শাস্তি প্রদান করেন; ইহাই কাফিরদের কর্মফল।
২৭। ইহার পরও যাহার প্রতি ইচ্ছা আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ হইবেন; আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২৮। হে মু'মিনগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্ৰ ; সুতরাং এই বৎসরের পর তাহারা যেন মসজিদুল হারামের নিকট না আসে। যদি তোমরা দারিদ্র্যের আশংকা কর তবে আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তাঁহার নিজ করুণায় তোমাদিগকে অভাবমুক্ত করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
২৯। যাহাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ্র উপর ঈমান আনে না ও শেষদিনেও নহে এবং আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল যাহা হারাম করিয়াছেন তাহা হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দীন অনুসরণ করে না; তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিবে, যে পর্যন্ত না তাহারা নত হইয়া স্বহস্তে জিজিয়া দেয়।
৩০। ইয়াহুদীগণ বলে, “উযায়র আল্লাহ্র পুত্র', এবং খৃস্টানগণ বলে, 'মসীহ আল্লাহ্র পুত্র।' উহা তাহাদের মুখের কথা। পূর্বে যাহারা কুফরী করিয়াছিল উহারা তাহাদের মত কথা বলে। আল্লাহ্ উহাদিগকে ধ্বংস করুন। আর কোন্ দিকে উহাদিগকে ফিরাইয়া দেওয়া হইয়াছে!
৩১। তাহারা আল্লাহ্ ব্যতীত তাহাদের পণ্ডিতগণকে ও সংসার বিরাগিগণকে তাহাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করিয়াছে এবং মারইয়াম-তনয় মসীহকেও! কিন্তু উহারা এক ইলাহের ইবাদত করিবার জন্যই আদিষ্ট হইয়াছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। তাহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে তিনি কত পৰিত্ৰ !
৩২। তাহারা তাহাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহ্র জ্যোতি নির্বাপিত করিতে চাহে। কাফিরগণ অপ্রীতিকর মনে করিলেও আল্লাহ্ তাঁহার জ্যোতির পূর্ণ উদ্ভাসন ব্যতীত অন্য কিছু চাহেন না।
৩৩। মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করিলেও অপর সমস্ত দীনের উপর জয়যুক্ত করিবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁহার রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন।
৩৪। হে মু'মিনগণ। পণ্ডিত এবং সংসারবিরাগীদের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন অন্যায়ভাবে ভোগ করিয়া থাকে এবং লোককে আল্লাহ্ পথ হইতে নিবৃত্ত করে। আর যাহারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না উহাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।
৩৫। যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হইবে এবং উহা দ্বারা তাহাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হইবে সেদিন বলা হইবে, ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করিতে। সুতরাং তোমরা যাহা পুঞ্জীভূত করিয়াছিলে তাহা আস্বাদন কর।
৩৬। নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হইতেই আল্লাহ্র বিধানে; আল্লাহ্র নিকট মাস গণনায় মাস বারটি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং ইহার মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করিও না এবং তোমরা মুশরিকদের সহিত সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করিবে, যেমন তাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করিয়া থাকে। এবং জানিয়া রাখ, আল্লাহ্ তো মুস্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
৩৭। এই যে মাসকে পিছাইয়া দেওয়া কেবল কুফরীর বৃদ্ধি করা; যাহা দ্বারা কাফিরগণকে বিভ্রান্ত করা হয়। তাহারা উহাকে কোন বৎসর বৈধ করে এবং কোন বৎসর অবৈধ করে যাহাতে তাহারা, আল্লাহ্ যেইগুলিকে নিষিদ্ধ করিয়াছেন, সেইগুলির গণনা পূর্ণ করিতে পারে, অনন্তর আল্লাহ্ যাহা হারাম করিয়াছেন তাহা হালাল করিতে পারে। তাহাদের মন্দ কাজগুলি তাহাদের জন্য শোভনীয় করা হইয়াছে; আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।
৩৮। হে মু'মিনগণ! তোমাদের হইল কী যে, যখন তোমাদিগকে আল্লাহ্র পথে অভিযানে বাহির হইতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হইয়া ভূতলে ঝুঁকিয়া পড়। তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হইয়াছ? আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অকিঞ্চিৎকর!
৩৯। যদি তোমরা অভিযানে বাহির না হও, তবে তিনি তোমাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করিবেন এবং তোমরা তাঁহার কোনই ক্ষতি করিতে পারিবে না। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
৪০। যদি তোমরা তাহাকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ্ তো তাহাকে সাহায্য করিয়াছিলেন যখন কাফিরগণ তাহাকে বহিষ্কার করিয়াছিল এবং সে ছিল দুইজনের দ্বিতীয়জন, যখন তাহারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তাহার সংগীকে বলিয়াছিল, 'বিষণ্ন হইও না, আল্লাহ্ তো আমাদের সংগে আছেন।' অতঃপর আল্লাহ্ তাঁহার উপর তাঁহার প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাহাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা যাহা তোমরা দেখ নাই, এবং তিনি কাফিরদের কথা হেয় করেন। আল্লাহ্র কথাই সর্বোপরি এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৪১। অভিযানে বাহির হইয়া পড়, হালকা অবস্থায় হউক অথবা ভারি অবস্থায়, এবং সংগ্রাম কর আল্লাহ্র পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। উহাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানিতে!
৪২। আশু সম্পদ লাভের সম্ভাবনা থাকিলে ও সফর সহজ হইলে উহারা নিশ্চয়ই তোমার অনুসরণ করিত, কিন্তু উহাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হইল। উহারা অচিরেই আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া বলিবে, ‘পারিলে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের সংগে বাহির হইতাম।' উহারা নিজদিগকেই ধ্বংস করে। আল্লাহ্ জানেন উহারা অবশ্যই মিথ্যাচারী।
৪৩। আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করিয়াছেন। কাহারা সত্যবাদী তাহা তোমার নিকট স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এবং কাহারা মিথ্যাবাদী তাহা না জানা পর্যন্ত তুমি কেন উহাদিগকে অব্যাহতি দিলে।
৪৪। যাহারা আল্লাহে ও শেষ দিবসে ঈমান আনে তাহারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদে অব্যাহতি পাইবার প্রার্থনা তোমার নিকট করে না। আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
৪৫। তোমার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে কেবল উহারাই যাহারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে ঈমান আনে না এবং যাহাদের চিত্ত সংশয়যুক্ত। উহারা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্থ।
৪৬। উহারা বাহির হইতে চাহিলে উহারা নিশ্চয়ই ইহার জন্য প্রস্তুতির ব্যবস্থা করিত, কিন্তু উহাদের অভিযাত্রা আল্লাহ্র মনঃপূত ছিল না। সুতরাং তিনি উহাদিগকে বিরত রাখেন এবং উহাদিগকে বলা হয়, 'যাহারা বসিয়া আছে তাহাদের সহিত বসিয়া থাক।'
৪৭। উহারা তোমাদের সহিত বাহির হইলে তোমাদের বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি করিত এবং তোমাদের মধ্যে ফিৎনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে ছুটাছুটি করিত। তোমাদের মধ্যে উহাদের জন্য কথা শুনিবার লোক আছে। আল্লাহ্ যালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
৪৮। পূর্বেও উহারা ফিৎনা সৃষ্টি করিতে চাহিয়াছিল এবং উহারা তোমার বহু কর্মে উলট-পালট করিয়াছিল যতক্ষণ না উহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য আসিল এবং আল্লাহ্র আদেশ বিজয়ী হইল।
৪৯। এবং উহাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে, 'আমাকে অব্যাহতি দাও এবং আমাকে ফিৎনায় ফেলিও না। সাবধান! উহারাই ফিৎনাতে পড়িয়া আছে। জাহান্নাম তো কাফিরদিগকে বেষ্টন করিয়াই আছে।
৫০। তোমার মংগল হইলে তাহা উহাদিগকে পীড়া দেয় এবং তোমার বিপদ ঘটিলে উহারা বলে, “আমরা তো পূর্বাহ্নেই আমাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করিয়াছিলাম' এবং উহারা উৎফুল্ল চিত্তে সরিরা পড়ে।
৫১। বল, 'আমাদের জন্য আল্লাহ্ যাহা নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হইবে না; তিনি আমাদের কর্মবিধায়ক এবং আল্লাহর উপরই মু'মিনদের নির্ভর করা উচিত।'
৫২। বল, 'তোমরা আমাদের দুইটি মংগলের একটির প্রতীক্ষা করিতেছ। এবং আমরা প্রতীক্ষা করিতেছি যে, আল্লাহ্ তোমাদিগকে শাস্তি দিবেন সরাসরি নিজ পক্ষ হইতে অথবা আমাদের হস্ত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সহিত প্রতীক্ষা করিতেছি।'
৫৩। বল, 'তোমরা ইচ্ছাকৃত ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃত, তোমাদের নিকট হইতে তাহা কিছুতেই গৃহীত হইবে না; তোমরা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।'
৫৪। উহাদের অর্থসাহায্য গ্রহণ করা নিষেধ করা হইয়াছে এইজন্য যে, উহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলকে অস্বীকার করে, সালাতে শৈথিল্যের সহিত উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে অর্থ সাহায্য করে।
৫৫। সুতরাং উহাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাকে যেন বিমুগ্ধ না করে, আল্লাহ্
তো উহার দ্বারাই উহাদিগকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চাহেন। উঁহারা 'কাফির থাকা অবস্থায় উহাদের আত্মা দেহত্যাগ করিবে।
৫৬। উহারা আল্লাহ্র নামে শপথ করে যে, উহারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু উহারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নহে, বস্তুত উহারা এমন এক সম্প্রদায় যাহারা ভয় করিয়া থাকে।
৫৭।, উহারা কোন আশ্রয়স্থল, কোন গিরিগুহা অথবা কোন প্রবেশস্থল পাইলে উহার দিকে পলায়ন করিবে ক্ষিপ্রগতিতে।
৫৮। উহাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যে সদকা বণ্টন সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে, অতঃপর ইহার কিছু উহাদিগকে দেওয়া হইলে উহারা পরিতুষ্ট হয়, আর ইহার কিছু উহাদিগকে না দেওয়া হইলে তৎক্ষণাৎ উহারা বিক্ষুব্ধ হয়।
৫৯। ভাল হইত যদি উহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল উহাদিগকে যাহা দিয়াছেন তাহাতে পরিতুষ্ট হইত এবং বলিত, ‘আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আল্লাহ্ আমাদিগকে দিবেন নিজ করুণায় এবং অচিরেই তাঁহার রাসূলও; আমরা আল্লারই প্রতি অনুরক্ত।
৬০। সদকা তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাহাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাহাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহ্র পথে ও মুসাফিরদের জন্য। ইহা আল্লাহ্র বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৬১। এবং উহাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যাহারা নবীকে ক্লেশ দেয় এবং বলে, 'সে তো কর্ণপাতকারী।'বল, 'তাহার কান তোমাদের জন্য যাহা মংগল তাহাই শুনে।' সে আল্লাহে ঈমান আনে এবং মু'মিনদিগকে বিশ্বাস করে; তোমাদের মধ্যে যাহারা মু'মিন সে তাহাদের জন্য রহমত এবং যাহারা আল্লাহ্র রাসূলকে ক্লেশ দেয় তাহাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শান্তি।
৬২। উহারা তোমাদিগকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য তোমাদের নিকট আল্লাহ্র শপথ করে। আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল ইহারই অধিক হকদার যে, উহারা তাহাদিগকেই সন্তুষ্ট করে যদি উহারা মু'মিন হয়।
৬৩। উহারা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের বিরোধিতা করে তাহার জন্য তো আছে জাহান্নামের অগ্নি, যেথায় সে স্থায়ী হইবে? উহাই চরম লাঞ্চনা।
৬৪। মুনাফিকেরা ভয় করে, তাহাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না অবতীর্ণ হয়, যাহা উহাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করিয়া দিবে! বল, “বিদ্রূপ করিতে থাক; 'তোমরা যাহা ভয় কর আল্লাহ্ তাহা প্রকাশ করিয়া দিবেন।
৬৫। এবং তুমি উহাদিগকে প্রশ্ন করিলে উহারা নিশ্চয়ই বলিবে, 'আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করিতেছিলাম।' বল, 'তোমরা কি আল্লাহ্, তাঁহার নিদর্শন ও তাঁহার রাসূলকে বিদ্রূপ করিতেছিলে?
৬৬। 'তোমরা দোষ স্খালনের চেষ্টা করিও না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করিয়াছ। তোমাদের মধ্যে কোন দলকে ক্ষমা করিলেও অন্য দলকে শাস্তি দিব— কারণ তাহারা অপরাধী।
৬৭। মুনাফিক নর ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ, উহারা অসৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং সৎকর্মে নিষেধ করে, উহারা হাতবদ্ধ করিয়া রাখে, উহারা আল্লাহকে বিস্মৃত হইয়াছে, ফলে তিনিও উহাদিগকে বিস্মৃত হইয়াছেন; মুনাফিকেরা তো পাপাচারী।
৬৮। মুনাফিক নর, মুনাফিক নারী ও কাফিরদিগকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন জাহান্নামের অগ্নির, যেথায় উহারা স্থায়ী হইবে, ইহাই উহাদের জন্য যথেষ্ট এবং আল্লাহ্ উহাদিগকে লা'নত করিয়াছেন এবং উহাদের জন্য রহিয়াছে স্থায়ী শান্তি;
৬৯। তোমরা ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত যাহারা শক্তিতে তোমাদের অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং যাহাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ছিল তোমাদের অপেক্ষা অধিক, এবং উহারা উহাদের ভাগ্যে যাহা ছিল তাহা ভোগ করিয়াছে; তোমাদের ভাগ্যে যাহা ছিল তোমরাও তাহা ভোগ করিলে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তিগণ উহাদের ভাগ্যে যাহা ছিল তাহা ভোগ করিয়াছে। উহারা যেইরূপ অনর্থক আলাপ- আলোচনায় লিপ্ত ছিল তোমরাও সেইরূপ আলাপ- আলোচনায় লিপ্ত রহিয়াছ। উহারাই তাহারা যাহাদের কর্ম দুনিয়ায় ও আখিরাতে ব্যর্থ এবং উহারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
৭০। উহাদের পূর্ববর্তী নূহ, 'আদ ও ছাদের সম্প্রদায়, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং মায়ান ও বিধ্বস্ত নগরের অধিবাসিগণের সংবাদ কি উহাদের নিকট আসে নাই। উহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ উহাদের রাসূলগণ আসিয়াছিল। আল্লাহ্ এমন নহেন যে, তাহাদের উপর যুলুম করেন, কিন্তু উহারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে।
৭১। মু'মিন নর ও মু'মিন নারী একে অপরের বন্ধু, ইহারা সৎকার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎকার্য নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করে; ইহাদিগকেই আল্লাহ্ কৃপা করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৭২। আল্লাহ্ মু'মিন নর ও মু'মিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন জান্নাতের; যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত যেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে এবং স্থায়ী জান্নাতে উত্তম বাসস্থানের। আল্লাহ্র সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ মহাসাফল্য। এবং উহাই মহাসাফল্য।
৭৩। হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর ও উহাদের প্রতি কঠোর হও; উহাদের আবাসস্থল জাহান্নাম, উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল!
৭৪। উহারা আল্লাহর শপথ করে যে, উহারা কিছু বলে নাই; কিন্তু উহারা তো কুফরীর কথা বলিয়াছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর উহারা কাফির হইয়াছে; উহারা যাহা সংকল্প করিয়াছিল তাহা পায় নাই। আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল নিজ কৃপায় উহাদিগকে অভাবমুক্ত করিয়াছিলেন বলিয়াই উহারা বিরোধিতা করিয়াছিল; উহারা তওবা করিলে উহাদের জন্য ভাল হইবে, কিন্তু উহারা মুখ ফিরাইয়া লইলে আল্লাহ্ দুনিয়ায় ও আখিরাতে উহাদিগকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন; পৃথিবীতে উহাদের কোন অভিভাবক নাই এবং কোন সাহায্যকারী নাই৷
৭৫। উহাদের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্র নিকট অংগীকার করিয়াছিল, 'আল্লাহ্ নিজ কৃপায় আমাদিগকে দান করিলে আমরা নিশ্চয়ই সদকা দিব এবং অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হইব।'
৭৬। অতঃপর যখন তিনি নিজ কৃপায় উহাদিগকে দান করিলেন, তখন উহারা এই বিষয়ে কার্পণ্য করিল এবং বিরুদ্ধভাবাপন্ন হইয়া মুখ ফিরাইল।
৭৭। পরিণামে তিনি উহাদের অন্তরে কপটতা স্থিত করিলেন আল্লাহ্র সহিত উহাদের সাক্ষাৎ-দিবস পর্যন্ত, কারণ উহারা আল্লাহ্র নিকট যে অংগীকার করিয়াছিল উহা ভংগ করিয়াছিল এবং কারণ উহারা ছিল মিথ্যাচারী।
৭৮। উহারা কি জানিত না যে, উহাদের অন্তরের গোপন কথা ও উহাদের গোপন পরামর্শ আল্লাহ্ অবশ্যই জানেন এবং যাহা অদৃশ্য তাহাও তিনি বিশেষভাবে জানেন?
৭৯। মু'মিনদের মধ্যে যাহারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয় এবং যাহারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাহাদের যাহারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহ্ উহাদিগকে বিদ্রূপ করেন; উহাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
৮০। তুমি উহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা উহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা; তুমি সত্তর বার উহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিলেও আল্লাহ্ উহাদিগকে কখনই ক্ষমা করিবেন না। ইহা এইজন্য যে, উহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের সহিত কুফরী করিয়াছে। আল্লাহ্ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
৮১। যাহারা পশ্চাতে রহিয়া গেল তাহারা আল্লাহ্র রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করিয়া বসিয়া থাকাতেই আনন্দ বোধ করিল এবং তাহাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা অপছন্দ করিল এবং তাহারা বলিল, 'গরমের মধ্যে অভিযানে বাহির হইও না।' বল, উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচণ্ডতম,' যদি তাহারা বুঝিত!
৮২। অতএব তাহারা কিঞ্চিৎ হাসিয়া লউক, তাহারা প্রচুর কাঁদিবে, তাহাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ।
৮৩। আল্লাহ্ যদি তোমাকে উহাদের কোন দলের নিকট ফেরত আনেন এবং উহারা অভিযানে বাহির হইবার জন্য তোমার অনুমতি প্রার্থনা করে, তখন তুমি বলিবে, 'তোমরা তো আমার সহিত কখনও বাহির হইবে না এবং তোমরা আমার সংগী হইয়া কখনও শত্রুর সহিত যুদ্ধ করিবে না। তোমরা তো প্রথমবার বসিয়া থাকাই পছন্দ করিয়াছিলে; সুতরাং যাহারা পিছনে থাকে তাহাদের সহিত বসিয়াই থাক।'
৮৪। উহাদের মধ্যে কাহারও মৃত্যু হইলে তুমি কখনও উহার জন্য জানাযার সালাত পড়িবে না এবং উহার কবর-পার্শ্বে দাঁড়াইবে না; উহারা তো আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলকে অস্বীকার করিয়াছিল এবং পাপাচারী অবস্থায় উহাদের মৃত্যু হইয়াছে।
৮৫। সুতরাং উহাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাকে যেন বিমুগ্ধ না করে; আল্লাহ্ তো উহার দ্বারাই উহাদিগকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চাহেন; উহারা কাফির থাকা অবস্থায় উহাদের আত্মা দেহ-ত্যাগ করিবে।
৮৬। 'আল্লাহে ঈমান আন এবং রাসূলের সংগী হইয়া জিহাদ কর'-- এই মর্মে যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন উহাদের মধ্যে যাহাদের শক্তিসামর্থ্য আছে তাহারা তোমার নিকট অব্যাহতি চাহে এবং বলে, 'আমাদিগকে রেহাই দাও, যাহারা বসিয়া থাকে আমরা তাহাদের সংগেই থাকিব।
৮৭। উহারা অন্তঃপুরবাসিনীদের সংগে অবস্থান করাই পসন্দ করিয়াছে এবং উহাদের অন্তর মোহর করা হইয়াছে; ফলে উহারা বুঝিতে পারে না।
৮৮। কিন্তু রাসূল এবং যাহারা তাহার সংগে ঈমান আনিয়াছিল তাহারা নিজ সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করিয়াছে; উহাদের জন্যই কল্যাণ আছে এবং উহারাই সফলকাম।
৮৯। আল্লাহ্ উহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছেন জান্নাত, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে; ইহাই মহাসাফল্য।
৯০। মরুবাসীদের মধ্যে কিছু লোক অজুহাত পেশ করিতে আসিল যেন ইহাদিগকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং যাহারা বসিয়া রহিল তাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের সহিত মিথ্যা বলিয়াছিল, উহাদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছে তাহাদের মর্মস্তুদ শাস্তি হইবেই।
৯১। যাহারা দুর্বল, যাহারা পীড়িত এবং যাহারা অর্থ সাহায্যে অসমর্থ, তাহাদের কোন অপরাধ নাই, যদি আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতি তাহাদের অবিমিশ্র অনুরাগ থাকে। যাহারা সৎকর্মপরায়ণ তাহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন হেতু নাই; আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৯২। উহাদেরও কোন অপরাধ নাই যাহারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসিলে তুমি বলিয়াছিলে, 'তোমাদের জন্য কোন বাহন আমি পাইতেছি না'; উহারা অর্থব্যয়ে অসামর্থ্যজনিত দুঃখে অশ্রুবিগলিত নেত্রে ফিরিয়া গেল।
৯৩। যাহারা অভাবমুক্ত হইয়াও অব্যাহতি প্রার্থনা করিয়াছে, অবশ্যই উহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের হেতু আছে। উহারা অস্তঃপুরবাসিনীদের সহিত থাকাই পসন্দ করিয়াছিল; আল্লাহ্ উহাদের অন্তর মোহর করিয়া দিয়াছেন, ফলে উহারা বুঝিতে পারে না।
একাদশতম পারা
৯৪। তোমরা উহাদের নিকট ফিরিয়া আসিলে উহারা তোমাদের নিকট অজুহাত পেশ করিবে। বলিও, ‘অজুহাত পেশ করিও না, আমরা তোমাদিগকে কখনও বিশ্বাস করিব না; আল্লাহ আমাদিগকে তোমাদের খবর জানাইয়া দিয়াছেন এবং আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করিবেন এবং তাঁহার রাসূলও। অতঃপর যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা তাঁহার নিকট তোমাদিগকে প্রত্যাবর্তিত করা হইবে এবং তিনি, তোমরা যাহা করিতে, তাহা তোমাদিগকে জানাইয়া দিবেন।'
৯৫। তোমরা উহাদের নিকট ফিরিয়া আসিলে অচিরেই উহারা আল্লাহ্র শপথ করিবে যাহাতে তোমরা উহাদের উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা উহাদিগকে উপেক্ষা করিবে; উহারা অপবিত্র এবং উহাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জাহান্নাম উহাদের আবাসস্থল!
৯৬। উহারা তোমাদের নিকট শপথ করিবে যাহাতে তোমরা উহাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা উহাদের প্রতি তুষ্ট হইলেও আল্লাহ্ তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হইবেন না।
৯৭। কুফরী ও কপটতায় মরুবাসিগণ কঠোরতর; এবং আল্লাহ্ তাঁহার রাসূলের প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন, তাহার সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার যোগ্যতা ইহাদের অধিক। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
৯৮। মরুবাসীদের কেহ কেহ, যাহা তাহারা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে তাহা অর্থদণ্ড বলিয়া গণ্য করে এবং তোমাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের প্রতীক্ষা করে। মদ ভাগ্যচক্র উহাদেরই হউক। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৯৯। মরুবাসীদের কেহ কেহ আল্লাহে ও পরকালে ঈমান রাখে এবং যাহা ব্যয় করে তাহাকে আল্লাহ্র সান্নিধ্য ও রাসূলের দু'আ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই উহা তাহাদের জন্য আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের উপায়; আল্লাহ্ তাহাদিগকে নিজ রহমতে দাখিল করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১০০। মুহাজিরও আনসারদের মধ্যে যাহারা প্রথম অগ্রগামী এবং যাহারা নিষ্ঠার সহিত তাহাদের অনুসরণ করে আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাহাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন জান্নাত, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেথায় তাহারা চিরস্থায়ী হইবে। ইহা মহাসাফল্য।
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যাহারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাহাদের কেহ কেহ মুনাফিক এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেহ কেহ, উহারা কপটতায় সিদ্ধ। তুমি উহাদিগকে জান না; আমি উহাদিগকে জানি। আমি উহাদিগকে দুইবার শাস্তি দিব ও পরে উহারা প্রত্যাবর্তিত হইবে মহাশান্তির দিকে।
১০২। এবং অপর কতক লোকে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করিয়াছে, উহারা এক সৎকর্মের সহিত অপর অসৎকর্ম মিশ্রিত করিয়াছে; আল্লাহ্ হয়ত উহাদিগকে ক্ষমা করিবেন; নিশ্চঃই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১০৩। উহাদের সম্পদ হইতে ‘সদকা' গ্রহণ করিবে। ইহার দ্বাৱা তুমি উহাদিগকে পৰিত্র করিবে এবং পরিশোধিত করিবে। তুমি উহাদিগকে দু'আ করিবে। তোমার দু'আ তো উহাদের জন্য চিত্ত্ব স্বস্তিকর । আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
১০৪। উহারা কি জানে না যে, আল্লাহ তো তাহার বান্দাদের তাওৰা কবুল করেন এবং ‘সদকা’ গ্রহণ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু?
১০৫। এবং বল, "তোমরা কর্ম করিতে থাক: আল্লাহ্ তো তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করিবেন এবং তাহার রাসূল ও মু`মিনগণও করিবে এবং অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তীত হইবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতার নিকট, অতঃপর তিনি তোমরা যাহা করিতে তাহা তোমাদিগকে জানাইয়া দিবেন।"
১০৬। এবং আল্লাহ্র আদেশের প্রতীক্ষায় অপর কতকের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রহিল— তিনি উহাদিগকে শাস্তি দিবেন, না ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১০৭। এবং যাহারা মসজিদ নির্মাণ করিয়াছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতিপূর্বে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি সংগ্রাম করিয়াছে তাহার গোপন ঘাটিস্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, তাহারা অবশ্যই শপথ করিবে, 'আমরা সৎউদ্দেশ্যেই উহা করিয়াছি;' আল্লাহ সাক্ষী তাহারা তো মিথ্যাবাদী।
১০৮। তুমি ইহাতে কখনও দাড়াইও না: যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হইতেই স্থাপিত হইয়াছে তাক্ওয়ার উপর, উহাই তোমার সালাতের জন্য অধিক যোগ্য। তথায় এমন লোক আছে যাহাৱা পবিত্ৰতা অর্জন ভালবাসে এবং পৰিত্ৰতা অর্জনকারীদিগকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
১০৯। যে ব্যক্তি তাহার গৃহের ভিত্তি আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর স্থাপন করে সে উত্তম, না ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তাহার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করে এক খাতের ধসোনুখ কিনারায়, ফলে যাহা উহাকেসহ জাহান্নামের অগ্নিতে পতিত হয়; আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
১১০। উহাদের গৃহ যাহা উহারা নির্মাণ করিয়াছে তাহা উহাদের অন্তরে সন্দেহের কারণ হইয়া থাকিবে– যে পর্যন্ত না উহাদের অন্তর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
১১১। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট হইতে তাহাদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করিয়া লইয়াছেন, তাহাদের জন্য জান্নাত আছে ইহার বিনিময়ে। তাহারা আল্লাহ্র পথে যুন্ধ করে নিধন করে ও নিহত হয়। তাওরাত ইনজীল ও কুরআনে এই সম্পর্কে তাহাদের দঢ় প্রতিশ্রতি রহিয়াছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওর্দা করিয়াছ সেই সওদার জন্য আনন্দিত ও এবং উহাই তো মহাসাফল্য।
১১২। উহারা তাওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকৃ'কারী, সিজদাকারী, সৎকাজের নির্দেশ দাতা, অসৎকাজে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী; মুমিনদিগকে তুমি শুভ সংবাদ দাও।
১১৩। আত্মীয়-স্বজন হইলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মু মিনদের জন্য সংগত নহে যখন ইহা সস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে যে. নিশ্চিতই উহারা জাহান্নামী।
১১৪। ইব্রাহীম তাহার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিয়াছিল, তাহাকে ইহার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল বলিয়া; অতঃপর যথন ইহা তাহার নিকট সস্পষ্ট হইল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন ইব্রাহীম উহার সম্পর্ক ছিন্ন করিল। ইব্রাহীম তো কোমল হৃদয় ও সহনশীল।
১১৫। আল্লাহ এমন নহেন যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করিবার পর। উহাদিগকে বিভ্রাস্ত করিবেন–উহাদিগকে কী বিষযে় তাক্ওয়া অবলম্বন করিতে হইবে, ইহা সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত না করা পর্যস্ত; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষযে় সবিশেষ অবহিত।
১১৬। আকাশমগুলী ও পথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতা আল্লাহরই: তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মত্যু ঘটান। আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নাই, সাহায্যকারীও নাই।
১১৭। আল্লাহ্ অবশ্যই অনুগ্রহপরায়ণ হইলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি যাহারা তাহার অনুসরণ করিয়াছিল সংকটকালে- এমনকি যখন তাহাদের এক দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হইয়াছিল। পরে আল্লাহ্ উহাদিগকে ক্ষমা করিলেন; তিনি তো উহাদের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।
১১৮। এবং তিনি ক্ষমা করিলেন অপর তিনজনকেও, যাহাদের সম্পর্কে সিদ্ধাস্ত স্থগিত রাখা হইয়াছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিৰী বিস্তৃত হওয়া সত্বেও তাহাদের জন্য উহা সংকুচিত হইয়াছিল এবং তাহাদের জীবন তাহাদের জন্য দুর্বিসহ হইয়াছিল এবং তাহারা উপলব্ধি করিয়াছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নাই, তাঁহার দিকে প্রত্যাবর্তন ব্যতীত! পরে তিনি উহাদের তাওবা কবুল করিলেন যাহাতে উহারা তওবায় স্থীর থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল,
১১৯। হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অত্তর্ভুক্ত হও।
১২০। মদীনাবাসী ও এদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্যে সঙ্গত নয় আল্লাহর রাসূলের সহগামী না হয়ে পিছনে থেকে যাওয়া এবং তার জীবন অপেক্ষা তাদের নিজেদের জীবনকে প্রিয় জ্ঞান করা ; কারণ আল্লাহ্ র পথে তাদের তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধায় ক্লিষ্ট হওয়া আর কাফিরদের ক্রোধ উদ্রেক করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং শত্রুদের নিকট হতে কিছু প্রাপ্ত হওয়া তাদের সৎকর্মরূপে গণ্য হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।
১২১। এবং উহারা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ যাহাই ব্যয় করে এবং যে কোন প্রাস্তরই অতিক্রম করে তাহা উহাদের অনুকলে লিপিবদ্ধ হয়— যাহাতে উহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহা অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর পুরস্কার উহাদিগকে দিতে পারেন।
১২২। মু'মিনদের সকলের একসঙ্গে অভিযানে বাহির হওয়া সংগত নহে, উহাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বহিৰ্গত হয় না কেন, যাহাতে তাহারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞানানুশীলন করিতে পারে এবং উহাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করিত পারে, যখন তাহারা তাহাদের নিকট ফিরিয়া আসিবে যাহাতে তাহারা সতর্ক হয়।
১২৩। হে মু'মিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যাহারা তোমাদের নিকটবর্তী তাহাদের সহিত যুদ্ধ কর এবং উহারা যে তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখিতে পায়। জানিয়া রাখ, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সহিত আছেন।
১২৪। যখनনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয় তখন উহাদের কেহ কেহ ৰলে, 'ইহা তোমাদের মধ্যে কাহার ঈমান বৃদ্ধি করিল?’ যাহারা মু'মিন ইহা তাহাদেরই ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তাহারাই আনন্দিত হয়।
১২৫। এবং যাহাদের অন্তরে ব্যাধি আছে ইহা তাহাদের কলুষের সহিত আরও কলুষ যুক্ত করে এবং উহাদের মৃত্যু ঘটে কাফির অবস্থায়।
১২৬। উহারা কি দেখে না যে, ‘উহাদিগকে প্রতি বংসর একবার বা দুইবার বিপর্ষন্ত করা হয়। ইহার পরও উহারা তাওকা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না;
১২৭। এবং যখনই কোন সূরা অবত্তীর্ণ হয় তখন উহারা একে অপরের দিকে তাকায়। এবং ইশারায় জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমাদিগকে কেহ লক্ষ্য করিতেছে কি! অতঃপর উহারা সরিয়া পডে়। আল্লাহ্ উহাদের হৃদয়কে সত্যবিমুখ করিয়াছেন, কারণ উহারা এমন এক সম্প্রদায় যাহাদের বোধ শক্তি নাই।
১২৮। অৰশ্যই তোমাদের মধ্য হইতেই তোমাদের নিকট এক রাসূল আসিয়াছে তোমাদিগকে যাহা বিপন্ন করে উহা তাহার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র।
১২৯। অভঃপর উহারা যদি মুখ ফিরাইয়া লয় তবে তুমি বলিও, "আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। আমি তাঁহারই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি।"
০৯ সূরা আত-তাওবা; আয়াত; ১২৯/১২৯; সমাপ্ত;
১০- সূরা "আল-ইউনুস"
মোটঃ ১০৯ আয়াত; ১১ রুকৃ;'মক্কী;
"দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে"
১। আলিফ-নাম-রা। এইগুলি জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত।
২। মানুষের জন্য ইহা কি আশ্চার্যের বিষয় যে, আমি তাহাদেরই একজনের নিকট ওহী প্রেরন করিয়াছি এই মর্মে যে, মু’মিনদিগকে সুসংৰাদ দাও যে, তাহাদের জন্য তাহাদের প্রতিপালকের নিকট আছে উচ্চ মর্যাদা! কাফিরগণ বলে, 'এ তো এক সুস্পষ্ট জাদুকর।’
৩। তোমাদের প্রতিপানক আল্লাহ যিनि আকাশমগুলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি ‘আরশে সমাসীন হন। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন। তাঁহার অনুমতি লাভ না করিয়া সুপারিশ করিবার কেহ নাই। ইনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক; সুতরাং তাঁহার ‘ইবাদত কর। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করিবে না?
৪। তাহারই নিকট তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সৃষ্টিকে তিনিই প্রথম অস্তিত্বে আনেন,। অতঃপর উহার পুনরাবর্তন ঘটান যাহারা মু’মিন ও সংকর্মপরায়ণ তাহাদিগকে ন্যায়বিচারের সহিত কর্মফল প্রদানের জন্য। এবং যাহারা কাফির তাহারা কুফরী করিত বলিয়া, তাহাদের জন্য রহিয়াছে অত্যুষ্ণ পানীয় ও মর্মস্তূদ শাস্তি।
৫। তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্ন্দ্রকে জোতিষ্ময় করিয়াছেন এবং উহার মনযিল নিদ্দিষ্ট করিয়াছেন যাহাতে তোমরা বৎসর গণনা ও সমযে়র হিসাব আনিতে পার। আল্লাহ্ ইহা নিরর্থক সৃষ্টি করেন নাই। জ্ঞানী সম্প্রদাযে়র জন্য তিনি এই সমস্ত নিদৰ্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।
৬। নিশ্চয়ই দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে এবং আল্লাহ্ আকাশমগুলী ও পৃথিবীতে যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহাতে নিদর্শন রহিয়াছে মুত্তাকী সম্প্রদাযে়র জন্য।
৭। নিশ্চয়ই যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই সন্তুষ্ট এবং ইহাতেই পরিতৃপ্ত থাকে এবং যাহারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধে গাফিল;
৮। উহাদেরই আবাস অগ্নি উহাদের কৃতকর্মের জন্য।
৯। যাহারা মু'মিম ও সৎকর্মপরায়ণ তাহাদের প্রতিপালক তাহাদের ঈমান হেতু তাহাদিগকে পথনির্দেশ করিবেন; সুখদ কাননে তাহাদের পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হইবে।
১০। সেথায় তাহাদের ধ্বনি হইবেঃ ‘হে আল্লাহ্! তুমি মহান, পবিত্র; এবং সেথায় তাহাদের অভিবাদন হইবে, `সালাম’ এবং তাহাদের শেষ ধ্বনি হইবে এইঃ সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।
১১। আল্লাহ্ যদি মানুষের অকল্যাণ ত্বরান্বিত করিতেন, যেভাবে তাহারা তাহাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করিতে চাহে, তবে অবশ্যই তাহাদের মৃত্যু ঘটিত। সুতরাং যাহারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহাদিগকে আমি তাহাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইতে দেই।
১২। আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুইয়া, বসিয়া অথবা দাঁড়াইয়া আমাকে ডাকিয়া থাকে। অতঃপর আমি যখন তাহার দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করি, সে এমন পথ অবলম্বন করে, যেন তাহাকে যে দুঃখ-দৈন্য স্পৰ্শ করিয়াছিল তাহার জন্য সে আমাকে ডাকেই নাই। যাহারা সীমালংঘন করে তাহাদের কর্ম তাহাদের নিকট এইভাবে শোভনীয় করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
১৩। তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি তো ধ্বংস করিয়াছি যখন তাহারা সীমা অতিক্রম করিয়াছিল। স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাহাদের নিকট তাহাদের রাসূল আসিয়াছিল, কিন্তু তাহারা ঈমান 'আনিবার জন্য প্রস্তুত ছিল না; এইভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়া থাকি।
১৪। অতঃপর আমি উহাদের পর পৃথিবীতে তোমাদিগকে স্থলাভিষিক্ত করিয়াছি, তোমরা কিরূপ কর্ম কর তাহা দেখিবার জন্য।
১৫। যখন আমার আয়াত, যাহা সুস্পষ্ট, তাহাদের নিকট পাঠ করা হয় তখন যাহারা আমার, সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাহারা বলে; অন্য এক কোরান আনো ইহা ছাড়া, অথবা ইহাকে বদলাও। "বল নিজ হইতে ইহা বদলানো আামার কাজ নহে।" আমার প্রতি যাহ ওইী হয়, আমি কেবল তাহারই অনুসরণ আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করিলে অবশ্যই আমি মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি।
১৬। বল, আল্লাহ যদি চাইতেন আমি তোমাদের নিকট ইহা তিলাওয়াত করিতাম না এবং তিনিও তোমাদিগকে এ বিষয়ে অবহিত করিতেন না। আমি তো ইহার পূর্বে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অবস্থান করিয়াছি; তবুও কি তোমরা বুঝিতে পার না।
১৭। যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে অথবা আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করে তাহার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? নিশ্চয়ই অপরাধীগণ সফলকাম হয় না।
১৮। উহারা আল্লাহ ব্যতীত যাহার 'ইবাদত করে তাহা উহাদের ক্ষতিও করিতে পারে না, উপকারও করিতে পারে না। উহারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।' বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমগুলী ও পথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যাহা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র' এবং তাহারা যাহাকে শরীক করে তাহা হইতে উত্তম।
১৯। মানুষ ছিল একই উন্মত পরে উহারা মতভেদ সৃষ্টি করে। তোমার প্রতিপালকের পূর্ব-ঘোষণা না থাকিলে তাহারা যে বিষযে় মতভেদ ঘটায় তাহার মীমাংসা তো হইয়াই যাইত।
২০। উহারা বলে, ‘তাহার প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ বল, ‘অদৃশ্যের জ্ঞান তো কেবল আল্লাহ্রই আছে। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সহিত প্রতীক্ষা করিতেছি।
২১। আর দুঃখ-দৈন্য তাহাদিগকে স্পর্শ করিবার পর, যখন আমি মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদন করাই তাহারা তখনই আমার নিদর্শনের বিরুদ্ধে অপকৌশল করে। বল, আল্লাহ্ অপকৌশলের শাস্তিদানে দ্রুততর। তোমরা যে অপকৌশল কর তাহা অবশ্যই আমার ফিরিশতাগণ লিখিয়া রাখে।
২২। তিনিই তোমাদিগকে জ্বলে-স্থলে ভ্রমণ করান এবং তোমরা যখন নৌকারোহী হও এবং এইগুলি আরোহী লইয়া অনুকূল বাতাসে বহিয়া যায় এবং তাহারা উহাতে আনন্দিত হয়, অতঃপর এইগুলি বাত্যাহত এবং সৰ্বদিক হইতে তরংগাহত হয় এবং তাহারা উহা দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া পডি়য়াছে মনে করে, তখন তাহারা আনুগত্যের বিশুদ্ধচিত্ত হইয়া আল্লাহকে ডাকিয়া বলে; তুমি আমাদিগকে ইহা হইতে ত্রাণ করিলে আমরা অবশ্য কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হইব।
২৩। অতঃপর তিনি যখনই উহাদিগকে বিপদ মুক্ত করেন তখনই উহারা পৃথিবীতে অন্যায়তাবে যুলুম করিতে থাকে। হে মানুষ! তোমাদের যুলুম বস্তুত তোমাদের নিজেদের প্রতিই হইয়া থাকে; পার্থিব জীধমের সুখ ভোগ করিয়া লও, পরে আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদিগকে জানাইয়া দিব তোমরা যাহা করিতে।
২৪। বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এইরূপ; যেমন আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি যা দিয়ে ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন-সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় আর এর অধিকারিগণ মনে করে তা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিবসে বা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে ও আমি এটা এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও এর অস্তিত্ব ছিল না। এইভাবে আমি নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে।
২৫। আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।
২৬। যাহারা মঙ্গলকর কার্য করে ভাহাদের জন্য আছে মঙ্গল এবং আরও অধিক। কালিমা ও হীনতা উহাদের মুখমণ্ডলকে আচ্ছন্ন করিবে না। উহারাই জান্নাতের অধিৰাসী, সেথায় উহারা স্থায়ী হইবে।
২৭। যাহারা মন্দ কাজ করে তাহাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাহাদিগকে হীনতা আচ্ছন্ন করিবে; আল্লাহ হইতে উহাদিগকে রক্ষা করিবার কেহ নাই: উহাদের মুখমন্ডল যেন রাত্রির অন্ধকার আস্তরণে আচ্ছাদিত। উহারাই অগ্নির অধিবাসী, সেথায় উহারা স্থায়ী হইবে।
২৮। এবং যেদিন আমি উহাদের সকলকে যাহারা মুশরিক তাহাদিগকে বলিব, 'তোমরা এবং তোমরা যাহাদিগকে শরীক করিয়াছিলে তাহারা স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান কর; আমি উহাদিগকে পরম্পর হইতে পৃথক করিয়া দিব এবং উহারা যাহাদিগকে শরীক করিয়াহিল তাহারা বলিবে, 'তোমরা তো আমাদের ‘ইবাদত করিতে না।
২৯। আল্লাহই আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট যে, তোমরা আমাদের 'ইবাদত করিতে; আমরা এ বিষযে় গাফিল ছিলাম।
৩০। সেখানে তাহাদের প্রত্যেককে তাহার পূর্ব কৃতকর্ম পরীক্ষা করিয়া লইবে এবং উহাদিগকে উহাদের প্রকৃত অভিভাবক আল্লাহর নিকট ফিরাইয়া আনা হইবে এবং উহাদের উদ্ভাবিত মিথ্যা উহাদের নিকট হইতে অস্তরিত হইবে।
৩১। বল, ‘কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে বা শোনার ও দেখার কার কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃত হতে কে বের করে আর মৃতকে জীবিত হতে কে বের করে এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করে ? তখন তারা বলবে, ‘আল্লাহ্’! বল, ‘তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’
৩২। তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের সত্য প্রতিপালক। সত্য ত্যাগ করিবার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী থাকে? সুতরাং তোমরা কোথায় চালিত হইতেছ।
৩৩। এইভাবে 'সত্যত্যাগীদের সম্পর্কে, তোমার প্রতিপালকের এই বাণী সত্য প্রতিপন্ন হইয়াছে যে, তাহারা তো ঈমান আনিবে না।
৩৪। বল, ‘তোমরা যাহাদের শরীক কর তাহাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করে ও পরে উহার পুনরাবর্তন ঘটায়।' বল, 'আল্লাহ্ই সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন ও পরে উহার পুনরাবর্তন ঘটান, সুতরাং তোমরা কেমন করিয়া সত্য বিচ্যুত হইতেছ?
৩৫। বল, ‘তোমরা যাহাদিগকে শরীক কর তাহাদের মধ্যে কি এমন কেহ আছে, যে সত্যের পথ নির্দেশ করে?' বল, 'আল্লাহ্ই সত্যের পথ নির্দেশ করেন। যিনি সত্যের পথ নির্দেশ করেন তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার; না যাহাকে পথ না দেখাইলে পথ পায় না— সে? তোমাদের কী হইয়াছে? তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত করিয়া থাক?'
৩৬। উহাদের অধিকাংশ অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না, উহারা যাহা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।
৩৭। এই কুরআন আল্লাহ্ ব্যতীত অপর কাহারও রচনা নহে। পক্ষান্তরে ইহার পূর্বে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে ইহা তাহার সমর্থন এবং ইহা বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে, ইহা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে।
৩৮। তাহারা কি বলে, 'সে ইহা রচনা করিয়াছে?' বল, “তবে তোমরা ইহার অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অপর যাহাকে পার আহ্বান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।'
৩৯। পরন্তু উহারা যে বিষয়ের জ্ঞান আয়ত্ত করে নাই তাহা অস্বীকার করে এবং এখনও ইহার পরিণাম উহাদের নিকট উপস্থিত হয় নাই। এইভাবে উহাদের পূর্ববর্তীগণও মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল, সুতরাং দেখ, যালিমদের পরিণাম কী হইয়াছে!
৪০। উহাদের মধ্যে কেহ ইহাতে বিশ্বাস করে এবং কেহ ইহাতে বিশ্বাস করে না এবং তোমার প্রতিপালক অশাস্তি সৃষ্টিকারীদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
৪১। এবং তাহারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে তুমি বলিও, 'আমার কর্মের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কর্মের দায়িত্ব তোমাদের। আমি যাহা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যাহা কর সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত।'
৪২। উহাদের মধ্যে কেহ কেহ তোমার দিকে কান পাতিয়া রাখে। তুমি কি বধিরকে শুনাইবে, তাহারা না বুঝিলেও,
৪৩। উহাদের মধ্যে কেহ কেহ তোমার দিকে তাকাইয়া থাকে। তুমি কি অন্ধকে পথ দেখাইবে, তাহারা না দেখিলেও?
৪৪। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি কোন যুলুম করেন না, বরং মানুষই নিজেদের প্রতি যুলুম করিয়া থাকে।
৪৫। যে দিন তিনি উহাদিগকে একত্র করিবেন সেদিন উহাদের মনে হইবে যে, উহাদের অবস্থিতি দিবসের মুহূর্তকাল মাত্র ছিল; উহারা পরস্পরকে চিনিবে। আল্লাহ্র সাক্ষাত যাহারা অস্বীকার করিয়াছে তাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে এবং তাহারা সৎপথপ্রাপ্ত ছিল না।
৪৬। আমি উহাদিগকে যে ভীতি প্রদর্শন করিয়াছি তাহার কিছু যদি তোমাকে দেখাইয়াই দেই অথবা তোমার কাল পূর্ণ করিয়াই দেই, উহাদের প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট; এবং উহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সাক্ষী।
৪৭। প্রত্যেক জাতির জন্য আছে একজন রাসূল এবং যখন উহাদের রাসূল আসিয়াছে তখন ন্যায়বিচারের সহিত উহাদের মীমাংসা হইয়াছে এবং উহাদের প্রতি যুলুম করা হয় নাই।
৪৮। উহারা বলে, 'যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে 'বল এই প্রতিশ্রুতি কবে ফলিবে?
৪৯। বল, 'আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা করেন তাহা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের উপর আমার কোন অধিকার নাই।' প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাহাদের সময় আসিবে তখন তাহারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা জ্বরা করিতে পারিবে না।
৫০। বল, 'তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ, যদি তাঁহার শাস্তি তোমাদের উপর রজনীতে অথবা দিবসে আসিয়া পড়ে তবে অপরাধীরা উহার কী ত্বরান্বিত করিতে চাহে?
৫১। তোমরা কি ইহা ঘটিবার পর ইহা বিশ্বাস করিবে, এখন? তোমরা তো ইহাই ত্বরান্বিত করিতে চাহিয়াছিলে।
৫২। পরে যালিমদিগকে বলা হইবে, 'স্থায়ী শাস্তি আস্বাদন কর; তোমরা যাহা করিতে, তোমাদিগকে তাহারই প্রতিফল দেওয়া হইতেছে।'
৫৩। উহারা তোমার নিকট জানিতে চাহে, 'ইহা কি সত্য?' বল, ‘হাঁ, আমার প্রতিপালকের শপথ! ইহা অবশ্যই সত্য। এবং তোমরা ইহা ব্যর্থ করিতে পারিবে না।
৫৪। প্রত্যেক সীমালংঘনকারীই পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহা যদি তাহার হইত তবে সে মুক্তির বিনিময়ে উহা দিয়া দিত; এবং যখন উহারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে তখন মনস্তাপ গোপন করিবে। উহাদের মীমাংসা ন্যায়বিচারের সহিত করা হইবে এবং উহাদের প্রতি যুলুম করা হইবে না।
৫৬। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে।
৫৭। হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আসিয়াছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহার 'আরোগ্য এবং মু'মিনদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।
৫৮। বল, “ইহা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তাঁহার দয়ায়; সুতরাং ইহাতে উহারা আনন্দিত হউক।' উহারা যাহা পুঞ্জীভূত করে তাহা অপেক্ষা ইহা শ্ৰেয়।
৫৯। বল, ‘তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ 'আল্লাহ্ তোমাদের যে রিযক দিয়াছেন তোমরা যে তাহার কিছু হালাল ও কিছু 'হারাম, করিয়াছ; বল, 'আল্লাহ্ কি তোমাদিগকে ইহার অনুমতি দিয়াছেন, না তোমরা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করিতেছ?',
৬০। যাহারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, কিয়ামত দিবস সম্বন্ধে তাহাদের কী ধারণা? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু উহাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
৬১। তুমি যে কোন অবস্থায় থাক এবং তুমি তৎসম্পর্কে কুরআন হইতে যাহা তিলাওয়াত কর এবং তোমরা যে কোন কার্য কর, আমি তোমাদের পরিদর্শক যখন তোমরা উহাতে প্রবৃত্ত হও। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অণু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নহে এবং উহা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর অথবা বৃহত্তর কিছুই নাই যাহা সুস্পষ্ট কিতাবে নাই৷
৬২। জানিয়া রাখ! আল্লাহ্র বন্ধুদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।
৬৩। যাহারা ঈমান আনে এবং তাক্ওয়া অবলম্বন করে,
৬৪। তাহাদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখিরাতে, আল্লাহ্র বাণীর কোন পরিবর্তন নাই; উহাই মহাসাফল্য।
৬৫। উহাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। সমস্ত শক্তিই আল্লাহ্র; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৬৬। জানিয়া রাখ! যাহারা আকাশমণ্ডলে আছে এবং যাহারা পৃথিবীতে আছে তাহারা আল্লাহ্রই। যাহারা আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে শরীকরূপে ডাকে, তাহারা কিসের অনুসরণ করে? তাহারা তো শুধু অনুমানেরই অনুসরণ করে এবং তাহারা শুধু মিথ্যাই বলে।
৬৭। 'তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদের জন্য রাত্রি, যেন উহাতে তোমরা বিশ্রাম করিতে পার এবং দিবস দেখিবার জন্য। যে সম্প্রদায় কথা শোনে নিশ্চয়ই তাহাদের জন্য ইহাতে আছে নিদর্শন।
৬৮। তাহারা বলে, 'আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন।' তিনি মহান পবিত্র! তিনি অভাবমুক্ত ! যাহা কিছু আছে আকাশমণ্ডলে ও যাহা কিছু আছে পৃথিবীতে তাহা তাঁহারই। এ বিষয়ে তোমাদের নিকট কোন সনদ নাই। তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলিতেছ যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নাই?
৬৯। বল, ‘যাহারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করিবে তাহারা সফলকাম হইবে না।'
৭০। পৃথিবীতে উহাদের জন্য আছে কিছু সুখ-সম্ভোগ; পরে আমারই নিকট উহাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর কুফরী হেতু উহাদিগকে আমি কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাইব।
৭১। উহাদিগকে নূহ্-এর বৃত্তান্ত শোনাও। সে তাহার সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থিতি ও আল্লাহ্র নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান তোমাদের নিকট যদি দুঃসহ হয় তবে আমি তো আল্লাহ্র উপর নির্ভর করি। তোমরা যাহাদিগকে শরীক করিয়াছ তৎসহ তোমাদের কর্তব্য স্থির করিয়া লও, পরে যেন কর্তব্য বিষয়ে তোমাদের কোন সংশয় না থাকে। আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্ম নিষ্পন্ন করিয়া ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিও না।
৭২। অতঃপর তোমরা মুখ ফিরাইয়া লইলে লইতে পার, তোমাদের নিকট আমি তো কোন পারিশ্রমিক চাহি নাই, আমার পারিশ্রমিক আছে আল্লাহ্র নিকট, আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অস্তর্ভুক্ত হইতে আদিষ্ট হইয়াছি।'
৭৩। আর উহারা তাহাকে মিথ্যাবাদী বলে; অতঃপর তাহাকে ও তাহার সংগে যাহারা তরণীতে ছিল তাহাদিগকে আমি উদ্ধার করি এবং তাহাদিগকে স্থলাভিষিক্ত করি ও যাহারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহাদিগকে নিমজ্জিত করি। সুতরাং দেখ, যাহাদিগকে সতর্ক করা হইয়াছিল তাহাদের পরিণাম কী হইয়াছিল?
৭৪। অনন্তর তাহার পরে আমি রাসূলদিগকে প্রেরণ করি, তাহাদের সম্প্রদায়ের নিকট; তাহারা উহাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ আসিয়াছিল। কিন্তু উহারা পূর্বে যাহা প্রেত্যাখ্যান করিয়াছিল তাহার প্রতি ঈমান আনিবার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এইভাবে আমি সীমালংঘনকারীদের হৃদয় মোহর করিয়া দেই।
৭৫। পরে আমার নিদর্শনসহ মূসা ও হারুনকে ফিরআওন ও তাহার পারিষদবর্গের নিকট প্রেরণ করি। কিন্তু উহারা অহংকার করে এবং উহারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়।
৭৬। অতঃপর যখন উহাদের নিকট আমার নিকট হইতে সত্য আসিল তখন উহারা বলিল, “ইহা তো নিশ্চয়ই স্পষ্ট জাদু।'
৭৭। মুসা বলিল, 'সত্য যখন তোমাদের নিকট আসিল তখন তৎসম্পর্কে তোমরা এইরূপ বলিতেছ? ইহা কি জাদু? জাদুকরেরা তো সফলকাম হয় না।'
৭৮। উহারা বলিল, 'আমরা আমাদের পিতৃপুরুষগণকে যাহাতে পাইয়াছি তুমি কি তাহা হইতে আমাদিগকে বিচ্যুত করিবার জন্য আমাদের নিকট আসিয়াছ এবং যাহাতে দেশে তোমাদের দুইজনের প্রতিপত্তি হয়, এইজন্য? আমরা তোমাদিগে বিশ্বাসী নহি।'
৭৯। ফিরআওন বলিল, 'তোমরা আমার নিকট সকল সুদক্ষ জাদুকরকে লইয়া আইস।'
৮০। অতঃপর যখন জাদুকরেরা আসিল তখন উহাদিগকে মূসা বলিল, 'তোমাদের যাহা নিক্ষেপ করিবার, নিক্ষেপ কর।'
৮১। অতঃপর যখন তাহারা নিক্ষেপ করিল তখন মুসা বলিল, “তোমরা যাহা আনিয়াছ তাহা জাদু, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উহাকে অসার করিয়া দিবেন। আল্লাহ্ অবশ্যই অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কর্ম সার্থক করেন না।'
৮২। অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করিলেও আল্লাহ্ তাঁহার বাণী অনুযায়ী সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করিবেন।
৮৩। ফিরআওন ও তাহার পারিষদবর্গ নির্যাতন করিবে এই আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের এক দল ব্যতীত আর কেহ তাহার প্রতি ঈমান আনে নাই। বস্তুতঃ ফিরআওন ছিল দেশে পরাক্রমশালী এবং সে অবশ্যই সীমালংঘনকারিগণের অন্তর্ভুক্ত।
৮৪। মূসা বলিয়াছিল, 'হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহতে ঈমান আনিয়া থাক, যদি তোমরা আত্মসমর্পণকারী হও তবে তোমরা তাঁহারই উপর নির্ভর কর।'
৮৫। অতঃপর তাহারা বলিল, ' আমরা আল্লাহ্র উপর নির্ভর করিলাম। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে যালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করিও না;
৮৬। ‘এবং আমাদিগকে তোমার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় হইতে রক্ষা কর।'
৮৭। আমি মূসা ও তাহার ভ্রাতাকে প্রত্যাদেশ করিলাম, 'মিসরে তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য গৃহ স্থাপন কর এবং তোমাদের গৃহগুলিকে ইবাদতগৃহ কর, সালাত কায়েম কর এবং মু'মিনদিগকে সুসংবাদ দাও।'
৮৮। মুসা বলিল, 'হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি তো ফিরআওন ও তাহার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে শোভা ও সম্পদ দান করিয়াছ; যদ্দারা হে আমাদের প্রতিপালক। উহারা মানুষকে তোমার পথ হইতে ভ্রষ্ট করে। হে আমাদের প্রতিপালক। উহাদের সম্পদ বিনষ্ট কর, উহাদের হৃদয় কঠিন করিয়া দাও, উহারা তো মর্মস্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনিবে না।'
৮৯। তিনি বলিলেন, “তোমাদের দুইজনের দু'আ কবুল হইল, সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনও অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করিও না।'
৯০। আমি বনী ইস্রাঈলকে সমুদ্র পার করাইলাম এবং ফিরআওন ও তাহার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য সহকারে সীমালংঘন করিয়া তাহাদের পশ্চাদ্ধাবন করিল। পরিশেষে যখন সে নিন্মজ্জামান হইল তখন বলিল, 'আমি বিশ্বাস করিলাম বনী ইসরাঈল যাঁহাতে বিশ্বাস করে। নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।'
৯১। 'এখন! ইতিপূর্বে তো তুমি অমান্য করিয়াছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
৯২। 'আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করিব যাহাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হইয়া থাক। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে গাফিল।'
৯৩। আমি তো বনী ইসরাঈলকে উৎকৃষ্ট আবাসভূমিতে বসবাস করাইলাম এবং আমি উহাদিগকে উত্তম জীবনোপকরণ দিলাম, অতঃপর উহাদের নিকট জ্ঞান আসিলে উহারা বিভেদ সৃষ্টি করিল। উহারা যে বিষয়ে বিভেদ সৃষ্টি করিয়াছিল তোমার প্রতিপালক অবশ্যই তাহাদের মধ্যে কিয়ামতের দিনে উহার ফয়সালা করিয়া দিবেন।
৯৪। আমি তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি উহাতে যদি তুমি সন্দেহে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর; তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার নিকট সত্য অবশ্যই আসিয়াছে। তুমি কখনও সন্দিগ্ধচিত্তদের অন্তর্ভুক্ত হইও না,
৯৫। এবং যাহারা আল্লাহ্ নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করিয়াছে তুমি কখনও তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইও না— তাহা হইলে তুমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।
৯৬। নিশ্চয়ই যাহাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছে, তাহারা ঈমান আনিবে না,
৯৭। যদিও উহাদের নিকট প্রত্যেকটি নিদর্শন আসে যতক্ষণ না উহারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে।
৯৮। তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত কোন জনপদবাসী কেন এমন হইল না যাহারা ঈমান আনিত এবং তাহাদের ঈমান তাহাদের উপকারে আসিত। তাহারা যখন ঈমান আনিল তখন আমি 'তাহাদিগ হইতে পার্থিব জীবনের হীনতাজনক শাস্তি দূর করিলাম এবং উহাদিগকে কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করিতে দিলাম।
৯৯। তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করিলে 'পৃথিবীতে যাহারা আছে তাহারা সকলেই- অবশ্যই ঈমান আনিত; তবে কি তুমি মু'মিন হইবার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করিবে?
১০০। আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতীত ঈমান আনা কাহারও সাধ্য নহে এবং যাহারা অনুধাবন করে না আল্লাহ্ তাহাদিগকে কলুষলিপ্ত করেন।
১০১। বল, 'আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে তাহার প্রতি লক্ষ্য কর।' নিদর্শনাবলী ও ভীতি প্রদর্শন অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের উপকারে আসে না।
১০২। ইহারা কি ইহাদের পূর্বে যাহা ঘটিয়াছে উহার অনুরূপ ঘটনারই প্রতীক্ষা করে? বল, 'তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সহিত প্রতীক্ষা করিতেছি।'
১০৩। পরিশেষে আমি আমার রাসূলদিগকে এবং মু'মিনদিগকেও উদ্ধার করি। এইভাবে আমার দায়িত্ব মু'মিনদিগকে উদ্ধার করা।
১০৪। বল, 'হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের প্রতি সংশয়যুক্ত হও তবে জানিয়া রাখ, তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাহাদের ‘ইবাদত কর আমি উহাদের ইবাদত করি না। পরন্তু আমি ‘ইবাদত করি আল্লাহ্র যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং আমি মু'মিনদের অন্তর্ভুক্ত হইবার জন্য আদিষ্ট হইয়াছি,
১০৫। আর উহাও এই যে, 'তুমি একনিষ্ঠভাবে দীনে প্রতিষ্ঠিত হও এবং কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হইও না,
১০৬। 'এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও ডাকিবে না, যাহা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না, কারণ ইহা করিলে তখন তুমি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।'
১০৭। ‘এবং আল্লাহ্ তোমাকে ক্লেশ দিলে তিনি ব্যতীত ইহা মোচনকারী আর কেহ নাই' এবং আল্লাহ্ যদি তোমার মঙ্গল চাহেন তবে তাঁহার অনুগ্রহ রদ করিবার কেহ নাই। তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
১০৮। বল, 'হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট সত্য আসিয়াছে। সুতরাং যাহারা সৎপথ অবলম্বন করিবে তাহারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করিবে এবং যাহারা পথভ্রষ্ট হইবে তাহারা তো পথভ্রষ্ট হইবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং আমি তোমাদের কর্মবিধায়ক নহি।'
১০৯। তোমার প্রতি যে ওহী অবতীর্ণ হইয়াছে তুমি তাহার অনুসরণ কর এবং তুমি ধৈর্য ধারণ কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ্ ফয়সালা করেন এবং আল্লাহ্ই সর্বোত্তম বিধানকর্তা।
সূরা১০ আল-ইউনুস আয়াত নং- ১০৯/১০৯ সমাপ্ত