Skip to main content

ইসালামী শিক্ষার সে কাল আর এ কাল !

 ইসলামের প্রথম দিকের ধর্মীয় ‍শিক্ষার প্রথম পর্যায়ঃ-

মাদ্রাসার প্রাথমিক ইতিহাসঃ-

মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রথম প্রতিষ্ঠান ছিল সাফা পর্বতের পাদদেশে যায়েদ-বিন-আরকামের বাড়িতে - যেখানে স্বয়ং রসুল (স:) ছিলেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী ছিলেন তাঁর কয়েকজন অনুসারী নওমুসলিম। হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববি-র পূর্বপাশে স্থাপিত হয় মাদ্রাসা আহলে সুফ্‌ফা। শিক্ষক ছিলেন উবাদা-ইবন সামিত আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন আবু হুরাইরা , মুয়াজ-ইবন জবল, গিফারি প্রমুখ। সেকালের মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে ছিল, কোরআন, হাদিস, ফারায়েজ, প্রাথমিক চিকিৎসা, বংশ শাস্ত্র, তাজবিদ ইত্যাদি। এছাড়া অশ্ব চালনা, যুদ্ধবিদ্যা, হস্তলিপি বিদ্যা, শরীর চর্চা ইত্যাদিও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর পর নবুয়তের প্রথম দিন থেকে উমাইয়া বংশের শাসনামলের প্রথম ভাগ পর্যন্ত প্রায় একশ বছর সময়কালকে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রথম পর্যায় ধরা হয়।


রেগিস্তান, সমরকন্দে শের-দর মাদরাসাঃ-

ইসলামের মধ্যযুগে কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় কে বলা হত মকতব, যা অন্তত ১০ম শতাব্দি থেকে বলা হয়ে এসেছে। মাদরাসার মতই (যাকে অবহিত করা হয় উচ্চতর শিক্ষা বলে), মকতবও সাধারণত পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত কোন মসজিদের সাথে সংযুক্ত থাকত। একাদশ শতাব্দিতে, পারস্যের বিখ্যাত ইসলামী দার্শনিক ও পণ্ডিত ইবনে সিনা (যিনি পাশ্চাত্যে Avicenna নামে পরিচিত ), তাঁর এক বইয়ে, মকতবসমূহে কর্মরত শিক্ষকদের নির্দেশনা হিসাবে মকতব সম্পর্কে "শিশুদের প্রশিক্ষণ ও লালনপালনের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা" নামে একটি অধ্যায় লিখেছেন , । তিনি লিখেছেন যে শিশুদেরকে ব্যক্তিগত শিক্ষক দিয়ে আলাদা আলাদা শিক্ষা দেয়ার পরিবর্তে শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষা দিলে তারা তুলনামূলক ভাল শিক্ষালাভ করে।আর এখানে বিষয়টি এমন কেন সে সম্পর্কে ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতা ও পারস্পরিক অনুসরণ করে শিক্ষালাভের মূল্যের পাশাপাশি শ্রেণীবদ্ধ আলোচনা ও বিতর্কের বিভিন্ন উপকার উল্লেখপূর্বক বেশ কিছু কারণ দেখিয়েছেন।ইবনে সিনামকতবের শিক্ষার দুটি স্তরের শিক্ষার পাঠ্যক্রম বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে মকতবের পাঠ্যসূচীর ব্যাখ্যা দেন।


প্রাথমিক শিক্ষাঃ-

ইবেন সিনা লিখেছেন যে শিশুদেরকে ৬ বছর বয়স থেকেই মকতবে পাঠানো ও ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া উচিত। এসময়ে, তারা যেন কুরআন, হাদীস, ইসলামী দর্শন, ভাষা, সাহিত্য, ইসলামী আচারব্যবহার, ও ব্যবহারিক (অর্থাৎ,যেকোন প্রকারের প্রায়োগিক ) দক্ষতা আয়ত্ত করে.[২]


মাধ্যমিক শিক্ষাঃ-

ইবনে সিনা মকতবভিত্তিক শিক্ষার দ্বিতীয় স্তরকে এমন একটি বিশেষ যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন যে সেক্ষেত্রে ছাত্রদের কর্তব্য হল,কোন সামাজিক মর্যাদার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে প্রায়োগিক যোগ্যতা অর্জন করা।তিনি লিখেছেন যে চৌদ্দ-ঊর্ধ ছেলেমেয়েদেরকে তাদের নিজ ইচ্ছামত কোন বিষয় বেছে নিয়ে সেবিষয়ে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে দেয়া উচিত যাতে সে আগ্রহবোধ করে, তা হতে পারে ব্যবহারিক দক্ষতা, সাহিত্য, দ্বীনের দাওয়াত, জ্যামিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কারূকর্ম অথবা অন্য যেকোন এমন বিষয় বা বৃত্তি যা অনুযায়ী সে ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে তুলতে চায়। তিনি আরো লিখেন যে এটা তাদের পরিবর্তনশীল সময় আর ছাত্রছাত্রীদের বেড়ে ওঠার বয়স অনুযায়ী তাদের জন্য নমনীয়তা রাখা প্রয়োজন, যার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মানসিক বিকাশ ও তাদের নির্বাচিত বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়।


ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মকতব বা ফোরকানিয়া মাদ্রাসাসমূহ দিল্লি, লখনৌ, মাদ্রাজ, ঢাকা ইত্যাদি প্রধান প্রধান শহর ও বড় বড় গ্রামীণ জনপদে গড়ে ওঠে। সর্বপ্রথম মাদ্রাসার ইমারত নির্মিত হয়েছিল মুলতানে। এর নির্মাতা ছিলেন নাসির উদ্দীন কুবজা এবং এর প্রধান ছিলেন মাওলানা কুতুবুদ্দীন কাশানি। শেখ বাহাউদ্দিন যাকারিয়া মুলতানি ৫৭৮ হিজরি সালে এই মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণ করন। সুলতানী আমলে মাদ্রাসার পাঠক্রমে ছিল আরবি, নাহু (বাগবিধি), সরফ (রূপতত্ব), বালাগাত (অলঙ্কারশাস্ত্র), মানতিক (যুক্তিবিদ্যা), কালাম (জ্ঞানতত্ব), তাসাউফ (অতীন্দ্রিয়বাদ), সাহিত্য, ফিকহ (আইনশাস্ত্র), এবং দর্শন।


বাংলায় মাদ্রাসাঃ-

বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাজধানী গৌড়ে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। সুলতান গিয়াসুদ্দীন একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ১২১২ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তীকালে তাঁর বংশধর সুলতান দ্বিতীয় গিয়াসুদ্দীনও একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। মাদ্রাসা দুটির নাম যথাক্রমে লাখনুতী ও গৌড় মাদ্রাসা। হোসেন শাহ ও তাঁর পুত্র নুসরত শাহ গৌড়ে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এসব মাদ্রাসার অনেকগুলির ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান।


১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে সুবাহদার শায়েস্তা খানের উদ্যোগে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মিত হয়। নবাব জাফর মোরশেদ আলি খান স্থাপন করেন মুর্শিদাবাদ মাদ্রাসা। যার ভবনটি কালের সাক্ষী হিসেবে এখনও অটুট রয়েছে। ১১৭৮ হিজরি সালে জমিদার মুন্সি সদরুদ্দীন আল মুসাভী বুহার গ্রামে বর্ধমান মাদ্রাসা স্থাপন করেন এবং লখনৌ থেকে আগত মৌলানা আব্দুল আলি বাহারুল উলুমকে শিক্ষক নিযুক্ত করেন। নওয়াবী আমলে মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য সরকার এগুলির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ লাখেরাজ জমি বরাদ্দ দিত। মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য সরকার ভাতা ও বৃত্তি দিত।


ভারতীয় উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বা ধর্মীয় শিক্ষার দ্বিতীয় প্রহরঃ-- 

আজ থেকে প্রায় তিন শতাব্দী আগে আমাদের এই উপমহাদেশসহ প্রায় পুরো মুসলিম দুনিয়া পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টান জাতিগোষ্ঠীর উপনিবেশে পরিণত হয়। তারা এসব ভূখণ্ডে নিজেদের তৈরি বিভিন্ন ব্যবস্থা দিয়ে শাসন ও শোষণ করতে থাকে। পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভূখণ্ড ভারতবর্ষ দুর্ভিক্ষপীড়িত, হতদরিদ্র ও ভিক্ষুকের দেশে পরিণত হয়।

.এদেশের স্বাধীনতাকামী মুসলিম জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে একটি পদানত দাসজাতি করে রাখার পরিকল্পনা থেকে তারা আমাদের দেশসহ সমগ্র মুসলিম দুনিয়াতেই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেখানে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ ১৪৬ বছর তাদের তৈরি সিলেবাস ও কারিকুলাম ব্যবহার করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একটি বিকৃত বিপরীতমুখী ইসলাম শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

সেখানে কোরান কে পাশ কাটিয়ে হাদিসের প্রধান্য দিয়ে, ইসলামের জাতীয় জীবনের বিষয়গুলোকে গুরুত্বহীন বিষয়ে পরিণত করে, ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি মাসলা-মাসায়েল, দোয়া-কালাম, আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো নিয়ে বিগত এক হাজার বছর ধরে তর্ক-বিতর্ক করা হয়েছে, জাতির মধ্যে মাজহাব ও ফেরকাগত বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে সেগুলো এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদর মনে মগজে গেড়ে দেওয়া হল, যাতে তারা আর কোনোদিনও ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। এভাবে ব্রিটিশরা সর্বত্র ডিভাইড এন্ড রুল নীতির বাস্তবায়ন ঘটালো এবং নিজেদের শাসনক্ষমতাকে নিরাপদ করল।

সে সময়ে ইংরেজ শাসনামলেই এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা একটি নতুন মোড় দেয়া হয়, মাদ্রাসাগুলির নামে মুগল সরকারের বরাদ্দকৃত লাখেরাজ জমি বাজেয়াপ্ত করে। ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অনেক মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলার গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের জন্য কিছুসংখ্যক মুসলিম আইন অফিসার তৈরি করা। তবে সরকারের সমর্থন ও অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবার কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীতে মাদ্রাসা শিক্ষার বিকাশ গতিরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বাগদাদের নিজামুল মূলকের যুগে হাসান বীন সাবা নামক এক ইহুদী কতৃক কাওমী মাদ্রাসা প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন!!

এসব মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে এলো একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ যারা নিজেদেরকে আলেম বলে বিশ্বাস করে ও পরিচয় দেয়। খ্রিষ্টানদের তৈরি করা বিকৃত ইসলামের প্রভাবে এক আলেম আরেকজন আলেমকে দেখতে পারেন না, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলে বসে গালিগালাজ পর্যন্ত করেন, আরেক মতাদর্শের অনুসারীদের উপর হামলার ফতোয়া ও উষ্কানি দেন, অপ্রয়োজনীয় গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে গলার রগ ফুলিয়ে বাহাস করেন। এসবের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মুসলিম জাতি আরো নতুন নতুন ভাগে বিভক্ত হয়ে চলেছে।

কলকাতা মাদ্রাসা বাংলায় মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন ধারা প্রবর্তন করে। এই মাদ্রাসার প্রথম প্রধান মৌলভি বাহরুল উলুম মোল্লা মজদুদ্দীন দরসে নিজামির পাঠক্রম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সেই আদলে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেন। হেস্টিংস কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে তিনি এই পাঠক্রমে ইসলামী আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেন। এখানে অত্যান্ত সুকৌশলে ইসলামী শিক্ষাকে কুলশিত করে তা অটুট রাখা হয়, যার ফল আজ ভারত বর্ষের মুসলিম গন আজ হারে হারে টের পাচ্ছে।

 

মাদ্রাসার ধরণঃ-

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত মাদ্রাসার প্রকরণগুলো হলঃ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা, আলিম মাদ্রাসা,ফাজিল মাদ্রাসা, কামিল মাদ্রাসা, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ও কওমি মাদ্রাসা।


বাংলাদেশের মাদ্রাসার ধরণঃ-

বাংলার অধিকাংশ মাদ্রাসা দরসে নিজামির আদলে শিক্ষাদান পরিচালনা করে। এই ব্যবস্থা ১৯৭০ দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দরসে নিজামি পাঠক্রম অনুযায়ী একজন ছাত্রকে ১৭/১৮ বছর বয়সেই আরবি ও ফার্সি ভাষায় লিখিত নির্বাচিত ৯৯টি গ্রন্থের অন্তত একটি পড়ার ও অনুধাবনের যোগ্যতা অর্জন করতে হতো। ধর্মীয় পাঠ্যক্রম ছাড়া এই পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইউনানি চিকিৎসা বিদ্যা, কুটির শিল্প ও কারিগরি প্রশিক্ষণ। দরসে নিজামির মোট শিক্ষাকাল ৯ বছর।


বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ৩ শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা যায়: প্রাচীন কাঠামোভিত্তিক দরসে নিজামি, পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত পাঠক্রম-ভিত্তিক দরসে নিজামি, এবং আলিয়া নেসাব। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর মাদ্রাসাসমূহকে কওমী বা বেসরকারি মাদ্রাসা বলা হয় ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি শিক্ষা বোর্ড এসবের কার্যক্রম সমম্বয় করে। ১৯৯৮ পর্যন্ত সারাদেশে ২,০৪৩টি মাদ্রাসা কওমী মাদ্রাসা এই বোর্ডে নিবন্ধিত হয়েছে। ১৯৯৮ সনে অনুষ্ঠিত ২১তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় এসব মাদ্রাসার ৭টি স্তরের মোট ৭,৭১১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়, এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৫,৩৪৮ জন। স্তর ৭টি ছিল তাকমিল (স্নাতকোত্তর), ফজিলত (স্নাতক), সানুবিয়্যা উলায়া (উচ্চ মাধ্যমিক), মুতাওয়াস ফিতাহ (মাধ্যমিক), ইবতেদায়্যা (প্রাথমিক) এবং ইলমুল কিরাত ওয়াত তাজদিদ (উচ্চতর কুরআন পাঠ) ও হিফজুল কুরআন।


বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রণীত শর্ত পূরণ করে এমন সকল ধরনের অনুমোদিত মাদ্রাসা সরকারি অনুদান পায়। সরকারি অনুদানপুষ্ট অধিকাংশ মাদ্রাসাতেই এখন বাংলা, ইংরেজি এবং বিজ্ঞান শিক্ষা প্রচলিত আছে। মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে অনুমোদিত ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত স্নাতকরা উচ্চতর শিক্ষার জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি হতে পারে। ২০০২ সালে বাংলাদেশে ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ছিল ১৪,৯৮৭টি, দাখিল ৬,৪০২টি, আলিম ১,৩৭৬টি, ফাজিল ১,০৫০টি এবং কামিল ১৭২টি। এছাড়া কওমী মাদ্রাসা ছিল প্রায় ৩,০০০টি।


ভারতের মাদ্রাসার ধরনঃ-

ভারতের দেওবন্দে ১২৮০ হিজরি সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম মাদ্রাসার আদলে স্থাপিত মাদ্রাসাসমূহে দরসে নিজামির প্রাচীন কাঠামো এখনও অটুট রয়েছে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন মাওলানা কাসেম নানুতবী। বাংলাদেশের অনেক শহর ও গ্রামে দেওবন্দ মাদ্রাসার আদলে মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসাকে কওমী মাদ্রাসা বলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাঁদা, সদকা, যাকাত ইত্যাদি দ্বারা এসব মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। নুরানী বা ফোরকানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অধিকাংশই এসব মাদ্রাসার ছাত্র।


মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে ঔপনিবেশিক শাসকবর্গ ১৮৯০-এর দশকে নতুন ধরনের মাদ্রাসা চালু করে। নিউ স্কীম মাদ্রাসা নামে অভিহিত এসব মাদ্রাসার পাঠক্রমে সকল ইসলামি বিষয়ের সঙ্গে ইংরেজি ভাষাকেও বাধ্যতামূলক করা হয়। সকল নিউ স্কীম মাদ্রাসাকে সরকারি সাহায্যভুক্ত করা হয়। জুনিয়র ও সিনিয়র নামে দুধরনের নিউ স্কীম মাদ্রাসা প্রবর্তিত হয়। জুনিয়র মাদ্রাসায় পড়ানো হত পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আর সিনিয়র মাদ্রাসা ছিল মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য। সরকারি চাকুরি পেতে আগ্রহী মুসলমান শিক্ষার্থীরা নিউ স্কীম মাদ্রাসায় পড়তে বিশেষ আগ্রহী ছিল।

কিন্ত অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়, সেই ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা তাদের সেলেবাস মোতাবেক আজও চলছে। ফলে এখান হতে যা প্রত্যাশা ছিল তাই প্রাপ্তি ঘটছে! 



টিকাঃ

মাদ্রাসায় আপনার সন্তান কে ভর্তির পুর্বে ভেবে দেখবেনঃ- 

আলিয়া মাদ্রাসাঃ- 1780 সালে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা  আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।


কওমি মাদ্রাসাঃ- 1854 সালে বৃটিষ শাসনামলে কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়। 


ক্রুসেড জয়ের পর ইউরোপিয়নরা ইহুদীরা গভীর ষড়যন্ত্র করে মাদ্রাসা তার সিলেবাস তৈরি করেন। ইদুর কে মারতে হলে ইদুরের খাবারের সাথে বিষ মিশাতে হয়। সেই একই কৌশলে মুসলমানদের ধর্মীয় প্রধান গ্রন্থ গুলোতে লক্ষ লক্ষ জাল হাদীস প্রবেশ করানো হয় ও এমন শিক্ষা ব‍্যাবস্থা তৈরি করা হয় যে শিক্ষা দিয়ে ধর্মিয় জ্ঞান ও সৃষ্টি কর্তার সন্তুষ্টি কোনটাই পাবেনা এবং  বিশ্ব পরিচালনায় তাদের  এই শিক্ষা  পিয়নের কাজ করার যোগ্য করে তুলবেনা।


হযরত মোহাম্মদ (সঃ) মাদ্রাসাঃ- 

প্রথম মাদ্রাসা সাফা পর্বতের পাদ দেশে যায়দ বিন আরকামের বাড়িতে।

দ্বিতীয় মাদ্রাসা মসজিদে নববির পুর্ব পাশে নাম আহলে  সুফফা।

সিলেবাস হযরত মোহাম্মদ (সঃ)ঃ- 

1 কোরআন শিক্ষা ।

2 প্রাথমিক চিকিৎসা শিক্ষা ও সাধারণ জ্ঞান বিজ্ঞান।

3 বংশ শাস্ত্র ।

4 ঘোড়া চালানো ও যুদ্ধ বিদ‍্যা।

5 হস্তলিপি, শরীর চর্চা।

এইবার দেখুন হযরত মোহাম্মদ (সঃ) মাদ্রাসার সাথে ইহুদি  ও ইংরেজদের তৈরি  আলিয়া  ও কওমি মাদ্রাসার পার্থক্য দেখুন। বিবেচনা আপনার ধন্যবাদ।

####################


Popular posts from this blog

-ঃআল-কুরআনুল করীমঃ-

বিস‌মিল্লা‌হির রহমনুর রহিম -ঃআল-কুরআনুল করীমঃ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বাংলা তরজমা ও সম্পাদনাঃ- শামসুল ‘উলামা বেলায়েত হোসেন  মাওলানা আবদুর রহমান কাশগরী  মুহম্মদ মাহমূদ মুস্তফা শা'বান  শামসুল উলামা মুহম্মদ আমীন 'আব্বাসী  ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্  প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ডক্টর সিরাজুল হক ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ অধ্যক্ষ এ.এইচ. এম. আবদুল কুদ্দুস  মাওলানা মীর আবদুস সালাম অধ্যাপক শাহেদ আলী মাওলানা ফজলুল করীম  এ.এফ.এম. আবদুল হক ফরিদী  আহমদ হুসাইন  মাওলানা আলাউদ্দীন আল-আজহারী  মাওলানা মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ্  হাফেজ মঈনুল ইসলাম আবুল হাশিম -ঃ৩য়সংস্করণের সম্পাদকমণ্ডলীঃ- ডক্টর সিরাজুল হক ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ জনাব আ.ফ.ম. আবদুল হক ফরিদী ডক্টর এ.কে.এম. আইউব আলী  ডক্টর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান ডক্টর এম. শমশের আলী জনাব দাউদ-উজ-জামান চৌধুরী জনাব আহমদ হুসাইন জনাব মাওলানা আতাউর রহমান খান জনাব মাওলানা ওবায়দুল হক জনাব আ.ত.ম. মুছলেহ্ উদ্দীন জনাব মোহাম্মদ ফেরদাউস খান জনাব মাওলানা রিজাউল করীম ইসলামাবাদী জনাব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ জনাব এ.এফ.এম. আবদুর রহমান অধ্যাপক শাহেদ আলী  মুফতী মুহাম্মদ

Whey The Government Sector Are So Poor !

Add caption Whey The Government Sector Are So Poor ! ভাল ছাত্ররা কেন পুুলিশ বা আর্মীতে চাকুরী পায়না !! কথা সত্য ! স্কুলের প্রথম ব্রেঞ্চের ছাত্ররা খুব কমই সরকারী চাকুরী পায় !! কেননা মেধার জোর থাকলেও তাদের শুপারিশের জোর থাকেনা ! তাইতো সরকারী সেক্টরে তাদের চাকুরীও হয়না ! হলেও হয় কোন প্রায়ভেট ফোর্মে অথবা প্রবসে ! আর পুলিশের চাকুরী হয় সব সময় পেছনের ব্রেঞ্চের ছাত্রের ! কারন ওদের মেধা না থাকলেও খুটির জোর আছে !! তাছাড়া ও যখন পুলিশের চাকুরী হয় তখন ভাল ছাত্র, মেধাবীরা পড়া লেখায় ব্যস্ত থাকে, নিজেকে বিকশিত করে, আগামীতে বড় কোন অফিসার হবার !! কিন্তু ! তাদের পড়ালেখা যখন শেষ, তখন পুলিশের কোটাও শেষ ! আর্মি এর কোটা শেষ ! সরকারী চাকরীর কোটাতো রিজাভ আছে, কোন নেতা, বড় বাবু, তথা , এলিট বা ধনীক মহাশয়ের অযোগ্য পুত্র বা নাতি বা ভাতিজা অথবা ভাগ্নী ইত্যাদির জন্য ! তাইতো মেধাবী মধ্যবিত্ত ছেলেটির আর সরকারী দপ্তরে আসা হয়না ! যেতে হয় প্রায়ভেট ফোর্মে ! ফলা ফল প্রায়ভেট সেক্টর লাভ করলেও সরকারী সেক্টর সবসময় লোকসান গুনতেই থাকে !! কেননা মেধা তো মেধাই তাইনা !! প্রত্যেকটা সেক্টরের ‍দিকে তাকান, সম অবস্তা দেখবেন !

বিষয় : নোয়াখালীর সুবর্ণচর ট্রাজেডি

নোয়াখালীর সুবর্ণচর ট্রাজেডি   এই সেই ধর্ষক  "ধর্ষকের পরিচয় ধর্ষকই"   ধর্ষকের কোন দল নাই..  সে কারো আত্মীয় নয়  কারো ভাই বা সন্তন নয় তার একটাই পরিচয় ; সে ধর্ষক !! তাই আমি চাই; ধর্ষনকারীর কঠিন  শাস্তি হোক. . আমি সামগ্রিক ভাবে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দুই সন্তানের জননীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ্য ও কঠিন শাস্তি দাবী করছি। অন্যদিকে দুঃখজনক ভাবে এই ঘটনাকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংস্রতায় রুপ প্রদানে ব্যস্ত মাহফুজ আনাম, ডেইলিস্টার, প্রথম আলো, যুগান্তর সহ একটা পক্ষ!গৃহবধূর গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা সত্য তবে এটার সাথে আ'লীগের ভোট দেওয়া না দেওয়ার বিষয় জড়িত নয়। গৃহবধূর স্বামী জানান, রোববার দুপুরের দিকে তার স্ত্রী স্থানীয় ভোটকেন্দ্র চর জুবলীর ১৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান। তিনি ভোট দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করে এবং উত্ত্যক্ত করে। তার স্ত্রী এর প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন। এ অবস্থায় রুহুল আমিন ও তার লোকজন স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রোববার গভীর রাতে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একদল সন্ত্রাসী দরজা ভেঙ