Skip to main content

কাবায় মূর্তী এলো যে ভাবে !

 কাবায় মূর্তী এলো যে ভাবে !

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম

মক্কার বাসিন্দারা মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম আঃ এর পুত্র হযরত  ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিল এবং তারা জন্মগত ভাবেই তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাস আল্লাহর গৃহ বা বায়তুল্লাহ বলে বিশ্বাস করত এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করত। তারা এখানে নিয়মিতভাবে তাওয়াফ, সাঈ করতো।  বহিরাগত হাজীদের নিরাপত্তা ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কোন নবী না আসায় শয়তানী প্ররোচনায় অনেকে পথভ্রষ্ট হয়ে যায় এবং এক সময় তাদের মাধ্যমেই মূর্তিপূজার শিরকের প্রচলন হয়। 

  জাহিলাতে ও  মক্কাবাসী সবারই অভ্যাস ছিল, মক্কার বাইরে যাওয়ার আগে ও ফেরত এলে কাবা তাওয়াফ করা, কাবা থেকে তারা বেশিদিন দূরে থাকতে পছন্দ করত না; যদি থাকতে হতো, তাহলে তারা কাবা প্রাঙ্গণের কোনো পাথরকে পবিত্র জ্ঞান করে নিয়ে যেত, এবং সফরে থাকাকালীন অভ্যাসবশত সেই পাথরকে মাটিতে রেখে সেটাকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ সেরে নিত; কয়েক জেনারেশনের মাঝেই বিভিন্ন ব্যবসায়িক সফর ও দেশ বিদেশের নানা জাতির সংস্পর্শে এসে সেই রীতিটা দেবদেবীর উপাসনা দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করলো; এছাড়া, অন্যান্য জাতির দেবদেবী মূর্তি তারা নিয়ে আসতে লাগলো, এবং সেটিকে আরবি নাম দিয়ে উপাসনা করতে লাগলো। গ্রিক ও মিসরীয়দের দেবদেবীদের যেমন একেক জায়গায় একেকজনের মন্দির থাকত ঠিক তেমনই এই আরব দেব-দেবীদের একেক জনের মন্দির একেক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু কাবাঘরে সেই মূর্তিগুলোর একটা কপি রাখতে হতো আর কি; তাদের সিস্টেমটা তো বুঝতেই পারছেন, আল্লাহ হলেন স্রষ্টা, তার জন্য কাবাঘর- আর তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যেসব দেবদেবী তার হয়ে কাজ করে, তাদের মূর্তি কাবা প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে; এ ভাবেই ধীরে ধীরে কবাতে ৩৬০ টি দেবদেবীর মূর্ত ীতে ছেয়ে যায়। 

 আরবরা আল্লাহ একত্ববাদ তারা ঠিকই মান‌তো ত‌বে তারা ম‌নে কর‌তো আল্লাহ সরাস‌রি কোন কাজ ক‌রেন না। বি‌ভিন্ন রদব দে‌বির মাধ‌্যমে বি‌ভিন্ন ধর‌নের কাজ ক‌রে থা‌কেন। তাই আল্লার সা‌থে মধ‌্যস্থতাকারী হিসা‌বে এই সকল দ্তোর ও ইবাদত কর‌তে হ‌বে।   তাই তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে না চেয়ে এই সব দেবদেবীর মাধ্যমে  চাইত, এজন্য তাদের মধ্যস্ততা তাদের কাছে জরুরি ছিল। তা‌দের ম‌তে, কাবাঘর ডে‌লি‌কে‌টেড শুধুমাত্র আল্লাহর জন‌্য। আর তাই এ সব বি‌ভিন্ন দেব দেবীর মু‌র্তির জন‌্য হেজা‌জের মরু ভূ‌মি‌তে বি‌ভিন্ন স্থা‌নে তা‌দের না‌মে নিজ নিজ ডে‌লি‌কে‌টেড ম‌ন্দির তৈরী ক‌রে সেখা‌নে তা‌দের রে‌খে দিত। আর তার কিছু ছোট ক‌পি বা‌নি‌য়ে তা তা‌দের ঘ‌রে রে‌খে ‌দিত ও তা‌দের ইবাদত কর‌তো। আবার কিছু মূর্তী এ‌নে তারা কাবা ঘ‌রে ও এর চত্ব‌রে রে‌খে দিত। বি‌ভিন্ন এলাকা হ‌তে যখন লোকজন হজ্ব কর‌তে মক্কায় আস‌তো, তখন কাবায় এ‌সে তারা নি‌জে‌দের পরিচিত মুর্তী দেখ‌তে পেত। এটা ছিল কোরাইশ‌দের বিরাট একটা ব্যবসা, স‌ঙ্গে ধর্ম বিশ্বাস তো অবশ্যই।

মক্কায় প্রথম যে ব্যক্তি বাইরে থেকে কোনো মূর্তি এনে স্থাপন করেছিলেন তার নাম আমর ইবনে লুহাই, তিনি সিরিয়া থেকে হুবাল দেবতার মূর্তি নিয়ে আসেন, তিনিই দেবদেবীর উদ্দেশ্যে কোনো পশুকে উৎসর্গ করা প্রচলন করেন; আর হুযাইল ইবনে মুযরিকা নামের এক লোক বনি-ইসমাইলের প্রথম লোক যে প্রথমবারের মতো কোনো মূর্তি নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী নামকরণ করে কাবা প্রাঙ্গণে রেখেছিল।

লাত উযযা মানাত- এই তিন দেবীর কথা বলি আগে, যাদের উপাসনা করত আরবরা

লাত উযযা মানাত, এ তিন দেবীকে তারা ডাকতো আল্লাহর কন্যা; এর মাঝে মানাত বা মানাহ সবচেয়ে পুরাতন, মানে এই তিনজনের মাঝে বড় বোন, এরপর লাত, এরপর উযযা; যেহেতু এই তিনজন কুরাইশদের প্রধান দেবী ছিল, এবং পবিত্র কোরানে আল্লাহ তাদের বিষয়ে আয়ত নাযিল করেছেন সুতরাং তাদের সমন্ধে জেনে নেয়া যাক।

লাত ছিল আরবদের যুদ্ধ, শান্তি আর উন্নতির দেবী; গ্রিক-রোমান প্রভাবে লাতের মূর্তিতে গ্রিক যুদ্ধদেবী অ্যাখিনা অর্থাৎ রোমান দেবী মিনার্ভার সাথে মিল পাওয়া যেত; গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস অবশ্য মনে করতেন লাত দেবী আসলে গ্রিকদের দেবী অ্যাফ্রোডাইটের ইকুইভ্যালেন্ট; লাতের মন্দির ছিল তায়েফ শহরে, সেখানে কেন্দ্রে একটা ঘনক ছিল, বন, সাকিফ যেটাকে লাত দেবীর উদ্দেশ্যে বানিয়েছিল। মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (সা)-এর নির্দেশে মুগিরাহ ইবনে শুবা (রা) লাতের মন্দির ধ্বংস করে দেন।

উজ্জা ছিল আরবদের প্রেমের দেবী, সেই সাথে ক্ষমতা আর নিরাপত্তার দেবী; তার ডেডিকেটেড মন্দির ছিল মক্কার পুব দিকে নাখলা অঞ্চলে; সেখানে তার জন্য উৎসর্গ করা ছিল তিনটি গাছ, আর একটি কিউব;; এছাড়া জর্ডানের পেট্রাতেও উজ্জার উপাসনা হতো জোরসে; উজ্জা আসলে গ্রিক প্রেমের দেবী অ্যাফ্রোডাইটের আরব ভার্শন বা রোমান দেবী ভেনাসের; সপ্তম শতকেই খ্রিস্টান সাধু জন অফ ডামেস্কাস লিখে গিয়েছিলেন, আরবে গ্রিক দেবী অ্যাফ্রোডাইটের সমতুল্য দেবীর উপাসনা হয়, যে কিনা শুকতারা বা মর্নিং স্টারেরও দেবী, মর্নিং স্টার হলো শুক্র গ্রহ বা ভেনাস; উজ্জার সম্ভাব্য স্বামী আবার মক্কার আরেক দেবতা হুবাল, হুবাল ছিল ভাগ্যদেবতা, তার ৭টা তীর দিয়ে ভাগ্য গণনা করা হতো। মহানবী (সা)-এর নির্দেশে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) উজ্জার মন্দির ধ্বংস করে দেন।

সবচেয়ে পুরাতন দেবী মানাত, সৌভাগ্য, মৃত্যু, কিসমত আর সময়ের দেবী; লাত আর উজ্জা-র আসার আগে মানাতের আরাধনা করা হতো; ঠিক তার গ্রিক ইকুইভ্যালেন্ট আন্যানকি-র মতো অ্যাথিনা বা অ্যাফ্রোডাইট যেখানে জিউসের কন্যা ও দেবী- সেখানে আন্যানকি তাদের বহু আগের, বলা যায় টাইটান গোত্রের, ক্রোনোস গায়া- এদের বোন; মক্কা ও মদিনার মাঝে লোহিত সাগর পাড়ে এই দেবীর মন্দির; সেমিটিক ধর্মের প্যান্থিয়নের সবচেয়ে পুরাতন দেবী এই মানাত।  মানাত ছিল মদিনা বা ইয়াসরিবে আওস ও খাজরাজ গোত্রের প্রধান দেবী; হজ্ব পালন করে দূর দূরান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা এখানেও আসতো এরপর মাথার চুল ফেলে দিত- মানাতের কাছে না এলে হজ্ব পূর্ণ হবে না তাদের- এরকম বিশ্বাস প্রচলিত ছিল।  মহানবী (সা) হযরত আলী (রা)-কে পাঠিয়েছিলেন মানাতের মন্দির ধ্বংস করার জন্য। আর এভাবেই মক্কায় সব দেবদেবীর মন্দির ধবংস করা হয়। এবং সাথে সথে কাবাঘর দেবদেবী মক্ত করা হয়।

---------------------------------------

Popular posts from this blog

বিষয় : নোয়াখালীর সুবর্ণচর ট্রাজেডি

নোয়াখালীর সুবর্ণচর ট্রাজেডি   এই সেই ধর্ষক  "ধর্ষকের পরিচয় ধর্ষকই"   ধর্ষকের কোন দল নাই..  সে কারো আত্মীয় নয়  কারো ভাই বা সন্তন নয় তার একটাই পরিচয় ; সে ধর্ষক !! তাই আমি চাই; ধর্ষনকারীর কঠিন  শাস্তি হোক. . আমি সামগ্রিক ভাবে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দুই সন্তানের জননীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ্য ও কঠিন শাস্তি দাবী করছি। অন্যদিকে দুঃখজনক ভাবে এই ঘটনাকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংস্রতায় রুপ প্রদানে ব্যস্ত মাহফুজ আনাম, ডেইলিস্টার, প্রথম আলো, যুগান্তর সহ একটা পক্ষ!গৃহবধূর গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা সত্য তবে এটার সাথে আ'লীগের ভোট দেওয়া না দেওয়ার বিষয় জড়িত নয়। গৃহবধূর স্বামী জানান, রোববার দুপুরের দিকে তার স্ত্রী স্থানীয় ভোটকেন্দ্র চর জুবলীর ১৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান। তিনি ভোট দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করে এবং উত্ত্যক্ত করে। তার স্ত্রী এর প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন। এ অবস্থায় রুহুল আমিন ও তার লোকজন স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রোববার গভীর রাতে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একদল সন্...

-ঃআল-কুরআনুল করীমঃ-

বিস‌মিল্লা‌হির রহমনুর রহিম -ঃআল-কুরআনুল করীমঃ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বাংলা তরজমা ও সম্পাদনাঃ- শামসুল ‘উলামা বেলায়েত হোসেন  মাওলানা আবদুর রহমান কাশগরী  মুহম্মদ মাহমূদ মুস্তফা শা'বান  শামসুল উলামা মুহম্মদ আমীন 'আব্বাসী  ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্  প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ ডক্টর সিরাজুল হক ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ অধ্যক্ষ এ.এইচ. এম. আবদুল কুদ্দুস  মাওলানা মীর আবদুস সালাম অধ্যাপক শাহেদ আলী মাওলানা ফজলুল করীম  এ.এফ.এম. আবদুল হক ফরিদী  আহমদ হুসাইন  মাওলানা আলাউদ্দীন আল-আজহারী  মাওলানা মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ্  হাফেজ মঈনুল ইসলাম আবুল হাশিম -ঃ৩য়সংস্করণের সম্পাদকমণ্ডলীঃ- ডক্টর সিরাজুল হক ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ জনাব আ.ফ.ম. আবদুল হক ফরিদী ডক্টর এ.কে.এম. আইউব আলী  ডক্টর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান ডক্টর এম. শমশের আলী জনাব দাউদ-উজ-জামান চৌধুরী জনাব আহমদ হুসাইন জনাব মাওলানা আতাউর রহমান খান জনাব মাওলানা ওবায়দুল হক জনাব আ.ত.ম. মুছলেহ্ উদ্দীন জনাব মোহাম্মদ ফেরদাউস খান জনাব মাওলানা রিজাউল করীম ইসলামাবাদী জনাব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ জনাব এ.এফ...

আল কুরআনের বার্তা / The Qurannic masses

  -ঃআল কুরআনের মূল বার্তা বা ম্যাসেজঃ- সুরা বাকারা আয়াত-186 وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لِي وَلْيُؤْمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। ********************************************************************************************** (বিশেষ দ্রষ্টব্য: আর আল কুরআনে ক্রমিক নং অনুযায়ী ১১৪টি সূরা বা অধ্যায় আছে। তাই (১৫:৯) এর মানে আল কুরআনের ১৫ নং সূরা এর ৯ নং আয়াত। যাতে করে, সকল পাঠক পাঠিকা বৃন্দ সহ‌জেই আরবি কুরআনের সাথে মিলিয়ে অর্থ চেক করতে পারেন।) আল কুরআনের মূল বার্তাঃ  কোরান পড়ার সাথে অজু বা গোসলের কোন সম্পর্ক নাই। এ বিষ‌য়ে আল্লাহ তায়ালা প‌বিত্র কোরা‌নে পা‌কে ব‌লেন,  "আর যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্...